ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে

আমেরিকার আমেরিকান মানুষের স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সুযোগ ও শ্রেষ্ঠত্বের গর্বের প্রতীক ‘স্ট্যাচু অব লিবার্টি’ নামের মূর্তিটি আমেরিকা নিজে তৈরী করেনি- বন্ধুরাষ্ট্র ফ্রান্স আজ থেকে প্রায় দেড়শত বছর আগে এটি তৈরী করে আমেরিকাকে উপহার হিসাবে দিয়েছিল।

ফ্রান্সের নিজেদের তৈরী আইফেল টাওয়ারটি অবশ্য তাদের নিজেদেরই শতভাগ গর্ব ও অহংকারের সংগে মিশে রয়েছে।

‘ক্রিস্ট দ্য রিডিমার’টিও ব্রাজিলের নিজস্ব সম্পদ।
একটা সময় পর্যন্ত এটাই ছিল বিশ্বের সবচে বড় মূর্তি। সম্প্রতি ভারত তারচেও বড় একটা মুর্তি তৈরী করে ফেলেছে।

ব্রাজিল সাউথ আমেরিকান দেশ। বিশাল তার শরীর। আমাজান নদী এবং আমাজান জংগলটিও সে ধারণ করেছে তার বুকেই। জনসংখ্যা যদিও মাত্র ২১০ মিলিয়ন বা ২১ কোটি কিন্তু আয়তনে সে ভারতের তিন গুন বড়।

অপরদিকে ভারতের জনসংখ্যা প্রায় ১৩৫ কোটি। ভারতীয়দের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় (নমিনাল) মাত্র ২,০১৬ ডলার; কিন্তু, অপরদিকে ব্রাজিলিয়ানদের মাথাপিছু বার্ষিক গড় আয় ৯,১২৭। অর্থাৎ ব্রাজিলিয়ানদের গড় আয় ভারতীয়দের চেয়ে কমবেশী প্রায় সাড়ে চারগুন।

অর্থাৎ আমি কোন যুক্তিতেই ভারতকে ব্রাজিলের ৫ ভাগের একভাগ সমকক্ষও ভাবতে পারছি না। সেই যোগ্যতাই ভারত রাষ্টটির নেই, হয়ে উঠেনি; কোনদিন হবে বলেও চিন্তা করতে পারছি না।

পুরো সাউথ আমেরিকার মানুষের ভাষা স্প্যানিশ হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র ব্রাজিলিয়ানদের ভাষা পুর্তগীজ।

তারপরও ব্রাজিল তার প্রতিবেশী প্রতিটি দেশেরই বন্ধু রাষ্ট্র, সাউথ আমেরিকান দেশগুলির নাগরিকদের একদেশ থেকে অন্যদেশে ভ্রমণ করতে কোন ভিসা-পাসপোর্ট প্রয়োজন হয় না।

ব্রাজিলের পাশেই একটা ছোট ও বাংলাদেশের মতোই গরীব দেশ রয়েছে ‘বলিভিয়া’- ঠিক যেমনটা ভারতের পাশে বাংলাদেশ বা আমেরিকার পাশে মেক্সিকো। নাহ, ব্রাজিলিয়ান বর্ডার গার্ডস কোনদিনই ঐ সীমান্তে কোন বলিভিয়ানকে গুলি করে হত্যা করেনি, করে না।

ব্রাজিলেরও সাউথে একটা দেশ রয়েছে ‘চিলি’- দেশটা ইওরোপের যে-কোন দেশের চেয়েও উন্নত এবং সভ্য একটা দেশ। তাদের সংগেও শরীরের জোরে ব্রাজিলের কোন দাদাগিরি নেই। ব্রাজিলের উত্তরে রয়েছে ‘ফ্রান্স গায়ানা’- ওটি আবার ‘শেনজেন’ কান্ট্রিও, কারেন্সী ইওরো। কোন বিরোধ নেই ব্রাজিলের সংগে। ভেনেজুয়েলা নিজেও ব্রাজিলের বন্ধু রাষ্ট্র এবং প্রতিবেশী ও উন্নত দেশ।

ব্রাজিলকে পারমানবিক বোমা তৈরী করতে হয় না প্রতিবেশীকে দাবিয়ে রাখতে। স্রেফ ভালো বন্ধুত্ব নিয়ে, প্রতিবেশীর প্রতি ভালবাসা নিয়েই চলতে হয়- তারা চলেও।

হ্যাঁ, আমি এটাও বলতে পারি যে সাউথের দেশগুলিকে ‘শাসন’ করে বড়ভাই আমেরিকা নিজেই- তাই ওখানে দ্বিতীয় কারো দাঁড়ানোর দরকার হয়নি। কিন্তু ‘কানাডা’ও আমেরিকার প্রতিবেশী- আমেরিকার শাসনের ধার কিন্তু কানাডা ধারে না। কানাডা পারমানবিক প্রতিযোগীতায়ও যায় না।

