শক্তির বদলে কৌশল

আপনি যখন শক্তিতে দুর্বল কৌশল-ই তখন আপনাকে বিজয়ী করে দেবার একমাত্র উপায় হতে পারে।


আপনি যখন জানেন যে আপনি শক্তিতে পারবেন না, তারপরও আপনার’চে শক্তিশালী কারো বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে যাওয়া আর আত্মহত্যা করা একই বিষয়।
এজন্যই বলা হয় বোকারাই মারা পরে এবং প্রবাদ বা সূত্রের উৎপত্তি ঘটে ‘Survival of the fittest’।


ভোলায় পুলিশের গুলিতে ৪ জন প্রতিবাদকারী নিহত হয়েছে।
আমি পরিস্কারভাবেই জানি যে বর্তমান ফ্যাসিষ্ট সরকারের বিরুদ্ধে আমার যে প্রতিবাদী অবস্থান তাতে আমি বাংলাদেশে গেলে আমাকে মেরে ফেলবে সেখানকার পুলিশ রাব ডিবি বিজিবি বা ছাত্রলীগ। কিন্তু এরপরও যদি আমি ‘বাহাদুরী’ দেখাতে বাংলাদেশে গিয়ে পৌছি- সেটাকে বলা হবে ‘বোকামী’। আমি বোকামী পছন্দ করি না, বোকাদের পছন্দ করি না। কৌশলকে শ্রদ্ধা করি। আমি জানি শেখ হাসিনা চিরকাল ক্ষমতায় থাকবে না, শেখ মুজিব থাকতে পারেনি, নমরুদ পারেনি, ফেরাউন পারেন, মার্কোস পারেনি এমনকি পারেনি সাদ্দাম বা গাদ্দাফিও। সুতরাং আমার সময় আসবেই- তাহলে আমি কেন কৌশলের বাইরে কাজ করে আত্মহত্যা করতে যাবো!


অভিযোগ বিপ্লব নামের একটা ছেলে ফেসবুকে কারো কারো ইনবক্সে গিয়ে আল্লাহ এবং রসুল (সা) কে অশ্লীল গালিগালাজ করেছে। ইনবক্সের স্কীনশর্ট সোশাল মিডিয়াতে প্রকাশ পাবার পরপর বিপ্লব নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পন করে জিডি করেছে যে ‘তার ফেসবুক হ্যাক’ হয়েছে।


এখানে দু’টো বিষয়। প্রথমত বিপ্লব বুদ্ধিমান ছেলে। সে জানে পুলিশ তাকে রক্ষা করতে পারবে। তাই সে পুলিশের কাছে গিয়ে উঠেছে।


দ্বিতীয় বিষয়টি হতে পারে অন্য কাউকে দিয়ে কিংম্বা স্বয়ং বিপ্লব’কে দিয়ে কেউ কাজটা করিয়েছে এবং তারাই বিপ্লবকে রক্ষা করতে থানায় পাঠিয়েছে। কোন সাধারণ বাংলাদেশী হিন্দু সজ্ঞানে এই কাজটা করবে না- কেউ করে না।


তাহলে কারা করতে পারে?উত্তরটা সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে দৃষ্টি দিলে পরিস্কারভাবেই বোঝা যায় কারা করাতে পারে। বাংলাদেশে একটা অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য ৪’টি সংগঠন দিবারাত্র পরিশ্রম করে যাচ্ছে। তাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অভিন্ন। তারা চায় বাংলাদেশে একটা দাংগা সৃষ্টি করে ভারতীয় সৈন্যকে বাংলাদেশে পাঠাতে।


১) ভারতীয় হাইকমিশন অফিস

২) ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’

৩) ইসকন

৪) হিন্দু-বৌদ্ধ-খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ


এই চারটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ‘একটাই’ এবং সেটা পরিস্কার। তারা বাংলাদেশকে হিন্দুত্ববাদী ভারতের অংগীভূত অথবা করদ রাজ্য করতে মরিয়া এবং তাদের লক্ষ্য একটাই এবং সেটা হলো বাংলাদেশে হিন্দুত্ববাদী শাসন কায়েম রাখা।


তারা ইতিমধ্যে অনেকাংশেই সফল। বর্তমান বাংলাদেশ ভারতের সিদ্ধান্তের বাইরে একচুল পরিমানও নড়াচরা করতে পারে না, পারছে না। ঐ চারটি সংগঠন তা করতে না দিতে বদ্ধপরিকর।


