মানবতা

আমেরিকা সবচে অপছন্দ করে- কেউ যদি ভিসা না নিয়ে মেক্সিকোর সীমান্ত দিয়ে অবৈধ ভাবে তার ভূখন্ডে প্রবেশ করে।
করাটাই তো স্বাভাবিক।
 
আমার পারমিশন না নিয়ে কেউ যদি চোরের মতো আমার ঘড়ে ঢুকে বসে থাকে- আমি কি তাকে ভালো দৃষ্টিতে দেখবো?
 
না, কখনওই সেটা মেনে নিতে পারবো না।
 
তারপরও আমেরিকার এই ভুখন্ডটিতে ‘মানবাধিকার’ এতটাই শক্তিশালী যে এ ‘এভাবে’ ঢুকা অবৈধরাও অনেক ফাঁক-ফোকর দিয়েই পার পেয়ে যায়; এদের মধ্যে বড় একটা অংশ গ্রীনকার্ডও পেয়ে যায় খুবই দ্রুত।
 
গ্রীনকার্ড না পেলেও ওয়ার্ক পার্মিট ও সোসাল সিকিউরিটি নাম্বার নিয়ে বৈধভাবে প্রায় ১০-১২ বছর পর্যন্ত বসবাস করতেও পারে। এর মধ্যে মার্কিন কোন সিটিজেন বিয়ে করে ফেললে গ্রীনকার্ড পেয়ে যায়; এবং মোদ্দ কথা- বড় কোন সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ না থাকলে কাউকেই আমেরিকা তার ভুখন্ড থেকে জোর করে গলা ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয় না কোন দিনও।
 
প্রতিদিনই এভাবে অসংখ্য বাংলাদেশী, ইন্ডিয়ান, নেপালী, পাকিস্তানী থেকে শুরু করে ল্যাটিন আমেরিকানরাও অবৈধভাবেই আমেরিকায় ঢুকে চলছে।
এদের কেউ কেউ আবার ‘হোমল্যান্ড সিকিউরিটি’ পুলিশের কাছে ধরাও দেয় না- ফলে সে কোন কাগজ-পত্র ছাড়াই বছরের পর বছর আমেরিকায় থেকে যাচেছ- কোন ব্যাপার না।
 
প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চাচ্ছেন যে-কোন উপায়ে এই ‘অবৈধ’ অনুপ্রবেশ বন্ধ করতে। একমাত্র সুবিশাল মেক্সিকো সীমান্তে বড় প্রাচীর তুলেই এটা আটকানো সম্ভব।
 
দেখা যাক ডোনাল্ড ট্রাম্প কিভাবে কি করে?
ও ব্যাপারে আমার ছোট মাথা খামাকোই ঘামাতে চাচ্ছি না।
 
আজ আমার অফিসে একজন ক্লায়েন্ট এসেছে। ছেলেটির বয়স ঊনিশ-কুড়ি হবে। মায়া মায়া চেহারা। ওর গ্রামের বাড়ী চাঁদপুর।
 
দালাল ধরে বলিভিয়া হয়ে তারপর অনেক টাকা খরচ করে ৬/৭টা দেশ পায়ে হেঁটে ও গাড়ীতে করে অতিক্রম করে মেক্সিকো সীমান্ত দিয়ে অবশেষে টেক্সাস এ ঢুকে পরে। ছেলেটা বুদ্ধিমান। একাই সে সীমান্ত পার হয়েছে এবং আমেরিকায় ঢুকেই যেচে গিয়ে হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কাছে ধরা দিয়েছে।
 
মজার বিষয় হলো- ওর দালালটা ওকে একটা বেশ ভালো বুদ্ধি দিয়েছিল।
যারা এভাবে আমেরিকায় ঢুকে তারা তাদের পাসপোর্টটি নষ্ট করে ফেলে আগেই। সংগে কোন ডকুমেন্ট রাখে না নিজের পরিচয়ের।
 
দালাল ওকে যে বুদ্ধিটা দিয়েছিল সেটা হলো, তার বয়স যেন এক-দেড় বছর কমিয়ে বলে- তাহলে না কি ওর উপকারই হবে।
 
