শেখ হাসিনার নো-বেল

এ পর্যন্ত মাত্র ৪-জন মানুষ দুই-দুইবার করে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন- তারা হলেন ফ্রেডরিক সানজার, লিনাস পাওলিং, জন বার্ডিন এবং মেরী কুরী।
 
বিষয়টা কিন্তু দুর্দান্ত সাফল্যমন্ডিত।
এঁদের মধ্যে আমরা শুধুমাত্র মেরী কুরীর সম্পর্কেই আমাদের পাঠ্য বইতে জানার সুযোগ পেয়েছিলাম।
 
ডিনামাইট এর আবিস্কারক আলফ্রেড বার্ণহার্ড নোবেল জন্মেছিলেন সুইডেনের রাজধানী স্টোকহোম এ। নিজের ধ্বংশাত্বক আবিস্কারের দায় মেটাতে তিনি নোবেল প্রাইজ প্রবর্তন করেন যা বর্তমান বিশ্বের সবচে সম্মানিত পুরস্কার।
 
তার পর থেকেই নোবেল প্রাইজ দেয়া শুরু হয় তার নিজ দেশ সুইডেন থেকে। সুইডেন এবং নরওয়ে দু’টোই প্রতিবেশী এবং স্ক্যান্ডেনেভিয়ান দেশ। নোবেল শান্তি পুরস্কারটি দেয়া হয় নরওয়ে থেকে।
 
মজার বিষয়টি হলো শুধুমাত্র এই ‘নোবেল পিচ প্রাইজটি’ নিয়ে-ই ব্যাপক রাজনীতি হয়। অনিয়ম হয়। নরওজেয়ান নোবেল কমিটি কারো নিকট দায়বদ্ধ নয়- তারা স্বার্বভৌম।
 
আমেরিকান একমাত্র কালো প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে নোবেল শান্তি পুরস্কার দেয়া হলো এই বিবেচনায় যে এতে তিনি বিশ্বের শান্তিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে স্বচেষ্ট হবেন!
 
নোবেল কমিটি সাধারণত শান্তি পুরস্কারটি ব্যবহার করে- নিজ দেশে পশ্চিমা স্বার্থরক্ষাকারী ভিন্নমতাবলম্বীদেকে এই পুরস্কারটি দিয়ে। চায়নিজ বা ইরানী ভিন্নমতাবলম্বীরা সবসময়ই তালিকার প্রথম দিকে থাকে।
 
দক্ষিন আফ্রিকার অবিসাংবাদিত নেতা নেলসন ম্যান্ডেলা ২৭ বছর জেল খেটে মুক্তি পাবার পর প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন এবং তিনি তাদের শাসক সাদা গোষ্ঠীর উপর কোন প্রতিশোধ নেননি সেই বিবেচনায় এবং অহিংস আন্দোলনের জন্য নোবেল পান কিন্তু সেই সংগে সেই শান্তির যুগ্ন চ্যাম্পিয়ন হিসাবে নোবেল প্রাইজ এর অর্ধেকটা দিয়ে দেয়া হয় সদ্যসাবেক সাদা প্রেসিডেন্ট এফডব্লিওডি ক্লার্ককেও।
 
অনেকটা ঠিক একই স্ট্যাইলে ব্যাপক নির্যাতিত নেতা পিএলও (বর্তমান প্যালেস্টাইন) এর চেয়ারম্যান (পরবর্তীতে প্রেসিডেন্ট) ইয়াসির আরাফাতকে নোবেল শান্তি পুরুস্কারটি দেয়া হয় কিন্তু সেবার ওটাকে তিন-ভাগে ভাগ করে সংযুক্ত করা হয় ইসরেলী নেতা সিমন পেরেজ এবং ইজ্জাক রবিনকেও।
 
সামরিক মিয়ানমারের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেত্রী অং সান সুচীর স্বামী একজন সাদা বৃটিশ। তিনি বসবাসও করতেন লন্ডনে। সেখানেই তার দুই বৃটিশ সিটিজেন সন্তান রয়েছে। সাদারা সুচীর বড় সমর্থক। ব্যস পেয়েও গেলেন নোবেল পিচ প্রাইজ।
 
বাংলাদেশী সুদের ব্যবসায়ী অর্থনীতিবিদ ড. মোহাম্মদ ইউনুছ আমেরিকান প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন ফ্যামেলীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু। গ্রামীন ফোনের প্রধান বিনিয়োগকারীও নরওজিয়ান কোম্পানী। সাদাদের সংগে নিত্য উঠাবসা মি. ইউনুছেরও। সুতরাং অর্থনীতিতে নয় শান্তির কোন বার্তা ছাড়াই পেয়ে গেলেন তিন নোবেল শান্তি পুরুস্কার।
 
