ভয়ংকর সন্ত্রাসী সংগঠন

আমি কখনওই মারামারি-হাতাহাতি করতে পারি না।
মানে, সত্যি বলতে কি- সেই ভাবে বলতে গেলে আমার পেশীশক্তি’র জোর নেই যে, মারামারি করবো। কারো সংগে মারপিট করতে গেলে দেখা যাবে উল্টো পিটানী খেয়ে চিৎ হয়ে পরে রয়েছি। হয়তো কোমরটাও ভেংগে যাবে!
 
কিন্তু, তাই বলে কি কেউ আমাকে কোন দিন পরাজিত করতে পেরেছে?
না। কেউ পারেনি। কোন দিনও না।
 
কারণ, আমি যেহেতু পেশীশক্তিতে বলিয়ান হবার চেষ্টাই কোনদিন করিনি- সেহেতু আমি শেখ মুজিবের মতো কথায় কথায় কারো সংগে তর্কাতর্কি বা ঝগড়া-ঝাটি কিংম্বা মারপিটে জড়াই না। ওসব থেকে দূরে থাকি।
 
যদি কেউ পায়ে পারা দিয়ে ঝগড়া করতে আসেই- সেক্ষেত্রে আমি অবশ্য কোনদিনই পিছিয়ে যায়নি। দু’টো বিষয় আমি বেশ জানি।
 
কেউ যদি আপনাকে দৌড়ের উপর রাখে- তবে, তাকেও ততটাই দৌড়াতে হবে যতটা স্পীডে আপনি দৌড়াবেন। এক্ষেত্রে আমার সুবিধে হলো, আমি খুবই ভালো দৌড়াতে পারি- কেউ আমাকে দৌড়ে হারাতে পারেনি আজ অবধি।
 
আর দুই, আমি তো শক্তির খেলা খেলিই না। আমি খেলি বুদ্ধির খেলা। যত শক্তিবানই আমার সামনে আসুক- আমি সামান্য বুদ্ধি প্রয়োগ করেই তাকে চুড়ান্তভাবে ধরাশায়ী করে ফেলি। মনে পরে ঢাকার অনেক বড় বড় মাস্তানকে আমি ‘সাইজড’ করেছি!
 
বাহাদুরীর জন্য বললাম না।
 
কথাগুলি বিএনপি’র জন্য বলা। বিএনপি শক্তিতে আওয়ামী লীগের সংগে পেরে উঠছে না। এজন্য আমি অবশ্য আগে দোষ দিলেও এখন আর বিএনপিকে দোষ দিবো না। কারণ, বিএনপি যারা করে এদের অধিকাংশই সমাজের সাদামাটা-ভদ্রলোক। অসভ্যদের আমি বিএনপি করতে খুব কমই দেখেছি। শীর্ষ নেতাদের কথা বলবো না- ওখানে বিএনপি-আওয়ামী লীগে কোন পার্থক্য আমি খুঁজে পাই না।
 
এখন কথা হচ্ছে, আওয়ামী লীগ মোটেও কোন বুদ্ধিমান সংগঠন নয়।
যারা আওয়ামী লীগে বা শেখ হাসিনাতে বুদ্ধিমত্তা খুঁজে তারা নিতন্তই নাবালক। কম বুদ্ধি নিয়ে সন্ত্রাসীদের বুদ্ধিমান ভাবা- আরকি!
 
আওয়ামী লীগ বা শেখ মুজিব কিংম্বা শেখ হাসিনা এরা সকলেই কম বুদ্ধির সংগঠন বা প্রাণী। কতটা বেয়াকুব এরা সেটা তো বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী সজীব ওয়াজেদ জয়কে দেখলেই প্রমাণ মিলে।
 
কিন্তু এই সন্ত্রাসী গোত্রটি দেশের সবচে নীচু প্রবৃত্তির লোকগুলিকে অত্যন্ত সাফল্যজনকভাবে একত্রিত করতে পেরেছে। টাকা-পয়সা খাইয়ে এরা এক কাতারে জড়ো করেছে জেনারেল আজিজকে, রাবের বেনজিরকে, মনিরুলকে, জাভেদকে, আসাদকে, বিচারপতি নিয়োগ দিয়েছে সমাজের সবচে নিকৃষ্ট কিছু সার্টিফিকেটওয়ালা ব্যক্তিকে, আমলাও বানিয়েছে নষ্ট ছাত্রলীগ নামীয় ধর্ষকগুলিকে, সিইসিও তাই।
 
মোট কথা দেশের মোটামুটি ২০% নষ্টমানুষকে একত্রিত করে একটা শক্তিশালী গোত্র সাজিয়েছে শেখ হাসিনা। না; তাই বলে আর এটা করতে কোন বুদ্ধি লাগে না।
 
একবার হাতে ক্ষমতা আসলে, ডেসপারেট হলে, এটা যে-কেউই করতে পারে; অন্তত যে-কোন অসভ্য দেশেই এটা করা সম্ভব যেখানে কোন ভালো আইন নেই এবং আইনের শাসন নেই। সরকার প্রধানের কথাই যেখানে আইন- সেখানে যা মন চায় তাই-ই করা সম্ভব। বাংলাদেশেও সেটাই হয়েছে।
 