আমেরিকায় কোন মানুষের আইডেনটিটিটি জানতে শুধুমাত্র ‘লাষ্ট নেইম, ফাষ্ট নেইম, আর জন্ম তারিখটি’ জানতে চাওয়া হয়। বাংলাদেশের মতো নিজের নাম, পিতার নাম, মাতার নাম, গ্রাম, পোষ্ট, থানা, জেলা ইত্যাদি অপ্রয়োজনীয় ফর্টিন জেনারেশনের ইনফরমেশন জানতে চাওয়া হয় না- দরকারও পরে না।
 
ওর জন্ম তারিখ জিজ্ঞেস করাতে ও নিজের বয়স সেই দালালের পরামর্শ অনুযায়ী দেড় বছর কমিয়ে বলে। এবং এতে অত্যন্ত চমৎকার একটা কাজ হয়ে যায়।
ওর বয়স হয়ে যায় সাড়ে সতের বছর।
 
তার মানে, ছেলেটি মাইনর। অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক ছেলে।
আমেরিকার আইন অনুযায়ী এই ছেলের দায়িত্ব সম্পূর্ণভাবেই আমেরিকান রাষ্ট্রটির।
 
পুলিশ সংগে সংগে এই ‘শিশু’টিকে (!) নিকটবর্তী শেল্টারে নিয়ে তাকে গোসল, খাবার, প্রাইমেরী ট্রিটমেন্ট, নতুন জামা-কাপড় এর ব্যবস্থ্যা করে দিয়ে পরদিন কোর্টের অর্ডার করিয়ে মাইনর হিসাবে নিয়ে যায় শিকাগো শহরে। ওখানে ওকে চমৎকার একটা রুম দেয়া হয়। রুমে বড় এলইডি টেলিভিশন কিন্তু সারাদিনে তাকে মাত্র ৩ ঘন্টা টিভি দেখার পারমিশন দেয়া হয়। তিন বেলা ফাইভ-ষ্টার খাবার, পড়ার টেবিল দেয়া হয়। তাকে জনোনো হয়ে যে তাকে এখানে তার পড়াশোনা শেষ করতে হবে। আর এজন্য সম্পূর্ণ দায়িত্ব ইউএস গভার্ণমেন্ট বহন করবে। এবং সে কি কি সুবিধা চায় তা যেন সে তার এটর্ণীর মাধ্যমে জাজের কাছে উপস্থাপন করে। তাকে সরকার থেকে একজন এটর্ণীও দেয়া হয়।
 
এরমধ্যেই তাকে হসপিটালে নিয়ে যত রকম টেষ্ট রয়েছে তা করিয়ে ঘোষনা দেয়া হয় সে সম্পূর্ণ সুস্থ্য রয়েছে।
 
আমি অনেককেই দেখি আমেরিকার বিরুদ্ধে একটা কিছু বলতে পারলে খুব তৃপ্তি পায়। সেটা নিয়ে আমার কিছু যায় আসে না। কিন্তু তাদের কাছে আমার প্রশ্ন এসেই যায়- ‘এই সম্পূর্ণ বিদেশী এবং একটা মুসলিম ছেলে’টির প্রতি আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের কি এমন দায় পরেছে- অনুগ্রহ করে একটু উত্তর দিবেন?
 
না। শুধু এই একটা ছেলে হলে কথা ছিল না।
আপনি শুনলে অবাক হবে, প্রায় প্রতি সপ্তাহেই অসংখ্য ল্যাটিন আমেরিকান বাবা-মা তাদের ছোট শিশুদের আমেরিকার বর্ডারের ভেতরে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়।
 
একজন বাবা-মা ‘আমেরিকা’ কে কতটা ভরশা করে- চিন্তা করা যায়।
 
এটাই রিয়েল আমেরিকা।
যে দেশটি সারা পৃথিবীতে ‘মানবতা’, ‘মানবতা’ বড় গলায় কথা বলে।
 
এবং বড় গলায় কথা বলার মতো সেরকম ‘হ্যাডম’ আমেরিকাই রাখে।
 
আসল সত্যটি হলো, কথা বলার জন্য আগে নিজের যোগ্যতা অর্জন করতে হয়।
 
সেটা মুহাম্মদ (সা.) শিখিয়েছেন চৌদ্দশত বছর আগে আর তার বাস্তবায়ন করেছে আমেরিকা।
 
না, সৌদী আরবও তা করেনি।
বাংলাদেশও না।
   Send article as PDF