ভারতীয় ক্ষমতা!

বলুন তো এই পৃথিবীতে কোন দেশের মানুষের ব্যক্তিগত বার্ষিক আয় সবচে বেশী?
 
অনেকেই জানেন উত্তরটা আশা করি। হ্যা, কাতার। আমেরিকা কানাডা বা অষ্ট্রেলিয়া নয়। কাতারের মানুষের বার্ষিক আয় (পিপিপি) প্রায় ১২৮ হাজার ৫০০ ডলার। যেখানে আমেরিকানদের গড় আয় (পিপিপি ও নমিনাল) মাত্র ৫৯ হাজার ৫০০ ডলার। অর্থাৎ কাতারের লোকদের আয় আমেরিকানদের প্রায় ডাবল।
 
অবাক হলেন?
অবাক তো হবারই কথা! তাহলে আমেরিকা এই বিশ্বের সবচে বড় অর্থনীতি হলো কিভাবে?
 
উত্তরটা খুবই সহজ।
ঠিক যেভাবে আজ ‘ভারত’কে বলা হয় পৃথিবীর ৭ম বৃহত্তম অথনৈতিক দেশ!
 
আসলে পুরো বিষয়টা-ই একটা পরিসংখ্যানগত ভন্ডামী।
আর এই ভন্ডামীগুলি করে থাকে পরিসংখ্যান গুলিকে প্রয়োজন বা সুবিধেমতো ব্যবহার করে যে যেদিকে ঠেলা দিয়ে সম্ভব নিয়ে যেতে পারে সে-ই।
 
মানুষের মাথায় একটা জটিল প্যাচ লাগিয়ে দিয়ে- যে যেভাবে সম্ভব ‘পরিসংখ্যান’কে ব্যবহার করে ‘বড়-ছোট’ গেম খেলে চলছে এই বিশ্বময়।
 
আর ঠিক এ কারণেই ‘ভুগোল, জনসংখ্যা এবং বিশ্ব অর্থনীতি’ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান বা ধারণা না থাকলে এই ‘পরিসংখ্যান’ এর খেলায় আপনার বোকা হতে সময় লাগবে না ১ মিনিটও।
 
মাত্র সাড়ে ৪ হাজার বর্গমাইলের দেশ কাতারের জনসংখ্যা মাত্র আড়াই মিলিয়ন বা ২৫ লাখ। সুতরাং এই মাত্র ২৫ লাখ লোকের আয় যদি সোয়া লাখ ডলার করে হয়ও তাকে এই পৃথিবীর এমন কি এসে যায়? তার উপর দেশটির আয়তন মাত্র সাড়ে ৪ হাজার বর্গমাইল যা মাত্র দু’টি স্যাংহাই শহরের সমান- যেখানে এক স্যাংহাই শহরের জনসংখ্যাই ২৫ মিলিয়ন!
 
এবার চলুন সাইজ নিয়ে একটু কথা বলি।
পুরো ইওরোপ মহাদেশে মোট দেশ হলো ৫০টি। এই ৫০টি দেশ সম্মিলিতভাবে মাত্র এক আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের সমান আয়তন। তাহলে এবার যদি ৫০ গুন বেশী বড় এক আমেরিকার সংগে ইওরোপের একক একটি কোন দেশকে তুলনা করেন শক্তি বা অর্থনীতিতে- তাহলে কি তুলনার প্রশ্নটি আদৌ যৌক্তিক হবে?
 
না। মোটেও না।
আপনাকে তুলনায় নিতে হবে সমানে সমান হিসাবে করে।
 
আপনি যদি তুলনা করতে চান তাহলে সম আয়তন এবং সম সংখ্যক জনসংখ্যাকে তুলনা করতে হবে- তবেই আপনি সঠিক ফলাফল আশা করতে বা ক্যালকুলেশন করতে পারবেন। অন্যথায় পরে যাবেন সেই পরিসংখ্যান নামের এক গেইমে!
 
যেই গেইম আমরা ছোট বেলায় খেলতাম। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে দাঁড় করাতাম কাজী নজরুলের সংগে। বা এখনও কেউ কেউ করে থাকে ভারতকে চায়নার পাশে পরিসংখ্যানের ফেরে ফেলে দাঁড় করিয়ে!
 
আমেরিকার জনসংখ্যা প্রায় ৩২ কোটি এবং জনপ্রতি বার্ষিক আয় (পিপিপি) প্রায় ৫৯ হাজার ৫০০ ডলার যা এই পৃথিবীর সবচে বড় এবং সমৃদ্ধ অর্থনীতি। আপনি যদি এবার আমেরিকার সংগে অন্য কোন একটা দেশের অর্থনীতিকে তুলনা করতে চান তাহলে আপনাকে দেখতে হবে পৌনে ৪ মিলিয়ন বর্গমাইল আয়তনের একটা দেশ যার জনসংখ্যা ৩২ কোটির কাছাকাছি। তবেই না বাস্তবিক তুলনা চলবে।
 
