জাতীয়তাবাদ ও বিভক্তি

একটা হিসাব আমি কিছুতেই মিলাতে পারতাম না।
আর জানেনই তো যে, হিসাব না মিললে আমার মাথার এক পাশে চিনচিন করে ব্যাথা করতে থাকে।

প্রতিবেশী দেশ ভারতের রাষ্ট্রিয় ক্ষমতায় রয়েছে সন্ত্রাসী আরএসএস নিয়ন্ত্রিত মৌলবাদী সংগঠন ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নেতা, শীর্ষ সন্ত্রাসী নরেন্দ্র মোদী। দলটি হিন্দুত্ববাদী রাজনীতি করে। নিজেদের এরা হিন্দু জাতীয়তাবাদী বলে আত্মতৃপ্তিতে ভুগে। বিজেপি একটি উগ্র হিন্দুত্বের জাতীয়তাবাদী সংগঠন। বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের সংগে দলটি জড়িত। সংখ্যালঘু, বিশেষত মুসলিমদের এর শত্রু জ্ঞান করে। প্রকাশ্যে বহু নিরীহ মুসলিমকে এরা পিটিয়ে হত্যা করেছে বিগত বছরগুলিতে। আর ভারতীয়দের মধ্যে এই হিন্দু-জাতীয়তাবাদ উষ্কে দেয়া এই দলটি খুবই সংগঠিত এবং ভারতীয়রা দিনের পর দিন দলটির প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছে। বিজেপি বা হিন্দুত্ববাদীরা দেশে বিভক্তির রাজনীতি করে, বিভক্তি উষ্কে দেয়। তাহলে কি বিভক্তি উষ্কে দেয়াই জাতীয়তাবদীদের রাজনীতি?

আমেরিকায় ৪-বছর ক্ষমতায় ছিল ডোনাল্ড ট্রাম্প। লোকটি সন্ত্রাসবাদী। পৃথিবীর গণতন্ত্রের পিত্রভূমি হিসাবে খ্যাত আমেরিকার ক্যাপিটল হিলে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর অপরাধে অপরাধী ডোনাল্ড ট্রাম্প। এদেশের হোয়াইট জাতীয়তাবাদ উষ্কে দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। তার দল রিপাবলিকান পার্টি যদিও কোন জাতীয়তাবাদের রাজনীতি করে না। কিন্তু ব্যক্তি ডোনাল্ড ট্রাম্প দলটির মনোনয়ন জেতার সময় থেকেই দেশটিতে তীব্রভাবে জাতীয়তাবাদ উষ্কে দিয়ে ফায়দা লুটার চেষ্টা করে যাচিছলেন। প্রউড-বয়েজ নামের হোয়াইট সুপ্রিমেসীদের খুব সহজেই তিনি আকর্ষন করে ফেলেন যারা সন্ত্রাসী হিসাবে পরিগণিত হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। যাই-ই হোক, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতন হয়েছে। আমেরিকায় গণতন্ত্রের ভীত অত্যন্ত সুদৃঢ়, শক্ত। তাই আমেরিকা এ যাত্রায় টিকে গেছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকায় বিগত ৪ বছর ধরে বিভক্তি উস্কে দিয়েছেন। তার সমর্থক প্রাউড বয়েজরা হোয়াইটদের সংগে বাদবাকী মানুষদের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি করে নিজেদের বড় ভাবতে চায়, বড় ভাবে। অর্থাৎ এখানেও বিভক্তির রাজনীতি সক্রিয় করার চেষ্টা করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

অষ্ট্রেলিয়াতেও ‘হোয়াইট ওনলী’ নীতিতে সক্রিয় ‘ওয়ান ন্যাশন পার্টি’র মতো জাতীয়তাবাদ উস্কে দেয়া হয়। তারাও সংগঠিত হচ্ছে। দলটি সন্ত্রাসবাদী, অন্য কালারের মানুষদের তারা পরোয়া করে না। এরাও বিভক্তির রাজনীতি চর্চা করে যাচ্ছে।

আমি যে হিসাবটা মিলাতে পারতাম না সেটা হলো, বাংলাদেশেও আমরা ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ’ এর সমর্থক। সংখ্যাটিও যথেষ্ঠ বড়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জনক। আমার না মেলা হিসাবটি ছিলো- ‘বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী’রা সন্ত্রাসী নয় কেন? বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী মানুষগুলিকে কখনওই কোন সন্ত্রাসবাদে খুঁজে পাওয়া যায় না।

আমার হিসাবটা মিলতো না।
বাংলাদেশের শাহবাগী চেতনাজীবিরা নিজেদের বামপন্থী হিসাবে প্রচার করে। আর ‘বাংলাদেশী’ জাতীয়তাবাদীদের বলে ডানপন্থী। সারা বিশ্বে নাকি ডানপন্থীরাই সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্ত। ভারতে বিজেপি, আমেরিকায় ডোনাল্ড ট্রাম্প, অষ্ট্রেলিয়ায় ওয়ান ন্যাশন পার্টি ইত্যাদি। কিন্তু, তাহলে বাংলাদেশের ডানপন্থীদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদের কোন অস্তিত্ব নেই কেন?

