আমেরিকার আরও কিছু কথা

আমেরিকার আরও কিছু কথা
 
গত ২/৩ দিনের বেশ কয়েকটি ‘মেইল’ এসে জমা হয়ে রয়েছে, সময়ের অভাবে খুলে দেখা হয়নি।
 
আজ বাসায় ফিরেই মেইলগুলি দেখছিলাম।
 
ওয়েল কেয়ার ইনস্যুরেন্স কোম্পানী থেকে আসা মেইলটি খুললাম। প্রথমেই বড় করে লেখা ‘দিস ইজ নট এ বিল’।
এটা আমি জানি; আমাকে বিল প্রদান করতে বলা হচ্ছে না। বলা হচ্ছে- তোমার ট্রিটমেন্ট বাবদ ‘এই টাকা’টা বিল হয়েছে যা আমরা পেমেন্ট করে দিয়েছি এবং তোমার অবগতির জন্য তোমাকে একটা কপি দেয়া হল।
 
আমার লেখা যারা নিয়মিত পড়েন তারা অবশ্যই অবগত আছেন যে আমি গত মাস তিনেক আগে অসুস্থ্য হয়েছিলাম, একদিন ৯১১ কল করে এম্বুলেন্সে করে ইমারজেন্সীতে প্রায় অর্ধেক রাতের ট্রিটমেন্ট, আরেকবার ৯১১ কল করে এম্বুলেন্স করে গিয়ে ৮ দিন হসপিটালাইজড ছিলাম। এবং তৃতীয় দফায় আমার শরীরের একমাত্র গলব্লাডারটি সার্জারীর মাধ্যমে অপসারণ করে ফেলা হয়- এবং এখন আমি সুস্থ্য।
 
তো, এই টোটাল ট্রিটমেন্ট বাবদ সেন্ট বার্নাবাস হসপিটাল কর্তৃপক্ষ বিল করেছে ২২,৭৪৬ ডলার।
 
এই মুহুর্তে আমাকে যদি এই টাকাটা প্রদান করে ট্রিটমেন্ট করাতে হতো- তাহলে আমি টাকার অভাবে ট্রিটমেন্ট করাতে পারতাম না। কিন্তু আমি আমেরিকা অবস্থান করছি বলে আমার কাছে কোন টাকা চাওয়া হয়নি ইভেন বিলটির কপি পাঠানো হয়েছে ঠিকই কিন্তু বড় করে লেখা রয়েছে ‘দিস ইজ নট এ বিল’। অর্থাৎ আমি যেন ভয় না পাই বা বিব্রত না হই।
 
আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ। সুতরাং এটা কোন সংবাদ না।
যাষ্ট আপনাদের সংগে শেয়ার করলাম।
 
আমি মাত্র দু’বছর হলো আমেরিকান ভুখন্ডে বসবাস করছি। বাংলাদেশ থেকে গ্রীনকার্ড নিয়ে অাসিনি। ভিজিটর ভিসায় এসে প্রথমে এলওয়ান বিজনেস ভিসায় কনভার্ট করি এবং পরে বাংলাদেশের ব্যবস্যা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই ‘এসাইলাম এপলিকেন্ট’ হিসাবে আছি।
 
আমার সোসাল সিকিউরিটি না হওয়াতে এবং আয়ের কোন রেকর্ড না থাকাতে- এখানে আমাকে নিম্ন আয়ের ‘আগুন্তক’ হিসাবে সম্পূর্ণ ফ্রি মেডিকেল সুবিধা দেয়া হচ্ছে। এমন কি আমার চিকিৎসায় যদি মিলিয়ন ডলার বিলও হয়- সেটা নিয়ে আমাকে কোন চিন্তা না করতে পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
 
আমি যেহেতু নিউ ইয়র্কে আছি সেহেতু সম্পূর্ণ দায়িত্ব নিউ ইয়র্ক ষ্টেট এর।
 
এটা যেহেতু কোন সংবাদ হলো না; সুতরাং এবার একটা সংবাদ দিই।
 
‘আমেরিকার ডেলেয়ার ষ্টেট এর সাবেক (৪৪তম) এটর্ণী জেনারেল জোসেফ রোবাইনটি বিউ বাইডেন (Joseph Robinette- “Beau” Biden III) ৪৬ বৎসর বয়সে ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে গত প্রায় পাঁচ বছর আগে (জানুয়ারী ০৬, ২০১৫) মারা গেছেন।’
 
