নিউ ইয়র্ক কে বলা হয় পৃথিবীর রাজধানী।
নিউ ইয়র্ক আমেরিকার ৫০টি ষ্টেটের একটি। এর রাজধানী আলবেনী। নিউ ইয়র্ক সিটি থেকে আলবেনীর দূরত্ব প্রায় ১৩৪ মাইল।
ইওরোপিয়ান পর্যটক Giovanni da Verrazzano ১৫২৪ সালে প্রথম নিউ ইয়র্ক এ পা রাখেন।
মূলত ম্যানহাটান দ্বীপটিই একসময় ছিল নিউ ইয়র্ক সিটি।
জনসংখ্যার চাপ এবং সময়ের প্রয়োজনে এখন নিউ ইয়র্ক সিটির ৫টি ‘বরো’র একটি ম্যানহ্যাটন এবং কাউন্টি ইটসেলফ। মজার বিষয় হলো এখনো ম্যানহ্যাটন কে-ই ‘নিউ ইয়র্ক সিটি’ লিখতে হয়। বাকী বরো বা কাউন্টিগুলো শুধু নিউ ইয়র্ক, যদিও নিউ ইয়র্ক সিটির আওতাধীন।
আমেরিকার অর্থনীতির চালিকাশক্তি এই ম্যানহ্যাটন আইল্যান্ডটি। জাতিসংঘের হেড কোয়াটারও এখানেই অবস্থিত।
(এক সময় নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশের কনসুলেট অফিসটিও ছিল ম্যানহ্যাটনে- কিনতু শোনা যায় ঠিকঠাক আইন মেনে না চলায় বাড়ীওয়ালা বাংলাদেশ কনসুলেটকে বাড়ী থেকে নামিয়ে দেয়ায় এরা পরবর্তীতে এষ্টোরিয়া চলে যায় যেটা কুইন্স বরো’তে অবস্থিত।)
ম্যানহাটন আইল্যান্ডটি লম্বায় ১২ মাইল এবং পাশে পোনে দুই মাইল। অর্থাৎ বাংলাদেশের সেন্ট মার্টিন আইল্যান্ডের মাত্র ৩ গুন বড়।
ম্যানহ্যাটন বাদে নিউ ইয়র্ক সিটির বাকী ৪টি বরো হলো কুইন্স, ব্রকলীন, ব্রঙ্কস ও স্ট্যাটান আইল্যান্ড। এর মধ্যে শুধুমাত্র ব্রঙ্কস বরো-টি-ই আমেরিকার মেইনল্যান্ড (মূল ভূখন্ড) এর অংশ; বাকী সবগুলিই দ্বীপ।
নিউ ইয়র্কের বিখ্যাত জেএফকে এয়ারপোর্টটি কুইন্স এ অবস্থিত। অবশ্য কুইন্সে লা-গুরদিয়া নামের আরোও একটি আঞ্চলিক এয়ারপোর্ট রয়েছে যেখান থেকে আমেরিকার ডোমেসটিক ফ্লাইটগুলি পরিচালিত হয় তবে কানাডা ও ক্যারিবিয়ানে কিছু ইন্টারন্যাশনাল ফ্লাইটও আছে। এছাড়াও ম্যানহ্যাটনের ওপাড়ে নিউ জার্সীতে আরেকটি (নিয়য়ার্ক) ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট রয়েছে- যার তিনটিই একই কতৃপক্ষের আন্ডারে এবং ৩টি মিলে একটি এয়ারপোর্ট হিসাবেই মূলত পরিচালিত হয়।
ম্যানহাটনের মাটির নীচে রয়েছে আরেকটি জগৎ সেটা মূলত সাবওয়ে বা ট্রেন চলাচলের লাইন ও ষ্টেশন। এই অতি ক্ষুদ্র দ্বীপ ম্যানহ্যাটের সংগে সংযুক্ত থাকতে ৩৪টি লাইনে ২৪ জোড়া ট্রেন প্রতি মিনিটে চলাচল করছে। এই পৃথিবীর কোথাও এতো জটিল সাবওয়ে ট্রেন লাইন নির্মিত হয়নি। তাও আজ থেকে প্রায় দেড়শ বছর আগে। ট্রেন লাইনকে সংযুক্ত রাখতে নির্মিত হয়েছে ম্যানহ্যাটনকে ঘিরে প্রায় ১৯টি ব্রীজ ও ট্যানেল (সাগরের নীচ দিয়ে)। আজ থেকে প্রায় দেড়শত বছর আগে কি-পরিমান চিন্তা ভাবনা তারা করেছে; আমাদের বাঙালী মাথায় আরও দেড়শ বছর পরও তা ধরবে না।
এছাড়াও রয়েছে এই ম্যানহ্যাটনেই পুরো আমেরিকার সাথে সড়ক পথে সংযুক্ত হতে ‘পোর্ট অথরিটি বাস টার্মিনাল’; ট্রেন পথে সংযুক্ত হতে ‘এমট্রাক’সহ ‘মেট্রো নর্থ’, ‘এলআইআরআর’; নিউ জার্সেকে সংযুক্ত করতে ‘এনজে লাইন’; এবং এসবই ম্যানহ্যাটনের মাটির নীচে অবস্থিত। আর উপরে শুধু সুপ্রশস্ত, সুপরিকল্পিত রাস্তা, ফুটপাথ এবং অতি সুউচ্চ অট্রালিকার ভীড়।
