জটিল একটা শব্দ

স্বাধীনতা খুব জটিল একটা শব্দ; অন্তত বাংলাদেশের জন্য।
 
এক সময় সারা বিশ্বব্যাপী ‘সন্ত্রাস’ শব্দটাও জটিল ছিল; যা এক দলের জন্য সন্ত্রাস, অন্যদের কাছে তা মুক্তি সংগ্রাম। ৭১ এ বাংলাদেশের জন্য যেটা ছিল মুক্তিযুদ্ধ; পাকিস্তান ও রাজাকারদের কাছে তা ছিল সন্ত্রাস। এটা যুক্তিযুক্ত এবং গ্রহনযোগ্যও। ইসরাইল এর কাছে যারা সন্ত্রাসী তারা ফিলিস্তিনের বীর। কোথায় কার হিসাব মেলাবেন?
 
আজ বাংলাদেশে আমার কাছে যেটা ‘প্রকৃত স্বাধীনতা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার আদায়ের সংগ্রাম’ সেটা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলে রাখা গণতন্ত্রহত্যাকারী ভোটারবিহীন নির্বাচনের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ‘সন্ত্রাসী কর্মকান্ড’।
 
নারী স্বাধীনতা নিয়েও কিছু কথা বলার ইচ্ছে রয়েছে আজ; তবে তার আগে বলি- আচ্ছা, পুরুষদের স্বাধীনতা নিয়ে তো কাউকে কোন কথা বলতে দেখি না!
 
নারী স্বাধীনতা তো হবেই; তবে পুরুষরা কতটা স্বাধীন?
তারা চাইলে কি কি কাজ স্বাধীনভাবে করতে পারে?
 
  
একটি যুক্তিতে যাই। কিছু কিছু নারীবাদীরা (তছলিমা নাসরিন সহ আরও কিছু হাবিজাবি মহিলারা) নারী স্বাধীনতার পক্ষে খুবই সোচ্চার; তারা এতটাই সোচ্চার যে, যখন তখন তারা ছেলেদের মতো বুক খোলা রাখতে পারে না বলে সমাজকে, ধর্মকে (বিশেষতঃ ইমলাম ধর্ম), পুরুষদেরকে গালাগালি করে থাকে প্রকাশ্যে, সাইনবোর্ড নিয়ে, প্লাকার্ড নিয়েও।
 
ধরুন, পুরুষরা মেয়েদের স্বাধীনতা মেনে নিল।
তাহলে তো মেয়েদেরও উচিৎ পুরুষদের স্বাধীনতা মেনে নেয়া। তারাও তাদের ইচ্ছেমতো ডট.ডট.ডট…. ?
সেটা কেমন হবে?
 
সরি, আমি ওদিকে যাচ্ছি না। আমি স্বাধীনতার পক্ষে- সেটা নারী, পুরুষ, গরু, মহিশ, ইদুর, পোকা-মাকর, গাছ-পালা ইত্যাদি সবকিছুর।
 
নাস্তিকদের ভাষাতেই বলছি- ধরে নিলাম আমরা প্রকৃতির খেয়ালের সৃষ্টি। প্রকৃতিই আমাদের না হয় সৃষ্টি করেছে। তাহলে ‘গাছ’ থেকে ‘কুমির’ এর জন্ম হয় না কেন? পোকা-মাকররা তছলিমা নাসরিনদের জন্ম দিয়েছে কি? [ডারউইন নিজেই স্বীকার করে নিয়েছেন তার পূর্ব পুরুষ বানর প্রজাতীর (শিম্পাঞ্জী) ছিল; কাজেই ওনার স্বাধীনতার কথা বাদ; ওনি এমনিতেই স্বাধীন।] মানুষের গর্ভে কি কখনো হাতির জন্ম হয়েছে? কিংম্বা পিপড়ার গর্ভে হনুমানের?
 
