সুশিক্ষিত হাত

বাংলাদেশ পুলিশ নিয়ে একটা আর্টিকেল লিখার চিন্তা বেশ কয়েকদিন যাবৎ মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে- কিন্তু পেরে উঠছি কৈ? শব্দগুলি সাজাতে-ই পারছি না।
 
আজও সেই একই উদ্দশ্য নিয়ে বসলাম। কিছু স্ট্যাডী করছিলাম।
 
হঠাৎই মনে হলো কাউন্টার টেরিরিজম এর ডিআইজি মনিরুল ইসলামের ফেসবুক প্রফাইলে একটু টু মারি।
 
বিশ্বের সবচে প্রতিষ্ঠিত ও লাইসেন্সড সন্ত্রাসী সংগঠন ‘বাংলাদেশ পুলিশ’ নিয়ে লিখবো আর এটার ‘মার্ডার ও গুম সেল’ এর প্রধান বাংলাদেশের সবচে নষ্ট পুলিশ ডিআইজি মনিরুলের সাম্প্রতিক স্ট্যাটাসগুলি দেখবো না- সেটা কি হয়?
 
এই সেই মনিরুল যে কিনা গত বছর আমার একটা কমেন্টের উত্তর দিতে না পেরে শেষ-মেশ আমাকে ‘বিশেষ গোত্রভূক্ত’ বলে মিথ্যা তকমা দিয়ে- ব্লক করে দিয়েছিল।
 
একটা ফেইক আইডি দিয়ে গেলাম মনিরুলের টাইমলাইনে। কয়েকটা স্ট্যাটাস পড়লাম কিছুটা সময় নিয়ে।
 
মনিরুল কিছুদিন আগে ইরান সফর করেছে। সেই সফর নিয়ে সে একটা আর্টিকেল লিখেছে। সেটা পড়লাম। সে উল্লেখ করেছে ‘আরাবিয়ান কোন দেশে এটাই তার প্রথম সফর’।
 
হাসলাম। সত্যিই অনেকক্ষন ধরে হাসলাম।
বিসিএস ক্যাডারের মনিরুল জানেই না যে ‘ইরান মধ্যপ্রাচ্যেভুক্ত আরাবিয়ান কোন দেশ নয়’। জাতিসংঘ ইরানকে দক্ষিন-পশ্চিম এশিয়ান দেশ হিসাবে কাউন্ট করে। আর ইরানের ভাষাও আরবী নয়- তারা পারসী ভাষায় কথা বলে
 
তখনই মনে হলো, আজ আর পুলিশ নিয়ে লিখবো না।
তারচে বরং বাংলাদেশের শিক্ষা নিয়ে লিখি। শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে কিছু কথা অনেকদিন যাবতই লিখবো লিখবো বলে ভাবছিলাম।
 
লেখাটা শুরু করার আগে কিছু তথ্য জেনে নেয়া দরকার।
 
আমেরিকায় প্রতিটি মানুষের একটা ‘সোসাল সিকিউরিটি নাম্বার’ থাকে। জন্মের সংগে সংগে এই ভুখন্ডের ভেতরে জন্ম নেয়া প্রত্যেকেই ‘সম্মানিত নাগরিক হিসাবে’ এই নাম্বারটি পেয়ে থাকে। তার সারাটা জীবন নাম, জন্ম তারিখের সংগে এই নাম্বারটিও উৎপোতভাবে জড়িয়ে থাকে।
 
ডিজিটাল ডাটাবেজে শুধুমাত্র লাষ্ট নেইম, ফাষ্ট নেইম, জন্ম তারিখ এবং সোসাল সিকিউরিটি নাম্বারের সাহায্যে মোটামুটি তার জীবন-বৃত্তান্ত, টাকা-পয়সার অবস্থা, চিকিৎসা, শিক্ষা সবকিছুই চলে আসে।
 
খুবই সহজ, সাধারণ একটা বিষয়। ঢাকায় বসবাসকালে আমি বাংলাদেশেও ‘সোসাল সিকিউরিটি নাম্বার’ এমপ্লিমেন্ট করার জন্য এমন একটা আর্টিকেল লিখেছিলাম, সংগে আরও কিছু বিষয় নিয়ে। কিন্তু এসব তো বাংলাদেশে করা মানা। চুরি করে খাওয়া বন্ধ হয়ে যাবে না!
 
