বাংলাদেশের জংগী বিষয়ক ভাবনা

কথাটা আমি আগেও বলেছি।
 
বাংলাদেশটাকে মূলত চালাচ্ছে কিছু অকালপক্ক সাংবাদিক নামধারী টাওট এবং কিছু মিডিয়াম্যান; যেমন: জাফর ইকবাল, মতিউর রহমান, মাহফুজ আনাম ইত্যাদি ইতরপ্রাণীসমূহ। এরা যখন যা লিখে বা প্রচার করে তখন তা-ই হয়; অন্তত শেখ হাসিনার আমলে তো হয়ই। এরা এতটাই প্রভাবশালী যে- বেগম খালেদা জিয়া পর্যন্ত এদের বক্তব্যে উঠাবসা করে। এরা ঘোষনা দিল- খালেদা জিয়া ২০১৪তে নির্বাচন না করে ভুল করেছে। খালেদা জিয়া নাচা-নাচি শুরু করে দিলেন; তারপর থেকেই এই অর্থব নির্বাচন কমিশনের নেতৃত্বে তথাকথিত, সাজানো ইউপি নির্বাচন বা পৌর নির্বাচনে অংশগ্রহন করলেন এবং গো হারা হারলেন! প্রকান্তরে- শেখ হাসিনাকে সহযোগীতা করলেন!
 
মতিউর রহমান নিজামী তখন কৃষিমন্ত্রী।
আর সেই (আপনার অনুভূতি!) মুন্নি সাহা তখনও সাংবাদিক(!)। মন্ত্রী নিজামীকে মুন্নি সাহা প্রশ্ন করলো, ‘এই যে আপনারা সারা দেশে এক যোগে হামলা বোমা হামলা চালালেন, সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে … এসব কেন করছেন?’
 
মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী নিতান্তই ভদ্রলোক।
তিনি বিরক্ত না হয়ে- অত্যন্ত ভদ্রভাবে তার স্বভাবসুলভ ভংগিতে যতটা সম্ভব গ্রামাটিক্যাল উত্তর দিলেন। আমি মতিউর রহমানের মতো অতটা ভদ্র নই- মুন্নি সাহা’কে ঐ সময় কেন তার লোকজন ঠাটায়া চর মারেনি- আমি সত্যিই ঐদিন বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।
 
বর্তমান ‘বাংলাদেশ’টি এসব ‘সাংবাদিক’ আর ‘সুশিল পন্ডিত’গণদের হাতে গড়া এবং এজন্যই এটি বর্তমান পৃথিবীর সবচে বাজে, বিরক্তিকর ও নোংড়া ভুখন্ড।
আর যারা ‘রাজনৈতিক নেতা থেকে শুরু করে এসব সাংবাদিক, সুশিলদের’ এখনও সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে অকাতরে- এরাই বাংলাদেশের প্রকৃত নষ্ট চরিত্র; যাদের সংখ্যাই বেশী। আর এদের সংখ্যার জন্যই এখনও, এই ২০১৬ সালে এসেও হাসিনা-খালেদা’রা এদের কাছে দেবী। এদের নেতা!
 
সেদিন মতিউর রহমান নিজামী- মুন্নি সাহাকে যথার্থ উত্তর দিতে ব্যর্থ হয়েছিলেন নিজ অযোগ্যতায়।
কিন্তু সেই দিনের সেই মুন্নি সাহা থেকে শুরু করে এই ২০১৬ পর্যন্ত যতগুলি মুন্নিসাহা, শাহবাগ, সুশিল, মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষ শক্তি, আরও যা রয়েছে তাদের মুখে প্রকাশ্যে প্রস্রাব করে দিয়েছে গুলশান ট্রাজেডি। গুলশান ট্রাজেডি এদের প্রত্যেকের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। গুলশাল ট্রাজেডির পর থেকে আর কাউকে গলা উচিয়ে বিএনপি-জামায়াতকে সন্ত্রাসী বলতে দেখা যাচ্ছে না।
 
লেখা শুরু করার সময়ই চিন্তায় ছিল জংগী, জংগীবাদ বা সন্ত্রাসীদের নিয়ে কিছু কথা বলবো; সে পথেই হাঁটি। অার হাঁটার জন্যই ভুমিকা দিলাম।
 
