দেশপ্রেম দেশপ্রেম

বছর আড়াই তো হলোই আজানের ধ্বনি কানে আসে না!
 
ফজরে কেউ ‘আসসালাতু খাইরুম মিনান্নাউম’ বলে ঘুম ভাঙায় না। এদেশে আওয়াজেরও নির্দিষ্ট একটা মাত্রা রয়েছে- তার বেশী শব্দ করা যাবে না।
 
আর তাই তো মসজিদে মাইক ব্যবহার করে বা উচ্চস্বরে আজানও দেয়া যাবে না, যায় না।
 
এবং, একই সংগে গীর্জা বা মন্দির থেকেও কোন উচ্চ আওয়াজ বাইরে যেতে পারে না।
 
এটাই এদেশের আইন।
সকলের জন্যই সমান অধিকার।
 
খৃষ্টান দেশ; তো, তাতে কি? সবার জন্য সমান অধিকার।
কোন ধর্ম, বর্ণ, চেহারার সেপ- এতে কিছুই এসে যায় না এখানে। সাদা কালো চাইনিজ স্প্যানিশ এতে কি এসে যায়? আপনি হিন্দু না ইহুদী- এতে কিছুই যায় আসে না। আপনি নাস্তিক না আস্তিক- সেটা আপনার বিষয়।
 
এখানে সকলেই ভদ্র। কেউ কাউকে ঘাটায় না, বিরক্ত করে না। অসভ্যতা করে না।
 
এখানকার ছেলেরা ফ্যাল ফ্যাল করে মেয়েদের দিকে হা করে তাকিয়েও থাকে না।
 
কে কি জামা পরেছে বা পরেনি, কে হিজাব মাথায় দিয়েছে বা বোরকা দিয়ে সর্বাংগ ঢেকে রেখেছে তাতে কারো কিছুই এসে যায় না; যেমন এসে যায় না কেউ অতি সংক্ষিপ্ত পোষাক পরলেও। কারণ কারো দিক তো তাকানোর ফুসরতই নেই অন্যের।
 
সকলেই কাজ নিয়ে ব্যস্ত।
 
এখানে শাহবাগ নেই।
এখানকার কেউ ‘দেশপ্রেম’ ‘দেশপ্রেম’ বলে চিৎকার করে না; কেউ দিবস কেন্দ্রিক দেশপ্রেমও ফলায় না!
 
এদের ‘দেশপ্রেম দেখানোর ফালতু সময়’ কোথায়?
 
এরা শুধু কাজ করে। আর কাজ করেই আজ এরা ‘আমেরিকা’।
কাজই এখানে দেশপ্রেম। চাপাবাজিতে দেশপ্রেম যে হয় না- সেটা তারা আরও আড়াইশ বছর আগেই দেখিয়ে দিয়েছে।
 
এখানে শুধুই যোগ্যতার কদর।
আর সেই সংগে, এটাকে বলা হয় ‘ল্যান্ড অব অপুরচনিটি’।
আপনার যোগ্যতা দিয়ে যা খুশী তাই করে নিন।
 
যোগ্যতা দিয়ে ডোনাল্ড ট্রাম্প হোন, বারাক ওবামা হোন, বিল গেটস হোন, মার্ক জাকারবার্গ হোন, সুন্দর পিচাই হোন!
 
কিন্তু সজীব ওয়াজেদ জয় হতে পারবেন না, তারেক রহমান হতে পারবেন না এদেশে।
 
হতে পারবেন না শেখ হাসিনা বা খালেদা জিয়া।
 
এদেশে মমতাজ হয়ে এমপি বা তারাণা হালিম হয়ে মন্ত্রীও হতে পারবেন না!
 
নারীর ক্ষমতায়ণের বিষাক্ত বুলি আওড়িয়ে ‘হিলারী ক্লিনটন’ হয়েও নির্বাচিত হওয়াও সম্ভব না।
 
শুধুই যোগ্যতার খেলা এখানে।
ডায়নামিক মানুষদের কদর এদেশে।
 
এখানে মানুষের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম।
তারপরও ৩২ কোটি মানুষ।
 