আমেরিকায় ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত এই ভূখন্ডে বসবাসরত প্রতিটি শিশুর (সে এই পৃথিবীর কোন প্রান্তের নাগরিক- সেটা কোনভাবেই বিবেচ্য নয়) লেখা-পড়া, স্কুলের টিফিন ও চিকিৎসা সম্পূর্ণ ফ্রি। এমনকি তার পিতা-মাতার আয় যদি কম হয় তাহলে বাৎসরিক পাঁচ সাত হাজার ডলার ক্যাশ বেনিফিটও পাওয়া যায়।
 
মোয়াম্মের গাদ্দাফি’কে আমরা সকলেই চিনি। লিবিয়ার সুপ্রিম লিডার ছিলেন। মোয়াম্মের গাদ্দাফি যখন ক্ষমতায় ছিলেন তখন লিবিয়ার প্রতিটি নাগরিকের নামে একটা করে ব্যাংক একাউন্ট ছিল এবং তেল বেচা আয় থেকে প্রাপ্ত একটা অংশ সরাসরি প্রতিটি নাগরিকের একাউন্টে এসে জমা হতো।
 
মোয়াম্মের গাদ্দাফি চিরজীবন ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। তিনি স্বৈরশাসক ছিলেন। দেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার এর বালাই-ও ছিল না। তিনি স্বেচ্ছাচারী শাসক ছিলেন। আয়েশী জীবনে অভ্যস্ত ছিলেন।
 
কিন্তু তিনি তার দেশের মানুষের জন্য যতটুকু সম্ভব শিক্ষা, চিকিৎসা এবং রাষ্ট্রিয় সুযোগ সুবিধা দিয়েছেন বা দেবার চেষ্টা করেছেন- বিনিময়ে ‘একনায়ক’ এর দাপটে ক্ষমতা আকড়ে ধরে ছিলেন।
 
আমার গ্রামের একটা ছেলে। আমার’চে বয়সে অল্প কিছু বড়। লেখাপড়ার পাঠ না চুকিয়েই অল্প বয়সে সে চলে যায় ইরাক। ওর চাকুরীর বয়স বছর দু’য়েক হবার এক পর্যায়ে স্বেচ্ছাচারী শাসক প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন এক রাতেই দখল করে বসেন কুয়েত রাষ্ট্রটিকে।
 
আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সিনিয়র হস্তক্ষেপ করেন মধ্যপ্রাচ্যে কুয়েতকে উদ্ধার করতে। আমার গ্রামের ছেলেটি অন্য অনেকের মতোই প্রাণ ভয়ে দেশে ফিরে আসে- কোম্পানীকে জানানোর সুযোগও সে পায়নি।
 
মাস তিনেক পর সে হঠাৎই একটা চিঠি পায় ইরাক থেকে।
ডাকে প্রাপ্ত চিঠিটি খুলে সে তো আনন্দে আত্মহারা।
কোম্পানী তাকে চলে আসার পরের এই কাজহীন তিন মাসের তিনটি ব্যাংক ড্রাফট পাঠিয়েছে- ওর বেতন হিসাবে। চাকুরী না করেও বেতন। আনন্দ কে না পাবে?
 
সাদ্দাম হোসেন জঘন্য স্বৈরাচারী শাসক- এ বিষয়ে আমি কিছু্ই বিলবো না। কিন্তু আমি শুধু এটুকু-ই বলবো যে, একটা দেশকে কতটা উচ্চতায় নিয়ে গেলে পালিয়ে আসা বিদেশী কর্মচারীকেও তারা কাজ না করা সত্বেও পূর্ণ বেতন ডাকে তার গ্রামের ঠিকানা পোষ্টে পাঠিয়ে দিতে পারে!
 