তারা বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের প্রশাসন, এবং আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তাদের করায়াত্ব করে ফেলেছে বেশ দক্ষতা ও সফলতার সংগেই। আর বাংলাদেশের ভীতু মানুষেরা বিক্ষিপ্ত, বিভ্রান্ত, এবং ভয়ংকরভাবে বিভক্ত। আর এই বিভক্তি তারা সৃষ্টি করেছে শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরপরই। তারা প্রথমে হত্যা করেছে তথাকথিত যুদ্ধপরাধের নামে ইসলামী আন্দোলনের প্রতিবাদী ও সাহসী মানুষদের। তারপর তারা সম্পূর্ণ পুংগ করে দিয়েছে অপর বিরোধী দল বিএনপিকে। একমাত্র প্রতিবাদী রাজনৈতিক কন্ঠস্বর বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে জেলে আটকিয়ে রেখেছে। এবং শেষটায় তারা দেশের ১৭ কোটি নিরীহ মানুষের মুখে স্বচ্ছ স্কসটিপ পড়িয়ে দিয়েছে- কেউ সেই স্কচটিপ খুলতে চাইলেই তারা সন্ত্রাসী সংগঠন বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে অবলীলায় হত্যা করে সেসব মানুষকে।


ভোলাতেও ঠিক তাই হয়েছে।এটা নতুন কিছুই না। এটা চলমান জনবিরোধী প্রশাসনিক কর্মকান্ডের ধারবাহিকতা। এবং এভাবেই চলতে থাকবে যতদিন না দেশের সমস্ত মানুষ একতাবদ্ধ হয়ে, ঐক্যবদ্ধ হয়ে ‘এদের’ বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে।


দেশের মানুষের এসব বিভক্তি আরও বাড়াতে এমন কোন কাজ নেই ‘তারা’ করছে না। মনে রাখতে হবে তারা ভয়ংকরভাবে আগ্রাসী, সন্ত্রাসী এবং শক্তিশালী। এরা দেশপ্রেমী মানুষের মধ্যে আরও বিরোধ উষ্কে দিয়ে ‘বিভক্তি’ জাগিয়ে রাখতেও তৎপর সদাসর্বদা।
আমি দেশবাসীর এমন একটা অসহায়, অভিভাবকহীন অবস্থায় অত্যন্ত উদ্বেগ্যের সংগে লক্ষ্য করে যে ‘র’ এবং ‘ইসকন’ অত্যন্ত দক্ষতার সংগে দেশের মানুষকেই ব্যবহার করে চলছে। কাউকে কাউকে প্রকাশ্যে বলতে দেখছি তারা ‘র’ বা ‘ইসকন’ এর কার্যক্রমকে স্রেফ মিথ্যা প্রচারণা বা অত্যন্ত হালকাভাবে উড়িয়ে দিচ্ছে। অনেক সরকারবিরোধী লেখকদেরও দেখছি এসব অপতৎপরতায় মানুষকে আরও বিভ্রান্ত করতে বুঝে না বুঝে ব্যবহৃত হচ্ছে। অনেকে ব্যক্তিগতভাবে আমাকে এসব বিষয়ে কিছু বলতে অনুরোধও করে যাচ্ছেন।


আমি এদের অনেককে ব্যক্তিগতভাবে চিনিও।এদের সম্পর্কে শুধুমাত্র একটা কথাই বলবো যে, তারা এখনও আঁতুর ঘড়ে বসে লেখালেখাতি ব্যস্ত। আরও সহজভাবে যদি বলি তাহলে একটা উদাহরণে যেতে হবে।


“ধরুন একটা ছোট ভবন বানাতে যদি ১০ জন লেবারের ৩ মাস সময় লাগে তাহলে ঐ ভবন’টা-ই তৈরীতে ৫ লক্ষ লোকের কত দিন সময় লাগবে?” উত্তরটি বের করতে পারবেন?


