গরু ছাগলের হাঁটে

কি নাম যেন ভদ্রলোকের?
শাখাওয়াত।
 
হ্যাঁ শাখাওয়াত সাহবের কথাই বলছিলাম।
 
আচ্ছা, তার আগে অন্য একটা প্রশ্ন করি।
বলুন তো ‘ওয়ান এলেভেন’ এর ‘ড. ফখরুদ্দিন আর মঈনউদ্দিন’ এর ‘যৌথ সরকার’ ব্যর্থ হলো কেন?
 
উত্তরটা খুবই সহজ।
আদার বেপারী জাহাজের খবর নিলে যা হতে পারে তাই হয়েছিল।
 
মঈন ইউ আহমেদ উচ্চাভিলাষী কোন সেনা অফিসার ছিলেন না। আর ফখরুদ্দিন ছিলেন একজন ভালো ‘সার্ভিস হোল্ডার’। একজন ভালো সার্ভিস হোল্ডার গভর্ণর হিসাবে ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ ভালই চালাতে পারবেন- কিন্তু ‘বাংলাদেশ’ টা তো আর ‘বাংলাদেশ ব্যাংক’ না!
 
এই দুই ভদ্রলোক এর একজনও উচ্চাভিলাষী ছিলেন না, একটা দেশের সফল প্রধান হতে হলে তরে উচ্চাভিলাষ থাকতে হবে, দূরদর্শীতা থাকতে হবে। এদের কারোই ওদুটি ছিল তো না ই এমনকি তারা কোনদিন রাজনীতিও করেননি।
 
এমন গো-বেচারা দুইজন ব্যক্তি খেলতে গিয়েছিলেন তাদের’চে অনেক বেশী ধূর্ত ‘আওয়ামী লীগ আর বিএনপি’র বিরুদ্ধে।
 
রেজাল্ট, তারা নিজেদের তালই সামলাতে পারেননি। ফেল মেরেছেন। যদিও শুরুটা কিন্তু বেশ ভালোই করেছিলেন!
 
আসলে যেটা যার কাজ, সেটা তাকেই করতে দিতে হয়।
তারানা হালিমকে বাংলা সিনেমাতেই ভাল মানায়- ‘আইসিটি মন্ত্রণালয়ে’ নয়।
 
আপনি কি জানেন আমেরিকার প্রধান দু’টি রাজনৈতিক দল রিপাবলিক্যান আর ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রধান বা চেয়ারম্যান কে?
না। জানেন না। আমিও জানার চেষ্টা করি না। কারণ জানলেও তাতে কোনই লাভ নেই। তারা কে এতে ঐসব পার্টতে কিছুই যায় আসে না।
 
কারণ তাদের দেশের মতোই পার্টিতেও ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ বিদ্যমান।
সেখানে শীর্ষ ক্ষমতায় আসতে হয় যোগ্যতার এবং প্রতিযোগীতার মাধ্যমে। এই ‘যোগ্যতা ও প্রতিযোগীতা’ দু’টোই হয় সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রদ্ধতিতে।
 
অর্থাৎ, কেউ কাউকে নির্বাচিত বা মনোনীত করে দেয় না, দিতে পারে না।
এখানেই ‘গণতন্ত্র’র আসল সৌন্দর্য্য লুক্কায়িত।
 
বাংলাদেশে এই আসল গণতান্ত্রিক ‘সৌন্দর্য্য’টি দেখা যায় শুধুমাত্র ‘জামায়াতে ইসলামীে’তে।
কিন্তু ওরা তো রাজাকার। ওদের ভালো কিছুও দেখতে নেই!
 
আমেরিকার ‘গণতন্ত্র’ এতটাই শক্তিশালী যে- সাদাদের দেশ আমেরিকায় একজন কালো ‘বারাক ওবামা’ এবং একজন ‘অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ ডোনাল্ড ট্রাম্পও প্রেসিডেন্ট হতে পারেন। তাদেরকে মনোনয়ন পেতে এবং নির্বাচিত হতে জনগণের কাছেই যেতে হয়েছে, নিজেদের যোগ্যতার পরীক্ষা দিয়ে আসতে হয়েছে।
 
কিন্তু বাংলাদেশে!
না। এখানকার কথিত গণতন্ত্রে সেই সুযোগ নেই। সেই সিষ্টেমও নেই।
 
বাংলাদেশে প্রতিবছর কোরবানী ঈদের আগে গরু-ছাগলের হাঁটে গরু-ছাগল বিক্রি হয়। যার যার সাধ্যমতো সকলে গরু কিনে নিয়ে কোরবানী করে।
 
বাংলাদেশে আরও একটা ‘গরুর হাট’ বসতো- প্রতি পাঁচ বছর পর পর।
সেই হাটে কেনা-বেচা হয় ‘সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী’।
 
হ্যাঁ, বিষয়টা ঠিক তেমনই।
বিক্রেতা থাকেন বিএনপিতে বেগম খালেদা জিয়া আর আওয়ামী লীগে শেখ হাসিনা।
যে যত বেশী টাকা মূল্য হাঁকাতে পারেন- তাকেই কিনে নেয়া হয় এবং বিনিময়ে দেয়া হয় ‘নির্বাচন করার নমিনেশন পেপার’।
 
সারা জীবন দলের জন্যে থানা বা উপজেলা পর্যায়ের হাজার হাজার নেতা-কর্মী জীবন বিপন্ন করে রাজনীতি করে গেলেও- তাদের কোন মূল্য থাকে না। তাদের ‘আনলিমিটেড’ টাকাও থাকে না যে সেই কেনা-বেচায় অংশ নেবেন। তারা তখন শুধুই দর্শক।
 
অতপর, বেগম জিয়া আর শেখ হাসিনা যাদের যাদের ‘নাম’ উচ্চারণ করবেন- সেটাই বাংলাদেশের গণতন্ত্র!
 