সাদ্দাম হোসেন তার দেশকে শিক্ষা, চিকিৎসা, সভ্যতা উপহার দিয়েছিলেন কিন্তু বিনিময়ে স্বৈরাচারী কায়দায় গণতন্ত্র, মানবাধিকারকে ধ্বংশ করে নিজে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন।
 
সাদ্দাম গাদ্দাফিরা তার নিজ দেশের মানুষকে কিছুটা দেবার বিনিময়ে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন- পারেননি।
 
আমরা কিন্তু ফেরাউন নমরুদদের কথাও জানি। ওরাও কিন্তু নিজেকে ঈশ্বর দাবী করে আজীবন ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিল। পারেনি। ফেরাউন নমরুদদের আমলে মিসর কিন্তু একেবারে ফেলে দেবার মতো ভুখন্ড ছিল না- নিজেকে ঈশ্বর প্রমাণের জন্য হলেও ফেরাউন নমরুদরা দেশের জন্য কিছু হলেও করার চেষ্টা করেছিল। মিসরীয় সভ্যতা কিন্তু আজও আমরা দেখতে পাই।
 
কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের অবস্থা কি?
 
ডিআইজি মনিরুল’রা আজ পুলিশের উচ্চস্তরের কর্মকর্তা। তার যোগ্যতা সে গোপালগঞ্জ জেলার অধিবাসী। পুলিশের আইজি, রাবের ডিজি সবই গোপালগঞ্জ থেকে উঠে আসা। এরাও বিসিএস দিয়ে পুলিশে ঢুকেছে। তাদের একমাত্র যোগ্যতা তারা যেনতেনভাবে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখতে কাজ করে যাবে।
 
তাদের একমাত্র কাজ হবে, বিরোধী মতামতকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়া। শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কোন কথা বলা চলবে না। কথা বললেই গুলি। হত্যা। গুম। অথবা চিরতরে শারিরীকভাবে পুংগ করে দেয়া।
 
পুলিশের এই অসভ্য অফিসারগুলির যোগ্যতা, সুশিক্ষা এতটাই কম যে একটা নিরীহ মানুষকে বিচারবহিভূতভাবে হত্যা করে সেটাকে ‘সরল ব্যাখ্যা দিতে’ একটা নাটকের স্ক্রীপ্টও বিশ্বাসযোগ্যভাবে লিখতে পারে না। এটাই বাংলাদেশের শিক্ষা হাল।
 
বাংলাদেশের কতজন অনার্স মাষ্টার্স করা ছেলে-মেয়ে ইংরেজীতে ঠিকঠাকভাবে একটা এপ্লিকেশন লিখতে পারে?
 
ইংরেজী বাদ দিন, বাংলাতেও ভালভাবে লিখতে পারে না ৫০% শিক্ষিত বাংলাদেশী।
 
বাংলাদেশের মানুষের জীবনটা কেমন- একটু ব্যাখ্যা দিই।
জন্মের পর এরা শিক্ষা গ্রহন করবে। সকলেই এদেশে উচ্চ শিক্ষা নিবে।
দেশের প্রতিটি বাবা-মা স্বপ্ন দেখে তাদের সন্তানকে বানাবে ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার অথবা বিসিএস অফিসার।
 
বাংলাদেশের সকলেই পড়ালেখা শেষ করে ‘অফিসার’ হবে- এটাই সকলের একমাত্র স্বপ্ন।
এই লাগামহীন স্বপ্ন-ই একটা দেশকে শেষ করে দেবার জন্য যথেষ্ঠ।
 