হিসাবটা দু’দিন আগেও মিলতো না।
কিন্তু মজার বিষয়টি হলো, ডোনাল্ড ট্রাম্পের পতনের পর আমি হিসাবটি মিলাতে পেরেছি। আর হিসাবটি মিলানোর পর আমার মাথার চিনচিন ব্যাথাটিও দূর হয়ে গেছে।

এখন মাথা ঠান্ডা।
পুকুরের পানির মতো ঠান্ডা।

আসলে, সহজ হিসাবটি বের করার আগে আপনাকে একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে হবে। প্রশ্নটি হচ্ছে বাংলাদেশে তাহলে ‘সন্ত্রাসবাদ’ কারা করে? বাংলাদেশে বিভক্তির রাজনীতি কারা?

উত্তরটি খুবই সহজ।
বাংলাদেশে বিভক্তির রাজনীতি শুরু করেছে বামেরা।
বাংলাদেশে বিভক্তির রাজনীতি শুরু করেছে শাহবাগীরা।
বাংলাদেশে বিভক্তির রাজনীতি শুরু করেছে চেতনাজীবিরা।
বাংলাদেশে বিভক্তির রাজনীতির নেতৃত্বে দিচ্ছে আওয়ামী লীগ।

এবং মজার বিষয় হচ্ছে এরা সকলে ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদ’ এর রাজনীতি করে। এবং এরা সকলেই সন্ত্রাসবাদের সংগে জড়িত। এরাই দিনের ভোট রাতে করে। এরাই বিরোধী পক্ষ নির্বাচনের মাঠে নামলে আমেরিকার প্রাউড বয়েজ বা ভারতের আরএসএস বা বিজেপির মতো প্রতিপক্ষকে প্রকাশ্যে হত্যা করতেও দ্বিধা করে না। এরা সন্ত্রাসবাদের প্রবক্তা। এরা সন্ত্রাসী। এরা খুন, ধর্ষন, চাঁদাবাজী, লুটপাট, হত্যা, গুম এবং রাষ্ট্রিয় সম্পদ ডাকাতির সংগে সরাসরি জড়িত।

কিন্তু এই রাম-বাম-শাহবাগী-আওয়ামীরাই উল্টো বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী এবং ইসলামপন্থীদের সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়- কারণ তারা নিয়ন্ত্রণ করে দেশের সবগুলি মিডিয়া। এরা গলার জোরে চাপাবাজী করে।

কি আশ্চর্য্য!
নিজেরাই সন্ত্রাসবাদের সংগে জড়িত থেকে উল্টো সাধারণ নিরীহদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে যাচ্ছে দিনের পর দিন। আর মানুষও তা মেনে নিয়ে লজ্জা পায় যেন!

বাংলাদেশে কোনদিনই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা কোন সন্ত্রাসের সংগে জড়িত হয়নি। বাংলাদেশে কোনদিনই বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসীরা বিভক্তির রাজনীতি করেনি।

বরং, দূরদর্শি প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের জন্মই দিয়েছিলেন দেশের সংখ্যালঘু, অবাঙলীদের একটি একক জাতীয় পরিচয় দিতে। বিভক্তিকে চিরতরে বিলুপ্ত করে দেশের প্রতিটি মানুষকে একটি একক পরিচয়ে নিয়ে আসতে।

অথচ, এতো চমৎকার একটি দৃষ্টিভংগীকে শাহবাগী-চেতনাজীবি-আওয়ামী বামেরা ‘ডান-পন্থী’, ইসলাম-পন্থী এইসব বলে ভারতীয় বা আমেরিকার ডানপন্থীদের সংগে মিলিয়ে দিতো গোজামিল দিয়ে; নিয়ন্ত্রিত মিডিয়ার বদৌলতে।

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ মানে ঐক্য।
আর বাঙালী জাতীয়তাবাদ মানে বিভক্তি।

বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ পুরো দেশের মানুষকে একটি একক পরিচয়ে পরিচিত করেছে।

আর বাঙালী জাতীয়তাবাদ চেতনাবাজী ও বিভক্তি উস্কে দিয়ে সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করেছে।

বাংলাদেশ থেকে বাঙালী জাতীয়তাবাদের চর্চা নিষিদ্ধ করতে হবে (ঠিক যেভাবে পরাজিত হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিভক্তির রাজনীতি)।

আর কোন বিভক্তি নয়।
জাতীয় ঐক্যই একটি দেশকে সুন্দর পরিচয় দিতে পারে।

ধ্বংস হোক বিভক্তির রাজনীতি।
বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।

   Send article as PDF