পাকিস্তানী- আমার দেখায়

আমি যাচ্ছি ওয়েজু শহরে।
৩ দিন থাকবো। ৩/৪ টা মেশিনের ফ্যাক্টরী ভিজিট করবো।
 
চায়নাতে বিদেশীদের জন্য থ্রি-ষ্টার মানের নীচে কোন হোটেলে গেষ্ট হওয়ার সুযোগ নেই। সাধারণ ডিলাক্স হোটেলেগুলি এমনিতে বেশ ভালো, ভাড়াও অনেক কম কিন্তু ওরা চাইনিজ ছাড়া কিছু জানেও না তাছাড়া নিয়ম না থাকাতে বিদেশীদের সংগে কথাও বলতে চায় না।
 
সাংহাই থেকে বাসে উঠলাম।
আমার পাশের সিটে বসেছে একটা ছেলে, চাইজিন।
 
একজন মানুষ একটানা কতক্ষন মোবাইলে কথা বলতে পারে?
১ ঘন্টা।
২ ঘন্টা।
৩ ঘন্টা।
 
স্যাংহাই থেকে ওয়েঝু যেতে বাসে সময় লাগে প্রায় ৬ ঘন্টা। প্রায় ৫০০ কিলোমিটার রাস্তা। সে ওই ৬ ঘন্টা ধরেই উচ্চস্বরে একটানা কথা বলেই যাচ্ছে।
 
আমি বিরক্ত।
বিরক্ত মানে মহা বিরক্ত।
 
অনেক কষ্টে বিরক্তি চেপে রেখে জার্নিটা শেষ হলো।
গাড়ী গন্তব্যে পৌছার ঠিক ৫/৭ মিনিট আগে সে তার ফোন রাখলো। আমার দিকে তাকিয়ে এবার মিষ্টি করে হেসে বলল, ‘আই এম সরি’।
 
আমি যতটা সম্ভব ভদ্র মুখ নিয়ে বললাম, ‘ইটস্ ওকে’।
‘তুমি কোথায় যাবে? কি কাজে এসেছো এখানে?’
‘এখানেই কয়েকটা মেশিন দেখবো; দেখি কোন একটা হোটেলে উঠবো’
‘আমি ওলন; আমি তাইওয়ান থেকে এসেছি। আমিও ৪ দিন থাকবো এখানে কিছু কাজ রয়েছে। আমি এখানে একটা খুব ভালো ডিলাক্স হোটেল চিনি- খুবই ভালো ব্যবস্থাপনা এবং ভাড়াও অনেক কম। আমি তোমাকে অনেক বিরক্ত করেছি। বিরক্তটা পুশিয়ে দিতে চাই। তুমি আমার সংগে ওই হোটেলে যেতে পারো। এমনিতে ওরা তোমাকে থাকতে দেবে না; কিন্তু আমার রেফারেন্সে থাকতে পাবেন। আমি গ্যারান্টি দিচিছ তোমার ভাল লাগবে।’ একটানা সুন্দর ইংলিশে কথাগুলি বলে থামলো ছেলেটা।
 
গাড়ী থেকে নামলাম।
লাগেজ নিলাম। ওও নিল।
একটা টেক্সি ডাকলো ওলন। দু’জনে উঠে বসলাম।
 
কাছেই একটা হোটেলের সামনে এসে থামলো ট্যাক্সিটি। ও আমাকে ভাড়া দিতে দিল না।
রিসিপ্টশনে গেলাম। ওলন ম্যান্ডারিনে কিসব কথা বললো। তারপর আমার দিকে ফিরে বলল এখানে তোমাকে ভাল একটা এয়ারকন্ডিশন রুমে দিচ্ছে- ভাড়া পড়বে ৫০ আরএমবি।
 
আমি কিছুটা অবাকই হলাম। এমনিতে চায়নার কোন শহরেই ১২০ আরএমবি’র নীচে রুম পাওয়া যায় না। ওলনের উপর আমার বিরক্তি কমলো। আমি ওকে থ্যাকংস দিলাম। ওলন চলে গেল ওর নিজের রুমে। আমাকে বললো, ‘রেন্ট নাও। কাল দেখা হবে; গুড নাইট’।
 