আমি বাংলাদেশের রাজনীতির ক্যারেক্টারগুলিকে বেশ ভালভাবেই বুঝি- নিজস্ব পর্যবেক্ষন ক্ষমতাবলে। আমার লেখা প্রথম বই ‘থ্যাংক য়্যূ’ এ এই বিষয়গুলি নিয়ে অনেক বিস্তারিত আলোচনাও করেছিলাম।
 
সেদিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ডালাসে ‘ব্লাকদের গুলিতে হোয়াইট পুলিশ হত্যার বিষয়ে’ বেশ কয়েকটা কথা বলেছেন।
মূল কথাটা ছিল- ‘আমেরিকায় সাদা-কালো বা বর্ণ-গোষ্টিগত কোন বিভক্তি নেই এবং এভাবে আমেরিকাকে বিভক্ত করা যাবে না’। কথাটার গুরুত্ব যে কতটা গভীরে- সেটা বোঝার ক্ষমতা অন্তত বাংলাদেশের কারো রয়েছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। এই কথাটাই আমি আমার থ্যাকং য়্যূ বইটাতে বলেছিলাম বাংলাদেশকে নিয়ে সেই ২০০০ সালে।
 
বাংলাদেশে মূলত কোন বর্ণ-গোষ্ঠি-হিন্দু-মুসলিম ইত্যাদি কোন বাস্তব বিরোধ নেই।
যারা বলে- বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অস্থিরতা রয়েছে- এরা অসভ্য এবং সুবিধাবাদী। বাংলাদেশ ভুখন্ডে সাম্প্রদায়িক কোন সংঘাত কোন কালেও ছিল না এখনও নেই। বর্ণ বা গোষ্ঠিগত কোন সংঘাতও বাংলাদেশে বিরল।
 
বাংলাদেশের অসুস্থ মানুষগুলির বৈশিস্ট্য হলো- নিজেকে মিডিয়াতে উপস্থাপন করা। তাহলেই সে হিরো!
যে বনে বাঘ নেই- সে বসে শেয়াল ই তো রাজা। এজন্যই সবাই এখানে শেয়াল হতে লড়াই করে যাচ্ছে। সারা দেশে ৫০জন মুসলিম মারা গেলেও সেটা সাম্প্রদায়িক সংঘাত হয় না; কিন্তু একজন হিন্দু কলেরা হয়ে মারা গেলেও ওসব শেয়ালগুলি ‘সাম্প্রদায়িকতা’ খুঁজে বের করবেই।
 
আর ঐ মিডিয়া- এরাতো বসেই রয়েছে দেশকে অস্থিতিশীল দেখিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে!
 
বাংলাদেশে যদি সাম্প্রদায়িকতা থাকতোই- তাহলে এই যে ২০% থেকে ২৫% হিন্দুরা বসবাস করছে- এদের সংখ্যাতো এতদিনে কমে ১% হয়ে যাবার কথা ছিল গত ৪৫ বছরে!
 
বাংলাদেশ যদি সাম্প্রদায়িকতা থাকতোই- তাহলে ভারতের ত্রিশ লক্ষ হিন্দু বাংলাদেশে এসে চাকুরী করে কিভাবে?
ওদের থেকে তো প্রতিদিনই ৫ টা ১০টা করে মারা যাবার কথা! মরছে না তো!
 
বাংলাদেশ যদি সাম্প্রদায়িকতা সম্পন্নই হতো- তাহলে বাংলাদেশের হিন্দুরা যখন বাংলাদেশের বাইরে যায় বসবাস করতে- তখন তারা অবশ্যই, এবং অবশ্যই ইন্ডিয়ান কমিউনিটির সংগে মিশতে প্রতিযোগীতায় নামতো (তার উপর রয়েছে ভারত সরকারের নাগরিকত্ব দেবার ঘোষনাতো টনিক হিসাবে রয়েছেই); কৈ? কেউ কি তা করছে?
 
আমি নিজে নিউ ইয়র্কে এরকম প্রায় শতাধিক হিন্দু ছেলে-মেয়েকে চিনি- যারা বাংলাদেশী এবং বাংলাদেশী; তাদের দেখেছি তারা বাংলাদেশকে আমার চেয়ে কোন অংশেই কম ভালবাসে না।
 
 কেন ভালবাসে?
 