চায়নার আয়তনও প্রায় সাড়ে তিন মিলিয়ন বর্গমাইল যা মোটামুটি আমেরিকার সমান। কিন্তু চায়নার জনসংখ্যা আমেরিকার প্রায় ৪ গুনেরও বেশী। কিন্তু চায়নার ঐ প্রায় ১৪০ কোটি মানুষের গড় বার্ষিক আয় (পিপিপি) মাত্র ১৮ হাজার ডলার। প্রায় সাড়ে চারগুন জনসংখ্যা নিয়েও চায়নার অর্থনীতি মাত্র ৩২ কোটি জনসংখ্যার আমেরিকার’চে ছোট।
 
এবার চলুন মুল আলোচনায় ফিরি।
ভারতের জনসংখ্যাও প্রায় চায়নার সমান যা প্রায় ১৫০ কোটি কিন্তু ভারতের আয়তন চায়না বা আমেরিকার ৩ ভাগের মাত্র ১ ভাগ। এবং ভারতীয়দের জনপ্রতি বার্ষিক আয় (পিপিপি) মাত্র সাড়ে ৭ হাজার ডলার!
 
এবার আমাকে বলুন তো- কিসের ভিত্তিতে, কোন হিসাবে, কোন পরিসংখ্যানের আওতায় আপনি ভারতকে চায়নার পাশে দাঁড় করানোর সাহস করেন?
 
তিন ভাগের ১ ভাগ ভুমি এবং সমসংখ্যাক জনসংখ্যার দায়িত্ব নিয়ে আবার ৩ ভাগের এক ভাগ অর্থনীতি নিয়ে কারো সংগে কাউকে তুলনা করাটাকে কি বলা যেতে পারে!
 
ভারতকে বড়জোর তুলনা করা যেতে পারে পাশ্ববর্তী বাংলাদেশের সংগে।
মাত্র ৫৫ হাজার বর্গমাইল নিয়ে গঠিত ১৭ কোটি মানুষের গড় আয় (পিপিপি) এখানে ৪ হাজার ৫০০ ডলার যা অনেকটাই বিশালদেহী ভারতের কাছাকাছি।
 
আর পাকিস্তান? ৩৪০ হাজার বর্গমাইলের এই দেশটি ভারতের ৪ ভাগের এক ভাগ আয়তন নিয়ে গঠিত এবং এর ২১ কোটি মানুষের গড় আয় (পিপিপি) প্রায় ৫ হাজার ৩০০ ডলার।
 
ভারতের হিসাবে পাকিস্তানের জনসংখ্যা হবার কথা ছিল ৮৪ কোটি কিন্তু সেটা মাত্র ২১ কোটি- অর্থাৎ পাকিস্তানের লায়বেলিটি ভারতের ৪ ভাগের ১ ভাগ এবং আয় প্রায় সমানে সমান।
 
ভারত বেশী জনসংখ্যার বড় দেশ কিন্তু আয় তুলনামুলকভাবে অনেক কম, দায়িত্ব বেশী বলে লোড নিতে ব্যর্থ হওয়ায় জীবনমান এখনও পাকিস্তান বা বাংলাদেশের চেয়েও খারাপ। প্রয়োজনীয় সংখ্যা বাথরুম নেই, দেশটি এখনও পোলিও মুক্ত হতে পারেনি যদিও বাংলাদেশ-পাকিস্তান অনেক আগেই তা করে ফেলেছে।
 
আপনি বলবেন ভারত বড় সামরিক শক্তির একটা দেশ!
না ভাইজান, এটাও বড়ই ভুল ধারণা। ভুল পরিসংখ্যান। প্রয়োজনের তুলনায় ভারতের সামরিক শক্তিও অনেক দুর্বল। চলুন হিসাবে মিলিয়ে দিই।
 
১৩ লাখের বেশী সৈন্য রয়েছে ইন্ডিয়ার। অপরদিকে পাকিস্তানের মাত্র ৬ লাখের কিছু বেশী।
কিন্তু একটা বিষয় সকলের দৃষ্টি কেন এড়িয়ে যায় সেটা আমি বুঝি না।
 
ইন্ডিয়ার আয়তন প্রায় ৩২ লাখ বর্গ কিলোমিটার এবং পাকিস্তানের আয়তন ৮ লাখ বর্গ কিলোমিটার।
 
অর্থাৎ ইন্ডিয়া দেশটা পাকিস্তানের চেয়ে ৪ গুন বড়। কিন্তু সৈন্য সংখ্যা দ্বিগুন।
এটা একটা সরল অংক। কার শক্তি বেশী হলো?
 
পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২১ কোটি। সেই হিসাবে ইন্ডিয়ার জনসংখ্যা ৮৪ কোটি হলে ঠিক হতো কিন্তু তার ঘারে রয়েছে ১৪০ কোটি মানুষ!
 
বলুন তো- কার উপর লোড বেশী হলো- ইন্ডিয়া না পাকিস্তান?
 
