এক লক্ষ দুই হাজার কোটি টাকা!

৮৫ টাকা করে যদি ডলারের রেট ধরি- তাহলে ১২ বিলিয়ন ডলারে বাংলা টাকার পরিমাণ হয় এক লক্ষ দুই হাজার কোটি টাকা।
 
বাংলাদেশের ২০০১ থেকে ২০০৬ এর মধ্যে কোন বৎসরে ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার বিশাল মাপের জাতীয় বাজেট ঘোষিত হয়েছিল বলেও মনে হয় না।
 
তার মানে দাঁড়াচ্ছে ভারত নিয়ন্ত্রিত গোপালগঞ্জ সরকারের মূখ্যমন্ত্রী শেখ হাচিনা বলতে চাচ্ছেন বেগম জিয়ার পরিবার পুরো বাংলাদেশের ১ বছরের বাজেটের চেয়েও বেশী টাকা বিদেশে বিনিয়োগের নামে পাচার করেছেন।
 
অভিযোগটি খুবই মারাত্মক।
একটা দেশের (বা প্রদেশের) প্রধান নির্বাহী নিজের মুখে যখন কোন তথ্য উপস্থাপনা করে বা বলে- সেটাকে তো গুরুত্ব দিতেই হবে।
 
যাই হোক তারপরও আমি বেগম জিয়াকে একটু ছোট্ট করে ধন্যবাদ দিতেই পারি যে- ওনি ও ওনার পরিবার এক বছরের জাতীয় বাজেটের চেয়েও বড় অংক বিদেশে পাচার করে দেবার পরও বাংলাদেশে কোন রকমের মুদ্রাস্ফিতি ঘটেনি।
 
বাংলাদেশে টাকার দাম পরে যায়নি।
বাংলাদেশে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি।
বাংলাদেশে উন্নয়নে ব্যাঘাত ঘটেনি।
বাংলাদেশের মানুষের জিডিপি কমে যায়নি।
কোন ব্যাংক দেওলিয়া হয়নি।
পেয়াজ বা চালের মূল্য বাড়েনি।
 
তার মানে বেগম জিয়া ও তার পরিবার নিশ্চয়ই এমন কোন জাদু জানতেন যে- টাকা সরিয়ে ফেললেও টাকা কমে যাবে না; অন্তত হাচিনার কথায় সেটাই তো প্রমাণ হবার কথা বা হয়েছেও।
 
আমি ঢাকা শহরে ব্যবসা শুরু করি ২০০১ থেকে টানা ২০১৪ পর্যন্ত।
২০০৪ থেকে ঢাকা চেম্বার এর সদস্য এবং ২০০৬ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত এফবিসিসিআই এর জেনারেল বডির মেম্বারও ছিলাম। দেশের এতগুলি টাকা পাচার হয়ে গেল- সেটা আমরা কেউ টেরও পেলাম না!
 
অদ্ভুৎ তো!
 
আচ্ছা!
২০০১ থেকে ২০০৬ এই সময়ে এমন কোন একটা বছর কি গিয়েছিল যে বছর সাইফুর রহমান সাহেব বাজেট ঘোষনা বন্ধ রেখেছিলেন?
 
আমার কিন্তু মনে আসছে না।
 
আবার, কি জানি হলে হতেও পারে- হয়তো ঐ সময়ে কোন এক বছর দেশের বাজেটই ঘোষনা হয়নি আর ঐ বাজেটের সম্পূর্ণ টাকাটাই বেগম জিয়া পরিবার সরিয়ে ফেললেন!
 
আমি ব্যক্তিগতভাবে বিএনপি বা বেগম জিয়া পরিবারকে সমর্থন করি না।
 
কোনদিনও করিনি, এখনও করি না। আজও করছি না।
বেগম জিয়া বা তারেক সাহেবের বিরুদ্ধে অনেক কথাও প্রায়শই লিখি- শতশত বিএনপি সমর্থক আমাকে বকাবকি করে আনফলোও করে দিয়েছে অনেকবারই।
 
তবে আমি অংক বেশ ভালই কষতে জানি।
সেই অংক থেকেই ১ লাখ ২ হাজার কোটি টাকার হিসাবে মিলাতে পারছি না।
 
তারেক সাহেব কোন ধোয়া তুলশি পাতা ছিলেন না।
তিনি ধোয়া তুলশি পাতা হয়ে থাকলে ‘হাওয়া ভবন’ হয়ে উঠতে পারতো না।
তিনি ধোয়া তুলশি পাতা হয়ে থাকলে তার চেম্বারে সন্ধ্যার পর দেশের সব বড় বড় ব্যবসায়ী, আমলা, রানিং এমপি, মন্ত্রীরা কিউই ধরে দেখা করার জন্য দাঁড়িয়ে থাকতো না।
 