আমাকে ৫ তলার একটা রুমের রুম-কী দেয়া হল।
আমি লিফটের দিকে গেলাম।
 
লিফট নীচে এসে থামলো, আমি দাড়ানো- খালি হলে ভেতরে ঢুকবো।
 
আমাকে অবাক করে দিয়ে লিফট থেকে ৩/৪ জন সাদা জুব্বা-দাড়ি-টুপিওয়ালা ভদ্রলোক বের হলো। এবং আমাকে দেখেই ‘আসসালামু আলাইকুম, তুমি কোন দেশ থেকে এসেছো?’ প্রশ্ন করলো ওদের একজন।
‘ওয়ালাইকুম আসসালাম, বাংলাদেশ’ বলাতেই ওরা একে একে সকলে আমাকে জড়িয়ে ধরে হ্যান্ডশেকটা কোলাকুলি পর্যন্ত নিয়ে গেল।
‘তোমার রুম নাম্বার কত?’
‘৫১২’ আমি বললাম।
‘ওকে; তুমি রুমে যেয়ে ফ্রেস হও। আমরা আসছি। তুমি কিন্তু আজ রাতে আমাদের সংগে খাবে। আমরা সকলেই পাকিস্তানী- তোমরা আমরা ভাই ভাই।’ অনেকটা আদেশের স্বরে বেশ হাসিমুখে ও অত্যন্ত আন্তরিকতার সংগে কথাগুলি বলে ওরা অদৃশ্য হয়ে গেল।
 
আমি কিছুটা হকচকিয়ে লিফটে ঢুকলাম। পাঁচ তলায় নেমে আমার রুমে গিয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে ফ্রেস হলাম। ঠিক তখনই দেখলাম, রুমে কেউ কলিংবেল টিপছে।
 
গেট খুললাম। ওদের একজন হাসছে। ‘কোথা থেকে আসলে আজ? বাংলাদেশ থেকে সরাসরি না কি অন্য কোন শহর থেকে?’
আমি হেসে দিলাম, ‘না। স্যাংহাই থেকে এসছি। চায়নায় এসেছি তা-ও ৩/৪ দিন হয়ে গেছে।’
‘তোমাকে পেয়ে আমাদের খুব ভালো লাগছে। আজ আমরা স্পেশাল খাবারের আয়োজন করেছি। খাবারের পরিমাণও আজ অনেক বেশী। তোমাকে নিতে এসেছি। সবাই ওয়েট করছে- তুমি যাবার পর সবাই খাওয়া শুরু করবো একসংগে।’
 
আমি ওদের এরকম আন্তরিকতায় সত্যিই হতবাক। ওদের দৃষ্টিতে আমি সরলতা ও আন্তরিকতার কোন অভাব দেখছি না। আমার পর্যবেক্ষন ক্ষমতা অত্যন্ত ভালো।
 
ওর সংগে ৩ তলায় গেলাম ওদের রুমে।
রুমে ঢুকে দেখি মেঝে-তে বিছানা পেতে খাবার সামনে নিয়ে সকলে গোল হয়ে বসে রয়েছে। আমাকে দেখে সকলে খুব খুশী। ‘এসো, এসো তোমার জন্যই তো বসে রয়েছি। এবার খাওয়া শুরু করা যাক’।
 
আমি নীচে বসলাম ওদের সংগে। খুবই সফট পারাটা, তন্দু রুটি, কয়েক রকমের কাবাব, সালাদ আর সফট ড্রিংকস নিয়ে ওরা বসেছে। সত্যিই খাবারগুলি অত্যন্ত সুস্বাধু ছিল। আমি এমনিতে কাবাব পছন্দ করি না- কিন্তু ওগুলি চমৎকার ছিল।
 
খাবারের মধ্যেই সকলে একে একে তাদের পরিচয় দিল। সকলেই উচ্চ শিক্ষিত। ওরা কি একটা ট্রেনিং এ এসেছে ওয়েঝু শহরে। মাস খানেকের জন্য। এই হোটেলেই ওঠেছে। ৩ জনের বাড়ী-ই করাচী শুধু একজন লাহোর থেকে এসেছে।
 
ওরা পাকিস্তানের অনেক গল্প করলো। আমি বাংলাদেশের।
তারপর পর্যাপ্ত খাওয়া শেষে একটা প্যাকেটে আমাকে অনেকগুলি কাবাবও কয়েকটা পরাটা দিয়ে বললো- রুমে রেখে দিবে- এসি চললে খাবার নষ্ট হবে না। কাল সকালে খেয়ে নিবে।
 