এটা কিন্তু একটা সংবাদ।
গুগল করে আপনিও সংবাদের সত্যতা জানতে পারেন।
 
জোসেফ রোবাইনটি ভদ্রলোক-কে আমাদের কারোরই চেনার কথা না। আমিও চিনতাম না।
 
আসুন আমরা পরিচিত হই।
জোসেফ রোবাইনটি ছিলেন আমেরিকার সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এর ছেলে যিনি কিনা বিউ বাইডেন নামেই সমাধিক পরিচিত।
 
বিউ বাইডেন যখন ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হলেন তখন চিকিৎসার এক পর্যায়ে তার সম্পূর্ণ টাকা শেষ হয়ে যায়। টাকায় যখন টান পরে তখন তার বাবা আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন নিজের সারা জীবনের গচ্ছিত টাকায় হাত দেন। অত্যন্ত ব্যয়বহুল এই চিকিৎসার ভাইস প্রেসিডেন্ট এর টাকাও শেষ হয়ে যায়।
 
এদিকে ছেলের অবস্থার আরও অবনতি হয়।
আরও টাকা দরকার।
 
আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট সিদ্ধান্ত নিলেন তার একমাত্র বাড়ীটি বিক্রি করে দেবেন। রিয়েল এষ্টেট ব্রোকারকে এনলিষ্টেড করে দেবার পর প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিষয়টা জানতে পারলেন যে, ছেলের চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহের জন্য তার ক্ষমতাসীন ‘রানিং মেট’ নিজ বসতবাড়ীটি বিক্রি করে দিচ্ছেন। বাঁধ সাধলেন স্বয়ং প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। প্রেসিডেন্ট কিছুতেই ভাইস প্রেসিডেন্টকে বাড়ী বিক্রি করতে দেবেন না। প্রয়োজনীয় অর্থ তিনি তার নিজ একাউন্ট থেকে তুলে ভাইস প্রেসিডেন্টকে দেবেন- পরবর্তীতে তিনি সম্ভব হলে টাকা ফেরত দেবেন; না পারলে নেই।
 
এবং ঠিক এই অবস্থাতেই বিউ বাইডেন মারা যান।
 
এটাই আমেরিকা।
 
যেহেতু ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন উচ্চ আয়ের মানুষ সুতরাং তিনি বা তার পরিবার কোন ফ্রি চিকিৎসা সুবিধা পাবেন না। তার দেয়া ট্যাক্সের টাকায় আমি ‘এক নিম্ন আয়ের বিদেশী’ ফ্রি চিকিৎসা সেবা নিতে পারছি। কিন্তু আমেরিকার মতো দেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট এর ছেলে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে হিমশিম খাচেছ!
 
আমেরিকা খুবই খারাপ একটা দেশ!
আসুন আমেরিকাকে ঘৃণা করি।
 
তারচে আমাদের বাংলাদেশের ‘মহান ও অতি মহামান্য’ প্রেসেডেন্ট আব্দুল হামিদ এডভোকেট নিজের টাকায় ইন্ডিয়া গিয়ে চিকিৎসা করানোর কোন মুরোদ নেই- তো কি হয়েছে? বাংলাদেশের রিক্সাওয়ালা, ফেরীওয়ালা, হকারসহ সকল গরীব দুখী মানুষদের ‘ট্যাক্স আর ভ্যাট’ এর টাকায় সিংগাপুরে মাউন্ট এলিজাভেদ হসপিটালে গিয়ে দুই দিন পরপর মেডিকেল চেকআপ করিয়ে আসতে কি কোন অসুবিধে হয়েছে কোনদিনও?
 