তারচেও বড় কথা, ‘হাওয়া ভবন’টি না থাকলে, আমি আবারও বলছি, হাওয়া ভবনটি না জন্মালে এই তারেক রহমান প্রেসিডেন্ট জিয়ার ছেলে পরিচয়ে বাকী জীবন বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট হয়ে থাকতে পারতেন।
 
কিন্তু সেই যোগ্যতা তারেক রহমানের ছিল না এবং নেই।
তারেক রহমান অবশ্যই কমিশন খেয়েছেন। কমিশন নিয়েছেন বড় বড় কাজ পাইয়ে দিয়ে। দু’একটা তদবির আমি নিজেও দেখেছি। এবং এটাই বাংলাদেশের কালচার। তারেক রহমান প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মতো সেই ‘কালচার উত্তির্ণ’ ব্যক্তি নন বা হয়ে উঠতে ব্যর্থ হয়েছেন।
 
কিন্তু ১০-বিশ পাচের্ন্ট কমিশন খাওয়া ইনকাম যে একটা দেশের এক বছরের বাজেটকেও ছাড়িয়ে যাবে- সেটা ভাবার মতো মূর্খ বাংলাদেশে একজনও নেই; এতটুকু নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি।
 
হাচিনা (শেখ হাচিনা) ও তার দলবলের অভিযোগ এই বিশাল অংকের টাকা বেগম জিয়া পরিবার নাকি বিদেশে বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু ঠিক কোন দেশে বিনিয়োগ করেছে এবং কোথায় বিনিয়োগ করেছে- সেটা তিনি বলতে পারেননি।
 
তিনারা ইংগিত করেছেন (কয়েকজন প্রকাশ্যে বলেছেনও) যে টাকাগুলি মিডিলইষ্টে বিনিয়োগ করা হয়েছে।
 
আমি তখন অংক মিলাতে পারি না, এত বড় বিশাল এমাউন্ট মিডিল ইষ্টে বিনিয়োগ করে আরাফাত রহমান কোকো তার পরিবার নিয়ে মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুরের আমপাং এর মতো একটা সস্তা জায়গায় বসবাস করতে গেলেন কেন? সৌদী আরবে বসবাস করলেই তো পারতেন। এত বড় বিনিয়োগকারীকে সৌদা রাজা নিয়ে বরণ করে নিতেন জামাই আদরে।
 
তারেক রহমান সাহেব লন্ডনে চিকিৎসা না নিয়ে আরও দামী ও বড় হসপিটাল কিং ফয়সাল স্পেশালিস্ট হসপিটাল রিয়াদে চিকিৎসা নিলেই তো পারতেন।
 
টাকা ছেড়ে কেউ কি কুয়ালা লামপুর, লন্ডন আর ঢাকা শহরে বসবাস করে?
বেগম জিয়া ঢাকায় বসে একা একা কষ্ট করতেছেন কোন দুঃখে?
 
আসল বিষয়টা অন্যত্র!
বিষয়টা শেখ হাসিনা নিজে এবং সংগে তার পরিবার।
 
হাচিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় আমেরিকান সিটিজেন।
প্রতি মাসে বাংলাদেশ থেকে ২ লাখ ডলার ভাতা তুলে নিচেছ। এই পৃথিবীতে বসে বসে এত বড় প্রতিবন্ধী ভাতা আর দ্বিতীয় কেউ খায় না। সেই সংগে বোকা দেশের বেকুব পাবলিককে আরও বড় ধোকা দিয়ে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ নাম ভাংগিয়ে এককালীন ৪৩ হাজার কোটি টাকা সরিয়েছে সেই ২০১১ সালেই। সজীব ওয়াজেদ জয়ের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ব্যাংকে বসে ভারতীয় রাকেশ আস্তানা ও গভর্ণর ড. আতিয়ার রহমানের যোগসাজসে এককালীন ১৫ হাজার কোটি টাকা এবং হ্যাকিং করে আরও ৮১ মিলিয়ন ডলার নিউ ইয়র্ক ফেড থেকে সরিয়ে নিয়েছে। তারপর সেসব প্রমাণ নষ্ট করতে বাংলাদেশ ব্যাংকের রেমিটেন্স শাখার সকল কাগজপত্র কমপিউটার আগুনে পুরিয়ে দিয়েছে।
 
প্রতিদিন প্রতি মুহুর্তে এই সজীব ওয়াজেদ জয় নামের জাতীয় প্রতিবন্ধীটি দেশের মানুষের কষ্টের টাকাগুলি বিভিন্ন নামে সরিয়ে নিচ্ছে তার নিজ দেশ আমেরিকায়।
 
এখানেই থেমে নেই শেখ হাসিনা ও তার পরিবার।
 
সায়মা ওয়াজেদ পুতুল কানাডিয়ান সিটিজেন।
এই মহিলা, তথাকথিত অটিজম শ্লোগানের নামে গেল ২০১৫তে ৬৫ হাজার কোটি টাকা আত্মস্মাৎ করেছেন- প্রকাশ্যে।
 
