ওসি প্রদীপের রিমান্ড

রিমান্ড চলছে।
একজন ইন্সপেক্টরের উপর দায়িত্ব পরেছে ওসি প্রদীপ কুমার দাসকে জিজ্ঞাসাবাদ করার।

ইন্সপেক্টর ওসি প্রদীপকে নিয়ে একটা কামড়ায় ঢুকলেন।
নিজে বসলেন চেয়ারে। অপরদিকে ওসি প্রদীপ দাঁড়িয়ে আছেন।
ওসি প্রদীপের মুখের দিকে তাকালেন ইন্সপেক্টর সাহেব, কিছু একটা বোঝার চেস্টা করলেন। কিছু বুঝতে পারলেন কি না, সেটা ঠিক বোঝা গেল না।

তারপর ওসি প্রদীপকে বললেন, ‘টি-শার্ট খুলে ফেলুন’।
ওসি প্রদীপ বেশ সাহসী মানুষ, পাল্টা প্রশ্ন করলেন ‘কেন? টি-শার্ট খুলতে হবে কেন?’

ইন্সপেক্টর আরও দৃঢ়তার সংগে বললেন, ‘যা বলছি সেটা করুন, আপনি এখন আর ওসি নন। আমার নিদের্শ আপনাকে শুনতে হবে। আমার প্রতিটি কথার উত্তর দিতে আপনি বাধ্য’।

ওসি প্রদীপ বাবু বুঝতে পারলেন এই ইন্সপেক্টর বড্ড বেরসিক, পাত্তা পাওয়া যাবে না। একবার ভেবেছিলেন ঘুষের প্রস্তাব দিবেন, পরে আবার চিন্তা করে দেখলেন শুধু টাকা নষ্ট করে কি লাভ। আমাকে আটকিয়ে রাখার ক্ষমতা বা সামর্থ বাংলাদেশ সরকার রাখে না। মানুষকে ঠান্ডা করতে হয়তো মাস ছয়েক আমাকে জেলে থাকতে হবে। চাকুরী চলে গেলেও কিছুই যায় আসে না। টাকার কি আর অভাব রয়েছে? প্রয়োজন হলে উপারে চলে যাবো। এদেশেই থাকতে হবে- সেটার কোন মানে হয় না। তাছাড়া ‘সংখ্যালঘু কার্ড’ তো খেলার সুযোগ থাকবেই। প্রয়োজন হলে জার্মানীতে গিয়ে এসাইলাম চাবো। কোন বিষয়? টাকা আমি নস্ট করবো না। এতো কষ্টের টাকা আমার। শালার সাংবাদিকরা শুধু আমার দুই হাজার কোটি টাকাই দেখলো, ওখান থেকে ১ হাজার কোটি টাকা তো গুনে গুনে এসপি, চট্রগ্রাম সার্কেলের ডিআইজি, আইজি বেনজির, কিছু টাকা ডিআইজ মনিরুল আর হোম মিনিস্টার নিজে পর্যন্ত নিছে। অথচ বলা হচ্ছে সব টাকা আমি নাকি একাই খাইছি! শালার সব টাওট-বাটপারে ভরে গেছে দেশটা। টাকা খাইয়াও শান্তি নাই।

‘কি ব্যাপার প্রদীপ বাবু, কি বললাম আপনাকে? কথা কানে যায় না? গরম ডিম আনতে পাঠাইছি- ‘হট-এগ’ আসার পর কথা কানে যাবে নাকি আপনার?’ ইন্সপেক্টর যেন একটু গর্জে উঠলেন।

এবার প্রদীপ দারোগা একটু যেন ভয় পেলেন। গরম ডিমে কেন যে এত ভয়? সামান্য ছোট একটা মুরগী এই এতো বড় ডিমটা প্রসব করে অথচ এই একই ডিমটি সামান্য একটু না হয় গরম করে একজন হিউম্যানকে ঢোকানোই হয়- তাতে কি অসুবিধা তাই তো বুঝতে পারলাম না। দেশটা শেষ হয়ে গেলো। তাছাড়া একজন মানুষতো একটা মুরগীর চেয়েও কমপক্ষে ১০ গুন বড়, ডিম তো আর ১০ গুন বড় হয়ে যায়নি। তাহলে ভয় কিসের? মনে মনে নিজেকে শান্তনা দিচ্ছেন ওসি প্রদীপ।

ওদিকে ইন্সপেক্টরের চোখে চোখ পরে যাবার পর ওসি প্রদীপ মনে হলো একটু ভয়ই পেয়ে গেলেন। টি-শার্টটি এক ঝটকায় খুলে ফেললেন। নীচে আজ কোন সেন্ডু-গেঞ্জিও নেই। যাক, ইন্সপেক্টর ছাড়া তো আর কেউ এখানে নেই- সমস্যা কি?