বাংলাদেশ খুবই ভালো।
আসুন আমার বাংলাদেশের জয়গান করি।
 
গতকাল আমার আমেরিকা নিয়ে লেখাটায় ‘কয়েকজন’ কিছু বিরূপ মন্তব্য করেছেন।
 
আমরা বাংলাদেশের মানুষ সর্ব প্রথম অন্যের দোষগুলি খুঁজে বের করে অনেক আনন্দ পাই কিন্তু নিজের দোষগুলি কখনোও স্বীকার করতে রাজী নই।
 
আমি কয়েকটা ‘খুবই স্পর্শকাতর’ কথার জবাব দেয়াটা জরুরী বলে মনে করছি।
 
আমেরিকায় বসবাসরত শতকরা আশি ভাগ মানুষের একাধিক ব্যক্তিগত গাড়ী রয়েছে। একজন আমেরিকানের গড় আয় মাসে ৭ হাজার ডলার। আমেরিকায় বাড়ী অনেক সস্তা। সান ফ্রান্সসিকো, নিউ ইয়র্ক, ওয়াশিংটন ডিসি বা লস এঞ্জেলেস এর মতো মেগা সিটির কথা বাদ দিলে অন্যান্য ছোট বড় শহরে ১৫ হাজার থেকে ১০০ হাজার ডলারের মধ্যেই একটা টু-বেডরুম হাউজ পাওয়া যায়। ব্যাংকগুলি টাকা নিয়ে বসেই রয়েছে- নগদ টাকা দেবারও দরকার নেই, মাসে ৫০০ ডলার ডাওনপেমেন্ট দিলেই রেডীমেড বাড়ীতে উঠা যায়।
 
মাসে ৭০০ ডলারের বাজার সদাই করলে একটা ৩ সদস্যের পরিবার অনায়াসেই এক মাস পার করে দিতে পারে। একটা পরিবারে যদি ৫ জন সদস্য থাকে- তাহলে ঐ পরিবারের গড় আয় দাঁড়াবে ৩৫ হাজার ডলার।
 
আপনার যদি নিজের একটা বাড়ী থাকে এবং মাসে যদি ৩৫ হাজার আয় থাকে- তাহলে আপনি মাসের বাজার খরচ বাদ দিলে বাকী ৩৪ হাজার ডলার মানে ২৭ লক্ষ টাকা কোন খাতে খরচ করবেন?
 
এদেশে কোন গরীব নেই। কাকে দেবেন টাকা? খরচ করার জন্য আপনাকে চিন্তা করতে হবে।
 
যেসব পরিবারের এরকম গড় আয় ৩৫ হাজার টাকা- তারা কারা?
হ্যা। এটাই প্রশ্ন। সোজা সাপটা উত্তর যদি দিই- সাদারা। মানে হোয়াইট আমেরিকানরা। যারাই মুলতঃ আমেরিকাকে নিয়ন্ত্রণ করে। আর বাস্তবতা হলো গড় আয়ে নয়- আমি এমন প্রায় শতাধিক হোয়াইটকে চিনি যাদের মাসিক আয় ওয়ান মিলিয়ন ডলার এর চেয়েও বেশী।
 
কালোদের আয় তেমন একটা বেশী না- কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া।
 
আমার গত দু’বছরের পর্যবেক্ষন এর একটা বিষয় আমাকে বেশ আনন্দ দেয় আর তা হলো ‘বাংলাদেশী’ আর ‘স্পানিশ’দের বেশ কিছু মিল।
বাংলাদেশী এবং স্পানিশ উভয় জনগোষ্ঠীই বোকা। পার্থক্য হলো বাংলাদেশীরা অলস এবং হাতের কাজ জানে না অপর দিকে স্পানিশরা কর্মঠ এবং তারা হাতের কাজ জানে।
 
আমেরিকায় যেহেতু বসে বসে খাওয়া সম্ভব নয় এবং বাসা ভাড়াও অনেক বেশী সেহেতু বাধ্য হয়েই বাংলাদেশীদের দেখা যায় ‘অড জব’ করতে। ক্লিনার, রেষ্টুরেন্ট বা গ্রোসারী হেলপার হিসাবে মুলতঃ বাংলাদেশীদেরই দেখা যায়।
অপরদিকে হাতের কাজ জানা থাকায় স্প্যানিশদের দেখা যায় প্লাম্বারসহ অন্যান্য টেকনিক্যাল কাজে।
 
আমেরিকায় ‘মাথা খাটানো’র কাজের বাইরে টেকনিক্যাল কাজে ভাল ইনকাম করা যায়, একজন টেকনিক্যাল কাজ জানলে অনায়াসেই সে সপ্তাহে ১৫০০ ডলার আয় করতে পারে। কিন্তু ‘অড জব’ করে সপ্তাহে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকার বেশী আয় করা খুবই কষ্টকর।
 