শেখ রেহানা বৃটিশ সিটিজেন।
তার পুত্র ববি এবং কন্যা টিউলিপ সকলেই বৃটিশ সিটিজেন।
 
ববি নিজের ব্যবসায়িক অফিস খুলে বসেছে দেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভেতরে। সেখানে বসে দেশের বিভিন্ন তথাকথিত উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অর্থ-আত্মস্মাতে ব্যস্ত। লন্ডনের নাম গন্ধহীন এক কোম্পানীর নামে বাংলাদেশ রেলওয়ের এক প্রজেক্টের নামে গেল বছর নিয়ে নিলো আরও ৭৫ হাজার কোটি টাকা।
 
বাংলাদেশ ব্যাংকসহ, ইসলামী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, সোসাল ইসলামী ব্যাংক ইতিমধ্যেই শূণ্য করে দিয়েছে শেখ হাসিনার পরিবারবর্গ।
 
এবং দেশের অর্থ লুট-পাটের ফলে দেশে এই মুহূর্তে চলচে মুদ্রাস্ফিতি। ডলারের মূল্য আকাশ ছোয়া। দেশে এক কেজি পেয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায় যেটা আমেরিকার মতো দেশেও পাওয়া যায় মাত্র ১ ডলারে (৮০ টাকায়)।
 
১০ টাকা দামের চালের মূল্য এখন ৬০ টাকা।
একজন অতি সাধারণ মানুষও বুঝে যে দেশের অর্থনীতি আজ সম্পূর্ণভাবে ধ্বংশপ্রাপ্ত।
 
এই মাত্র একটি পরিবার একটা দেশকে সম্পূর্ণভাবে শূণ্য করে দিতে পারে- এমন নজীর পৃথিবীর ইতিহাসেও ছিল না।
 
এই পরিবারটির বাংলাদেশে কিছুই নেই।
এরা বাংলাদেশের নাগরিকও নয়।
দেশের লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা এই একটি মাত্র পরিবার ইতিমধ্যেই লুটে বিদেশে (নিজ নিজ দেশে) পাচার করে দিয়েছে।
 
দেশের মানুষ যখন বুঝে ফেলছে তাদের লুটপাটের কাহিনী- তখন তারা তাদের চুরির গল্প ভিন্ন দিকে প্রবাহ করার্থেই বেগম জিয়া পরিবারের ১২ বিলিয়ন ডলার পাচারের গল্প ফাঁদে।
 
বেগম জিয়া পরিবারের বাংলাদেশের বাইরে কোন নাগরিকত্ব নেই।
কিন্তু হাচিনা পরিবারের করোরই বাংলাদেশে নাগরিকত্ব নেই।
 
কে চোর- এটা হিসাব করতে এই দু’টি লাইন-ই যথেষ্ঠ।
 
শেষটায় একটা গোপন কথা বলি।
দিন কয়েক আগে এই আম্লীগ সরকারের একজন রানিং মন্ত্রীর সংগে আমার অনেকক্ষন কথা হলো। ওনার পরিচয় প্রকাশ করতে পারছি না- দুঃখিত।
 
বেচারা মন্ত্রী আক্ষেপ করে আমাকে শুধুমাত্র একটা কথাই বললেন, ‘হাচিনা মরার পর তো তার পরিবারের আর কেউ নেই যে নেতৃত্ব দিবে- সকলেই বিদেশী নাগরিক। অবশ্য বাকী জীবনে অাম্লীগ আর ক্ষমতায় ফিরতে পারবে বলে আমি নিজেও বিশ্বাস করি না। এতো অন্যায়, এতো অত্যাচার, এতো নষ্টামী বাংলাদেশের ইতিহাসে আর কোন দল বা পরিবার করেনি- করবেও না কোন দিন। কিন্তু আমার মতো যারা সাধারণ নেতা, চেষ্টা করি কিছুটা সৎ জীবন-যাপন করতে- তাদের অবস্থাটা কি হবে? সাধারণ মানুষ তো হাচিনাকে সামনে পাবে না- মাইরগুলো তো তখন হজম করতে হবে আমাকে, আমার মতো সাধারণ নেতা-কর্মীদের। আমরা কোথায় যাবো?’
 
কিন্তু আমি বলি অন্য কথা!
হাচিনা পরিবার বিদেশী বলে- এতো এতো অন্যায় করে, দেশের মানুষের সব টাকা লুট করে- দেশটাকে সর্বশান্ত করে দিয়ে পালিয়ে যাবে?
 
পাওনা হিসাবগুলি কি মিটিয়ে যাবে না এই পরিবারটি?
   Send article as PDF