মুজিবের বিশাল হৃদয়ে টিক্কা খান

১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ রাতে বাংলাদেশের মানুষের উপর যে বর্বরতা চালানো হয়- হানাদার পাকিস্তানীদের ভাষায় তার নাম ছিলো ‘অপারেশন সার্চলাইট’।
 
এক রাতেই পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক ও ইষ্টার্ণ কমান্ডের কমান্ডার জেনারেল টিক্কা খান হাজার হাজার নিরীহ ঘুমন্ত মানুষকে (রাতের আঁধারে) হত্যা করে।
 
‘মাটি চাই, মানুষ নয়’ এই ছিলো প্রকাশ্যে জেনারেল টিক্কা খানের নীতি।
 
জেনারেল টিক্কা খানের বর্বরতা এতটাই জঘণ্য ছিল যে- পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া খান পর্যন্ত স্তব্ধ হয়ে পরেন; টিক্কা খানকে ওই পদ থেকে শিগগীরই অপসারণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেন এবং জেনারেল একে নিয়াজী এপ্রিলের ৪ তারিখেই ইষ্টার্ন কমান্ডের নতুন কমান্ডার নিয়োগ দিয়ে ঢাকায় পাঠানো হয়।
 
অবশ্য বাঙালী নিধনে জেনারেল টিক্কা খানকে গভর্ণর হিসাবে নিয়োগ দেয়া হয় এবং একই সংগে পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক আইন প্রশাসক পদও বহাল থাকে- যদিও যুদ্ধের কমান্ড থাকে জেনারেল নিয়াজীর হাতে এবং টিক্কা খানকে নিষেধ করা হয় নিয়াজীকে কোন নির্দেশ না দিতে।
 
মুলতঃ সত্তর এর নির্বাচনে দ্বিতীয় হওয়া পিপিপি’র প্রধান জুলফিকার আলী ও প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান কোন ভাবেই মেনে নিতে পারছিলনা যে একজন বাঙালী (শেখ মুজিবর রহমান) দেশের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব নিবে।
 
আর এজন্যই পাকিস্তানের লায়লপুরে ফেব্রুয়ারীতেই এক গোপন মিটিং-এ জুলফিকার আলী ভু্ট্টো ও ইয়াহিয়া খান সিদ্ধান্ত নেন ‘নেতৃত্বশূণ্য করে তারা প্রয়োজনে পূর্ব পাকিস্তানকে পরিত্যাগ করবেন’ তবুও শেখ মুজিবর রহমানকে ক্ষমতায় যেতে দিবেন না।
 
যাই হোক, বলছিলাম টিক্কা খানকে নিয়ে।
পরবর্তীতে অবশ্য টিক্কা খানকে গভর্ণর পদ থেকেও সরিয়ে দেয়া হয়।
 
টিক্কা খানের মতোই আরেক বর্বর ও জঘণ্য চরিত্রের সেনা অফিসার ছিলেন জেনারেল রাও ফরমান আলী- যিনি ছিলেন পূর্ব পাকিস্তানের বিষয়ে বলতে গেলে বিশেষজ্ঞ জেনারেল। দীর্ঘদিন তিনি ঢাকায় সেনা অফিসার হিসাবে কর্মরত ছিলেন; মেলেটারী এডভাইজার, গভর্ণরের সামরিক সচিব ইত্যাদি পদে।
 
৭১রের যুদ্ধে তিনি কমান্ডার নিয়াজীর অধীনে ছিলেন না বা যুদ্ধে অংশগ্রহনও করেননি। কিন্তু গভর্ণরের সামরিক সচিব হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। যাই হোক, এই জেনারেল রাও ফরমান আলীই মুলত জেনারেল নিয়াজীকে অন্ধকারে রেখে ডিসেম্বরের আত্মসমর্পনের পূর্ব মুহুর্তে ‘বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ডে নেতৃত্ব দেয়’।
 
জেনারেল নিয়াজীকে ডিংগিয়ে তিনি জুলফিকার আলী ভু্ট্টো এবং প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সংগে সরাসরি সংযুক্ত থাকতেন। মুলত তাদের পরামর্শেই ঘটে সেই মর্মান্তিক বুদ্ধিজীবি হত্যাকান্ড।
 