না। প্রকৃতি একটি নিজস্ব নিয়মও তৈরী করে দিয়েছে সব কিছুর জন্য।
 
পুরুষের মধ্যে যে রকম হরমন রয়েছে নারীদের মধ্যে তা নেই। পুরুষের মগজ আর মহিলাদের মগজ এর পরিমানও সমান নয়। প্রকৃতগতভাবে একজন পুরুষ যা যা পারে- তা যেমন কোন নারী পারে না; তদরুপ একজন নারীও যা যা পারে কোন পুরুষ তা পারে না। উদাহরণের কোন প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করছি না।
‘যোগ্যরাই টিকে থাকে’ এই তত্বের উপরই এই মহাবিশ্বের প্রতিষ্ঠা। সেটা মানুষের ক্ষেত্রে যেমন সত্য, পশু-পাখিদের ক্ষেত্রেও সত্য।
 
পুরুষ শক্তিতে, বুদ্ধিতে, সাহসে নারীর চেয়ে উপরে; তদ্রুপ নারী মমতায়, বৈচিত্রে, হসপিটালিটিতে পুরুষের চেয়ে উত্তম।
 
আমি, আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানে যতটুকু বুঝি- এখানেই স্বাধীনতা নির্ধারিত এবং তা সকলের জন্যই। আলাদাভাবে কোথাও স্বাধীনতা থাকতে পারে- আমার জানা নেই।
স্বাধীনতা শব্দটি বাংলাদেশে যেভাবে পালিত হয় (বিনিময়ে সরকার কর্তৃক গুম বা ক্রস-ফায়ার); আমেরিকা বা উন্নত গণতান্ত্রিক বিশ্বে সেভাবে হয় না। গেল বছর দেখলাম এক ডাক্তার- অবৈধভাবে রোগীর সামনে থাকায় বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরুনকে ধমকে রোগীর কেবিন থেকে বের করে দিচ্ছে। নিজউল্যান্ডের এক প্রধানমন্ত্রী অঅনুমোদিত সড়কে তার গাড়ী পার্ক করায় পুলিশ তার বিরুদ্ধে মামলা করে দিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী অন্য সাধারণদের মতোই জরিমানা পরিশোধ করেছেন।
 
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী!
উনার স্বাধীনতা ঈশ্বরের চেয়েও বেশী। তাহলে স্বাধীনতা কাকে বলবেন?
 
আর বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা পিপিলিকা’র চেয়েও কম, পোকা-মাকরের চেয়েও কম।
 
নারী স্বাধীনতা বিষয়ে আরো দুটি বিষয় শেয়ার করছি।
 
বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য জুলফিকার আলী ভুট্ট (আমার স্মৃতি শক্তি যদি প্রতারণা না করে, অথবা অন্য কোন রানিং এমপি) কে একজন পুলিশ এ্যারেষ্ট করে জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছিল তার স্ত্রীর করা নারী নির্যাতন মামলায়।
 
বাংলাদেশের আইন-ই হলো, কোন মহিলা কোন পুরুষের বিরুদ্ধে ‘নারী নির্যতন মামলা’ করলেই পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে কোর্টে নিয়ে যাবে এবং কোর্ট তাকে জেলে পাঠাবে।
 
এবং পুলিশ ও কোর্ট এসব ব্যাপারে খুবই উৎসাহী। প্রচুর টাকা-পয়সাও কামানো যায়। পুলিশ ঘুষ খেতে পারে, আইনজীবি-ম্যাজিষ্ট্রেট কোট, জজ কোর্ট সবাই ভাগ বাটোয়ারা পায়। মহিলাও খুশী- ঐ পুরুষকে সাইজড করতে পেরে।
 
দারুন নারী স্বাধীনতা!
তবে, মুশকিল হলো, এসব মামলার প্রায় ফিফটি পার্সেন্টই ভুয়া; অর্থাৎ কাউকে ঘায়েল করতেই এসব মামলা করা হয়। এবং মিথ্যা মামলার কোন জবাবদিহিতাও নেই এই বিচিত্র আহম্মকদের দেশে, গরুদের দেশে, গাধাদের দেশে।
 
বাংলাদেশের অতি বুদ্ধিমান গরুগুলি জাতীয় সংসদে বসে এসব আইন পাস করায়।
 
সেদিন আমেরিকায় স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে মারাত্বক ঝগড়ার এক পর্যায়ে প্রতিবেশীরা ৯১১ এ কল দিল পুলিশের সহায়তার জন্য।
মুহুর্তেই পুলিশ চলে আসলো। সম্পূর্ণ আলাদা আলাদাভাবে পুলিশ স্বামী এবং স্ত্রীর কাছে বিস্তারিত জানতে চাইলো এবং প্রতিবেশীদের কাছেও পরে প্রকৃত ঘটনা জানতে চাইলো।
 