রেজাল্ট কি হচ্ছে? প্রতিটি ছেলে-মেয়েই পড়াশোনা শেষ করে একটা চাকুরী’র পেছনে ছুটছে- কিন্তু চাকুরীটা তাকে দেবে কে? এতটুকু ভাবারও ফুসরত নেই কারো।
 
এর উপর রয়েছে শিক্ষার মান। ইংরেজী আর অংকে ভয়। শিক্ষকদের অযোগ্যতা। যোগ্যতা কিভাবে পাবেন? প্রাইমেরী স্কুলের শিক্ষক নিয়োগে মেয়েদের যোগ্যতা চাওয়া হতো এসএসসি পাস আর ছেলেদের যোগ্যতা চাওয়া হতো গ্রাজুয়েট। তারউপর ৬০% কোটা মেয়েদের জন্য নির্ধারিত।
 
একটা এসএসসি পাশ মেয়ে- নিজে কতটা শিক্ষিত?
সে কতটা শিক্ষা দেবে দেশের ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের?
 
আমার গ্রামের আরেকটা ছেলের গল্প বলি। ছেলেটা অত্যন্ত দুষ্ট প্রকৃতির। আমার সংগে ওর বেশ ভালো সম্পর্ক ছিল। এমন কোন বদমায়েশী ছিল না যে ও না করতো।
 
তখন বেগম খালেদা জিয়া ক্ষমতায়। প্রথম মেয়াদে।
হঠাৎ ওই ছেলেটি একদিন আমাকে এসে জানালো আমাদের এলাকারই একটা চমৎকার সুন্দরী মেয়ে নাকি ওকে সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাবে এবং লাঞ্চ করাবে! বিষয়টা নিয়ে সে খুবই উৎফুল্ল। তার জন্য এটা এটা বিশাল এচিভমেন্ট।
 
আমার মাথায় অন্য চিন্তা। সেই মেয়েটাকে আমি চিনি। তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা আহামরী ভালো না। কিন্তু তাই বলে সেই মেয়ে ওকে সিনেমা দেখাবে, খাওয়াবে- এটা ঠিক মেলাতে পারছিলাম না। টাকা পাবে কোথায়?
 
যাই হোক, পরে জানলাম প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া সারাদেশের মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করে দিয়েছেন এবং মেয়েদের ‘হাত খরচ’ বাবদ কিছু টাকাও দিয়েছেন।
 
এবং সেই টাকা দিয়ে দেশের মেয়েরা ছেলেদের নিয়ে আনন্দ ফূর্তি করে বেড়াচ্ছে। বেগম খালেদা জিয়া’র ক্ষমতা নেই যে- নিজের টাকা দিয়ে মেয়েদের ফুর্তির টাকা জোগাবেন- ওই টাকা আমার কষ্টের ট্যাক্সের টাকা। সুতরাং আমি ওটা মেনে নিতে পারিনি।
 
এভাবে শিক্ষার নামে টাকা নষ্ট করার ক্ষমতা আমি আমার টাকার বিনিময়ে করতে দিতে পারি না।
 
সমস্যাটা হলো ইরাক বা লিবিয়া চালিয়েছে সাদ্দাম হোসেন বা কর্ণেল গাদ্দাফি নিজের বুদ্ধিতে। নিজেদের যোগ্যতায়। তারা অহংকারী, ক্ষমতালিপ্সু ছিলেন।
 
কিন্তু বাংলাদেশ চালাচ্ছে কে?
শেখ হাসিনা?
খালেদা জিয়া?
 
