আনন্দবাজার চটি পত্রিকা

নিউজটা নিঃসন্দেহে চমকে উঠার মতো!
অন্তত পক্ষে অামার মতো মানুষের জন্য; যে কিনা ভ্রমণের জন্য সারাটা জীবন- কোন পাগলামীটা না করেছি!
 
তবে, এই নিউজটি শুধুমাত্র আমার জন্যই উদ্দীপক নয়, নিউজটা নিশ্চিন্তভাবেই পুরো বাংলাদেশের জন্য একটা অতি মর্যাদাকর।
 
একটু ‘শানে-নজুল’ দিই, তাহলে বুঝতে আরও সুবিধে হবে।
 
আমি তখন গ্রামের স্কুলের ছাত্র। ভুগোল বিষয়টি আমার মনে ধরে গেল। সারাদিন ভুগোল পড়তেই ভাল লাগতো। বিশেষ করে যখন থেকে পৃথিবীর আকার-আয়তন, দেশ-রাজধানীসহ বিভিন্ন মহাদেশীয় বৈচিত্র জানতে থাকলাম। আমি খুব শিশুবেলা থেকেই দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকাটি নিয়মিত পড়তাম, কাজেই রাজনীতি, আন্তর্জাতিক বিশ্ব এসব নিয়ে কৌতুহল আরও বেড়ে গেল।
 
একটা ‘ওয়ার্ল্ড ম্যাপ’ সংগ্রহ করলাম। আমি সেই ওয়ার্ল্ড ম্যাপটিই একসময় মুখস্থ করে ফেললাম। সেই ম্যাপটি কতটা মুখস্থ করেছিলাম শুনবেন?
আমি আমার পড়ার টেবিলে ম্যাপটি রাখতাম। তারপর কাউকে আমার চোখ আটকিয়ে এই বিশাল পৃথিবীর যে-কোন একটা শহরের নাম বলতে বলতাম। এবং আমি মুহুর্তেই আমার বন্ধ-চোখ অবস্থাতেই ডান হাতের আংগুলটি ঐ ‘নির্দিষ্ট’ শহড়টির উপর রাখতে পারতাম।
 
সে যে কি আনন্দ! আমি সত্যিই বোঝাতে পারবো না কউকে!
 
এমনিতে আমার স্মৃতিশক্তি কিন্তু খুবই খারাপ!
সত্যি বলতে কি ভয়াবহ রকমের খারাপ। একটা উদারহণ দিই।
একটা ইংরেজী রচনা (Essay) আমি একবার মুখস্থ করার চেষ্টা করেছিলাম। মাস ছয়েক ট্রাই করে তারপর আশা ছেড়ে দিই। ইংলিশ ফাষ্ট পেপারের প্রশ্নের উত্তরগুলি অথবা প্যারাগ্রাফগুলিও আমি কোনদিন মুখস্থ করতে পারতাম না।
 
তাছাড়া ‘গরুর চারটি পা এবং একটি লেজ রয়েছে’ এটা মুখস্থ করতে হবে কেন- সেটাই তো আমি আজ অবধি বুঝেই উঠতে পারিনি।
 
বাংলা আমি জীবনে পড়তাম না। বাংলা তো আমি প্রকৃতি থেকেই শিখেছি। শুধুমাত্র ব্যকারণ বিষয়টিতে আগ্রহ পেতাম খুব। ইংলিশেও গ্রামারটিতে আমি খুবই আনন্দ পেতাম। পরীক্ষার হলে আমি সবসময় নিজের মতো করে উত্তর লিখতাম। মনে আছে এসএসসিতে আমি বাংলা প্রথম পত্রে ৭২ আর বাংলা দ্বিতীয় পত্রে পেয়েছিলাম ৭৭ মার্কস।
 
আসলে যে বিষয়টাতে আমি আনন্দ পেতাম না- সেটায় আমার কোন আগ্রহ জন্মাতো না। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের পড়ার সিষ্টেম শুদ্ধ করা দরকার।
 
আমি অনেককেই দেখতাম বা এখনও দেখি যারা যে-কোন বিষয় একবার পড়েই মুখস্থ করে ফেলতে পারে। শেরে বাংলা একে ফজলুল হকও না কি এরকমই ফটোগ্রাফিক মেমোরীর অধিকারী ছিলেন।
 