যাক, এবার একটু অন্য দিকে যাই।
 
পাকিস্তানের চারপাশে ইন্ডিয়া ছাড়া তার আর কোন শত্রু রাষ্ট্র নেই- যার সংগে পাকিস্তানের অস্ত্র বা যুদ্ধের কোন প্রতিযোগীতায় থাকতে হয়। তাদের একমাত্র শত্রু ইন্ডিয়া এবং পাকিস্তানের সম্পূর্ণ সামরিক শক্তি শুধুমাত্র ইন্ডিয়াকেই ধ্বংশ করার জন্য তৈরী!
 
অপরদিকে মাত্র ১৩ লাখ সৈন্য নিয়ে ইন্ডিয়াকে যুদ্ধের ঝুকিতে শুধুমাত্র পাকিস্তানের জন্যই থাকতে হয় না, বিশ্বের বর্তমান দ্বিতীয় সুপার পাওয়ার চায়নাই হলো ইন্ডিয়ার আসল ভয়।
 
পাকিস্তানের সংগে যুদ্ধে জড়ালে ইন্ডিয়া সর্বোচ্চ তার তিন ভাগের ১ ভাগ সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পারবে; ইন্ডিয়া বিশাল দেশ। চায়নার সংগে তার দীর্ঘদিনের শত্রুতা রয়েছে। ইন্ডিয়া তিব্বতের দালাইলামাকে তার ভুখন্ডে রাজকীয়ভাবে শুধু রাখেই নি- ইন্ডিয়ান ভুখন্ড ব্যবহার করে চায়নার বিরুদ্ধে ষঢ়যন্ত্র করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাছাড়া চায়না এখনও অরুনাচল প্রদেশকে নিজেদের অংশ দাবী করে এবং যে কোন সুযোগে চায়না ‘অরুনাচল প্রদেশ’কে এক ঝটকায় দখল করে নেবে।
 
পরিসংখ্যানবিদরা এবার তাদের ‘তথ্য-উপাত্ত’ গুলিয়ে গুলিয়ে শরবত বানিয়ে খেয়ে নিতে পারেন- বাস্তবতার ফাঁকিতে ভুল-ভাল ‘পরিসংখ্যান’ টিকে না বস!
 
পরিসংখ্যান দিয়ে একজন মার্ক জাকারবার্গ বা বিল গেটস তৈরী হয় না।
পরিসংখ্যানে ভর করে অরাজনীতিবিদ ডোনাল্ড ট্রাম্প কোনদিনও আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবার যোগ্য নন।
পরিসংখ্যান দিয়ে ‘আমাজন’ আজ বিশ্বের সবচে বড় কোম্পানী হতে পারেনি।
 
পরিসংখ্যান দিয়ে যোগ বিয়োগ গুন ভাগ করা যায়, ভাল পরিসংখ্যান জেনে বড় চাকুরী করা যায় কিন্তু প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়া যায় না।
 
বাস্তবতায় ফিরতে হবে, বাস্তবতা ক্যালকুলেশন করতে হবে।
ভারতকে যারা বড় শক্তি মনে করে, ভারতকে যারা ভয় করে, ভারতকে যার বাংলাদেশের ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক ভাবে- তারা শুধুই পরিসংখ্যানের অংকে ডুবে রয়েছে।
 
ভারত অযোগ্য অর্থব্য একটা দেশ- যে দেশের গো-মুত্র খাওয়া লোকেরা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছে নরেন্দ্র মোদীর মতো একজন হিংস্র, একজন সন্ত্রাসী মৌলবাদীকে তাদের প্রধানমন্ত্রী। ঐ অর্থব দেশের লোকগুলি এখনও রাস্তা-ঘাটে গরু-ছাগলের মতো দাঁড়িয়ে মল-মুত্র ত্যাগ করতে অভ্যস্থ।
 
সেই দেশটিকে আপনি ভয় করেন?
ঐ ভারতকে লাথি মেরে উড়িয়ে দিয়েছে সামান্য নেপালের মতো একটা ক্ষুদ্র দেশ।
ঐ ভারতকে লাথি মেরে উড়িেয়ে দিয়েছে শ্রী লংকার মতো একটা ছোট দ্বীপ রাষ্ট্র, মালদ্বীভসের মতো ডুবে যাওয়া দ্বীপদেশ।
 
আর, আপনি ভারতকে ভয় করেন?
ভারতে বাংলাদেশের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ করবে- আপনি ভয়ে রয়েছেন?
 
ভারতের বিরুদ্ধে হুশিয়ারী উচ্চারণের সাহসও আপনার নেই?
তাহলে, আপনার মতো লোকেরও নিজেকে ‘মানুষ’ ভাবার কোন যুক্তি নেই।
 
বাংলাদেশ ভুখন্ড থেকে ভারতের উৎপাটনই বাংলাদেশের এই মুহূর্তের একমাত্র দাবী।
 
এটা সময়ের দাবী।
আপনাকে বাস্তবতা ক্যালকুলেশন করে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভারতকে উচ্ছেদ করতে হবে, ভারতকে লাথি মারতে হবে।
 
মনে রাখবেন, ভারতের ‘এতটুকু’ সাহসও নেই যে ভারত বাংলাদেশে সামরিক হস্তক্ষেপ করবে। সেই শক্তিই ভারতের নেই।
 
তাহলে ভারতকে কিসের ভয়?
   Send article as PDF