না। হাসিনা-খালেদার সেই বুদ্ধি নেই। তারা দেশ চালায় না।
বর্তমান বাংলাদেশ চালায় আমলরা। প্রশাসন এবং পুলিশ বাহিনী। হাসিনা-খালেদারা ক্ষমতা এনজয় করে আর দেশের টাকা চুরি করে।
 
রাষ্ট্রের কোন টার্গেট নেই। একটাই চিন্তা একবার ক্ষমতায় গেলে বাকী জীবন যেকোনভাবে ক্ষমতা আকড়ে রাখা- এই চিন্তায়ই হাসিনা-খালেদা’রা নির্ঘূম থাকেন। থাকতেন। দেশকে কিছু দিতে নয়- বিএনপি আওয়ামী লীগ এর একমাত্র চিন্তা দেশটাকে গিলে খাওয়া।
 
আর বর্তমান অবৈধ শেখ হাসিনা তো শুধু দেশটাকেই খাচ্ছে না- দেশটাকে চিরতরে শেষ করে দেবার প্রতিজ্ঞা নিয়ে নেমেছে মুজিব হত্যার প্রতিশোধ নিতে।
 
বাংলাদেশ কেউ আসলে চালায় না- এটা এমনি এমনিই চলে!
আর তাইতো দেশের কোন উন্নতি নেই, শিক্ষা নিম্নমূখী।
 
শিক্ষাই যদি জাতির মেরুদন্ড হয়ে থাকে তাহলে বাংলাদেশী জাতিটি অলরেডী মেরুদন্ডহীন।
 
আমার সেদিন ফিজিক্স পরীক্ষা। ইন্টারমিডিয়েট ফাইনাল। আমার ডানপাশে বসেছে আটর্সের একটা ছেলে। ওর প্রশ্ন এসেছে ‘জাতিসংঘের ৫টি স্থায়ী সদস্য দেশের নাম’ লিখতে। সে পারছে না। বার বার তার পেছনের ছেলেটিকে বিরক্ত করছে। বিষয়টি আমার দৃষ্টি এড়ালো না। আমি ওকে বলে দিলাম নাম পাঁচটি।
 
ওই ছেলে বিশ্বাস করতে চায় না যে আমি সত্যি বলছি- কারণ সে আর্টসের ছাত্র হয়েই পারছে না আমি সায়েন্স ষ্টুডেন্ট হয়ে কিভাবে পারবো?
 
দেশের শিক্ষার মান ও অব্যবস্থাপনা নিয়ে সকলেই বেশ ভাল ধারণা রাখেন- সে বিষয়ে কিছু না বলি।
 
এখন শিক্ষা মনেই নকল, দেশের সকল পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস- যেটা আবার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররাও, ঘুষ বাণিজ্য ইত্যাদিতে ভরপুর।
 
বাংলাদেশের মানুষ শিক্ষা নয়, সার্টিফিকেট ক্রয়ের প্রতিযোগীতায় নেমেছে।
 
এদের মাথায় কোন শিক্ষা ঢুকে না। এরা কুশিক্ষিত। নকল করে পাশ করে এরা। আর এদেরকেি বেছে নেয় জাফর ইকবাল, মতিউর রহমান, আনিসুল হকেরা। এদের কাছেই ফেরী করে ‘চেতনা’।
 
আর এসব সার্টিফিকেটধারীদের বড় একটা অংশই আজ চেতনাবাজীতে জড়িয়ে পড়েছে।
 
আমার বেশীরভাগ আর্টিক্যালই একটু বড় হয়ে যায়- নানা উপমা যোগ করাতে। শেষ করবো। শেষ করার পূর্বে শিক্ষার একটা স্ট্যাইল উপস্থাপন করার চেষ্টা করি।
 
১) দেশের প্রতিটি ছেলে মেয়ে ক্লাস ওয়ান থেকে ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত শুধুমাত্র বাংলা, ইংরেজী, গণিত এবং ধর্ম ও নৈতিকতা শিখবে। ক্লাস ফাইভের মধ্যেই স্কুলের শিক্ষকদের দায়িত্ব হবে- কোন শিশুটি ঠিক কোন বিষয়ে ক্রিয়েটিভ বা আগ্রহী তা আইডেনটিফাই করা। এবং সেই ‘বিশেষ’ যোগ্যতা সম্পর্কে তাকে আরও বেশী বেশী উৎসাহী করে গড়ে তোলা।
 