বাট, একই সংগে আমি এটাও দেখেছি যারা এরকম ফটোগ্রাফিক মেমোরীর অধিকারী তারা তাদের মুখস্থ করা বিষয়টি খুব দীর্ঘ সময় ধরে মনে রাখতে পারে না। তাদের মেমোরী প্রতিনিয়ত নতুন কিছু মনে রাখে এবং পুরাতনগুলি ভুলে যায়। কিন্তু আমি যদি কোন একটা বিষয় আগ্রহ নিয়ে মুখস্থ করে ফেলতাম- তাহলে বাকী জীবনে সেটা আর ভুলিনি; এখনও এরকম অনেক কিছুই আমার মুখস্থ রয়েছে যা আমি আজ থেকে ২০ – ২৫ বছর আগে একবার মুখস্থ করেছিলাম।
 
C17H35CoONa যে সাবানের প্রতীক- সেটা আমি এখনও জানি। এরকম আরও হাজারটা কঠিন ও জটিল বিষয় এখনও আমার ফটোগ্রাফিক মেমোরীতে আটকে রয়েছে। বেনজিন এর জীবন-গঠন এখনও আমার চোখে ভাসে। নিউটন, ক্যালকুলাস ওসবে আমার সত্যি তৃষ্ণা মিটেনি আজও।
 
আমার এইচএসসি পরীক্ষার সময় আমার পাশে বসা এক রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পরীক্ষার্থীকে জাতিসংঘের স্থায়ী সদস্য ৫টি দেশের নাম লিখে দিয়েছিলাম- ওতো অবাক! আর, আমি ভেবেই পাইনি এই সামান্য বিষয়টি না জানা একজন ছাত্র কিভাবে এসএসসি’র সার্টিফিকেট অর্জন করতে পেরেছে?
 
আমার পাশের ক্লাসেই ছাত্র-শিক্ষকদের পড়তে শুনতাম, ‘গরু ঘাষ খায়, মানুষ গরু খায় সুতরাং মানুষ ঘাষ খায়’। এসব হাস্যকর পড়াশোনা শিখে একটা দেশ ‘বাংলাদেশ’ হবে- সেটাই তো স্বাভাবিক। তাই না?
 
শানে-নজুল হলো।
এবার মূল আলোচনায় ফিরি।
 
আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিষ্টের দু’জন ফ্রেন্ডের দু’টি শেয়ার দেখলাম আজ। নিয়মিতই ওদের এরূপ কিছু শেয়ার দেখি। কিন্তু আজ কিছু কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে, তাই কী-বোর্ডে আঙ্গুল চালাচ্ছি।
 
তার প্রথমটি ছিল রীতিমত চমকে যাবার মতো শিরোনাম- ‘বাংলাদেশ-রাশিয়ায় যাতায়াত ভিসা ছাড়াই’। নিউজটি আমার জন্য কতটা যে আনন্দদায়ক- সেটা সম্ভবত আমিই বুঝি। খুবই আগ্রহ নিয়ে নিউজটির মূল লিংকে গেলাম। পড়তে শুরু করলাম।
 
আনন্দবাজার পত্রিকার এই নিউজটি শুরুই হয়েছে মারাত্মক ভুল তথ্য দিয়ে।
বলা হয়েছে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ২০ কোটি। আমি বাংলাদেশ ছেড়েছি পাক্কা ২ বছর, তখন জনসংখ্যা রেখে এসেছিলাম ১৬ কোটিতে। ২ বছরে কি ২০ কোটি হয়ে গেল? গুগল করলাম, উকিপিডিয়াতে দেখলাম বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৯০ লাখ।
 
মিথ্যা তথ্য দিয়ে শুরু ঐ নিউজটি অার পড়বো কি না একবার ভাবলাম।
কিন্তু, তারপর আবারও পড়া শুরু করলাম মূল নিউজটিতে মারাত্মক কৌতুহলের জন্য।
 
