শেখ মুজিবুর রহমান অনেক বড় নেতা ছিলেন কোন সন্দেহ নেই কিন্তু সরকার প্রধান হিসাবে সম্পূর্ণ অযোগ্য ব্যক্তিত্ব। যে কয়েক বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন, সে সময়টা তিনি ব্যবহার করেছেন ‘জমিদারী’ হিসাবে; সৎ রাষ্ট্রনায়কের কোন গুণই তার ছিল না। প্রশ্নবিদ্ধ যুদ্ধকালিন অবস্থানের কথা আমি তুলবো না।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন বা মুক্তিযুদ্ধ ছিল সময়ের দাবী। সেটা শেখ মুজিবের জায়গায় যে-কোন ‘এক্সওয়াইজেড’ নেতা থাকলেও সেটা হতো। দেশ স্বাধীন করেছে বাংলাদেশের অতি সাধারণ ছেলেরা ‘সম্পূর্ণ গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে’ এবং তাদের প্রকৃত সহায়তা করেছে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্ব বাংলার বিদ্রোহী কর্মকর্তারা। আর শুধুমাত্র নিজ স্বার্থের জন্য ভারত সহায়তা করেছে বাংলাদেশ সৃষ্টি হতে, তবুও তো করেছে- সেজন্য ভারতকে ধন্যবাদ।
শেখ মুজিব তার জমিদারী আমলে নিজেকে কিছুদিন প্রেসিডেন্ট, তারপর আবার কিছুদিন প্রধানমন্ত্রী এরপর আবারও প্রেসিডেন্ট ইত্যাদি করা নিয়েই বেশী ব্যস্ত দিন পার করেছেন। গণতন্ত্রের জন্য বিদ্রোহ করে সদ্যস্বাধীনতাপ্রাপ্ত বাংলাদেশের গণতন্ত্র ধ্বংশ করেছেন শেখ মুজিব। তার শাসনামলে জাতি উপহার হিসাবে পেয়েছে সেভেনটি ফোরের ভয়াবহ দুর্ভিঃক্ষ।
শেখ মুজিব নাকি বলতেন তার চারপাশে কোন সৎ লোক তিনি খুঁজে পাচ্ছেন না।
মজার একটা বিষয় বলি। আপনি যদি চোর হন- দেখবেন আপনার চারপাশের সবাই চোর-ডাকাত। আপনি যদি মসজিদের হুজুর হন চারপাশে পাবেন সব হুজুরের দল। আপনি যদি ইঞ্জিনিয়ার হন আপনার বন্ধুদের মধ্যে বেশীর ভাগই দেখবেন ইঞ্জিনিয়ার, ডাক্তারের পাশে ডাক্তার আর আমার মতো ব্যবসায়ীর চারপাশে আমি শুধু ব্যবসায়ীদেরই দেখতে পাই।
– তাহলে বলুন তো শেখ মুজিবের চারপাশে সব চোর-চোট্টা থাকতো কেন?
জন্মের সময় বলতে গেলে বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির কোন অবকাঠামোই ছিল না। অার যেহেতু নবগঠিত রাষ্ট্র, সেহেতু ছিল না কোন সংবিধানও।
যারা মাইক্রোসফট ওয়ার্ড চালাতে জানেন, তারা দেখবেন ওয়ার্ডে রিপ্লেস নামে- এডিট মেনুতে একটা পুল-ডাওন মেনু থাকে। আপনি যদি কোন একটা শব্দকে অন্য কোন একটি শব্দ দিয়ে রিপ্লেস করতে চান তাহলে মুহুর্তের মধ্যেই সেটা করা সম্ভব।
ড. কামাল হোসেন সাহেব ওই কাজটিই করেছিলেন। তিনি সংবিধানের ‘পাকিস্তান’ শব্দটি ম্যানুয়ালী ‘বাংলাদেশ’ শব্দ দিয়ে রিপ্লেস করে হয়ে গেলেন বাংলাদেশ সংবিধানের মহান স্রষ্ট্রা!