২) ক্লাস সিক্স থেকে প্রতিটি শিশুকে তার নিজস্ব ভাবনার জগতের উপর পড়াশোনার সুযোগ দিতে হবে। শিশুটিকে মুক্ত করে দিতে হবে তার স্বাধীন ইচ্ছায়। এখান থেকেই বের হয়ে আসবে কে ভাল গান করে, কে ভাল ফুটবল খেলে বা ক্রিকেট খেলে। কে রসায়ন বা ফিজিক্স বুঝে। আর কে পেশী শক্তি নিয়ে চলতে পছন্দ করে। যে শিশুটি ঠিক যে বিষয়ে পারদর্শীতা দেখাতে পারবে তাকে ঠিক সেই বিষয়ে শিক্ষা গ্রুপে ভর্তি করা হবে। গদ বাঁধা সায়েন্স আর্টস কমার্স এসব ফালতু আর যুক্তিহীন সাবজেক্টে নয়।
 
৩) ক্লাস এইট পর্যন্ত তিন বছরে মোটামুটি শিশুটির ভবিষ্যত রাস্তা বের হয়ে যাবে। বাবা-মা চাইলে আমার ছেলে ডাক্তার হবে, ইঞ্জিনিয়ার হবে এসব চিন্তা সম্পূর্ণভাবে বাতিল করে দিতে হবে। জীবন যার তার ইচ্ছাই আগে। যে ভাল ক্রীড়াবিদ তাকে ডাক্তার বানানোর আপাতত প্রয়োজন নেই। আর এর মধ্যেই অর্থাৎ ক্লাস এইট এর মধ্যেই খুঁজে খুঁজে বের করতে হবে একদল মেধাবী ও আত্মপ্রত্যয়ী শ্রমিক। আমাদের প্রয়োজন কোটি কোটি কর্মঠ শ্রমিকের শিক্ষিত হাত। যা দিয়ে আমরা চেঞ্জ করে দেবো একটা দেশকে। একটা জাতিকে।
 
৪) ক্লাস নাইন থেকে ক্লাস টুয়েল্ভ। এই চার বছরে আমরা তৈরী করে ফেলবো কয়েক কোটি হাতের কাজ জানা দক্ষ শ্রমিক। ইন্টারমিডিয়েট পাশ ওয়েল্ডার, প্লাম্বার, ড্রাইভার, কুক যারা কিনা টনটনে ইংরেজীতে কথা বলবে যে-কারো সংগে। যাদের চাকুরীর পেছনে ছুটতে হবে না- ‘বিশ্ব বাজার’ তখন বাংলাদেশে এসে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে থাকবে কাদেরকে সংগে করে বিমান ভাড়া, উচ্চ বেতন, ফ্রি চিকিৎসার সুবিধার বিনিময়ে হায়ার করে নিয়ে যাবে নিজ দেশে।
 
৫) এবার আপনি উচ্চ শিক্ষা গ্রহন করতে চান? আপনার মেধা রয়েছে? যোগ্যতা রয়েছে? যত ইচ্ছে পড়ুন। ডাক্তার হোন, ইঞ্জিনিয়ার হোন, ব্যারিষ্টার হোন- কোন অসুবিধে নেই। পড়া শেষে গবেষনা করুন। কিন্তু যারা সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করবেন- তারা বিদেশে যেতে পারবেন না সেটেলড হতে- যদি যেতে চান, রাষ্ট্রের যত টাকা নষ্ট হয়েছে আপনার পেছনে বিগত ১৭ বছরের পড়াশোনায় তা রাষ্ট্রকে পরিশোধ করে দিয়ে তারপর চলে যান।
 
আমাদের কোটি কোটি আইএ, বিএ, এমএ পাশ ছেলে-মেয়ের দরকার নেই।
 
আমাদের সুশিক্ষিত হাত দরকার।
যেই হাত বদলে দেশে একটা দেশকে, একটা জাতিকে।
 
   Send article as PDF