আসল বিষয়টা হচ্ছে সুবন্ধুত্ব এবং সুপ্রতিবেশীসুলভ আচরণ। ইংলিশে বলে ‘গুড নেবর’।

এবার চলুন ভারতের দিকে তাকাই।
বাংলাদেশ সীমান্তে দু’দিন পরপরই ভারত গুলি করে পাখির মতো হত্যা করে বাংলাদেশীদের। কিন্তু পাকিস্তানের দিকে বন্দুক তাক করারও সাহস পায় না। ভারত একটা পারমানবিক বোমা পরীক্ষা করলে পাকিস্তিান দু’টো বোমা পরীক্ষা করে। এরা কেউ-ই ‘গুড নেবর’ নয়।

‘ভারত’কে অনেকেই দেখি ‘চায়না’র সংগে তুলনায় নিয়ে আসে।
আপনি একবার ভারতবর্ষ ঘুরে আসুন, তারপর চায়নার যে-কোন একট শহর দেখে আসলেই বুঝতে পারবেন আকাশ এবং পাতালের মধ্যে কি কি পার্থক্য থাকতে পারে। ভারতকে চায়নার সংগে তুলনা শুধুমাত্র মুর্খরা করতে পারে- চায়নার শতভাগের একভাগ যোগ্যতা, ক্ষমতাও ভারত রাখে না। ভারতের তুলনা শুধুমাত্র পাকিস্তানের সংগেই চলে।

আমি নিজে সেই ২০০৫ সালে যখন প্রথম বার চায়না ভ্রমনে যাই- সেদিনও দেখেছি ১ আমেরিকার ডলারের বিনিময় মূল্য ছিল চাইনিজ রিনমিমবির বিপরীতে অলমোষ্ট ৬.৭৫। আজ এই ২০১৮তেও দেখছি সেই মুল্য প্রায় একই রকম রয়েছে, আজ সেটা ৬.৯৩। বিপরীতে ২০০৫ সালে ভারতীয় রূপির মিলতো ৩২টি- ১টি ডলারের বিপরীতে যেটা আজ গিয়ে পৌছেছে প্রায় ৭০ রূপিতে।

পার্থক্য লজিক ও গণিত দিয়ে নির্ধারণ করতে হয়।

ভারত পারমানবিক অস্ত্র তৈরী করেছে, এস-৪০০০ প্রতিরক্ষা যন্ত্রাংস ক্রয় করেছে শুধুই পাকিস্তানের হাত থেকে নিজেদের বাঁচাতে, নিজেদের দেশটাকে রক্ষা করতে।

বড় একটা শরীর থাকলেই যদি ‘বড় কিছু’ হওয়া সম্ভব হতো- তাহলে পৃথিবীতে মাটির উপরে হাতি আর পানিতে তিমি মাছ হতো মহারাজা। কিন্তু বাস্তবে অনেক ছোট শরীর নিয়ে রাজত্ব করে চলছে ‘মানুষ’। আসলে বড় শরীর কিছুই নয়, বুদ্ধি-ই সবকিছু।

ছোট্ট এক ইসরেল সারা পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দেয় শুধুই নিজ যোগ্যতায়। এসব বুঝতে হবে।

যাই হোক, ভারতকে দক্ষিন এশিয়া অঞ্চলের ‘বড়ভাই’ হিসাবে গন্য করার একটা ট্রাডিশন চলছে- শুধুমাত্র পাকিস্তান এই ট্রাডিশনে যোগ দেয়নি। বাংলাদেশের যে-কোন রাজনৈতিক বা অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তে গত ২০০৭ এর পর থেকে ভারতে একটু বেশী পরিমানেই মাথা ঘামাতে দেখা যাচ্ছে। বিষয়টা অগ্রহনযোগ্য।

ভারতের এমন কোন যোগ্যতা বা শক্তি নেই যে তারা বাংলাদেশের উপর ‘দাদাগিরি’ করবে।

কারো যদি দাদাগিরি করার যোগ্যতাই থাকে তাহলে সে নিজে গো-মুত্র ভক্ষন করে না।
কারো যদি দাদাগিরি করার যোগ্যতাই থাকে তাহলে সে নিজে গরু-ছাগলের মতো রাস্তাঘাতে মল-মুত্র ত্যাগ করে না।

কিন্তু ভারত এসবই করে।

মুলত ভারতকে বাংলাদেশের উপর দাদাগিরি করার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশের রাজনীতিবিদেরাই।
শেখ হাসিনা, বেগম খালেদা জিয়া, এরশাদ, সেনাবাহিনী, পুলিশ, আমলা, সরকারী কর্মকর্তারা মিলে এই দেশটাকে আজ ভারতের দাসত্বে উৎসর্গ করেছে।

কিছু হলেই দৌড়ে নতুন দিল্লী যেতে হয় এদের।
বাংলাদেশের মালিক বাংলাদেশের জনগণ। কিন্তু এরা কেউ-ই দেশের জনগণের প্রতি কোনদিনও ভরসা করেনি। ভরসা করলে তো সেটা ‘গণতন্ত্র’ হয়ে যায়- কিন্তু এরা তো গণতন্ত্র মানেই জানে না। কিভাবে দেশের জগণনের উপর এরা ভরসা করবে?

