ফেসবুক সিকিউরিটি

এটা একটা সার্বজনীন জ্ঞানের পোষ্ট!
 
🙂
 
গেল সপ্তায় মোট দুই বার কেউ (এক বা একাধিক) আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ড হ্যাক করার চেষ্টা করেছে।
 
আমার ফেসবুক আইডি’র পাসওয়ার্ড হ্যাক করা সম্ভবতঃ এই পৃথিবীর সবচে কঠিনতম একটা কাজ। তারপরও যে বা যারা চেষ্টাটা করেছেন তাদের আমি সাধুবাদ জানাই- অন্তত চেষ্টা করার জন্য।
 
ফেসবুকের মালিক স্বয়ং মার্ক জাকারবার্গও কারো ফেসবুক আইডি’র পাসওয়ার্ড জানেন না।
 
সুতরাং কারো পাসওয়ার্ড হ্যাক করা আসলে খুব সহজ কোন কাজ না।
 
আমি কিন্তু মোটামুটি ভাল একজন পাসওয়ার্ড হ্যাকার।
এই জীবনে অনেক পাসওয়ার্ড আমি হ্যাক করেছি। পাসওয়ার্ড হ্যাক করাটা কিন্তু খুব একটা যে কঠিন কাজ- সেটা কিন্তু না।
 
প্রায়ই আমি লক্ষ্য করি অনেকেই স্ট্যাটাস দেন- আমার আগের আইডি-টি হ্যাক হয়ে গেছে তাই নতুন আরেকটা একাউন্ট খুললাম।
 
আপনাকে আরও সর্তক হতে হবে, স্যার।
বর্তমান সময়ে এজাতীয় স্ট্যাটাসটা একটু বেশীই লজ্জাজনক।
 
আরেকটু খোলাসা করি।
 
একজন মানুষ এই পৃথিবীতে সবচে বেশী ভালবাসে তার নিজেকে। এবং নিজেকে ভাল রাখার জন্যই সে আরেক জনকে ভালবাসে- ওখানেও কিন্তু তার নিজেরই স্বার্থটা মুখ্য হয়ে কাজ করে।
 
সুতরাং, কোন মানুষ যখন তার গোপন কিছু চিন্তা করে- অটোমেটিকলি সেটা সে নিজেকে অথবা তার প্রিয় কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অথবা স্থানই তার চিন্তায় চলে আসে।
এটাই স্বাভাবিক।
 
এবং, এই কারণেই- যখন কেউ পাসওয়ার্ড তৈরী করেন, তখনও তিনি তার ঐ দুর্বলতম বিষয় থেকেই চিন্তাটা করেন। এবং সেই ভাবনা থেকেই মনের দুর্বলতম একটা নাম পাসওয়ার্ড হিসাবে ব্যবহার করে বসেন। এবং আমি যদি আপনার দুর্বলতা ধরতে পারি- তাহলে আপনার পাসওয়ার্ড হ্যক করাটাও সহজ হয়ে যায়।
 
আপনি যখন কারো পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে যাবেন- তখন আপনাকে জানতে হবে যার পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে চাচেছন তার দুর্বলতা কোথায়? সেই দুর্বলতাকে কেন্দ্র করে ট্রাই করে যান- সফল হলে হতেও পারেন। তাছাড়া সকলেই ঐ ‘দুর্বলতম বিষয়’টার সংগে ১২৩৪ অথবা ৪৩২১ ইত্যাদিও এড করে দেন; কেউ আবার নিজের মোবাইল নাম্বার বা বিশেষ কয়েকটা ডিজিট সংযুক্ত করে থাকে। আপনি সম্ভ্যাব্য সবকিছুই মাথায় রাখবেন যখন কারো পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে যাবেন।
 
হ্যাক করার চেষ্টা করতে যেয়ে ব্যর্থ হওয়াটা নিঃসন্দেহে বড়ই লজ্জার!
কারো লজ্জার বিষয়বস্তু হওয়াটা কি ঠিক- আপনিই বলুন?
 
এরপর থেকে কেউ কারো পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে যাবার আগে ‘যথেষ্ঠ শক্ত’ হয়ে যাবেন- নইলে মনে মনে কিন্তু ঠিকই আপনি পরাজিত হবেন এবং লজ্জা পাবেন (অবশ্য লজ্জা যদি থাকে)।
 
যা-ই হোক, পাসওয়ার্ড যখনই তৈরী করবেন- সবসময় মাথায় রাখবেন বা কৌশল করবেন যে, আপনার এমন কোন গোপন বিষয় যা এই পৃথিবীতে আপনি ছাড়া আর কেউ-ই জানে না; দেখবেন তাতে কাজ হবে।
 
প্রকাশ্য দুর্বলতাকে অবশ্যই পাসওয়ার্ড হিসাবে ব্যবহার করবেন না।
 
আসলে, বিশেষ করে ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ‘মজবুদ’ করার চেয়ে- ফেসবুকের সিকিউরিটি-টা দুর্ভেদ্য করাটা বেশী যুক্তিযুক্ত।
 
১) আপনি একটা ই-মেইল আইডি তৈরী করবেন যেটার একছত্র মালিক আপনিই হবে। মনে রাখবেন যে-কোন ইমেইল আইডি’র সিকিউরিটির জন্য একটা রেফারেন্স ই-মেইল প্রয়োজন হয়; ওই রেফারেন্স ই-মেইলটাও যেন আপনারই হয়; অর্থাৎ কেউ যেন না জানে। আপনার ই-মেইল আইডিটি যদি ‘সিকিউওরড’ হয়; তাহলে আপনার ফেসবুক এর পাসওয়ার্ড হ্যাক করাটা অসম্ভব করে দেয়া সম্ভব।
 