এখানে মশা নেই, কাক নেই, নেরী কুকুরও নেই। অবশ্য ‘পেট এনিমেল’ রয়েছে।
 
এদেশেও ভাস্কর্য আছে।
তবে, তাদের সুপ্রিম কোর্টে তারা ভাস্কর্য বসায়নি।
 
তারা তাদের সুপ্রিম কোর্টে বসিয়েছে একটা স্ট্যান্ড- যেটাতে সর্বকালের সেরা বিচারকের সম্মান দেয়া হয়েছে ইসলামের প্রোফেট মুহাম্মদ (সা) কে।
 
এদেশে ভাস্কর্য মানেই জর্জ ওয়াশিংটন না।
এদেশে ভাস্কর্য মানেই ল্যাংটা মেয়ে মানুষের মুর্তি না।
এদেশে ভাস্কর্য হয় ক্রিয়েটিভিটির।
 
মৃনাল হকের মতো কথিত ভাস্করদের কোন জায়গা এদেশে হয় না- সেই যোগ্যতা না থাকায় তারা ফিরে যায় নিজ দেশে।
 
তারপর আবারও শো করে তাদের ‘সেই দেশপ্রেম’! শাহবাগ। দেশপ্রেমের শ্রাদ্ধ।
 
সব দেশপ্রেম খুঁজে পাওয়া যায় শুধুই বাংলাদেশে।
সব বুদ্ধিজীবিও খুঁজে পাওয়া যাবে ঐ বাংলাদেশেই!
 
যে দেশে ভাস্কর্য প্রতিষ্ঠা করেই দেশকে এগিয়ে নেয়া হবে হাজার বছর।
দেশ হয়ে যাবে মুক্তবুদ্ধির চর্চাকেন্দ্র।
 
সেই চর্চাকেন্দ্র থেকে ঝাকে ঝাকে পঙ্গপালের মতো করে বের হয়ে আসবে জাফর ইকবাল, আনোয়ার হোসেন, মুনতাসির মামুন, শাহরিয়ার কবির, জয় ই মামুন, মুন্নী শাহা, অঞ্জন দত্ত, হাসানুল হক ইনু, মতিয়া চৌধুরী, ইমরান এইচ সরকার, মতিউর রহমান, আনিসুল হকরা। সংগে দু’চারটে মৃনাল হকরা জন্ম নিবে। বের হবে আসাদুজ্জাম নুর, তারাণা হালিমরা।
 
তারপর দেশ হয়ে যাবে ‘সোনার বাংলা’ যেই স্বপ্ন আবার আগেই দেখে রেখেছে শেখ মুজিবর রহমান।
 
একি এক অদ্ভুৎ ক্রীড়াক্ষেত্র!
গত প্রায় দশ বছর আমরা এসবই দেখে যাচ্ছি। শুনে যাচ্ছি।
 
স্ট্যান্ডার্ডহীন একাডেমিক সার্টিফিকেট দিয়ে দেশের ছেলে-মেয়েদের বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী করে ফেলা হচ্ছে!
 
এই বুদ্ধি-প্রতিবন্ধী প্রজন্ম শেখ মুজিব ছাড়া আর কিছুই জানে না। শিখে না। বুঝে না।
 
এরা পরে থাকে দেশপ্রেম নিয়ে!
শত কোটি টাকা খরচ করে ‘সোনার বাংলা গান’ গেয়ে এরা দেশপ্রেম দেখায়। রেকর্ড করে দেশপ্রেমের।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী নিয়ে বিসিএস দিয়ে অফিসার হয়ে শুরু করে ‘হারাম আয়ের ঘুষের জীবন’। এদেশে একটা ব্রীজ, কালভার্ট, রাস্তা, ভবন তৈরীতে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ফেলা হয় মুহুর্তেই।
 
একটা সম্পূর্ণ ব্যাংক খেয়ে ফেলা হয় মুহুর্তেই।
 
যোগ্যতার কোন সম্মান নেই এদেশে।
যে এমপি আজ মারা যায় কাল তার স্ত্রী বা পুত্র-কন্যা পায় পরবর্তী এমপি হবার নমিনেশন। কি দারুণ যোগ্যতা!
 
প্রতি মুহুর্তে আমি স্তব্ধ হয়ে পরি- যখনই ভাবি বাংলাদেশকে নিয়ে।
 
এভাবেও একটা দেশ চলে?
এভাবেও একটা দেশ হয়?
 
আর এরকম দেশে যারা বসবাস করে তারাও মানুষ?
 
কিভাবে সম্ভব?
 
   Send article as PDF