বর্তমান বাংলাদেশের উপর চেপে বসা অবৈধ ও হিন্দুবান্ধব ভারতীয় গোপালগঞ্জ সরকারের বেশ কিছু কথিত ও মিথ্যা প্রশংসাবাক্য দিয়ে তৈরী নিউজটিতে মুল বক্তব্য ছিল-
::: “রাশিয়া দু’হাত বাড়িয়ে বাংলাদেশিদের বরণ করতে প্রস্তুত। দু’দেশের মানুষের যাওয়া আসায় আর ভিসার দরকার নেই। পাসপোর্ট থাকলেই হল। যোগাযোগে তার চেয়ে উদার ব্যবস্থা আর কী হতে পারে। আপাতত সুযোগটা সীমাবদ্ধ থাকবে কূটনৈতিক আর অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের মধ্যে। তাদের যাতায়াতটা সড়গড় হলে সুযোগটা সর্বজনীন হবে। বাংলাদেশিরা তখন নির্দ্বিধায় শুধু পাশপোর্ট হাতে নিয়েই ঢাকা থেকে উড়ে গিয়ে মস্কো বা সেন্টপিটার্সবার্গে নামতে পারবেন। সেখান থেকেও রাশিয়ার মানুষ ঢাকা সফর করতে পারবেন ভিসা ছাড়াই। রাষ্ট্রসংঘের সাধারণ সভায় যোগ দিতে গিয়ে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলি আর রুশ বিদেশমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ ২২ সেপ্টেম্বর ভিসা চুক্তিতে সই করেছেন। সব ইস্যুতেই রাষ্ট্রপুঞ্জে রাশিয়ার পাশে বাংলাদেশ।” :::
 
অফিসিয়াল বা কুটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের জন্য ভিসা ফ্রি এক্সেস রয়েছে ভারতসহ চায়না, মালয়েশিয়া, কোরিয়া, জাপান এবং মধ্য এশিয়ার অসংখ্য দেশে। সেখানে এরকম একটা সামান্য নিউজ যা সাধারণ মানুষের সংগে সম্পর্কই নেই- সেটিকে কিভাবে উপস্থাপন ও সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে- ভাবুন?
 
অপরদিকে রাশিয়া এমন কি দেশ- যেখানে সাধারণের জন্যও ভিসা ফ্রি এক্সেস হলে বাংলাদেশের এমনকি লাভ? রাশানরা কি ঠিকমতো তিন-বেলা খাবার পায়? ভারতীয়দের মতো রাস্তাঘাটে-ক্ষেতে খামারে বাথরুম হয়তো রাশানরা করে না; কারণ ওরা সাদা। কিন্তু সাদাদের মধ্যে এই পৃথিবীর সবচে নিকৃষ্ট জাতি হলো রাশানরা। এটা মনে রাখবেন। ইওরোপ আর আমেরিকায় রাশান সাদাদের বলা হয় ‘রাশান-মাফিয়া’; ওদের ঘৃণার চোখে দেখে সারা বিশ্ব; এখনও।
 
আমি আনন্দবাজার পত্রিকা এবং এসব শেয়ারকারী চেতনাবাজদের বলছি- আপনারা বরং ভারতবাসীকে কিছু টয়লেট দিয়ে আসুন এবং ওদের বলুন, ‘দাদা, রাস্তা-ঘাটে ওভাবে ওপেন বাথরুম করলে পরিবেশ দুষন হয়; ওসব বাদ দিন এটা আধুনিক সভ্যতার যুগ; ওসব আর চলবে না।’ এবং নিজেরাও আরেকটু সভ্য হোন প্লিজ। আবালের মতো আর কতকাল লাফাবেন অন্যের কথায়।
 
আমি শেয়ারকারীর স্কিনশর্ট দিলাম, প্রথম ছবিতে দেখুন লাল কালিতে রাউন্ড করা- ৭৩জন শেয়ার করেছে এই মিথ্যা নিউজটি। আমি নিশ্চিত এই শেয়ারকারীরা মুল নিউজটি পড়েও দেখেনি। কিন্তু তারা শেয়ার করেছে কারণ এরা হিন্দু অথবা নাস্তিক এবং ফাইনালি চেতনাবাজ ও ভারতীয় চর। এরা এতটাই হীনমনা যে যে-কোন মিথ্যা নিউজও নির্দিধায় শেয়ার দিতে তাদের বুক বিন্দু মাত্র কাঁপে না। এরা চেতনাবাজ; এদের চেতনা দাড়িয়েই থাকে ভারতের দিকে। এরাই ভারতীয় রাজাকার। ভারতীয় পতিতা শেখ হাসিনার ‘জান’ এরা।
 
আমি ১৯৯৬ সালে প্রথমবার ইন্ডিয়া ভ্রমনে যাই। সেবারই যাবার পথেই বনগাঁ থেকে একটি ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ ক্রয় করি। সত্যি বলছি ওটার ভেতরে আমি আগ্রহ নিয়ে পড়ার মতো কিছুই পাইনি সেদিন।
 
