৩৪.৮৫ বিলিয়ন ডলার

বাংলাদেশের মানুষদের বেকুব বানানো সম্ভবত এই বিশ্বের সবচে সহজ কাজ।
 
সজীব ওয়াজেদ জয় একের পর এক দেশের মানুষকে উন্নয়নের বুলি আওড়িয়ে বেকুব বানিয়ে যাচ্ছে।
 
দিন কয়েক আগে সে তার ফেসবুক পেইজে একটা গ্রাফ আপডেট করেছে, যেখানে দেখানো হয়েছে বিএনপি সরকারের সময়ে (২০০৬ সালে) বাংলাদেশের ফরেন রিজার্ভ ছিল ১.৫ বিলিয়ন ডলার অপর দিকে এই ২০১৭ সালে এসে সেই ফরেন রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ৩৪.৮৫ বিলিয়ন ডলার।
 
সুতরাং বোকা অার অলসদের দেশ বাংলাদেশের মানুষ তো আরও বেকুব হবেই- দেশে উন্নয়নের মোহড় বয়ে যাচ্ছে! ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।
 
এবার চলুন আমরা একটু ভেতরে যাই।
সবসময় বাইরের খোলস দেখলে তো আর চলে না, চলতেও পারে না।
 
২০০৬ সালে এক ভরি স্বর্ণের মুল্য ছিল মাত্র ৫ হাজার টাকা।
২০১৭ সালে এক ভরি স্বর্ণের মুল্য এসে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার টাকা।
 
২০০৬ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথা পিছু আয় ছিল কমবেশী ৭০০ ডলার এবং ২০১৭ সালে এসে তা দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৫০০ ডলারে- হিসাবানুযায়ী ১০গুন বৃদ্ধি তো করতে পারেননি মিষ্টার জয়!
 
২০০৬ সালে বাংলাদেশের মানুষের মাথা পিছু ঋণ ছিল ৭ হাজার টাকা এবং এই ২০১৭ সালে সেটা উন্নীত হয়েছে প্রায় ৫০ হাজার টাকায়। ঋণের বোঝাটা ঠিকই চাপিয়েছেন দেশের মানুষের মাথায়।
 
২০০৬ সালে ডলারের মূল্য ছিল ৬০ টাকার নীচে এবং ২০১৭ সালে সেই ডলারের মূল্য গিয়ে দাঁড়িয়েছে ৮৫ টাকা। শুধুমাত্র তাই-ই নয় ডলারেরও মুদ্রাস্ফিতি হয়েছে এই সময়টাতে বহুগুন। ২০০৬ সালের এক ব্যারেল ক্রুড ওয়েল এর মূল্য এবং ২০১৭ সালের এক ব্যারেল ক্রুড ওয়েল এর মূল্যে বিশাল পার্থক্য সৃষ্টি হয়েছে।
 
২০০৬ সালে নিউ ইয়র্ক সিটির সাবওয়ের আনলিমিডেট টিকেটের মূল্য ছিল ৬৫ ডলার যা এখন এসে দাড়িয়েছে ১৩২ ডলারে। ২০০৬ সালে ঢাকায় এক কেজি পেয়াজ বিক্রি হয়েছে ১০ টাকায় আর এখন ২০১৭ সালে সেটা ১০০ টাকা কেন?
 
তো, মিষ্টার সজীব ওয়াজেদ জয়- আসুন আমরা এবার একটা গ্রাফ তৈরী করি। পারবেন করতে?
 
তারপরও কথা থাকে।
২০০৬ সালে দেশে জনসংখ্যা ছিল ১৪ কোটি এবং আজ সেটা ১৮ কোটি। মাথা পিছু আয় হিসাবে সামগ্রিক অর্থনীতি এবং বৈদেশিক রিজার্ভ বাড়বেই।
 
এবং বৈদেশিক রিজার্ভ বৃদ্ধিতে মুলত বাংলাদেশ সরকারের আহামরি কোন ভূমিকা থাকে না। বাংলাদেশ সরকার জানে শুধুমাত্র জনগন ও ব্যবসায়ীদের থেকে ট্যাক্স আদায় করতে। বাংলাদেশের যতটা ডেভেলপমেন্ট তার ৮০% হয়েছে শুধুই দেশের ব্যবসায়ী এবং প্রবাসী শ্রমিকদের অক্লান্ত পরিশ্রমে।
 
বাংলাদেশে যদি কোন সরকারই না থাকতো এবং মানুষ তার স্বাধীন মতো কাজ করতে পারতো- আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এতে বাংলাদেশের বৈদেশিক রিজার্ভ কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারে গিয়ে দাঁড়াতো।
 
বাংলাদেশের একটা বড় অংশের মানুষ এখন যথেষ্ঠ সচেতন, সৎ, দক্ষ এবং পরিশ্রমী। তারাই আজ গার্মেন্টস রপ্তানী ধরে রেখেছে তারাই আজ বিদেশে নিজের কষ্টের শ্রম বিক্রি করে সমুদয় টাকা দিয়ে ফরেন রিজার্ভ বৃদ্ধি করে যাচ্ছে।
 
আর ঐ ফরেন রিজার্ভ থেকে আপনি সজীব ওয়াজেদ জয় গেল বছর ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাক করে ফিলিপিন্সে সড়িয়ে নিয়েছেন, ভারতীয় রাকেশ আস্তানা এবং তৎকালিন গভর্ণর আতিয়ার রহমানের সহযোগীতায় সমস্ত ডাটা মুছে ফেলেছেন এবং ফিজিক্যাল রেকর্ড ধ্বংশ করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের তের তলার সেই একই ফরেন রেমিটেন্ট ডিপার্টমেন্ট আগুনও লাগিয়েছেন এবং সমস্ত তদন্ত বন্ধ করেছেন। ঘটনার তদন্তে রাবের তরুন আইটি বিশেষজ্ঞ তানভীর জোহাকে গুমও করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তার মুখ বন্ধের শর্তে তিনি ছাড়া পেয়েছেন।
 
এই সবই আমরা জানি।
 
এবং আপনারা দেশে একটা ‘জিপিএ পাইপ’ প্রজন্ম সৃষ্টি করে যাচ্ছেন!
দেশের মানুষদের বুদ্ধিহীন করার এই হীনচক্রান্ত কোন শুভ বুদ্ধির ও সভ্য মানুষ করতে পারে না।
 
মিষ্টার জয়, আসুন না এবার আরও একটা গ্রাফ তৈরী করি!
 
পারবেন আসতে- আছে সেই সাহস ও যোগ্যতা আপনার?
   Send article as PDF