এবং এই অসুস্থ সন্ত্রাসী গোত্রটি আরও একটা ভয়াবহ কাজ করেছে সম্প্রতি।
ছাত্রলীগকে ট্রেনিং দিয়ে তারা তৈরী করেছে স্থানীয় সন্ত্রাসী গ্রুপ এবং সেই গ্রুপগুলিতে নেতৃত্বে দিয়েছে বাংলাদেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী যারা জেল খানায় বন্দি রয়েছে তাদের সহযোগীদের। এরা ভয়ংকর সব সন্ত্রাসী। এদেরকে মাত্র ১০ হাজার টাকা দিয়েও একজন সহজ সরল সাধারণ মানুষকে খুন করানো সম্ভব। এই এরাই দিনে দুপুরে সামান্য ৫০, বা ১০০ টাকার জন্য চলন্ত ট্রেনের চাকার নীচে ফেলে দিয়ে হত্যা করতে পারে যে-কাউকে!
 
এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির ভয়ংকর কর্মকান্ড আমরা দেখেছি কোটাবিরোধী আন্দোকারী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর!
 
এই সন্ত্রাসী সংগঠনটির আরও ব্যাপক বিধ্বংসী কর্মকান্ড আমরা ছোট ছোট কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রীদের নিরাপদ সড়কের দাবীতে রাস্তায় আন্দলোনরত অবস্থানের উপরও দেখেছি।
 
মধ্য ভারতে এই ইংরেজ শাসন আমলেও এরকম একটা দুর্ধর্ষ গোত্রই বসবাস করতো যারা কিনা শুধুমাত্র সর্বস্ব কেড়ে নেবার জন্য একজন অপরিচিত পথিককে হত্যা করতো। এই গোত্রটি হাজার হাজার বছর পারিবারিকভাবে এই পেশায় জড়িত ছিল।
 
বাংলাদেশের সবচে লোভী, নষ্ট মানুষগুলিতে শেখ হাসিনা একত্রিত করেছে।
এবং এই আওয়ামী সন্ত্রাসী গোত্রটি এবার নির্বাচনে তাদের ক্ষমতা দেখিয়েছে। কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা দিয়ে পুরো মিশনটি বাস্তবায়ন করেছে পুলিশ বাহিনী। পুলিশের নেতৃত্বে এবং আমলা ও নির্বাচন কমিশনের সহযোগীতায় নির্বাচনের ঘোষনা শুরুর পর থেকেই এরা বিরোধীদের রাস্তায় নামতে দেয়নি। প্রার্থীদের পর্যন্ত হত্যা করার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়েছে, আহত করেছে। সমাজে ভীতি সৃষ্টি করেছে বিধায় বিরোধীরা রাস্তায়ও নামার সাহস করেনি। নির্বাচনের পূর্ব রাতেই ৫০% ব্যালট পেপার তারা এদের কাছে পৌছে দিয়েছে এবং তারা সারা দেশে একযোগে নৌকায় ভোট দিয়ে আওয়ামী প্রাথীদের বিজয়ী করেছে। এমন কি নির্বাচনের দিনও তারা কাউকে ভোট কেন্দ্র বলতে গেলে কোন সাধারণ ভোটারকেও ভীড়তে দেয়নি। প্রিজাইডিং অফিসারও সেভাবে সেট করা হয়েছে টাকা এবং ভয় দেখিয়ে- তাদের আওয়ামী সন্ত্রাসী গোত্রে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে একই কায়দায়।
 
এমন একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করে এবং মিডিয়াকে ব্যবহার করে আওয়ামী লীগ আরও একটা কাজ করেছে আর সেটা হলো বেগম জিয়াকে কাবু করতে না পেরে ড. কামালের মতো একজন আপাদমস্তক আওয়ামী ঘরণার মানুষকে ও কিছু লোভী বিএনপি নেতাকে কিছু আসনের লোভ দেখিয়ে নির্বাচনে এনেছে- যেখানে তারেক সাহেবেরও সম্মতি ছিল না।
 
এবং রেজাল্ট এমন হয়েছে যেটা স্বয়ং ড. কামাল বা মির্জা সাহেবও চিন্তা করতে পারেননি।
 
বাস্তবে এমনটাই হবার কথা ছিল।
তবে, এতটা ভয়বহ একটা অবস্থা আওয়ামী সন্ত্রাসীরা যে দেশের ভেতরে সৃষ্টি করে ফেলেছে- সেটা কেউ বুঝতে পারেনি।
 
আমি বিষয়টা জেনেছিলাম নির্বাচনের সপ্তাহ খানেক আগে।
কিন্তু বিষয়টি সামনে আনিনি- কারণ যেখান থেকে খবরটা পেয়েছিলাম তাদের শর্ত ছিল এবং এতে বিএনপি কর্মীরা আমাকে তাদের শত্রু ভেবে বসবেন- তারা উৎসাহ হারাবে। তারচে বড় কথা, আমি নিজেও পরিস্থিতি যে এতটা ভয়বহভাবে সাজানো হয়েছিল সেটা বুঝিনি বা বিশ্বাস করতে পারিনি।
 
