ভুট্টো ভুট্টো ভুট্টো

ভারতবর্ষ থেকে আলাদা হয়ে মুসলিমদের জন্য একটি আলাদা রাষ্ট্র সৃষ্টিতে নেতৃত্ব দেন কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ।
 
তার নেতৃত্বের প্রতি আস্থা রেখে বেঙল এর বাঙালী মুসলিমরাও একযোগে পাকিস্তানে যোগ দিতে ইচ্ছা প্রকাশ করে এবং ব্যাপক গণআন্দোলন শেষে বৃটিশ সরকার ও ভারতীয় কংগ্রেস এর নেতৃবৃন্দ ‘বৃহত্তর বেঙল’কে দু’টুকরো করে শুধুমাত্র পূর্ব বাংলাকে পাকিস্তানে যোগ দেয়াটা মঞ্জুর করে।
 
সৃষ্টি হয় পাকিস্তান।
সেই পাকিস্তানের মৃত্যু হয় মুলত জুলফিকার আলী ভুট্টো’র নোংড়া চক্রান্তে। ১৯৭০ এর নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে বিজয়ী শেখ মুজিবুর রহমানকে ক্ষমতায় যেতে না দিতে ইয়াহিয়া খানের সংগে চক্রান্ত করে পূর্ব পাকিস্তানকে নেতৃত্বশূণ্য অবস্থায় একটা গণহত্যাকান্ড চালিয়ে পরিত্যাগ করে।
 
অপরদিকে পূর্ব বাংলার বিদ্রোহী জনসাধারণ পাকিস্তানীদের সেই গণহত্যার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে প্রতিষ্ঠা করে স্বাধীন স্বার্বভৌম বাংলাদেশ।
 
যাই হোক, বলছিলাম জুলফিকার আলী ভুট্টোকে নিয়ে।
 
১৬ই ডিসেম্বর ভারতের কাছে পাকিস্তান আত্মসমর্পণ করে এবং বাংলাদেশের বিজয় নিশ্চিত হয়।
 
২০শে ডিসেম্বর পাকিস্তান পিপলস পার্টির (পিপিপি) প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো পাকিস্তান সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাত করে একটা সেনা বিদ্রোহ ঘটায় এবং প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খানকে বিতারিত করে ক্ষমতা দখল করেন।
 
নিজেকে প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করেন চতুর জুলফিকার আলী ভু্ট্টো।
বছর দেড়েক পর সংসদীয় পদ্বতির সরকার গঠন করে নিজেকে প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করেন জুলফিকার আলী ভু্ট্টো ১৯৭৩ সালের ১৪ই আগষ্ট।
 
তারপর ৫ই জুলাই ১৯৭৭ সালে ক্ষমতাচুত্য হন জেনারেল জিয়াউল হকের হাতে এবং গ্রেফতার হন।
 
এরপর কয়েকবার ছাড়া পান আবার গ্রেফতার হন মেলেটারীর হাতেই।
 
দীর্ঘ সময়ের পররাষ্ট্রমন্ত্রী, পাকিস্তানের মৃত্যু, নিজের প্রেসিডেন্সী ও প্রধানমন্ত্রীত্বকালে অনেক অপকর্ম করেছিলেন এই জুলফিকার আলী ভুট্টো। সবচে বিরক্তিকর বিষয় ছিল এই যে, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের লেলিয়ে দেয়া জেনারেল টিক্কা খানের গণতহ্যাকান্ড নিজ চোখে দেখার জন্য জুলফিকার আলী ভুট্টো ঐদিন ঢাকা থেকে যান।
 
যদিও দিনে ঢাকা ত্যাগ করেছিলেন প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান।
রাতের গণহত্যা নিজে উপস্থিত থেকে উপভোগ করেন জুলফিকার আলী ভু্ট্টো এবং পরদিন লাহোর ফেরত যান।
 
যাই হোক প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হকের ক্ষমতাকালেই দীর্ঘ বিচারে শেষমেস সুপ্রিমকোর্ট তার মৃত্যুদন্ড বহাল রাখে এবং ১৯৭৯ সালের ৪ঠা এপ্রিল রাওয়ালপিন্ডি সেন্ট্রাল জেলে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকার করা হয়।
 