তার উপর বাংলাদেশীরা ‘ইংলিশ’কে জমের মতো ভয় পায়। এরা ম্যানহ্যাটনেও যেতে খুবই কম সাহস পায়। জ্যাকসন হাইটস্ এবং জ্যামাইকা আর ব্রুকলীনের কিছু বাংলাদেশী অধ্যূষিত এলাকার বাইরে এদের খুঁজে পাওয়া কস্টকর।
 
আমেরিকার প্রতিটি ষ্টেটে ন্যূনতম বেতন সরকার নির্ধারিত। আপনার যদি ওয়ার্ক অথরাইজেশন থাকে- তাহলে আপনাকে নিউ ইয়র্কে ১০ ডলারের নীচে খাটানো যাবে না। আর ওয়ার্ক অথরাইজেশন পাওয়া ভেরী সিম্পল একটা বিষয়। আমেরিকায় যে-কোনভাবে প্রবেশ করার পর ১০ বছর পর্যন্ত যে কেউই ওয়ার্ক অথরাইজেশন ‘বাগিয়ে’ নিতে পারে আইনীভাবেই। সুতরাং অবৈধ শ্রমিকদের কম বেতনে খাটানোর কথা যারা বলে- তাদের ‘নিজেদের’ জ্ঞানের সীমাবদ্ধতাই দায়ী।
 
বাংলাদেশের যেসব ছেলেরা আমেরিকায় সবচে ভালো আয় করছে- তারা হলো ট্যাক্সি ড্রাইভার। উবার বা ইয়োলো ক্যাব চালালে সপ্তাহে ১৫০০ ডলার আয় করা যায়। অর্থাৎ মাসে ৬ হাজার ডলার। এবং মজার বিষয়টা হলো, এই আমেরিকায় অধিকাংশ বাংলাদেশী ড্রাইভাররা এই ৬ হাজার ডলার আয়ের গরমে কি করবে তা ভেবে পায় না।
 
তখন তারা বাধ্য হয়ে এই ২০ হাজার কিলোমিটার দূরে এসে মুক্তিযোদ্ধা লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, ছাত্রদল, মুলদল ইত্যাদি সব রাজনীতিতে নেতা হবার তুমুল প্রতিযোগীতা চালিয়ে যাচ্ছে। আরও এক দলকে দেখা যাবে বাংলাদেশের প্রায় ৫০০ থানার নামে এক বা একাধিক ‘সমিতি’ করে প্রতি মাসে মিটিং, মিছিল, রেষ্টুরেন্ট পার্টি, ইফতার পার্টি, বার্ষিক পিকনিক ইত্যাদি নিয়ে জ্যাকসন হাইটস সরগরম এবং দু’দিন পরপর হাতা-হাতি মারা-মারি এবং শেষমেশ- পুলিশ।
 
এখন বাংলাদেশ থেকে দু’সপ্তাহের জন্য কোন ভিজিটর আমেরিকায় এসে জ্যাকসন হাইটস এলাকায় এসে বসবাস করে বন্ধুদের সংগে সময় কাটিয়ে যান- তার কাছে তো আমেরিকাকে ঢাকার গুলিস্তানই মনে হবার কথা- তাই না?
 
আর এসব বাংলাদেশীরা আমেরিকার আইনগুলি বলতে গেলে সেভাবে জানেই না। এবং এর বাইরে সবচে বিরক্তিকর তথ্যটি হলো- নিউ ইয়র্কের প্রাকটিসরত বাংলাদেশী এটর্নী এবং সিপিএ’রা ‘অতি নির্ধারিত’ সামান্য কিছু ফরম ফ্লাপ, সিটিজেনশীপ এপলিকেশন ইত্যাদি এবং কিভাবে ট্যাক্স ফাঁকি দিয়ে বার্ষিক ট্যাক্স রিবেট পাওয়া যায়, কিভাবে সরকারী ভিক্ষে যা ভদ্র ভাষায় বেনিফিট পাওয়া যায় এর বাইরে তেমন কিছুই জানে না। আমার নিজের অভিজ্ঞতায় বলছি- এরা আমেরিকায় নতুন আসা মানুষদের মারাত্মকভাবে বিভ্রান্ত করে। বিশেষ করে কেউ যদি ভিজিটর ভিসায় আমেরিকায় আসে তাকে ‘এরা’ সহ বাংলাদেশী-আমেরিকানরা নিজ জ্ঞানের অভাবে এমন সব বিভ্রান্তকর তথ্য দেয় যে- যে কারো মাথা খারাপ হবার জোগাড় হয়ে উঠে।
 