মাস কয়েক আগে নিউ ইয়র্কে চ্যানেল আই এর একজন পুরোনো সংবাদ কর্মী সন্তষ মন্ডলের সংগে আমার পরিচয় হলো- সময় টিভি’র নিউ ইয়র্ক কার্যালয়ে (সময় টিভি’র ইউএসএ হেড শিহাবউদ্দিন কিসলু ভাই আমার বন্ধু)। অনেক কথা হলো। প্রশ্ন করছিলাম- কিভাবে থাকছেন আমেরিকায়?
 
সন্তোস মন্ডলের কথায় আমি সত্যিই খুব মুগ্ধ হয়েছিলাম।
তিনি বলছিলেন খুবই সাবলিলভাবে- হিন্দুদের জন্য তো চমৎকার একটা রাস্তা রয়েছেই অার সেটা হলো ‘সাম্প্রদায়িক নির্যাতনে’র বিরুদ্ধে পলেটিক্যাল এসাইলাম। কথাটা বলে উনি হেসে দিলেন। সংগে যোগ করলেন- এটা বললেই সব পাওয়া যায়।
 
আমি প্রশ্ন করেছিলাম- সত্যিই কি তাহলে বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক অসম্প্রিতি রয়েছে? ওনি হেসে বলেছিলেন- আমি কাজ করতাম কিভাবে?
 
তবে, বাংলাদেশের হিন্দুদের একটা অংশ (সুবিধাবাদী) সবকিছুতেই সাম্প্রদায়িকতা খুঁজে বেড়ায়- নিজেকে ‘সংবাদ শিরোনাম’ করার জন্য। উদ্দেশ্য ঐ একটাই- শেয়াল হওয়া।
 
আমি বাংলাদেশে অন্যান্য সংখ্যা-লঘিষ্ঠ জাতি-গোষ্ঠির মধ্যে এই সংকীর্ণতা দেখিনি খুব একটা।
চাকমা, রাখাইন, বৌদ্ধ, খৃষ্টান- এদের মধ্যে অসভ্য লোকদের সংখ্যা সত্যিই খুব কম- হাতে গোনা ২/৪ জন ছাড়া।
 
তাহলে বাংলাদেশে জংগী করা? সন্ত্রাসী কারা?
আসল উত্তরটিতো দিয়েই দিয়েছে- সেদিনের ঐ গুলশান ট্রাজেডি। বাকী উত্তরটি আমি দিচ্ছি।
 
বাংলাদেশে সন্ত্রাসী কাজ-কর্ম করে ‘ছাত্র লীগ’।
শেখ হাসিনা আর শেখ মুজিবের সন্তানরা।
সারাদেশে প্রতিটি পাড়ায়, প্রতিটি মহল্লায়, গ্রামে, উপজেলায়, থানায়- সব জায়গায় ছাত্র লীগ প্রকাশ্যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চালাচ্ছে। আমি আমার কৈশর থেকে শুরু করে অদ্যাবধি নিজ চোখে তা দেখেছি।
 
আর এদের নেতৃত্বে রয়েছে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেতা-মন্ত্রীরা।
শেখ সেলিম থেকে শুরু করে তোফায়েল আহমদরা এদের গডফাদার। আর রয়েছে একসময়ের জাসদ নেতারা। যাদের সংখ্যা এখন হাতে আংগুল দিয়ে গুনা যায়। ইনু, মেনন, দিলীপ বড়ুয়ারা। এদের প্রাকশ্য মদদে ছিল- লাল-পতাকা, সর্বহারাসহ আরো অনেক আঞ্চলিক সন্ত্রাসী সংগঠন যাদের মূল কাজ ছিল ডাকাতি আর মানুষ হত্যা।
 
আর জংগী?
না, মাদ্রাসার ছেলেগুলি নিতান্তই বোকা-সোকা। হ্যা। জেএমবি নামের সন্ত্রাসী একটা সংগঠন বাংলাদেশে রয়েছে- ওদের বেশীরভাগ সংগ্রহ ঐ মাদ্রাসার বোকা ছেলেদের ব্রেনওয়াশ করিয়ে।
 