জুলফিকার আলী ভুট্টোর ছেলে শাহনেওয়াজ ভুট্টোকে ১৯৮৫ সালের ১৮ই জুলাই মাত্র ২৬ বছর বয়সে ফ্রান্সের নাইসে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়।
 
জুলফিকার আলী ভুট্টোর আরেক ছেলে মীর গোলাম মর্তুজা ভুট্টো একজন স্বীকৃত সন্ত্রাসী; সন্ত্রাসী সংগঠন আল-জুলফিকার এর নেতা। মিলিটারী ট্রাইবুনালে মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত মর্তুজা পালিয়ে আফগানিস্থানে গিয়ে তার সন্ত্রাসী কর্মকান্ড অব্যাহত রাখছিলেন।
 
বোন প্রধানমন্ত্রী বেনজীর ভুট্টোর ক্ষমতাকালিন সময়ে নির্বাসন থেকে ফিরে রাষ্ট্রিয় ক্ষমা গ্রহন করেন এবং রাজনীতিতে যোগ দেন। যাই হোক, ২০শে সেপ্টেম্বর ১৯৯৬ সালে পুলিসের এক এনকাউন্টারে আরও ৫ জনের সংগে সেও অকালেই মারা যায়।
 
মন্দলোকেরা বলে থাকে, পিপিপি’র ক্ষমতার দাবীদার মর্তুজা ভুট্টোকে বেনজীর ভুট্টোর হাজবেন্ড আসিফ আলী জারদারীই হত্যা করিয়েছিলেন এবং বেনজীর ভুট্টোরই তাতে ইন্ধন ছিল।
 
রইলো বাকী বেনজীর ভুট্টো।
১৯৮৮ থেকে ১৯৯০ এবং ১৯৯৩ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত দু’দুবারের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন জুলফিকার কন্যা বেনজীর ভুট্টো। এই উচ্চশিক্ষিত ভদ্রমহিলা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দুই ইউনিভার্সিটি (অক্সফোর্ড ও হার্ভাড) থেকেই গ্রাজুয়েট। এমনকি বেনজীর ভুট্টো ছিলেন অক্সফোর্ড ইওনিয়ন এর প্রেসিডেন্ট পর্যন্ত।
 
যাই হোক, আবার সেই রাওয়ালপিন্ডি যেখানে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছিল পিতা জুলফিকার আলী ভুট্টোর; সেই রাওয়ালপিন্ডিতেই পিপিপি’র এক রালীতে অংশগ্রহনকালে ২০০৭ সালের ২৭শে ডিসেম্বর খুব কাছ থেকে করা আততায়ীর বন্দুকের গুলিতে স্পটডেথ হন জুলফিকার পরিবারের শেষ বংশধর বেনজীর ভুট্টো।
 
বেনজীরের স্বামী আসিফ আলী জারদারীকে মন্দলোকেরা মিষ্টার টেন পার্সেন্ট বলে ডাকতেন যখন তার ওয়াইফ বেনজীর ভুট্টো ছিলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। অবশ্য বেনজীর মারা যাবার পর নির্বাচিত পিপিপি ক্ষমতায় আসলে দূর্নীতির জন্য যাবজ্জিবন দন্ডপ্রাপ্ত আসিফ আলী জারদারীকে ক্ষমা করে দেয়া দেয়া এবং তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট হিসাবেও দায়িত্ব পালন করেন।
 
বেনজীর ভুট্টোর তিন সন্তানের মধ্যে সবচে বড় বেলওয়াল জারদারী লন্ডন অধ্যয়নরত। ভুট্টো পরিবারের নাম বজায় রাখতে বেলেওয়াল জারদারী নিজের নামে নানার বংশের ‘ভুট্টো’ কে গ্রহন করে নিজের নামকরণ করেন ‘বেলওয়াল ভুট্টো জারদারী’।
 
২৯ বছরের বেলওয়াল ভুট্টো জারদারী এখন পিপিপি’র চেয়ারম্যান।
   Send article as PDF