শুনেছি শেখ মুজিব তার স্কুল জীবনের কোন শিক্ষককে নিজের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার ছেড়ে দিয়ে নিজের সভ্যতা দেখিয়েছেন। তিনি জীবনে কি শিক্ষা পেয়েছিলেন এতেই তা পরিষ্কার বোঝা যায়। একটা দেশের প্রধানমন্ত্রী চেয়ার এতটাই ঠুনকো ছিল তার কাছে! শেখ মুজিব ভুলে বসেছিলেন যে- ওটা একটা দেশের প্রধানমন্ত্রীর চেয়ার; তার জমিদারী’র চেয়ার না।
ব্যক্তি শেখ মুজিব তার বাসায়- নিজের চেয়ার ওনাকে ছেড়ে দিলে আমার কোন বক্তব্য ছিল না। কিন্তু প্রতিষ্ঠান শেখ মুজিব একটা দেশের ‘প্রধানমন্ত্রী’র চেয়ার অন্য সাধারণ কারো কাছে ছেড়ে দেবার ধৃষ্ঠতা দেখাতে পারেন না; এটাও ক্ষমতার অপব্যবহার বা অযোগ্যতা, অদক্ষতা।
বাংলাদেশটাকে একটা বিশৃঙ্খলাপূর্ণ ভুখন্ড করে দিয়েছিলেন শেখ মুজিব। নিজে এবং নিজ পরিবারকে সারাজীবন বাংলাদেশের জমিদারী স্টাইলে ভোগ বা ধর্ষন করা জন্য তিনি একদলীয় বাকশাল কায়েম করে গিয়েছিলেন; ঠিক যেভাবে শাসিত হচ্ছে আজকের উত্তর কোরিয়া।
অনিবার্য ফলস্বরূপ একদল দেশ-প্রেমিক সৈনিক ‘সবচে খারাপ কাজটি করে’ দেশকে অভিষাপ মুক্ত করেছে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট।
আজ শেখ হাসিনার কর্মকান্ড দেখে মনে হচ্ছে কিছু কিছু হত্যাকান্ড মাঝে মধ্যে অত্যন্ত জরুরী হয়ে পরে- কোন জাতিকে অভিষাপ মুক্ত করার জন্য। এত কিছুর পরও আমি কোন হত্যাকান্ডকেই সমর্থন করি না, ঘৃণা করি। কিন্তু এই বাংলাদেশে আজ হাজার-হাজার মানুষকে মেরে ফেলা হচ্ছে পাখির মতো গুলি করে; এসবের দায় তো শেখ হাসিনারই। তাহলে সমাধানটা কোথায়?
বাংলাদেশের মানুষ যে গণতন্ত্রের জন্য জীবন বাজী রেখে, যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল; শেখ মুজিব সেই দেশ থেকে গণতন্ত্র বিদায় করে দিয়েছিলেন মাত্র ৩ বছরে মাথায়। সংবাদপত্রে স্বাধীনতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা সব বন্ধ করে দিয়েছিলেন।
অপর দিকে শেখ হাসিনা দেশের সংবাদমাধ্যগুলিকে গৃহপালিত গরু (সরি, গৃহপালিত সাংবাদিক) বানিয়ে আজ্ঞাবহ করিয়ে নিয়েছেন। বাবার আদর্শের ব্যক্তিস্বাধীনতা বন্ধের পরিবর্তে স্বাধীন-মতবাদকে হত্যা, গুম করে দিয়েছেন। শেখ মুজিবের রক্ষী বাহিনীর আদলে বাংলাদেশে আওয়ামী পুলিশ লীগ গঠন করে নিয়েছেন।
তবে, শেখ মুজিব যে কাজটা কোনদিনই করেননি- সেটা হল তিনি ভারতের কাছে নতজানু হননি। সদ্যস্বাধীন বাংলাদেশ থেকে প্রথমেই ভারতীয় সেনাবাহিনীকে বিতারিত করেছেন।