ইন্সপেক্টর তার নির্দেশ পালিত হয়েছে দেখে একটু খুশী হলেন কিন্তু নিজের গাম্ভীর্জ বজায় রেখেই বললেন, ‘এবার প্যান্ট খুলে ফেলুন, সময় নষ্ট করবেন না’।

ওসি প্রদীপ বুঝতে পারলেন আজ আর গরম ডিম থেরাফী থেকে মুক্তি মিলবে না। মনকে বোঝাতে চাইলেন নিজে নিজে- ‘এ কিছু না, কিছু না; ও অতি সামান্য একটা ডিম, কি আর হবে? মরে তো আর যাবো না। সহ্য হয়ে যাবে। তাছাড়া নিজে ‘গে’ হওয়ার সুবাদে থেরাফীর রাস্তাও তুলনামুলকভাবে একটু প্রশস্তই আছে, এতো টেনশন করে আর কি হবে।’ মনে মনে শক্তি সঞ্চয় করে নিলেন প্রদীপ বাবু।

কোন কথা না বলে বা কোন ভনিতা না করে, খুব স্মার্টনেসের সংগেই এবার নিজে নিজেই প্যান্টটিও এক টানে খুলে ফেললেন। আর ভাবলেন, ইন্সপেক্টরকে ‘পার্টনার’ ভাবলেই তো হয়। কি আর সমস্যা প্যান্ট খুলাতে?

কিন্তু ইন্সপেক্টর এর যেন কোন ভাবান্তরই হলো না।
তিনি ওসি প্রদীপকে এবার আন্ডারওয়ারটিও ঝটপট খুলে ফেলার নির্দেশ দিলেন।

ওসি প্রদীপ যেন প্রস্তুত হয়েই ছিলেন।
এক টানে তাও খুলে ফেললেন। ভাবলেন এখনই বুঝি কেউ গরম ডিম নিয়ে রুমে ঢুকবে! ডিমটি কি বেশী গরম থাকবে?

ইন্সপেক্টর সাহেব, নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওসি প্রদীপের সামনে এসে দাঁড়ালেন। করোনা ভাইরাসের এই পেন্ডামিকের সময় তিনি থ্রি-এম ব্রান্ডের অরিজিনাল এন-নাইনটিফাইভ মাস্ক ব্যবহার করেন। নিজের চেহারা খুব একটা দেখা যায় না। হাতে ব্যবহার করেন মেডিকেল একজ্যামিনেশন গ্লভস। এখনও তার দু’হাতে গ্লভস পরা।

এবার ইন্সপেক্টর নিজ হাতে ওসি প্রদীপের একগোছা ‘বিশেষ কয়েকটি লোম’ কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই শক্ত করে ধরে এক জটকা মেরে তুলে ফেললেন। ব্যাচারা প্রদীপ দারোগা বেশ ব্যাথা পেয়ে কুঁকড়ে উঠলেন যেন। ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলেন! অ্যা! এটা কি হলো?

তারপর উচ্চস্বরে অট্টহাসি দিলেন ইন্সপেক্টর।
মৃদ হেসে বললেন, ‘প্রদীপ বাবু, আপনি তো দু’দিন বাদে নিশ্চিত মুক্তি পেয়েই যাবেন। আমি জানি বর্তমান ‘অবৈধ ফ্যাসিস্ট সরকার’ ক্ষমতায় থাকলে- এই সরকারের অধিনস্ত ‘বাংলাদেশ রাষ্ট্রযন্ত্র’ আপনার একটা লোম স্পর্শ করারও ক্ষমতা রাখে না। আপনাকে ছেড়ে দিতেই হবে। আর আপনি জেল থেকে বের হয়েই প্রকাশ্যে বলে বেড়াবেন যে, আপনার একটা ‘লোমও’ কেউ ছিঁড়তে পারেনি! তাই আমি আপনার মুখটা আজ বন্ধ করে দিলাম। আপনাকে আমার আর কিছুই জিজ্ঞাসা করার নেই। আপনার রিমান্ড-জিজ্ঞাসাবাদ এখানেই শেষ।’

   Send article as PDF