সবশেষে পুলিশ ডিসিসন দিল- এসব ঝামেলা মেটানোর দায়িত্ব নিউ ইয়র্ক পুলিশের নয়। কোর্ট রয়েছে, তারা ঝামেলা মিটাবে- যে কোন পক্ষ চাইলে কোর্টে গিয়ে মামলা করতে পারবে। তারা এসেছে কোন অঘটন যেন না ঘটতে পারে তার তদারকির জন্য। কাজেই তারা ঘটনা থেকে যতটা অনুমান করেছে তাতে অন্তত আজ রাতে ঐ স্বামীকে বাহিরে কোথাও রাত কাটাতে হবে; স্ত্রী যেহেতু মহিলা সেহেতু সে বাসাতেই রাত কাটাবে। কাল উভয়ে বসে মিমাংসা করবে অথবা কোর্টে যাবে। পুলিশ প্রয়োজনে স্বামীকে এক রাত বাইরে থাকার ব্যবস্থা করে দেবে।
 
স্বামী বেচারা তার ছোট ব্যাগে করে একদিনের কাপড় নিয়ে বের হল; বাইরে কোথাও রাতটা কাটিয়ে দেবে- এজন্য। কিনতু স্ত্রী রাতে একা কিছুতেই বাসায় থাকবে না। পুলিশ তখন সেই স্ত্রীকে প্রস্তাব দিল এক রাত শেল্টারে থাকার জন্য। কিনতু, স্ত্রী তাতেও রাজী না।
 
অনেকটা সময় নষ্ট হল; পুলিশ তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা এবং সমগ্র ঘটনা পর্যালোচনায় বুঝতে পেরেছে- এই স্ত্রী কোন প্রকৃতির! তখন এক পর্যায়ে পুলিশ বাধ্য হল সেই স্ত্রীকে হাতে হ্যান্ডকাপ পড়িয়ে এ্যারেষ্ট করতে। এবং স্বামীকে পরামর্শ দিয়ে বলল, এদেশে নারী নির্যাতন আইনটি খুবই কঠিন; সমগ্র প্রশাসন মহিলাদের পক্ষে। কিনতু আমরা সাক্ষী আজকের ঘটনার। তুমি কোর্টে যেয়ে মামলা করে দিলেই ভাল করবে; এটা আমার ব্যক্তিগত পরামর্শ; তুমি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিও। আমেরিকার পুলিশ সহজে কোন মহিলার হাতে হাতকড়া পড়ায় না। এই মহিলা- এই সময়টুকুর মধ্যেই অনেকগুলি মিথ্যা কথা বলেছে এবং তার কিছু তথ্য যে অভিনয়ে ভরা ছিল, তা আমরা বুঝে ফেলেছি। তুমি খুব দুঃখী মানুষ- এব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। 
 
নিউ ইয়র্কে বসবাসরত এই দম্পত্তি বাংলাদেশী।
বাংলাদেশের এরকম হাজারো পুরুষ প্রতি মুহুর্তে নারী কর্তৃক নির্যাতিত হচ্ছে- কিনতু সমাজে নিজের ইমেজের ভয়ে, পৌরষ্যের অপমান হবে সেই ভয়ে মুখ বুঝে সবকিছু সহ্য করে যাচ্ছে।
 
আপনি তাহলে কাকে স্বাধীনতা দিবেন? পুরুষের না কি নারীর?
 
আবার এর বিপরীত চিত্রও রয়েছে। আমি আমার মা’কেও দেখেছি সারা জীবন কিভাবে স্বামীকে সম্মান করে জীবন পার করে দিয়েছেন কোন অভিযোগ ছাড়া। এ পৃথিবীতে ৭ বিলিয়ন মানুষ এবং ৭ বিলিয়ন আলাদা আলাদা চরিত্র।
 
প্লিজ সবাইকে এক পাল্লায় কখনোই ফেলবেন না।
 
“অন্যকে তার ন্যায্য, প্রাপ্য অধিকার বুঝিয়ে দেয়াটা-ই হলো প্রকৃত স্বাধীনতা।”
 
অাসল স্বাধীনতা-তো সেটাই যেখানে আমি আমার নিজ ও স্বাধীন ইচ্ছায় যা ইচ্ছে হয় করবো, যা ইচ্ছে হয় বলবো, যা মনে চায় লিখবো কিন্তু সবসময় মনে রাখবো- অপরের স্বাধীনতায় যেন আমি হস্তক্ষেপ না করি।
 
সত্যি বলতে কি- অপরের স্বাধীনতা রক্ষার মধ্যেই প্রকৃত স্বাধীনতা নিহিত।
এবার আসুন আমরা স্বাধীনতা পালন করি। সেটা নারী স্বাধীনতা বা পুরুষ স্বাধীনতা- যেটাই বলেন না কেন?
   Send article as PDF