ওসব লেখকরা এই প্রশ্নটির উত্তরও বের করে ফেলবেন- সেটা যুক্তযুক্ত বা গ্রহনযোগ্য হচ্ছে কিনা সেটা তাদের বিবেচ্য না কারণ তারা একাডেমিক শিক্ষায় স্রেফ অংক কষতেই শিখেছে ‘এক্সট্রা অর্ডিনারী’ বোধ বলতে তারা কিছুই অর্জন করতে শিখেনি।


কারণ তারা দেখে ইসকনের জন্ম আমেরিকায়, তাদের সংখ্যা খুবই কম তারা স্রেফ হিন্দু সাধু-সন্নাসী (অনেকটা তাবলিগের মতো), তারা এতবড় চক্রান্তের অংশ হতে পারে না। সদ্য মায়ের কোলে জন্মনিয়ে আতুঁর ঘরেই বসবাস করে চিন্তা করলে এরচে সরল-সহজ চিন্তা কোত্থেকে জন্মাবে বলুন? দু’দিন বাদে এরাই হয়তো জাফর মাষ্টারের মতোই বুদ্ধিজীবি হয়ে উঠবে একএকজন।


এদের কথা বাদ দিন। এদের নিয়ে ভাবাটা স্রেফ সময় নষ্ট। আমি জাফর মাষ্টারকে নিয়েই ভাবি না কখনও- আর এসব ‘আঁতুর ঘরের লেখক’দের নিয়ে ভেবে লাভ কি?


যাই হোক, মুল কথায় ফিরি। এরা একই সংগে এতটাই শক্তিশালী এবং কৌশলী যে- তারা আমার ‘ইসকন বা র বিরোধী’ প্রতিটি লেখায় ‘রিপোর্ট’ করে এবং আমার এই পর্যন্ত দু’টি লেখা তারা ব্যান করিয়ে দিতে সমর্থ হয়েছে; যদিও একটা লেখা আমি ৩ দিন পর ফেরত পেয়েছি (ফেসবুকের সংগে দেনদরবার করে) কিন্তু অন্যটি স্থ্যায়ী ব্যান ছিল এবং ফেসবুক আমাকে ২৪-ঘন্টার জন্য ফেসবুকে নিষিদ্ধ করেছিল।


ইসকন যদি সহজ-সরল তাবলীগই হতো- তাহলে তারা আমার লেখা’র বিরুদ্ধে ‘রিপোর্ট’ করে কিভাবে? বাংলাদেশের তাবলীগের কোন সদস্য ফেসবুকে কোন লেখার বিরুদ্ধে সঙ্গবদ্ধভাবে রিপোর্ট করার যোগ্যতা বা হ্যাডম রাখে?


সহজ সরল অংক কষে যে কখনও মার্ক জাকারবার্গ হওয়া যায় না- এটা বুঝতেও জ্ঞান লাগে, যে জ্ঞান একজন পিএচডিওয়ালা নামকরা কোন অর্থনীতিবিদেরও থাকে না।


শেষ কথায় আসি।মানুষকে সচেতন করুন দেশের বর্তমান এবং ভবিষ্যত দুরাবস্থা নিয়ে। দেশের স্বাধীনতা আজ ভুলন্ঠিত। আমাদেরও সঙ্গবদ্ধ হতে হবে, এবং কৌশলী হতে হবে।
আপনি জানেন বাংলাদেশে কোন আন্দোলন করলে ছাত্রলীগ বা পুলিশ আপনাকে গুলি করবে অথবা হাতুরী পিটা করবেই। তাহলে আপনি কেন খালি হাতে মিছিলে যান? হয় মিছিলে যাবেনই না আর নয়তো ‘যথেষ্ঠ প্রস্তুতি’ নিয়ে মিছিলে যাবেন।


পুলিশ যদি বেআইনী ভাবে আপনাকে গুলি করে হত্যা করতে পারে- তাহলে আপনারও শতভাগ সাংবিধানিক ক্ষমতা রয়েছে পুলিশ হত্যা করার। ৫০ হাজার মানুষ মিলে ৫০টা পুলিশকে ফেলে দিতে পারেন না? ক্ষমতার বদলে ক্ষমতা দেখাতে পারেন না? যদি না পারেন- ঘরে বসে থাকুন- আন্দোলন করার দরকার নেই।


মানুষকে সচেতন করুন। এই ভারতীয় দালাল অবৈধ সরকারের কর্মকান্ড সম্পর্কে, তাদের দুরাভিসন্ধি সম্পর্কে আপনার আত্মীয়-স্বজন, প্রতিবেশী, বন্ধু-বান্ধবদের সচেতন করুন। কৌশল বের করুন। তারপর সম্মিলিতভাবে সারা দেশে একযোগে সাড়াশি আন্দোলনে ঝাপিয়ে পড়ুন।


তবে এটাও মনে রাখতে হবে- কোন অর্জনই ঘরে বসে হয় না।

   Send article as PDF