সত্যি বলতে কি, সম্পূর্ণ অচেনা ভিনদেশী মানুষদের কাছ থেকে শুধুমাত্র ‘কমন ধর্মীয়’ কারণে এতটা আন্তরিকতা পাওয়া যায়- সেটা আমার ধারণারও বাইরে ছিল।
 
ওদের জায়গায় আমরা হলে- কোন পাকিস্তানী বা ভিনদেশীদের সংগে এরকম করতাম বলে তো মনে হয় না।
 
দুই।
 
আমি যতবার বেইজিং যাই ততবারই চাওয়ান ডিষ্ট্রিক্ট এর ডংজিমেওয়াই ডাইজির (কানাডিয়ান এম্বাসীর পাশে) ফোর্থ ফ্লোরে অবস্থিত চেংগুরি রেষ্টুরেন্টে কম করে হলেও একবেলা খাবার খাই। ওটা একটা বাংলাদেশী-আমেরিকান মালিকের রেষ্টুরেন্ট। চমৎকার সব দেশী খাবার পাওয়া যায় ওখানে।
 
আমি খুবই তৃপ্তি নিয়ে খাই প্রতিবারই।
 
রেষ্টুরেন্টে ঢুকলাম। বুফে খাবো। হঠাৎ লক্ষ্য করলাম দু’টো বাংলাদেশী ছেলে একটা চাইনিজ মেয়েকে নিয়ে অন্য একটা টেবিলে বসে খাবার খাচ্ছে।
 
আমার কৌতুহল বেশী।
 
খাবার শেষ করে ওদের টেবিলে গেলাম।
ওদের একটা ছেলে আমাকে সালাম দিল। আমি নিজের পরিচয় দিলাম।
 
ওদের নিয়ে আমার কৌতুহলটা জানালাম।
ওরা হেসে দিল। নিজেদের পরিচয় দিল। একজনের বাড়ী কুমিল্লা আর অন্যজন চাদপুরের। তারা ৩জন-ই স্যাংডং মেডিকেল ইউনিভার্সিটিতে এমবিবিএস পড়ছে। কুমিল্লার আলী আগামী মাসে বাংলাদেশে যাবে- তাই বেইজিং এসেছে এয়ার টিকেট নিতে- জেনান এ নাকি টিকেটের মুল্য অনেক বেশী।
 
আমিও যে বেইজিং থেকে স্যাংগকি হয়ে জেনান এ একদিন যাত্রাবিরতী নিয়ে চিনতাও যাবো সেই পরিকল্পনার কথা ওকে বললাম।
 
ছেলেটার চোখ দেখলাম আনন্দে চিকচিক করে উঠছে- হেসে দিয়ে বলল তাহলে কিন্তু জেনানে কোন হোটেলে থাকতে পারবেন না। ওখানে আমাদের গার্ডিয়ানদের জন্য ডরমেটরী আছে সেখানে থাকতে হবে আপনাদের।
 
আলী’র কথায় আমার খুব ভালো লাগলো। ছেলেটা অত্যন্ত আন্তরিক। আমি আলীকে কথা দিলাম না; বাট বললাম, জেনান রওয়ানা দেবার সময় তাকে ফোন দেব।
 
তার ঠিক ৩দিন পর স্যাংগকি থেকে জেনান যাবো। ফ্যাক্টরির মালিক আমাদের একটা লিফট দেবেন- তাদের গাড়ী ও ড্রাইভার দিয়ে দিলেন। স্যাংগকি থেকে জেনান প্রায় ২০০ কিলোমিটার দূরত্ব।
 
ঠিক বাংলাদেশের মতোই গ্রামীন রাস্তা বাট বেশ প্রসস্থ, দু’পাশে ধানক্ষেত, কিছুদুর পরপর গুচ্ছ গ্রামের মতো বাড়ীঘড়। সন্ধ্যা আমাদের নিয়ে ছুটছে গাড়িটি।
 
আলী’কে ফোন দিলাম। আলী মোবাইল কল রিসিভ করলো। আমার নাম্বার ওর ফোনবুকে ছিল। আমি জানালাম জেনানের পথে রওয়ানা দিয়েছি- আরও ঘন্টা দু’য়েক লাগবে পৌছতে।
 
আলী সেদিনের মতোই খুব আন্তরিক সুরেই বলল ‘স্যাংডন মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়’ এর গেটে এসে যেন ওকে কল দিই।
 