পরবর্তীতে এই দুই পাকিস্তানী পশুকে জুলফিকার আলী ভুট্টো বাঙালী নিধনে সফলতার জন্য টিক্কা খানকে সেনাবাহিনী প্রধান এবং রাও ফরমান আলীকে ফৌজি ফাউন্ডেশনের প্রধান করেন। রাও ফরমান আলী পাকিস্তানের মন্ত্রীও হয়েছিলেন। পরবর্তীতে টিক্কা খানকে ন্যাশনাল সিকিউরিটি এডভাইজর ও জুলফিকার কন্যা বেনজীর ভুট্টো তাকে পাঞ্জাব প্রদেশের গভর্ণর পদে নিয়োগ দেন।
 
অপরদিকে ইষ্টার্ণ কামান্ডের কমান্ডার জেনারেল নিয়াজীকে ভারতে আড়াই বছর যুদ্ধবন্দি থাকার পর পাকিস্তানে ফেরার পর ‘হামিদুর কমিশন’ এর মুখোমুখী হতে হয়। পাকিস্তানের সেই সময়ের প্রধান বিচারপতি হামিদুর রহমানের (যিনি মুলত এই বাংলাদেশ ভুখন্ডে জন্ম নেয়া একজন বাঙালী) নেতৃত্বে ‘হামিদুর কমিশন’ গঠন করা হয়- ‘পূর্ব পাকিস্তান হারানোর জন্য কে দায়ী সেটা খুঁজে বের করতে’। প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো জেনারেল নিয়াজীকে এক কলমের খোঁচায় সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত করেন এবং পরবর্তীতে গ্রেফতারও করেন।
 
জুলফিকার আলী ভুট্টোকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেন আরেক জেনারেল প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক।
 
লক্ষ্যনীয় বাঙালী গণহত্যার সেই প্রধান নায়ক জুলফিকার আলী ভুট্টোকে দেখা যেত শেখ মুজিবর রহামনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসাবে। শেখ মুজিবের পাকিস্তান সফরে (ছবিটি অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে- টিক্কা খান লিখে সার্স করলেই দেখা যায়) প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমান হাসি মুখে হ্যান্ডসেক করছেন সেই বাঙালী হত্যাকারী জেনারেল টিক্কা খানের সংগে, পাশে তাদের নেতা জুলফিকার আলী ভু্ট্টো।
 
শেখ মুজিবর রহমান বিশাল হৃদয়ের মানুষ ছিলেন; তিনি অবলীলায় যে কোন ধর্ষক, খুনীকেও নিদির্ধায় ক্ষমা করে দিতেন- যদি সে আওয়ামী লীগ করতেন বা মুজিবের কাছে এসে ক্ষমা চাইতেন।
 
শেখ মুজিবর রহমান তার বিশাল হৃদয় দিয়ে জুলফিকার আলী ভুট্টোকে পরবর্তীতে বন্ধু হিসাবে গ্রহন করেন এবং প্রধান বাঙালী হত্যাকারী জেনারেল টিক্কা খানের সংগেও কি চমৎকার ভাবেই না মোলাকাত করেছেন।
 
কি বিশাল হৃদয়!
বাহ্, কি বিশাল হৃদয়!
 
আর তাই তো তারই কন্যা ও বাংলাদেশের সেকুলাংগারগুলি টিক্কা খান ও রাও ফরমান আলীদের কথা ভুলেই গেছে; তারা এখন শুধুই দেখে কোথায় হুজুর আছে- হুজুররাই নাকি সব হত্যাকারী, ধর্ষনকারী সেই ৭১এ।
 
আর যে ছাত্রলীগ প্রতিদিন ধর্ষন এর রেকর্ড গড়ছে- তারা ওসব দেখে না।
 
শেখ মুজিবের ক্ষমা করে দেয়া খুনী ও ধর্ষক টংগীর মোজাম্মেল এখন দেশের মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী, দেশের শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংশকারী, ঘুষের বিনিময়ে প্রশ্ন ফাঁসকারী দলের প্রধান নাহিদ নিজেই এখন শিক্ষামন্ত্রী।
 
পুরো আম্লীগ আর সেকুলাংগাদের চোখেই আসলে এদের প্রধান সমস্যা!
 
   Send article as PDF