তাই তো তাদের দৌড় ঐ দিল্লী পর্যন্ত।
এবং দিল্লি যখন দেখলো ওসব গাধারা আমাদের ‘বড়ভাই’ মনে করে- তখন তারা সুযোগ নিবে না কেন?

বাংলাদেশের সেনা প্রধান ছুটে যায় দিল্লীতে- নিজের শরীর বাঁচাতে!
বাংলাদেশের আমলারা ছুটে দিল্লীতে মন্ত্রণালয়ের প্রধান হতে তদবীর নিয়ে!
বাংলাদেশের রাজনৈতিক নেতারা ছুটে দিল্লীতে মন্ত্রী হবার তদবীর নিয়ে।
বাংলাদেশের সব্বাই আজ দিল্লীর মুখাপেক্ষী- সুতরাং কেউ যদি যেচে গিয়ে কাউকে ‘দাদা’ মানে- সে তো তার সুযোগ নিবেই। এটাই বাস্তবতা।

বর্তমান বিশ্ব বাস্তবতায় একটা দেশের পক্ষে সম্ভব না অন্য একটা দেশকে গিলে খাওয়া।
আর তাইতো সিকিমের পর ভারত আর সে কথা চিন্তা করার সাহস করেনি। আর করেনি বলেই নেপাল ভুটানের মতো ছোট ছোট ঘোষিত তাবেদার দেশদুটিও আজ ভারতে পরোয়া করে না।

শ্রী লংকা, মালদ্বিভস পাত্তা দেয়না আর ভারতকে।
কিন্তু শুধুমাত্র বাংলদেশ ব্যতিক্রম। কারণ বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। কারণ বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা আজ শুধুই গণতন্ত্রহীন আওয়ামী লীগ আর বিএনপির আঁচলে বন্দি।

ভারতীয় দাসত্বের গল্প কাদের সিদ্দিকী নিজেই প্রচার করে বেড়ায়।
কাদের সিদ্দিকীরা পাকিস্তানের দাসত্ব ত্যাগ করেছে কিন্তু ভারতীয় দাসত্ব গ্রহণ করে বসে রয়েছে।

আজ সময় এসেছে- ভারতীয় দাসত্বের বিরুদ্ধে কথা বলার।
ভারত বাস্তবে কোন সন্ত্রাসী রাষ্ট্র নয়; ভারত কোন সাহসী রাষ্ট্রও নয়। ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদী নিজে একজন সন্ত্রাসী এবং মৌলবাদী ব্যক্তি কিন্তু ভারতের বাইরের মাটিতে সে স্রেফ একটা তেলাপোকাসম।

কারণ মোদী তার প্রকৃত ক্ষমতার দৌড় বেশ ভালোই বুঝে, জানে।

ভারতীয় ‘র’ মাঝে মধ্যে ইসরেল এর ‘মোসাদ’ হতে চায় কিন্তু শেষমেষ ততটা সাহসী হয়েও উঠতে পারে না।

ভারতীয় কোঠরে জন্ম নেয়া আওয়ামী লীগ কোনদিনই ভারতীয় দাসত্ব ত্যাগ করবে না, করতে পারবে না। কিন্তু বাদবাকী দলগুলির হাতে এখনই সময় ঘুড়ে দাড়াবার।

কোন দাদাবাবু দরকার নেই।
বিএনপি আজ পারে ভারতীয় জুজুর বিরুদ্ধে রুখে দাড়াবার ডাক দিয়ে।
ভারতের বিরুদ্ধে, ভারতীয় আধিপাত্যবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সকল মানুষ আজ একাত্ব।

আমি অসংখ্য আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদেরও জানি যারা প্রকাশ্যে মুখ খুলতে না পারলেও ভেতরে ভেতরে জ্বলে পুড়ছে। ভারতকে তারাও সহ্য করতে পারছে না।

ভারতীয় আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আজ আমাদের ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দাঁড়াতে হবে।
যে আগে নেতৃত্ব দিবে সেই আজ বাংলাদেশের নেতা হতে পারবে।

বড় মুর্তি বানালেই বড় হওয়া যায় না, বড় শরীর থাকলেই বড় হওয়া যায় না।

তবে, ভারতকে একটা বড় ধাক্কা দিতে পারার মধ্যে বড়ত্ব রয়েছে- সেটা বুঝতে হবে।

চলুন ঘুরে দাড়াই।
এবং আজই।

   Send article as PDF