জেনান শহরে পৌছে আমরা ঠিক ডিসিশন নিতে পারছিলাম না যে কি করবো? আলীর ডরমেটরীতে থাকবো- না কি হোটেল নিবো। আমি হোটেল নেবারই পক্ষে। আমি সাধারণত ভ্রমনে কারো বাড়ীর চেয়ে হোটেলকেই বেশী পছন্দ করি।
 
আমার সংগে কায়কোবাদ ভাই আর শাহীন ভাই। ওদের ইচ্ছে ডরমেটরীতে থাকার। জেনান শহরে পৌছে আবারও আলী’র মোবাইলে কল দিলাম।
 
ও আল্লা। মোবাইল তো বন্ধ।
শাহীন ভাই আর কায়কোবাদ ভাই লজ্জা পেল।
 
কিন্তু আমার কেন যেন মনে হলো আলী’র মোবাইলে চার্জ নেই। ছেলেটাকে আমার ভাল লেগেছে- ওর চোখে আমি সরলতা দেখেছিলাম।
 
মিনিট পাঁচেক পর আবারও কল দিলাম। নাহ্ মোবাইল বন্ধ বলছে।
আমি ড্রাইভারকে রিকোয়েষ্ট করলাম কোন একটা হোটেলে যেতে। এবং ঠিক তখনই আলীর কল পেলাম।
 
দুঃখ প্রকাশ করে ছেলেটা বলল ওর মোবাইলে চার্জ শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমরা কোথায় জানতে চাইলো এবং ভার্সিটির ১ নাম্বার গেটে যেতে বলল। আমি ড্রাইভারকে নির্দেশনা দিলাম।
 
আলী, ওই ছেলেটা এবং ওর কয়েকজন বন্ধু আমাদের জন্য গেটে অপেক্ষা করছে।
আমাদের দেখে দৌড়ে কাছে এল। আমাদের সংগে তিন জনের ৩টি লাগেজ। শাহীন ভাইয়ের লাগেজটা অনেক বড় এবং অত্যন্ত ভারী।
 
তিনটা ছেলে আমাদের তিনটা ল্যাগেজ নিল, আমাদের ধরতে দিল না। এবং ঐ তিনটি ছেলেই ছিল পাকিস্তানী- পরিচয়ে জানলাম।
আমাদের জন্য রেডী করা প্যারেন্টস ডরমেটরীটি ৫ তলার উপর; লিফট নেই- শাহীন ভাইয়ের সেই ভয়াবহ রকমের ভারী লাগেজটিও বিশালদেহী পাকিস্তানী ছেলেটা একাই উচু করে ৫ তলায় বয়ে নিয়ে গেল।
 
রাতে কি খাবো- ভাবছি।
ঠিক তখনই আলী বলল, পাকিস্তানী ছেলেটা কোন এক পাকিস্তানী রেষ্টুরেন্টে গেছে আমাদের জন্য খাবার আনতে। এবং আধ ঘন্টার মধ্যেই দেখলাম সে পাকিস্তানী ট্যাডিশনাল খাবার নিয়ে উপস্থিত আমাদের জন্য।
 
পরদিন সেই পাকিস্তানীরাই এসে আবারও আমাদের তিন জনের লাগেজ নামিয়ে দিল নীচে ট্যাক্সি পর্যন্ত। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য চিনতাও।
 
তিন।
৬/৭ মাস নিউ ইয়র্কে থাকার পর আর নিউ ইয়র্ক আমার ভাল লাগছিল না। তাছাড়া নিউ ইয়র্কের আবহাওয়া সম্ভবত এই পৃথিবীর মধ্যে সবচে জঘন্য- বিশেষ করে শীতের সময়টা; জানুয়ারী থেকে এপ্রিল। ভয়াবহ শীত সংগে ফ্রিজিং রেইন আর স্নো তো ননষ্টপ রয়েছে। রাস্তায় জমা স্নোগুলি বৃষ্টির পানিতে এক ধরণের কাদায় পরিণত হয়। জঘণ্য!
 