আমি বলছি, আপনি কোন ‘পেপারস বা বৈধতা ছাড়া’ আমেরিকায় আসুন, আমি আপনাকে দু’সপ্তাহের মধ্যে ফ্রি মেডিকেল ইন্সুরেন্স, ড্রাইভিং লাইসেন্স, কোম্পানী, ইআইএন, ট্যাক্স ফাইল সব করে দেবো। ৭ মাসের মধ্যে আপনার সোসাল সিকিউরিটিসহ ওয়ার্ক অথরাইজেশন কার্ড করিয়ে দেবো। আপনি একজন আমেরিকান সিটিজেন এর মতোই শুধুমাত্র ভোটাধিকার ও বিদেশ ভ্রমণ বাদে সকল সুবিধা এদেশে অর্জন করবেন।
 
যারা ‘অড জব’ করে তাদের মাসে ২০০০ ডলারের বেশী আয় করা সম্ভব হয় না এবং এই সামান্য টাকায় নিউ ইয়র্কে বসবাস করা খুবই কষ্টকর। এদের দেখা যায় খুবই ছোট একটা বাসা নিয়ে গাদাগাদি করে বস্তির মতোই বসবাস করতে। তবে সকলেই ৪/৫ বছরের মধ্যে ‘প্রকৃত’ বুদ্ধিমান হয়ে উঠে এবং আয়ের ভালো রাস্তা বের করে ফেলে। আমেরিকায় জন্ম নেয়া নতুন প্রজন্ম ‘বাংলাদেশী’ থাকে না- এরা ঠিকই ‘আমেরিকান’ হয়ে উঠে।
 
বাংলাদেশ থেকে অবসরপ্রাপ্ত আমলা, বিগ্রেডিয়ার জেনারেলদেরও দেখা যায় আমেরিকায় পিজা ডেলেভারীর কাজ করতে। আর ইমরান এইচ সরকারদের মতো যোগ্যতাওয়ালারা এখানে এসে রেষ্টুরেন্টে বাসন-পেয়ালা মেজেই আমেরিকার উপর বিরক্ত হয়ে যায়। আসলে আমেরিকার বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী ছাড়া এদেশে ‘ইজ্জত’ সম্পন্ন চাকুরী জোগাড় করা অনেকটাই অসম্ভব। যোগ্যতায় পেরে ওঠা যায় না। আর এজন্য অনেক ব্যাংকার বা সার্ভিস হোল্ডারদের পাওয়া যায় আমেরিকা নিয়ে বড় গলায় বাজে কথা বলতে- নিজের যোগ্যতা দিয়ে সব কিছু নিরুপন করলে কি চলবে?
 
তার বাইরেও আমেরিকায় আসা অসংখ্য বাংলাদেশী নিজস্ব যোগ্যতায় রেষ্টুরেন্ট, কন্সট্রাকশন বিজনেসসহ আরও বেশ কিছু ক্রিয়েটিভ কাজে নিজেদের সম্পৃক্তি করতে পেরেছে। অনেকের সাফল্য ইর্ষনীয়। কিন্তু সংখ্যা সত্যিই হাতে গোনা।
 
এই অামি অধম মাত্র দু’বছরে নিউ ইয়র্কে এসে ম্যানহ্যাটনের টাইমস স্কোয়ারের মত স্থানে অফিস শুরু করাতে ভিজিটরা রীতিমত ‘তাজ্জব’ বনে যায়- তারা চিন্তাই করতে পারে না যে এখানে অফিস নেয়া সম্ভব! বাংলাদেশর মানুষের সাহস খুবই কম- আমাকে অবাক করে।
 