২) আপনার মোবাইল ফোনের চেয়ে ইমেইল আইডি’টা-ই সবসময় বেশী নির্ভরযোগ্য। শুধুমাত্র মোবাইল নাম্বার এর উপর ভর করে ফেসবুকের সিকিউরিটি কখনওই খুবই শক্তিশালী হয় না। আপনার মোবাইল নাম্বারটিও হ্যাক করা সম্ভব; তখন আপনার ফেসবুকও হ্যাক হয়ে যাবে খুবই সহজে। সুতরাং ইমেইল আইডি’র উপর গুরুত্ব দিন।
 
৩) ফেসবুকের সেটিংস এ গিয়ে Login Alerts অপসনে সিলেক্ট করুন: Get an alert when anyone logs into your account from an unrecognized device or browser.
অর্থাৎ আপনার নিজের ব্যবহৃত কমপিউটার অথবা স্মার্টফোনের বাইরে অন্য নতুন কোন ডিভাইস থেকে যদি আপনার ফেসবুক-এ কখনও লগিন করা হয়- সংগে সংগে আপনি ই-মেইল নোটিফিকেশন পাবেন। মুহুর্তেই বুঝে ফেলতে পারবেন আপনি হ্যাক হচ্ছেন।
 
৪) নোটিফিকেশন এ যেয়ে ‘ই-মেইল’ এ Only important notifications সিলেক্ট করে রাখুন। আপনার পাসওয়ার্ড কখনও অন্য কেউ চেঞ্জ করে ফেললে আপনি সংগে সংগে অবহিত হবেন এবং পাসওয়ার্ডটি উদ্ধার করতে পারবেন বা নতুন পাসওয়ার্ড তৈরী করতে পারবেন। সোজা কথা হ্যাক হওয়া থেকে সুরক্ষিত থাকতে পারবেন।
 
আপনার একটি শক্তিশালী ‘সিকিউরড’ ইমেইল আইডি যদি থাকে এবং সেই আইডিটি ব্যবহার করে যদি আপনার ফেসবুক আইডি তৈরী করেন- তাহলে পৃথবীর কেউ আপনার পাসওয়ার্ড হ্যাক করতে পারবে না।
 
ফেসবুকের আইডি হ্যাক করে অনেকেই অনেক রকম ‘বাজে সুযোগ’ নিয়ে থাকে।
আপনি একটু সতর্ক থাকলে- কেউ তা করতে পারবে না।
 
আরও একটা বিষয় লক্ষ্য রাখবেন যদি কখনও কোন বন্ধু-বান্ধব-আত্মীয়র কমপিউটারে বা সাইবার ক্যাফেতে গিয়ে ফেসবুক লগিন করেন- সবসময় লক্ষ্য রাখবেন ‘ব্রাউজার’টি পাসওয়ার্ড সেইভ করতে বলছে কি না; অবশ্যই ‘নেভার’ সিলেক্ট করবেন। এবং কাজ শেষ করার পর নিজে থেকে ‘লগ-আউট’ করে বের হবেন।
 
ফেসবুকের পাসওয়ার্ড ‘সুরক্ষিত’ রাখা অত্যন্ত সহজ একটা বিষয়। একইভাবে আপনি সবসময় আপনার অনলাইন ব্যাংক একাউন্টের পাসওয়ার্ডও ঠিক এভাবেই ‘সুরক্ষিত’ রাখতে পারেন বা রাখা উচিৎ।
 
বাংলাদেশে থাকাকালিন সময়ে আমি গ্রামীন ফোনের একটা ‘প্লাটিনাম নাম্বার’ ব্যবহার করতাম। আমার নাম্বারটি ‘গ্রামীন ফোন কর্তৃপক্ষ’ একবার হ্যাক করেছিল। যাই হোক, পরবর্তীতে সেই গ্রামীন ফোন কর্তৃপক্ষ ক্ষমা চেয়ে আবার আমাকে আমার নাম্বারটি ফেরত দেয়।
 
আমি আমেরিকায় আসার পরও একবার ঐ গ্রামীন ফোন কতৃপক্ষ নাম্বারটি হ্যাক করে। এবং শুধু হ্যাকই করেনি- সেই সংগে আমার ফেসবুকের পাসওয়ার্ডও তারা পরিবর্তন করে ফেলে। আমি অবশ্য সংগে সংগেই ই-মেইল বার্তা পেয়ে যাই যে কুমিল্লা থেকে ঐ বিশেষ গ্রামীন ফোন নাম্বার ও একটা স্যামসাং স্মার্টফোন দিয়ে আমার পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করা হয়েছে।
 
আমি সংগে সংগে আমার পাসওয়ার্ড উদ্ধার করি; তারা মাত্র ১০ মিনিট আমার পাসওয়ার্ডটি তাদের আওতায় রাখার সুযোগ পেয়েছিল।
এবং, তার ৩ দিনের মাথায় সেই নাম্বারটিও আমেরিকায় বসেই উদ্ধার করি।
 
ধন্যবাদ।
সবাই ‘সুরক্ষিত’ থাকুন।
   Send article as PDF