ইকবাল ভাই ডালাস থাকেন। আমি তাকে বললাম, আমিও আসছি। পার্মানেন্ট। ইকবাল ভাই তো খুব খুশী। তার সংগে কাজ করে পাকিস্তানী সাঈদ ভাই। সাঈদ ভাই তাকে না কি প্রচন্ড হেল্প করেন। প্রতি শুক্রবার গাড়ী নিয়ে এসে তাকে মসজিদে নামাজ পড়তে নিয়ে যান, তারপর প্রায় ২০ মাইল দুলে ‘ইন্দো পার্ক’ গ্রোসারীতে নিয়ে যান বাজার করতে।
 
ইকবাল ভাই সাঈদ ভাইকে আমার কথা জানালেন।
সাঈদ ভাই আমাকে একদিন ফোন দিলেন। পরিচত হলেন এবং খুবই আন্তরিকতার সংগে বললেন, ‘চলে আসুন; আমরা আছি কোন সমস্যা হবে না; ভাল লাগবে ডালাস।’
 
আমি চলে গেলাম।
ডালাসে যাবার পর আমার যাতায়াতের জন্য সাঈদ ভাই তার গাড়ী নিয়ে নিজে আমার ফ্রি ড্রাইভার হয়ে সবসময় রেডী। তার বাসা থেকে আমার বাসার দূরত্ব প্রায় ৭ মাইল। একজন মানুষ সর্বক্ষন আমি কোথায় যাবো, কখন বাজারে যাওয়া দরকার, শুক্রবার জুম্মার নামাজ- ঠিক যেন আমার বাংলাদেশের ড্রাইভার।
 
আমি এই পৃথিবীর অনেকটা জায়গাই ভ্রমণ করেছি।
এরকম আরো অনেক অনেক শহরে আমার সংগে অনেক পাকিস্তানীর পরিচয় হয়েছে।
 
পাকিস্তানীদের আন্তরিকতা ও সহযোগীতামূলক ব্যবহারে আমি মুদ্ধ।
 
এবং আমরা।
 
১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানীরা আমাদের শাসন করেছে।
আমার জন্ম বাংলাদেশ জন্মেরও পরে; সুতরাং ওসব দেখার সুযোগ আমার হয়নি।
 
আর পরাজিত পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশীরা যখন যা ইতিহাস লিখেছে- সেটাই আমরা পড়েছি; দেশীয় আবেগে পরীক্ষা বা ইতিহাসকে যাচাই-বাছাই করে দেখার সুযোগ হয়নি।
 
আমি বাংলাদেশ দেখেছি।
এরশাদ, খালেদা জিয়া, শেখ হাসিনা, আবারও খালেদা জিয়া এবং বর্তমান শেখ হাসিনা। এদের সম্পর্কে আমি নিজেই ইতিহাস লিখতে পারি।
 
পাকিস্তান এর শাসকগণ বাংলাদেশের সংগে জোর-জুলুম করেছে- এটাই ইতিহাস বলে।
আমি তা মেনে নিয়েছিও। কিন্তু পাকিস্তানী সাধারণ মানুষদের আমি যতটুকু দেখেছি- আমি তাদের মধ্যে ভন্ডামী পাইনি।
 
ওরা ভদ্র।
ওরা মানুষের সংগে আচরণ জানে।
 
বরং আমি তো দেখেছি, দেখছি প্রতি মুহূর্তে বাংলাদেশীদের নোংড়া আচরণ!
 
আমি মানছি- আমি খুব স্বল্প সময় নিয়েই পাকিস্তানীদের সান্নিধ্য পেয়েছি; হয়তো ওদের পুরোপুরি বিশ্লেষন করার জন্য যথেষ্ঠ সময় আমি পাইনি।
 
কাজেই সাধারণ পাকিস্তানীদের কথা বাদ থাক।
 
শাসক আর জনসাধারণ এক না।
পাকিস্তানী শাসকদের নিয়ে বলি। ওরা খারাপ।
পাকিস্তানী শাসকরা হিংস্র। ওরা মানুষ রূপি জানোয়ার।
 
কিন্তু তার বিপরীতে বাংলাদেশী শাসকরা কি?
 
আমাকে বলুন তো ইয়াহিয়া খানের ভেতরে কি শেখ হাসিনার চেয়ে বেশী পশুত্ব ছিল?
ইয়াহিয়া খান কি কাউকে অন্যায়ভাবে ফাঁসি দিয়েছিল?
ইয়াহিয়া খান এর পাকিস্তান পুলিশ বাহিনী কি মানুষ গুম করতো?
খুন করতো?
ক্রস ফায়ারের নামে বাংলাদেশীদের হত্যা করেছে?
 