যাই হোক, গতকালের লেখার সূত্র ধরে শেষটায় বলছি, সবচে স্পর্শকাতর বিষয় হলো ‘আমেরিকার পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা নীতি’- যেটা নিয়ে অনেকেই আমাকে ‘ব্যক্তিগত’ আঘাত করতেও চেষ্টার ত্রুটি করেন নি।
 
এ বিষয়টাকে সামনে রেখে আমার কিছু কথা বলা দরকার।
 
আপনি কি জানেন বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর শ্লোগানটি কি?
‘বাংলার আকাশ রাখিবো মুক্ত’
 
আর আমেরিকার এয়ারফোর্স এর শ্লোগানটা কি জানেন?
‘এনি টাইম এনি হোয়ার’
 
আপনার সংগে আমেরিকার ‘বেসিক পার্থক্যটা’ যাষ্ট এই ‘শ্লোগান’টা বিশ্লেষন করলেই বের হয়ে আসে।
 
এই শ্লোগানটা বিশ্লেষন করার আগে আরেকটা ছোট্ট অনুরোধ করি।
বাংলাদেশের ড. মুসা বিন শমসের এর সম্পদের পরিমাণ ১২ বিলিয়ন ডলার। এই ড. মুসা একটা কথা বলেছিলেন- ‘আমি বুড়িগঙ্গা থেকে পানি নিয়ে ১২ বিলিয়ন ডলার তৈরী করিনি’। কথাটার ভারীত্ব কে কতটুকু বুঝেছে আমি জানি না। তবে আমি এটুকু জানি ১২ বিলিয়ন ডলার লিখতে ১২র পর আরও কতগুলি ‘শূন্য’ যোগ করতে হয়। আমি এটাও জানি- সেই ১২ বিলিয়নকে ৮০ দিয়ে গুন করলেই আপনার চিন্তার- টাকায় কনভার্ট হয় অংকটা।
 
আপনি কত টাকা আয় করতে পারেন?
আপনি জীবনে কি করতে পেরেছেন?
আপনার দেশের ১৭ কোটি মানুষ কি করতে পেরেছে এই পৃথিবীর জন্য?
 
আপনি কি জানেন আপনার দৈনিক আয় গড়ে সর্বোচ্চ মাত্র ৩ ডলার যা দিয়ে আমেরিকায় বড়জোর ২ টা সিংগারা আর এক কাপ চা খাওয়া যেতে পারে।
 
আপনি গর্ব করে একজন ড. ইউনুস কে নিয়ে যাষ্ট ‘একটা’ নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন বলে।
কিন্তু আপনি ‘কথার প্রতিদ্বন্দীতা’ করতে চান ‘৩৩৬ টা’ নোবেল প্রাইজ পাওয়া দেশের সংগে।
 
১৭ কোটি মানুষের আপনার দেশে কয়টা বিশ্ববিদ্যালয় আছে?
কিন্তু আপনি ‘কথার প্রতিদ্বন্দীতা’ করছেন ১৬০০ বিশ্বসেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশের সংগে।
 
প্রতিদ্বন্দীতা তো হবার কথা সমানে-সমানে?
আপনার ১৭ কোটি মানুষ আর আমেরিকার ৩২ কোটি মানুষ মিলাতে চাচ্ছেন?
আপনি কি কোনদিন চিন্তা করেছেন সামান্য ‘কোম্পানী’ এক বোয়িং বা মাইক্রোসফট বা ফেসবুক এর টোটাল রেভিনিউ- আপনার সম্পূর্ণ দেশের রেভিনিউ এর চেয়েও কতগুন বড়?
 
আপনি কি জানেন আরেকটি সামান্য ‘প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানী’ যার নাম ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী আপনাদের ভারতবর্ষকে ১০০ বছর শাসন করেছে তাদের কোম্পনীর আইনে- তারপর বৃৃটিশ গভর্নমেন্ট বাকী ১০০ বছরের জন্য ভারতবর্ষকে অধিগ্রহণ করে।
 
কথা বলতে যে যোগ্যতা লাগে- সেটাও তো আমরা জানি না।
 
আপনার কি ধারণা আছে- এক ‘নাসা’ ৩৪ হাজার বিজ্ঞানী গবেষনা করছে কিভাবে পৃথিবীকে সামনে এগিয়ে নেয়া যায় এবং এই ৩৪ হাজার বিজ্ঞানী ও তাদের গবেষনার পেছনে আমেরিকা কত টাকা প্রতিবছর বিনিয়োগ করে?
 