মালালা ইউসুফজাই এর মতো আরো অসংখ্যা নারী পাকিস্তান আফগানিস্থানের তালেবানদের হাতে নির্যাতিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। মালালার মতোই আরোও অনেক কিশোরী সরাসরি আগে-পরেও আঘাত প্রাপ্ত হয়েছেন; তবুও সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছিলেন এই কিশোরী। আহত সুন্দরী কিশোরী মালালার উপর দৃষ্টি পরে সাদাদের। উন্নত চিকিৎসার জন্য উড়িয়ে নিয়ে যাওয়া হয় এই অতি সৌভাগ্যবতী কিশোরীকে লন্ডনে। তার পর সবকিছু ইতিহাস।
 
নওরেজিয়ান নোবেল শান্তি কমিটি এই কিশোরীকেও আরেক ভারতীয় শিশু অধিকার কর্মী কৈলাশের সংগে ভাগাভাগি করে দিয়ে দেন নোবেল শান্তি পুরস্কারটি।
 
এতো কিছুর মধ্যেও নোবেল শান্তি কমিটি ঠিকই খুঁজে নিয়েছিল আর্মেনিয়ান সাদা মহিলা পরবর্তীতে ভারতীয় সিটিজেন মাদার তেরেসাকে যিনি সত্যি সত্যিই তার সারাটা জীবন ব্যয় করেছেন শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য।
 
আমাদের বাংলাদেশেও এমন একজন রয়েছে সাদা মহিলা যিনি নিরবিচ্ছিন্নভাবেই ব্যয় করে যাচ্ছেন তার জীবনটা শুধুই এই দেশটাকে ভালবেসে- তিনি সাভারের পক্ষাঘাতগ্রস্থদের পুনর্বাসন কেন্দ্র এর প্রতিষ্ঠাতা ব্রিটিশ ভেলরি অ্যান টেইলর। নোবেল কমিটির দৃষ্টি এখনও তার উপর পরেনি।
 
তবে যা-ই হোক না কেন- নরওয়েজিয়ান নোবেল পিচ কমিটি আজ পর্যন্ত কোন খুনী বা অবৈধ শাসককে ‘শান্তি পুরুস্কার’ প্রদানের জন্য মনোনীত করেছেন বলে আমার অন্তত জানা নেই।
 
যতই রাজনীতি হোক না কেন- নোবেল পিস কমিটি কখনওই গণতন্ত্রবিরোধী, মানবাধিকার হরণকারী কিংম্বা কোন খুনী ব্যক্তিকে নোবেল পুরস্কার প্রদান করবে না- এটা আমি আজ লিখে দিলাম।
 
সাদারা রাজনীতি বুঝেন, রাজনীতি করেন, অন্যদের দাবিয়ে রাখতে কুটনৈতিক খেলাও বেশ দাপোটের সংগেই খেলতে জানেন কিন্তু তারা সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে সাদাদের স্বার্থ বজায় রাখেন যদিও কিন্তু এমন কোন সিদ্ধান্ত নেন না- কারণ, বংশ পরিচয় দেখেই তাদের উপর নিয়োগ পত্র অর্পিত হয়।
 
নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিতে বাংলাদেশের ড. আতিয়ার রহমান বা পুলিশের ডিআইজি মনিরুল ইসলামের মতো বাজে রক্তযুক্ত নীচু পরিবার থেকে আসা কাউকে অন্তর্ভূক্ত করা হয় না।
 
সাদাদের নাক কিন্তু খুবই উঁচু।
 
একটা মজার বিষয় হলো নোবেল কমিটি পুরুস্কার দেন; কিন্তু তারা তা প্রত্যাহার করার ক্ষমতা রাখেন না এমনকি পুরস্কার একবার দিয়ে দেবার পর সেটা নিয়ে তারা দ্বিতীয়বার কোন মিটিং এও বসেন না যে- সিদ্ধান্ত টি সঠিক ছিল না ভুল ছিল। আর এ কারণেই উৎরে যাচ্ছেন মিয়ানমারের খুনী অং সান সুচী। তার নোবেল ফেরত নেবার কোনই সুযোগ নেই।
 
নোবেল কমিটি মৃত ব্যক্তিকে নোবেল পুরস্কার দেয় না। যদি দিত তাহলে ভারতের মহাত্মা গান্ধীকে পুরুস্কার দেয়া হতো এমনকি নোবেল কমিটি জীবিত মহাত্মা গান্ধীকে কেন পুরস্কার দেয়নি সেটা নিয়েও দুঃখ প্রকাশ করেছিল বলে জানা যায়।
 
মহাত্মা গান্ধী ‘অহিংস আন্দোলন’ এর এক দুর্দান্ত নাম।
 
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সর্বকালের সর্বসেরা অফিসারদের একজন ছিলেন ব্রিগ্রেডিয়ার আজমী। তিনি প্রয়াত জামায়াত নেতা গোলাম আজম এর সন্তান। শুধুমাত্র এই কারণে তাকে বিনা অভিযোগে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করা হয়, কেড়ে নেয়া হয় তার পদ-পদবীও। গত প্রায় এক বছরেরও বেশী সময় ধরে শেখ হাসিনা তাকে ‘গুম’ করেছেন। শেখ হাসিনা একই সংগে গুম করেছেন ক্যাংগারু আদালতের মাধ্যমে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করা মীর কাশেম আলীর ব্যারিষ্টার সন্তানকেও।
 