ইয়াহিয়া খান এর স্ত্রী পুত্র পরিজনরা কি দেশের মানুষের কষ্টের টাকা শেখ হাসিনা ও পরিবারের মতো লুটেপুটে খেতো?
ইয়াহিয়া খানের কোন উপদেষ্টা কি তার ছেলে ছিল? ইয়াহিয়া খানের কোন ছেলে কি উপদেষ্টা পরিচয় দিয়ে মাসে ২ লাখ ডলার বেতন নিত- দেশের গরীব মানুষের রক্ষ চোষা পয়সা থেকে?
 
ইয়াহিয়া খান ১৫০০ মাইল দুর থেকে এসে বাংলাদেশকে শাসন করেছে।
আর শেখ হাসিনা ১৫০ কিলোমিটার দুর থেকে ঢাকায় এসে বাংলাদেশকে প্রতিনিয়ত ধর্ষন করে যাচ্ছে- তার দলবল নিয়ে।
 
এরশাদ, খালেদা জিয়া এরা কি ইয়াহিয়া খানের চেয়ে ভাল ছিল?
 
আমি আইয়ুব খান সম্পর্কে কিছু বলবো না। কারণ আইয়ুব খান সম্পর্কে যতটুকু জানতে পেরেছি- তিনি একজন মহান দেশ প্রেমিক রাষ্ট্রনায়ক ছিলেন। আজকের বাংলাদেশের ইনফাষ্ট্রাকচার এর মুল স্থপতি ছিলেন আইয়ুব খান। বাঙালী অসভ্য বলেই আইয়ুব খানকে অস্বীকার করে।
 
আইয়ুব খান সেই ব্যক্তি যে কিনা পাকিস্তানের প্রথম টেলিভিশন (ভারতীয় উপমহাদেশেরও প্রথম) চ্যানেলটি পর্যন্ত রাজধানী করাচীতে না করে প্রাদেশিক শহর ঢাকায় করেছিলেন।
 
ইয়াহিয়া খানের আমলে সংবাদপত্র বন্ধ ছিল না; দালাল সাংবাদিকও তখন ছিল না।
 
ইয়াহিয়া খানের অধীনেই ১৯৭১ সালের জাতিয় নির্বাচনে শেখ মুজিবের আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে জয়ী হয়েছিল।
 
অপরদিকে শেখ হাসিনা অধীনে ২০১৪ সালের নির্বাচনে ৫% ভোট পরেছে; পৃথিবীর ইতিহাসে ওটাই ছিল সবচে বর্বর নির্বাচন। সেই কথিত নির্বাচনের মাধ্যমে অবৈধভাবে শেখ হাসিনা আজ ১৬ কোটি মানুষের উপর তার হিংস্রতা চালিয়ে যাচ্ছে!
 
শেখ মুজিবের হাতে ক্ষমতা না দেয়ার অপরাধে আমরা পাকিস্তানীদের পিটিয়ে বাংলাদেশ ছাড়া করেছি।
 
দেশের সবকিছু লুটে পুটে খেয়ে যাচ্ছে শেখ হাসিনা, তার ছেলে জয়, তার মেয়ে, তার বোন।
 
অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে থেকে শেখ হাসিনা এ পর্যন্ত প্রায় ২০০০ এর বেশী মানুষ হত্যার সংগে সরাসরি জড়িত। প্রতিদিন তার সরাসরি নির্দেশে তার পুলিশ লীগ রাব লীগের সদস্যদের হাতে ক্রস ফায়ার, জংগি ট্যাগ এর নামে খুন হচ্ছে মানুষ। গুম হচ্ছে হাজারো নেতা কর্মী- যারা বিরোধী মত প্রকাশ করে।
 
জনগনের ভোটের অধিকার লুন্ঠনকারী, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার হত্যাকারী শেখ হাসিনার তাহলে কি শাস্তি হওয়া উচিৎ?
দেশের মানুষের টাকা পয়সা লুন্ঠনকারী শেখ হাসিনার কি শাস্তি হওয়া উচিৎ?
 
গুলিস্থানে শেখ হাসিনাকে বিনা খাবারে আমৃত্য উল্টো করে ঝুলিয়ে রেখে এবং মাঝে মধ্যে দু’চারটা গরম ডিম থেরাফি-ই শেখ হাসিনার একমাত্র শাস্তি হতে পারে।
 
বাংলাদেশটাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে দিল শেখ হাসিনা।
এতটা করুণ অবস্থা আর কোন কালেই ছিল না বাংলাদেশের।
 
 
পাকিস্তানী শাসকরা কি হাসিনার চেয়েও অসভ্য ছিল?
আমি বিশ্বাস করি না।
 
   Send article as PDF