ঐ বাজেট দিয়ে কয়টা বাংলাদেশ এর বার্ষিক বাজেট তৈরী করা সম্ভব ভাবতে পারবেন?
 
আপনি কি জানেন ঢাকায় অবস্থিত ‘আমেরিকার দূতাবাস’ এর বার্ষিক বাজেট ৯০০ মিলিয়ন ডলার? অংকটা আরেকবার হিসাবে করে দেখবেন কাইন্ডলী।
 
আজ সারা পৃথিবী তাদের যে-কোন সমস্যা হলেই ওয়াশিংটন ডিসি’র দিকে তাকিয়ে বসে থাকে সাহায্যের আশায়; আপনি, আপনার দেশও।
 
তার সংগে নিজের বুদ্ধির যোগ্যতা মাপতে চাচ্ছেন?
 
সর্বপ্রথম নিজের যোগ্যতা টুকু ভাবুন- তাতে আপনার প্রশ্নের ৯৯% এনসার পেয়ে যাবেন আপনি নিজেই।
 
আর বাকী ১% উত্তর আমি দিচ্ছি- যদিও আমেরিকার পক্ষ থেকে আপনাকে উত্তর দেবার জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত নই বা অামার কোন ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতাও নেই। আমি উত্তর দিচ্ছি শুধুই নিজের বিবেক থেকে এবং নিজের পর্যবেক্ষন থেকে দেখা ‘সত্য ও বাস্তবতা’ থেকে। এবং আমাকে ব্যক্তিগতভাবে বলেছেন বলেই বলছি।
 
আপনাকে যদি ‘একটা পিপড়া’ কামড়ে দেয়- আপনি তখন একদল পিপড়াকে খুব সহজেই চাপা দিয়ে মেরে ফেলতে পারেন- একবারও কিন্তু ভাবেন না যে আপনাকে কিন্তু মাত্র ১টা পিপড়াই কামড়ে দিয়েছে; সবগুলি নয়।
 
এনিওয়ে, এই পৃথিবীর বিশ্ব রাজনীতি অনেক জটিলতায় ভরা। যার অনেক কিছুই আমরা জানি না।
মানুষ সবসময় চায় নিজের বাহাদুরী প্রদর্শন করতে। আমিও চাই, আপনিও।
 
আমি স্বীকার করি, আপনি করেন না।
 
আজ শেখ হাসিনা নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে কি করছে?
কতজন নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে?
সামান্য পুলিশ, রাব এর বাহাদুরীতে শেখ হাসিনা, শহিদুল-মনিরুল-বেনজীররা মানুষকে মানুষই মনে করে না। আপনি কিন্তু ভয়ে ‘লুকিয়ে’ আছেন?
 
ফেসবুকে সামান্য একটা লাকই দেবার আগেও ৫৭ ধারা নিয়ে চিন্তা করেন।
 
শেখ হাসিনা মানুষ মারলে আপনার সমস্যা নেই- আমেরিকা মানুষ মারলে আপনার খুব অসুবিধে হয়।
 
আপনি যেদিন আমেরিকার গর্ব ‘টুইন টাওয়ার’ ধ্বংশ করলেন, ৪০০০ নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করলেন- সেদিন কি একবারও ভেবেছিলেন সাপের গর্তে পা দিচ্ছেন? আগে কেন চিন্তা করতে পারলেন না?
 
আপনি আমেরিকার মতো দেশের গর্বে আঘাত হানবেন- আর আমেরিকা অাপনাকে ছেড়ে দেবে?
 
আপনি কি আপনার চেয়ে কম শক্তিশালী কেউ আপনাকে আঘাত করলে- ভদ্রটি হয়ে চুপচাপ বসে থাকেন? নিজেকে প্রশ্ন করেন।
 
আপনাকে আমেরিকার ক্ষমতা ও সক্ষমতা বুঝতে হবে।
আপনার শত্রুর ক্ষমতাকে শ্রদ্ধা করা শিখতে হবে।
 
আঘাত করার অাগে তার আঘাত সইতে পারবেন কি না সেটা ভাবতে হবে।
 
এই পৃথিবীতে কে রয়েছে যে নিজের ক্ষমতার বাহাদুরী দেখায় না?
 