২০০২ এর পর থেকে ২০১৪ এই সময়টাতে আমি প্রায় ২০০ বারেরও অধিক ভারত ভ্রমণ করেছি। কোলকাতা, দিল্লী, মুম্বাই, পুনে, আগরতলা, লক্ষ্নৌ শহরগুলি আমার মুখস্থ। অসংখ্য ভারতীয় পত্রিকার ভীড়ে একমাত্র ‘টাইমস আব ইন্ডিয়া’ পত্রিকা টি পড়ার মতো। আর আনন্দবাজার, বর্তমান এগুলি কোলকাতা থেকে প্রকাশিত চটি বই এর আদলে এক একটি অত্যন্ত নিম্নমানের চটি পত্রিকা। লোকাল কোলকাতার লোকজনদেরও আমি আনন্দবাজার পড়তে দেখিনি। কিন্তু বাংলাদেশের এসব চেতনাবাজরা দেখছি প্রতিদিনই ফেসবুকে ওসব চটি-নিউজ শেয়ার দিচ্ছে খুব উৎসাহ নিয়ে।
 
আমার লেখা যারা নিয়মিত পড়েন তারা ইতিমধ্যেই জানেন স্যাংহাই আমার অতি প্রিয় শহর। স্যাংহাই শহরটাকে আমি পাগলের মতোই ভালবাসি। আমার অনেক লেখাতেই আমি স্যাংহাইকে নিয়ে আসি। স্যাংহাইকে বলা হয়ে থাকে ‘সেকেন্ড নিউ ইয়র্ক’। যারা নিউ ইয়র্ক দেখতে পারেননি- তাদের স্যাংহাই ঘুড়ে আসা দরকার; আপনারও ভালো লাগবে।
 
স্যাংহাই শহরটিতে দুটি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট রয়েছে। রাস্তগুলি ৩ থেকে ৪ তলা ফ্লাইওভারের। ৪০ তলার নীচে ভবন পাওয়া দুষ্কর। সুবিশাল সাবওয়ে সিষ্টেম। মানুষ আর মানুষে ঠাসা একটি উৎছল শহর। আসলে শহর তো এরকমই হবার কথা যেমনটা স্যাংহাই।
ওয়াংপু নদীর দুই তীরে পুশি আর পুডং নিয়েই মুলত স্যাংহাই শহরটি। মুল রাস্তা থেকে সরাসরি ৭টি পাক দিয়ে উপরে উঠে নানপু (南浦大橋) ব্রীজটি পার হয়ে পুবদিকেই পুডং। অসাধারণ ডিজাইনের এরকম একটি ব্রীজ আমি এই পৃথিবীর আর কোথাও দেখিনি, বহুবার এপার ওপার করেছি এই প্রিয় ব্রীজটিতে। এই ওয়াংপু নদীর নীচ দিয়ে কয়েকটা টানেলও দুই পাড়কে এক করেছে। টানেলটিও অসাধারণ।
 
ভারতের কোলকাতার ঐ একই ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’ নামের চটি পেপারটির আরও একটি নিউজ শেয়ার দিয়েছে আরও একজন ফেসবুক চেতনাবাজ বন্ধু। এটাও ছবি দিলাম। আনন্দবাজার চটি পত্রিকাটি সেখানে রিপোর্টে লিখেছে চট্রগ্রাম হয়ে যাচ্ছে স্যাংহাই।
 
ছিটাগাং নাকি স্যাংহাই হয়ে যাচ্ছে!
কোথায় স্যাংহাই আর কোথায় ছিটাগাং!!
কোথায় আগরতলা আর কোথায় চকির তলা!!!
 
রাইট হ্যান্ড ড্রাইভ বাংলাদেশের রাস্তার ট্যানেলের ছবিটি দেয়া হয়েছে একটি লেফট হ্যান্ড ড্রাইভ নকশার। অপরদিকে একটি প্রতিকী চিত্র দেয়া হয়েছে ট্যানেলের যেটা মুলত একটি একুরিয়ামের ছবি।
তাহলে চিটাগাং এ কি একুরিয়াম তৈরী হচ্ছে?
 
চেতনাবাজদের পত্রিকার ‘আনন্দবাজার চটি পত্রিকা’ আর কোথায় নামাবে বাংলাদেশের মানুষের জ্ঞানের পরিধি?
 
আর ওসব চেতনাবাজ গরুগুলি এসব শেয়ার দিয়ে নিজেদের কি প্রমাণ করছে- সেটাও আমার ঠিক বোধে আসছে না!
   Send article as PDF