বাংলা বিহার উড়িশ্যা

অনেকেরই দেখলাম মাথা খারাপ হবার দশা!
 
বলছিলাম গতকালের দেয়া আমারএক লাইনের একটা স্ট্যাটাস নিয়ে- ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলা শিয়া মুসলিম ছিলেন’।
 
আমাদের দেশের মানুষরা প্রতিষ্ঠিত হওয়া কোন বিষয়ের বাইরে নতুন কিছু নিতে রাজী নয়। এদের চিন্তার পুরোটাই জুড়ে থাকে ‘প্রতিষ্ঠিত’ বিষয়টি- সেটা সত্য বা মিথ্যা, খারাপ বা ভালো অথবা বাতিল কোন বিষয় কিনা সেটাও তারা ভাবতে কোনভাবেই নারাজ।
 
বাংলাদেশে আমার ব্যবসায়িক প্রায় ২০ বছরের অভিজ্ঞতায় বিষয়টা আমাকে প্রচন্ড বিরক্ত করতো।
 
বাংলাদেশে গাড়ী মানেই ‘টয়োটা’। এর বাইরে অন্য কোন ব্রান্ডের গাড়ী নিতে আমরা রাজী নই। কারণটাও বেশ হাস্যকর।
 
টয়োটা ব্রান্ডের গাড়ীর একজোড়া ব্রেক শোর দাম মাত্র ৮০০ থেকে ১২শ টাকা। কিন্তু অন্য ব্রান্ডের গাড়ীর এই ব্রেক শোর মূল্য ৪ হাজার টাকা। সুতরাং তারা টয়োটাকেই পছন্দ করবে।
 
কিন্তু বাস্তবতা কি বলে?
আপনি ১২০০ টাকায় এক জোড়া ব্রেশ শো লাগিয়ে ম্যাক্সিমাম ৬ মাস চলতে পারবেন। এরপরই আবার আপনাকে তা চেঞ্জ করতে হবে।
 
কিন্তু। আপনি ৪ হাজার টাকা দিয়ে এক জোড়া ব্রেক শো লাগিয়ে যে ৪/৫ বছরও চলতে পারবেন- সেটা একটিবারও ভাবতে রাজী নন।
 
তাছাড়া টয়োটার ঐ ব্রেক শো-টিও অরিজিনাল টয়োটার নয়- সেটাও আপনি চিন্তা করতে প্রস্তুত নন। অন্য ব্রান্ডের দু’নাম্বার ব্রেক বা অন্য স্পেয়ার পার্টস বাজারে পাওয়া যায় না।
 
সামান্য একটা উদাহরণ দিলাম। এরকম হাজারটা বাস্তব উদাহরণ দিতে পারবো।
 
বাংলাদেশের মানুষ সহজ, ক্ষনস্থায়ী, সস্তা ও হালকা চিন্তায় বিশ্বাসী।
এরা মুখস্ত বা নকল করে পাশ করবে- কিছু শিখতে আগ্রহী নয়; একমাত্র লক্ষ্যই সার্টিফিকেট!
 
দাবী করা হয় বা একটা প্রতিষ্ঠিত সত্য ‘নবাব সিরাজউদ্দৌলাই না কি বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব’।
 
বাঙলার স্বাধীনতার সূর্য নাকি সিরাজের সাথে সাথে ১৭৫৭ সালেই মুর্শিদাবাদে পলাশীর প্রান্তরে অস্তমিত গিয়েছিল! মুর্শিদাবাদ, পলাশী, ফারাক্কা বাঁধ ইত্যাদি ঐতিহাসিক স্থানগুলি আমি ভ্রমন করেছি- সদ্য কৈশরউত্তির্ণ আমি তখন বেশ পুলকিতও হয়েছিলাম।
 
এখন আমি যদি এই কথাটিকে মিথ্যা বলি- সকলেই আমার উপর হুমড়ী খেয়ে পড়বে। যা তা বলা শুরু করবে! কয়জন সত্যকে মোকাবেলা করার সাহস রাখেন?
 
শিয়া মুসলিম মুর্শিদ কুলি খান সাহেব কি বাঙালী ছিলেন?
যদি হয়ে থাকেন- তাহলে কিভাবে?
মুর্শিদ কুলি খানের জন্মস্থান কোথায়?
 
বাংলা বিহার উড়িশ্যা মুলত ‘হিন্দু’ অধ্যুষিত অঞ্চল। এখানকার দ্বিতীয় সংখ্যাগড়িষ্ঠ জনসংখ্যা ‘সুন্নি মুসলিম’রা। এর মধ্যে থেকে কিভাবে হঠাৎ করে একজন ‘শিয়া মুসলিম’ নবাব হতে পারলেন?
 
মুর্শিদ কুলি খান মুলত একজন পার্সিয়ান। ১৭০০ সালে একটা রক্তাক্ত যুদ্ধের মাধ্যমে মুর্শিদ কুলি খান মুঘল রাজের নজর কারেন। ‘বাংলা-বিহার-উড়িশ্যা’ কোন স্বাধীন রাজ্য ছিল না কোন কালেই। বাংলা-বিহার-উড়িশ্যা মুঘল সাম্রাজ্যের অধিনেই ছিল বরাবরই। মুর্শিদ কুলি খান মুঘল সাম্রাজ্যের অধীনেই ‘নবাব অব মুর্শিদাবাদ’ বা বাংলার নবাব নিযুক্ত হন।
 
এবং সেটা মুঘল রাজের সুনজরে পরার পরে এবং মুঘল রাজ মনে করে মুর্শিদ কুলি খান এই অঞ্চলে স্থিতিবস্থা বজায় রাখতে পারবে মুঘল রাজের অনুকুলে।
 
এখানে বাঙালীরা কোথায়?
মুর্শিদাবাদ এর নবাবদের অধীনে কতজন বাঙালী মন্ত্রী বা সেনা খুঁজে পাওয়া যায়?
 
বাঙালী কিভাবে নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে ‘বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব’ হিসাবে খুঁজে পেল?
 
আপাদ-মস্তক একজন ভোগবাদী সিরাজউদ্দৌলা তো নিজেই বাঙালী ছিলেন না!
 
একদল ষ্টুপিড ইতিহাসবিদ কোত্থেকে এসে ইতিহাস লিখে দিয়ে গেল মুর্শিদাবাদের নবাব সিরাজউদ্দৌলাই না কি বাংলার শেষ নবাব! গাঁজা কি তখনই বেশী চাষ হতো না কি এখন?
 
আসল বাস্তবতা হলো মুঘল বলেন, নবাব মুর্শিদ কুলি খান থেকে শুরু করে আলিবর্দ্দী খান হয়ে তার মেয়ের ঘরের নাতি সিরাজউদ্দৌলাই বলেন অথবা তারপরের মীরজাফর বা ২০০ বছরের বৃটিশ রাজ এবং পরবর্তী পাকিস্তানী সরকার- কেউ-ই বাঙালীর ছিল না।
 
বাংলা-বিহার-উড়িশ্যা নিয়ন্ত্রিত হতো পুরাতন দিল্লি বা শাহজাহানাবাদ থেকে মুঘল রাজের অধিনে এবং এরপর বৃটিশ ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর হাত ধরে লন্ডনের বৃটিশ রাজের অধিনে।
 
আর আজ কথিত স্বাধীন বাংলাদেশও বন্দী হয়ে রয়েছে রংপুর, বগুড়া বা গোপালীদের হাতে।
 
বাঙালী কবে স্বাধীন ছিল?
বাংলাদেশ কি আদৌ কোনদিন বাংলাদেশীদের হতে পারবে?
 
   Send article as PDF