দুই জন মহিলা- টাকার বিনিময়ে ‘গণতন্ত্র’ বিক্রি করেন বাংলাদেশে।
 
জেনারেল এরশাদও এই বিক্রিতে অংশ নেন- তবে উনি ওপেন। কোন গোপনীয়তার ধারও ধারেন না।
 
এভাবেই ‘গরু ছাগলে’র মতোই বাংলাদেশে গণতন্ত্রও বিক্রি হয়!
 
কিন্তু ‘টাকা’র অভাবে সকলে সেই মহান ‘গণতন্ত্র’ আর কিনে উঠতে পারেন না।
 
এবং এই ‘গণতন্ত্র’ এতটাই শক্তিশালী যে- যে দল সংসদে যে প্রস্তাবের পক্ষে বা বিপক্ষে সিদ্ধান্ত নেবে- প্রতিটি সংসদ সদস্যকে সেই দিকেই ভোট দিতে হবে। নইলে তার সদস্য পদ চলে যাবে। গণতন্ত্র সরাসরি জবাই হয়ে যাবে।
 
কি ‘শ্রী’ এই গণতন্ত্রের!
আর এই গণতন্ত্র জন্ম দিয়েছে বেগম জিয়া আর শেখ হাসিনা মিলে!
 
যেমন তাদের যোগ্যতা- ঠিক তেমনি তাদের আবিষ্কার!
আর একদল মন্ত্রী মিনিষ্টার এমপি মিলে সেই ‘গণতন্ত্র’ই উপভোগ করছে। তারা সেই গণতন্ত্র-কেই পাহাড়া দিচ্ছেন!
 
এই ‘গরুর দল’ এজন্যই ‘নির্বাচন’ এর হাটে ‘কেনা-বেচা’ হয়।
 
শেখ হাসিনা গণভবনে শামীম ওসমান আর আইভিকে ডাকলেন। ধমক-ধামক দিলেন। তারপর সিদ্ধান্ত দিলেন আইভি-ই পাবে নমিনেশন।
এটাই আওয়ামী লীগের গণতন্ত্র!
 
অপর দিকে বেগম জিয়াও কারো কোন কিছুরই ধার ধারার কোন প্রয়োজন বোধ না করেই নমিনেশন দিলেন জনৈক শাখাওয়াত হোসেন কে। আর এত এত বছর নারায়ণগঞ্জের যেসব ত্যাগী নেতারা মামলা, হামলা, জেল-জুলুম স্বীকার করে রাজনীতি করে গেলেন- গুম হলেন, ক্রস ফায়ার খেলেন- তাদের মতামতের কোন মূল্য দেবার সময়ও কারো নেই।
 
কেন? বেগম জিয়া কি পারতেন না তার দলের এই চরম অধঃপতন কালে ‘সম্পূর্ণ’ গণতান্ত্রিকভাবে নারায়ণগঞ্জে ‘তার দলের মধ্যে নির্বাচনের মাধ্যমে’ একজনকে ‘নমিনেশন’ দিতে!
নারায়ণগঞ্জে যদি বিএনপির নেতা-কর্মীদের নির্বাচনে নির্বাচিত ‘একজন’ কে মেয়র পদে নমিনেশন দেয়া হতো- তাহলে বেগম জিয়ার ভাবমূর্তি কতটা উজ্জ্বল হতো- সেটা বোঝার বোধ কি তার আছে?
সেটা কি আরেকটু বেশী সুন্দর হতো না?
এটা কি একটা সত্যিকারের ‘মডেল’ গণতন্ত্র হতে পারতো না?
এতে কি ‘নারায়ণগঞ্জ বিএনপি’র কর্মকান্ড আরও বেশী চাঙ্গা হতো না?
সারা দেশের মানুষ কি এরকম একটা চমৎকার সিদ্ধান্তে আনন্দ পেত না?
 
এতে- আওয়ামী লীগ কি মানসিকভাবে পরাজিত হতে পারতো না বেগম জিয়ার কাছে?
 
এবং, এরপর যে-ই নমিনেশন পেত- তার জয় বা পরাজয় কি আরও বেশী আকষর্ণীয় ও মানসম্পন্ন হতে পারতো না?
পরাজয়ের একক দায়িত্বটুকুও কিন্তু তখন বেগম জিয়ার উপর বর্তাতো না।
 
অপর দিকে ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগও বাধ্য হতো বিএনপির দেখানো পথে হাঁটতে।
 
আর ফাইনালী দেশের সাধারণ মানুষ এবং ‘গণতন্ত্র’ বিজয়ী হতে পারতো।
 
না, এসব হতে পারতো না।
কারণ, বেগম জিয়ার সেই যোগ্যতা থাকলে তো আজ ‘তার’ ও ‘তার দলে’র এই হাল হতো না!
 
বাংলাদেশের ‘গণতন্ত্র’ গরুর হাটের গরু-ছাগল কেনা-বেচাতেই আটকে আছে।
 
যারা বলে বাংলাদেশে ‘গণতন্ত্র’ আছে- তাদের কি করা উচিৎ?
   Send article as PDF