যাই হোক, এখন এটাই বাস্তবতা।
এবং শেখ হাসিনা মারা যাবার আগে ক্ষমতা ত্যাগ করবে না। আপনাদেরকে সেজন্য আরও ৫/৭ বা ১০ বছর অপেক্ষা করতে হবে- দেখা যাক ক্যান্সার তাকে কতটা কাবু করতে পারে। এবং এটাও আমি বিশ্বাস করি যে তার মৃত্যুও হবে ক্রস-ফায়ারে। কারণ যে যা করে সে সেটাই ফেরত পায়- হাসিনা’র ক্ষেত্রেও প্রকৃতি ভিন্ন আচরণ করবে না।
 
আরও একটা বিষয় বলা দরকার।
অনেকেই ধারণা করে থাকে যে বিদেশীরা বিশেষ করে আমেরিকা, ইওরোপ বা জাতিসংঘ এসব অনিয়ম দেখে হাসিনাকে উচ্ছেদ করে কিছু একটা করে দিয়ে যাবে! আসলে সেটাও স্রেফ বোকামী চিন্তা। জাতিসংঘ বা ইওরোপ আমেরিকার বাংলাদেশে ২ পয়সারও স্বার্থ নেই। এবং তারা কোন একটা দেশ সম্পূর্ণ ধ্বংশ হবার আগে সেখানে সাহায্য নিয়ে যায় না। আগে পুরো বাংলাদেশ ধ্বংশ হতে দিন, অর্ধেক মানুষ মরুক- তারপর জাতিসংঘ বা আমেরিকা-ই্ওরোপের একটিভিটিজ দেখতে পাবেন- যদি বেঁচে থাকেন ততক্ষনে!
 
সেসব থাক, এমন একটা বাস্তব পরিস্থিতিতে বিএনপি বা তারেক সাহেব কি করতে পারে!
 
আমি বলবো, কিছুই করতে পারে না।
কারণ বিএনপি’র পেশীশক্তি নেই। সুতরাং কিছু করতে গেলেই তারা মারা যাবে। আমিও এখন বিএনপি কর্মীদের অনুরোধ করবো, বাদ দিন। চুপচাপ নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত থাকুন। হাসিনার মৃত্যুর আগে কিছুই হবে না। মৃত্যুর পরও বিএনপিকে ক্ষমতায় আসতে হলেও অনেক বাঁধা ডিঙ্গিয়ে আসতে হবে। এর মধ্যে আরও অনেক কিছুই হয়ে যাবে।
 
আর যদি কিছু করতেই চান তাহলে- জনগণকে সম্পৃক্ত করে রূচিসম্পন্ন মিডিয়ার আত্মপ্রকাশ ঘটান। মাথায় রাখতে হবে লন্ডনের ঐ আন্ডোলন টিভি’র মতো বা মাহমুদুর রহমানের ‘আমার দেশ’ পত্রিকার মতো ‘বিএনপির মুখপাত্র’ তৈরী করে কোন লাভ হবে না- গণমানুষের জন্য গণমানুষের পত্রিকা ও টেলিভিশন তৈরী করতে হবে যা দিয়ে সর্বস্তরের মানুষের ভেতরে পৌছে যাওয়া যায়।
 
পেশী শক্তিতে না পারলে বুদ্ধিতে ভরসা করতে শিখতে হয়- এটা বিএনপিকেও বুঝতে হবে।
 
এবং রাজনীতি পরিবর্তন করুন ১৮০ ডিগ্রী বাঁক নিয়ে।
গতানুগতিক বস্তাপচা একনেতা কেন্দ্রিক পরিবারতন্ত্রমুখী রাজনীতি বাদ দিয়ে দেশে একটা শক্তিশালী গণতন্ত্রমুখী রাজনীতিব্যবস্থায় টার্ণ নিন। যেখানে সর্বক্ষেত্রে, প্রধানতঃ নির্বাচনে মনোনয়ন দেয়া সহ সকল ক্ষেত্রেই তৃণমুলই নেতৃত্ব দিবে- নেতৃত্ব উপর থেকে- তারেক সাহেব বা তার স্ত্রী-কন্যারা লন্ডনে বসে মনোনয়ন দিতে পারবেন না।
 
এর বাইরে বিএনপি বা আওয়ামী লীগ আর কতকাল টিকে থাকবে- সেটাই এখন মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন। টিকে থাকতে হলে সকল দলকেই ভবিষ্যতের বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক হতে হবে।
 
কারণ, দেশের অন্তত ৩০% মানুষ ইতিমধ্যেই সুসভ্য গণতন্ত্র ও রাজনীতি সম্পর্কে খোঁজ খবর রাখেন- তারা একদিন সমাজ পাল্টে দিবে।
 
এবং দিবেই।
সবকিছুই ধ্বংশ হয় নতুন করে গড়ে উঠার জন্য।
প্রকৃতি শূণ্যতা মানে না।
   Send article as PDF