জেএমবি আহামরি শক্তিশালী কোন হুমকী নয়।
অবৈধ শেখ হাসিনার অসুস্থ আর অযোগ্য দলবল যতটা ‘বিএনপি-জামায়ত’ বলে এতো এতো বছর চিৎকার চেচা-মেচি আর নিরীহ ছেলেদের সন্ত্রাসী আখ্যা দিয়ে অবলীলায় হত্যা করেছে- এবং এতে যে এফোর্ট দিয়েছে- তার মাত্র ৫%ও যদি জেএমবি’র বিরুদ্ধে দেয়া হতো; তাহলে তারা এতো দিনে হাওয়ায় উড়ে যেত।
 
ইসলামের সংগে অথবা হিন্দু বা অন্য কোন ধর্মের সংগে সন্ত্রাসের দূরতম কোন সম্পর্ক রয়েছে- এটা অসুস্থ্য চিন্তা।
তবে, একটা কথা অবশ্যই মনে রাখতে হবে বা মানতে হবে প্রকৃত জংগীরা অসম্ভব মেধাবী, ধনী পরিবার থেকে আসা কিন্তু বঞ্চিত ছেলেগুলিই।
 
নর্থ সাউথ ইউনির্ভাসিটি বাংলাদেশের একটি অত্যন্ত বড় ইন্সটিটিউট। ওখানে ধনীর দুলালেরাই বেশী পড়াশোনা করে। এরা যথেষ্ঠ মেধাবীও। গুলশানের সংগে এর সম্পর্ক একটা জলন্ত উদাহরণ।
 
একটা বিষয় সকলকে মনে রাখতে হবে- মেধাবী ছাড়া বড় কিছু হওয়া সম্ভব নয়। যারা বড় জংগী বা বড় সন্ত্রাসী- তারা অবশ্যই ‘ইনাফ ট্যালেন্টেড’ এবং ‘প্রচন্ড ক্ষিপ্রগতিসম্পন্ন’। আর বাংলাদেশের ধনীদের বড় অংশটিই ধনী হয়েছে অন্যকে ঠকিয়ে, অন্যকে গুলি করে, ব্যাংক ডাকাতি করে। এদের পয়সার অভাব নেই কিন্তু পরিবারে ভালবাসার প্রচন্ড অভাব থেকে যায়। কারণ কর্তা ব্যস্ত টাকা নিয়ে আর গিন্নী ব্যস্ত নারী নেতৃত্ব নিয়ে শেয়াল হবার প্রতিযোগীতায়।
 
আর ফলাফল হলো- ভালবাসার অভাব।
সন্তানের দিকে কোন খেয়াল থাকে না বাবা-মা’দের। আর যখন খেয়াল দেয়- ততদিনে অনেক দেরী হয়ে যায়। কোমলমতী এসব ছেলেরা- পারিবারিক বা সামাজিক অবহেলায় জড়িয়ে পরছে আন্তর্জাাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের সংগে বা অন্য কোন মাদক বা হিরোইনের আশ্রয়ে।
 
আর এরাই জন্ম দিয়েছে আইএস এর মতো তুখোড় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সংগঠনের।
মসজিদে খুৎবা দিয়ে, জামায়াত-বিএনপির দিকে রাজনৈতিক আংগুল তুলে বা অন্যকে দোষারোপ করে ‘সন্ত্রাস’ বন্ধ করা যাবে না।
 
বাংলাদেশে কোন সাম্প্রদায়িক সংঘাত নেই। বাংলাদেশে কোন বর্ণ বা গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব নেই। কোন কালে ছিলও না। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে কিছু ‘নষ্ট বুদ্ধিজীবি আর সাংবাদিক’ ‘স্বাধীনতার স্বপক্ষ শক্তি’ কথাটা ব্যবহার করে- দেশটাকে দুই ভাগে ভাগ করে রেখেছে।
 
বাংলাদেশের মতো চমৎকার একটা দেশকে ২/৩ ভাগে ভাগ করে এই নষ্টগুলি নিজেদের পকেটভারী আর শেয়াল সাজার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে; বিনিময়ে বাংলাদেশের পাবলিক- ছাগলের ৩ নম্বর বাচ্চার মতো লাফা-লাফি করে যাচেছ!
 
এটাই কি বাংলাদেশের নিয়তি?
এটাই বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। ওসব নষ্টদের উচ্ছেদ করতে হবে।
 
আপনাকে আমাকে সচেতন হতে হবে।
   Send article as PDF