আমেরিকায় কোন ক্ষুদ্র দোকান নেই বললেই চলে। বেশীর ভাগই চেইন শপ (ওয়ালমার্ট, জেসি পেনি, কুগার, মেসীস, ম্যাকডোনাল্ড, কেএফসি, ডানকিন ডোনাট, বেষ্ট-বায়, হোম ডিপো ইত্যাদি যা মানুসের জীবন-যাত্রার প্রয়োজনীয় সবকিছুর জন্য যথেষ্ঠ এবং ওয়াল্ডক্লাস)। তবে, ম্যানহাটনের ব্রডওয়ে নামের রাস্তাটি মূলত পাইকেরী ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের বাজার- যেটা মিসেছে চায়না টাওন খ্যাত ক্যানেল ষ্ট্রিটে। এসব ক্ষুদ্র দোকানগুলির মালিকানায় রয়েছে মূলতঃ বাংলাদেশী, পাকিস্তানী, ইন্ডিয়ান এবং চাইনিজরা। এখানকার ব্যস্ত এলাকাগুলিতে ৬০০ স্কোয়ার-ফিট একেকটি দোকানের মাসিক ভাড়া কম-বেশী ২০,০০০ ডলার।
নিউ ইয়র্ক শহরে সারা পৃথিবীর ১৯২টি দেশের নানা বর্ণ, ধর্ম, গোত্র, কালচারের লোকজন বসবাস করে। বৈধ-অবৈধ ইমিগ্রান্টদের স্বর্গ বলা হয়ে থাকে নিউ ইয়র্ককে। নিউ ইয়র্কে বসবাসকারীদের কখনওই তাদের বৈধ স্ট্যাটাস জানতে চাওয়া হয় না। এখানে বসবাসকারীদের সকলকে নিউ ইয়র্কার হিসাবে ‘সিটি আইডি কার্ড’ দেয়া হয়; যেটা তাদের বৈধ আইডেন্টিটি। শুধুমাত্র বড় রকমের কোন ক্রাইম (যা যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থ বিরোধী) না করলে কোন সাজাপ্রাপ্ত অপরাধীকেও নিউ ইয়র্ক গর্ভণমেন্ট- হোমল্যান্ড সিকিউরিটি কে জানায় না।
স্ট্যাচু অব লিবার্টি হলো নিউ ইয়র্ক তথা সমগ্র যুক্তরাষ্ট্রের মানুষের গর্বের এবং ব্যক্তিগত স্বাধীনতার প্রতীক।
‘ব্যক্তিগত স্বাধীনতা’ যে কি বিষয় এবং কতটা আনন্দের- আমেরিকায় কয়েকমাস বসবাস না করা পর্যন্তএই পৃথিবীর কোন মানুষ তা বুঝতেও পারবে না।
প্রসংগত একটা কথা না বলার লোভ সামলাতে পারছি না। আমি মাস দুয়েক ডালাস (টেক্সাস) ছিলাম। ডালাস-ফোর্থ অর্থ এলাকাধীন শহরগুলিকে সম্মিলিতভাবে ডিএফডব্লিও বলা হয়। আলিংটনে কয়েকটা মসজিদে আমি নামাজ পড়তাম- সেখানে মসজিদগুলি খুবই আধুনিক। শুক্রবারে মসজিদগুলিতে খুতবায় খতিবকে দেখতাম ‘আপেল ম্যাকবুক’ ল্যাপটপ খুলে খুতবা দিতেন ও আলোচনা করতেন।
যাই হোক, মসজিদগুলির ম্যাক্সিমাম মুসুল্লীই আরাবিয়ান; প্রচুর মহিলারাও নামাজে আসেন- পাঁচ ওয়াক্তই; মসজিদের বাইরে পুলিশ গার্ড থাকে- কারো কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা দেখার জন্য।
আমি এমনিতেই একটু বেশী কৌতুহলি; অবাকও হলাম। কয়েকজনের সাথে পরিচিত হলাম; বেশীরভাগই এসেছেন সৌদী আরাবিয়া, জর্ডান, ইরাক, কাতার, সিরিয়া, মরোক্ক, মিশর ইত্যাদি দেশ থেকে। আমি কয়েকজনকে (বিশেষতঃ সৌদী, কাতার ইত্যাদি উচ্চ আয়ের দেশের নাগরিক) প্রশ্ন করেছিলাম, ‘তোমাদের তো অর্থনৈতিক কোন সমস্যা থাকার কথা নয়; তোমরা নিজে দেশ ছেড়ে কেন এই দূর দেশে বসবাস করছ?’
তাদের কাছ থেকে যা উত্তর পেয়েছিলাম, সেটা হলো- টাকা পয়সা বাড়ী-গাড়ী এসবই সবকিছু নয়। মুখের স্বাধীনতা হলো সবচে বড়। আমি যা খুশী তাই বলতে পারবো, লিখতে পারবো, আলোচনা করতে পারবো- এটা-ই যে আমার স্বাধীনতা।
আমার কথা যত তিক্তই হোক অপরে সেটা নিয়ে আমাকে এ্যারেষ্ট করবে না, ত্যক্ত করবে না। হয়রানী করবে না। এরচে বড় শান্তি এই পৃথিবীতে আর কি রয়েছে?
একটু শান্তির জন্য আমেরিকাকে বেশে নিয়েছি বসবাসের জন্য।
আমিও তাই। এটা যে আমারও কথা, এটা-ই যে আমার স্বাধীনতা। একমাত্র আমেরিকায়ই সত্যিকারে স্বাধিনতা, সত্যিকারের আনন্দ নিয়ে বসবাস করা যায়।