বিএনপি নেতা ইলিয়াস অালী, চৌধুরী আলমদের কথাও আমেরিকাসহ পুরো পশ্চিমা ও সাদা বিশ্ব জানে। আর আমেরিকা যেটা জানে সেটা নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটিও জানে।
 
আমেরিকা তাদের বার্ষিক মানবাধিকার রিপোর্ট প্রকাশ করে প্রতি বছর বিশ্বের প্রতিটি দেশ এর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করা হয় এই খাতে মার্কিন বাজেটে। এবং তারা প্রতি বছরই উল্লেখ করে শেখ হাসিনার হাতে এবছর মোট কতজন ‘গুম’ হয়েছে, কতজনের বিনা বিচারে ‘ক্রস ফায়ার’ এর নামে হত্যা করা হয়েছে শেখ হাসিনার হাতে। সেই সংগে আওয়ামী পুলিশ যখন নিরীহ ছেলেদের ধরে নিয়ে নৃশংস নির্যাতনের নামে পুংগ করে দেয় চিরজীবনের জন্য, নেয় সহজ সরল মানুষের দু’টি চোখ, দৃস্টিশক্তি চিরতরে- সেগুলিও শেখ হাসিনার আমল-নামায় লিপিবদ্ধ হয় আমেরিকান মানবাধিকার এর ডায়েরীতে।
 
মতিঝিলের শাপলা চত্বরে নিরীহ মুসলিমদের রাতের আধারে হত্যাকারীর নাম শেখ হাসিনা।
 
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের গণতন্ত্র হত্যাকারী।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশের মানুষের মানবাধিকার লুন্ঠনকারী।
 
শেখ হাসিনা স্বাধীন মতামতকে স্তব্ধ করে দিয়েছে গত ৮ বছরে।
 
পুলিশ, ডিবি, রাব, ডিজিএফআই আর বিজিবির বন্দুকের গুলি-ই শেখ হাসিনার ক্ষমতার উৎস। শেখ হাসিনা নিজের দেশের নয়- দেহরক্ষার দায়িত্ব দিয়েছেন ভারতীয় বাহিনীকে। এসবও আমেরিকার মুখস্ত।
 
বাংলাদেশের ইতিহাসে শেখ হাসিনার অবস্থান সবচে বাজে, দুঃচরিত্রবতী, লম্পট, খুনী, হত্যাকারী হিসাবে সবার উপরে চিরদিন শোভা পাবে। মানুষ ঘৃণায় থু থু দেবে শেখ হাসিনাকে।
 
এই সেই শেখ হাসিনা যে কিনা গত মাসেও রোহিঙ্গাদের জংগী হিসাবে চিহ্নিত করেছেন, তাদের বাংলাদেশে ঢুকতে না দিয়ে মিয়ানমারের মৃতপুরীতে ফেরত যেতে বাধ্য করেছেন। আর এখন জনস্রোত সামলাতে ব্যর্থ হয়ে যখন তারা ঢুকে পরেছে- তখন গিয়েছে নিজের মহাত্ব দেখাতে।
 
শেখ হাসিনার অভিনয়, শেখ হাসিনার নোংড়ামী বুঝতে আমেরিকান মাথা দরকার হয় না- সহজ সরল বাঙালি মাথাও সব বুঝে নিতে জানে।
 
এই বাংলাদেশের মানুষের কেনা টাকায় অস্ত্র, গুলি আজ শেখ হাসিনা নির্দিধায় ব্যবহার করছেন বাংলাদেশেরই মানুষের বুকে। অথচ মিয়ানমার বাংলাদেশের আকাশসীমা লংঘন করে যাচ্ছে, সীমান্তে মাইন পুতছে- কিন্তু সেখানে শেখ হাসিনা নীরব। যে গুলি ব্যবহার করার কথা ছিল দেশ রক্ষায় সে গুলি ব্যবহার হচ্ছে দেশের মানুষকে হত্যায়।
 
শেখ হাসিনা নিশ্চুপ থাকেন যখন তার প্রভরাষ্ট্র ভারতীয় বাহিনী নির্বিচারে সীমান্তে বাংলাদেশীদের গুলি করে হত্যা করে পাখির মতো! নিজ দেশে মানবাধিকার লংঘনকারীকেও তোষামদী করে বেড়ায় শেখ হাসিনা।
 
শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন ছাত্রলীগ এর কর্মীদের দেশব্যাপী ধর্ষন-রেকর্ডও কারোরই নজর এড়ায় ই। নজর এড়ায়ই আওয়ামী কর্মীদের চাঁদাবাজীও। এবং এসবেরই দায়-দায়িত্ব এড়াতে পারবেন না শেখ হাসিনা।
 
তারপরও এই শেখ হাসিনা যখন আশা প্রকাশ করে, স্বপ্ন দেখে- নোবেল পুরস্কার পাবার, তখন আমি শুধুই অট্টহাসি হাসি।
 
নোবেল কমিটিতে যে কোন ‘আম্লীগ’ নেই- এটা কিন্তু আমি বেশ পরিস্কারভাবেই জানি।
 
   Send article as PDF