সৌদী আরবের রাজারা কারা জানেন? আপনি কি জানেন একটা দেশ একটা পরিবারের নামে নামকৃত হয়ে রয়েছে! সৌদী আরবে গিয়ে সৌদী রাজার বিরুদ্ধে একটা শব্দ উচ্চারণ করে আসেন তো দেখি আপনার কতটুকু ক্ষমতা?
 
ক্ষমতার বাহাদুরী আপনিও দেখান।
কিন্তু স্বার্থে টান পড়লে- তখন ‘সভ্য’ সাঝেন- এটা কি খুবই সুন্দর দেখতে?
 
আমাদের কার ভেতরে দ্বিমূখীতা নেই?
 
আগে নিজের দোষ ও ক্ষমতা নিয়ে ভাবুন তারপর অন্যের দোষ ও ক্ষমতার কথা বলুন- সেটা শুনতে ভালো লাগবে।
 
আমেরিকা ইরাকে হামলা করেছে, আফগানিস্থানে হামলা করেছে। সেখানকার নারী-পুরুষ হত্যা করেছে সেগুলি অবশ্যই ঘৃর্নিত অপরাধ। ভিয়েতনাম থেকে আমেরিকা মার খেয়ে পরাজিত হয়ে পিছপা হয়েছিল। সোভিয়েট রাশিয়া আফগানিস্থানকে ধ্বংশ করে দিয়ে গেছে। বৃটিশরা বলতে গেলে পুরো পৃথিবী দখলে রাখতে কি না করেছে?
 
মিয়ানমারে রোহিংগা হত্যা, কাশ্মিরে মুসলিম হত্যা, ফিলিস্থিনীদের নিজ ভুখন্ড থেকে উচ্ছেদ সবই অন্যায়।
 
আমরা সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলবো এটাই মানবতা।
 
আমার বলা মুল বক্তব্য ছিল মানবতা নিয়ে। আমি আমেরিকায় এসেই জানতে পেরেছি ‘মানবতা’ এবং ‘গণতন্ত্র’ শ্রেফ মুখের কথা বা কাগজে লেখা ‘শব্দগুচ্ছ’ নয়।
 
মানবতা এবং গণতন্ত্র শব্দদু’টি সত্যিই অত্যন্ত শক্তিশালী।
আমার মনে হয় না বিশ্ব শব্দভান্ডারে ‘মানবতা’ এবং ‘গণতন্ত্র’ এর মতো তৃতীয় আর একটি শক্তিশালী শব্দও রয়েছে!
 
আমেরিকা তার নিজ ভুখন্ডে ‘মানবতা’ এবং ‘গণতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করেছে। এটাই সত্য। এটাই বাস্তব।
এর বাইরে আমি কোন কথা কোনদিনও আমেরিকাকে নিয়ে বলিনি। এবং একটি বর্ণও আমি বাড়িয়ে বলিনি কোনকালেও।
 
কমিউনিজম বা কিসব সমাজতন্ত্র না কি- কোথায় তারা মানবতা প্রতিষ্ঠা করেছে কেউ একটু বলবেন কি? ইসলামী আদর্শ থেকে চুত্য হয়ে মিডিলইষ্ট এর ধনী মুসলিম দেশগুলি কিসের শাসন চালাচ্ছে? একমাত্র ইসলামী ইরানেই কিছু বাস্তব সভ্যতার ছিটেফোঁটা দেখা যায়। চায়নার একদলীয় ব্যবস্থায় চমৎকার গণতন্ত্র থাকলেও মানবতা নিখোজ।
 
আমেরিকার বিরুদ্ধে কথা বলছেন, বলুন- কিন্তু আপনি কোন দেশের পক্ষে কথা বলবেন একটু শুনি।
 
আর আমেরিকার পররাষ্ট্রনীতি বা প্রতিরক্ষা নীতি নিয়ে কথা বলার মতো যোগ্যতা আমার কোথায়?
 
যদি কোনদিন সে যোগ্যতা অর্জন করতে পারি, তখন না হয় বলবো।
   Send article as PDF