আমিরাতে মেডিকেল

ইউনাইটেড আরব আমিরাতের রেসিডেন্সীর জন্য ‘মেডিকেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ’ হতে হয়। এমনটা মোটামুটি সব দেশেই হয়।

ছোটবেলায় দেখতাম আমাদের এলাকার অনেক মানুষ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চাকুরী করতে যেতো। তাদের প্রত্যেকেরই শুনতাম ‘মেডিকেল’ দিতে হতো।

তো, এই ‘মেডিকেল’ বিষয়টা কি এবং কেমন করে এর পরীক্ষা হয় – জানার কৌতুহল কাজ করতো আমার ভেতর। আস্তে আস্তে একটু যখন বড় হচ্ছি তখন যারা মেডিকেল দিয়ে আসতো তাদেরকে প্রশ্ন করতাম, ঠিক কিভাবে মেডিকেল নেয়?

যা শুনতাম, তা রীতিমত আমার জন্য আতংকের। যদিও আমি কোনদিনও বিদেশে চাকুরী করতে যাবো – ওমন সিদ্ধান্ত আমার ছোট বেলা থেকেই ছিলো না। তারপরও খুব বাজে মনে হতো বিষয়টাকে। এবং, যা শুনতাম তার স্বপক্ষে কোনও যুক্তি খুঁজে পেতাম না।

এরপর বন্ধুদের মধ্যে যারা ‘আর্মী’তে যোগ দিতে পরীক্ষা দিতে যেত – তাদের থেকেও কিছু তথ্য পেতাম যা আমার কাছে অযৌক্তিক মনে হতো।

বাংলাদেশে থাকতে অসংখ্য দেশ ভ্রমণ করেছি ‘পর্যটক’ হিসাবে; তাই মেডিকেল এর কোন প্রয়োজন হতো না। আমেরিকায় গ্রীনকার্ডের আবেদনের সময় জানলাম মেডিকেল দিতে হবে। গেলাম দিতে। ভেরী সিম্পল, সামান্য ব্লাড নিলো আর বুকের একটা এক্স-রে।

আমিরাত মধ্যপ্রাচ্যের দেশ।

সেখানে মেডিকেল দিতে হবে; গেলাম নির্ধারিত স্ক্যাজুয়াল মতো।

দুবাইয়ের সব সার্ভিস-ই বিশ্বমানের।

এখানেও তার ভিন্নতা দেখলাম না। ছিমছাম পরিপাটি অফিস। তবে এখানেও রাজত্ব ইন্ডিয়ানদের। কিছু ফিলিপিনো ও চাইনিজকেও দেখলাম কাজ করছে মেডিকেল অফিসে।

প্রথমে ব্লাড নিলো।

তারপর অন্য একটি উইন্ডোতে যেতে বললো, গেলাম।

এরপর একটি রুমে বসতে বললো, আমার পাসপোর্টটি নিয়ে গেলো একটা মেয়ে এসে। লক্ষ্য করলাম পাকিস্তানী-ইন্ডিয়ান-আফ্রিকান অনেকগুলো ছেলে লাইনে আছে। বুঝলাম সকলেরই মেডিকেল হচ্ছে। এবং এরা সকলেই শুধুমাত্র প্যান্ট পরে বসে রয়েছে, সকলেরই শার্ট বা টি-শার্ট খুলে রেখেছে।

এরমধ্যেই আমার ডাক পরলো, যদিও আমি শেষে এসেছি।

একটু অবাক হলেম। একটি ফিলিপিনো মেয়ে হবে সম্ভবত, বললো, ‘তুমি আমেরিকা থেকে এসেছো?’

উত্তরে আমি একটু হাসি দিয়ে শুধু মাথা ঝাকালাম।

’তুমি ঐ রুমে যাও।’ মেয়েটি নির্দেশনা দিলো।

আমি একটি রুমে ঢুকলাম।

আমি পরিস্কার উপলদ্ধি করলাম যে, আমাকে বেশ কয়েকজনকে ডিংগিয়ে, সিরিয়াল ব্রেক করে রুমে ঢুকানো হলো। সবচে ইন্টারেস্টিং বিষয় হচ্ছে – আমি কিন্তু আমেরিকান সিটিজেন নই, বাংলা-পাসপোর্ট ব্যবহার করি; নিরেট বাংলাদেশী। যদিও আমার পাসপোর্টে বর্তমান ঠিকানার জায়গায় আমেরিকার এড্রেস ছাড়া অন্য কোন তথ্য নেই যা দিয়ে বোঝা সম্ভব যে আমি আমেরিকায় থাকি!

একটা ইন্ডিয়ান ছেলে এসে আমাকে এক্স-রে মেশিনের সামনে দাঁড় করিয়ে দিলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আমার এক্স-রে কমপ্লিট।

রুম থেকে বের হয়ে আসলাম। সেই মেয়েটি আমার পাসপোর্ট আমার হাতে দিয়ে বললো, ’তোমার কাজ শেষ, তুমি চলে যেতে পারো। ধন্যবাদ।’

আমি বের হবার সময় লক্ষ্য করলাম এর পরের জনকে ‘খালি গায়ে’ ওই একই এক্স-রে মেশিনের রুমে ঢুকানো হলো।

আমি সত্যিই বুঝতে অপারগ যে, আমি স্বাভাবিক জামা-কাপড় পরেই যেখানে ‘মেডিকেল’ দিলাম; সেখানে বাকীদের কেন জামা খুলে বসিয়ে রাখা হয়েছে? তাদের কেন খালি গায়ে এক্স-রে করতে হলো?

আর মেডিকেল এর সংগে জামা-কাপড় খোলার ঠিক কি সম্পর্কে থাকতে পারে?

এটা কি মেডিকেল করার নামে শ্রেফ দরিদ্র দেশের মানুষদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করা?

তাদেরকে বুঝিয়ে দেয়া যে – ‘তুমি খুবই ছোট একজন মানুষ অথবা নিতান্তই ঊনমানুষ’?

   Send article as PDF