কিন্তু শেখ হাসিনা তার উল্টো পথে হেঁটে চলছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ শাসিত হচ্ছে নতুন দিল্লী থেকে। সেখানকার ‘সাউথ ব্লক’ নিয়ন্ত্রণ করছে বাংলাদেশ সরকারকে। বাংলাদেশের বর্তমান প্রশাসনের প্রায় ৬০% হিন্দু কর্মকর্তা নিয়ন্ত্রিত যারা নেতৃত্বে দিচ্ছে ৮৫% মুসলিমকে। শেখ হাসিনার বডি গার্ডের এসএসএফ এর ৯০% সদস্য ভারতীয় সেনা বাহিনীর সদস্য। (কলকাতায় গিয়ে আনন্দবাজার পত্রিকাকে জয়ের সেই আস্ফালন ‘আমরা ইন্দিরা গান্ধির মতো বডিগার্ড দ্বারা কোন আতংকে নেই’)
এবং ফাইনালী বাংলাদেশের সকল নিয়ন্ত্রণ এই মুহুর্তে সম্পূর্ণভাবেই ভারতীয় কোম্পানীগুলির হাতে।
বাংলাদেশের নদীগুলি দিয়ে অবাধে চলাচল করতে ভারতীয় জাহাজ, ভারতীয় ভারী গাড়ীগুলির নিশ্চিন্ত চলাচলের জন্য রাস্তায় চলছে মেরামতি, বিনিময়ে কোন ট্রানজিট ফি-ও নেয়া যাবে না; বিদু্ৎ সম্পূর্ণভাবেই ভারতের নিয়েন্ত্রণে, ইর্ষ্টার্ণ রিফাইনারী পরামর্শক ভারত, বাঙলাদেশ ব্যাংকের নিরাপত্তার পরামর্শক ভারত। গ্যাস ট্রান্সমিশন, পায়রা বন্দর, সুন্দরবন, ব্যান্ডউইথ সবই তাদের কন্ট্রোলে।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা ঘোষনা করে এবং বিজয় অর্জন করে। বাংলাদেশকে প্রথম স্বাধীন হিসাবে স্বীকৃতদাতা দেশ হলো ভূটান। এটা মনে হয় সবাই জানেন।
কিন্তু দ্বিতীয় স্বাধীনতা স্বীকৃতি দানকারী দেশ কোনটি, জানেন?
অনেকেই জানেন না।
উত্তরটা হলো ‘ইসরেল’।
হ্যাঁ, সেভেনটি ওয়ানে সরাসরি বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী আমেরিকা, সৌদী আরব, চায়না এসব দেশকে বৃদ্ধ আংগুল দেখিয়ে রাজনৈতিক বিচক্ষণতাকে কাজে লাগিয়ে ইসরেল রাষ্ট্রটি বাংলাদেশকে স্বাধীন হিসাবে স্বীকৃতি দানকারী দ্বিতীয় দেশ।
কিন্তু বাংলাদেশও এ বিষয়ে বিচক্ষনতা দেখাতে কাপর্ণ্য করেনি। নব গঠিত বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি ইসরেলের স্বীকৃতিকে তো গ্রহন করেই নি বরং ইসরেলকেই অবৈধ রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা দিয়েছে তখনই।
আচ্ছা, চেতনাধারী, চেতনা ব্যবসায়ী, ধর্ম নিরপেক্ষ আন্দোলনকারীরা বা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তির লোকগুলি কি আমার এই প্রশ্নটার উত্তর দিতে পারবেন যে, সেদিন বাংলাদেশের ‘চেতনা-ফেতনা’ কোথায় ছিল?
ধর্ম নিরপেক্ষ চেতনা-ই নিয়েই যদি বাংলাদেশ স্বাধীনতা যুদ্ধ করে থাকে, তাহলে সেদিন কোন চেতনায় বাংলাদেশের স্বাধীনতাকালীন সরকার ইসরেলকে অবজ্ঞা করেছিল?
তাহলে কি এটাই প্রমাণিত হয় না যে- বাংলাদেশ কোন কালেই এসব চেতনা ফেতনার উপর স্বাধীন হয়নি। বাংলাদেশ এর দামাল ছেলেরা ধর্মনিরপেক্ষ বা ওসব ফালতু চেতনা ফেতনার জন্য যুদ্ধ করতে যায়নি। তারা নিজস্ব একটি ‘গণতান্ত্রিক ও স্বাধীন ভূমি’র অধিকার আদায়ের জন্য যুদ্ধ করেছিল।
চেতনাজীবিরা কৈ?