স্বাধীনতার কথা

৭ই মার্চ শেখ মুজিবের ’আলোচিত’ ভাষনের পর থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত পূর্ব পাকিস্তান শেখ মুজিবের কথায় ও আওয়ামী লীগের নির্দেশনায় চলতে থাকে। পাকিস্তান প্রশাসন মুলত স্থবির হয়ে পরে।

এবং ৭ই মার্চ থেকে ২৫শে মার্চ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা প্রবল উৎসাহ নিয়ে পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত ‘অবাঙালী’দের উপর অকথ্য নির্যাতন চালাতে থাকে।

এই মাত্র ১৮ দিনে প্রায় ৩০ হাজার অবাঙালীকে নির্মম নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী বাহিনী। ভয়ে, জীবন বাঁচাতে, সবকিছু ফেলে প্রতিদিন বেশ কয়েকটি ফ্লাইটে করে পূর্ব পাকিস্তান ছাড়তে থাকে সামর্থ্যবান অবাঙালীরা।

২৫শে মার্চের ‘অপারেশন সার্চলাইট’-টি ছিলো মুলত এই নির্মম হত্যাকান্ডকে থামানোর জন্য। কিন্তু মাথামোটা ইয়াহিয়া খান আওয়ামীদের শায়েস্তা না করে রাতের আধারে নিরস্ত্র বাঙালীদের উপর আক্রমন শুরু করে; চালায় নারকীয় গণহত্যা।

শেখ মুজিব স্বাধীনতার কোন দিকনির্দেশনা না দিয়ে স্বেচ্ছায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে আত্মসমর্পন করেন; তাকে আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়। গোপন চুক্তিমতে শেখ মুজিবকে পাক সেনাদের পক্ষে নিশ্চয়তা দেয়া হয় যে, তার বন্দ্বীকালীন সময়ে ঢাকায় তার পরিবারকে মাসিক ১৫০০ রুপি করে ভাতা দেয়া হবে।

পাকিস্তানী সেনাদের আক্রমনে পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ যখন নেতৃত্বশূন্য অবস্থায় বিভ্রান্ত ঠিক তখনই মেজর জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে বাঙালী সেনারা বিদ্রোহ করে বসে এবং চট্রগ্রামস্থ কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে মেজর জিয়া বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষনা দেন।

বাংলাদেশের জন্মটা হয়েছিলো সময়ের প্রয়োজনে – প্রধানত ভারতীয় চক্রান্তে, কিছুটা পশ্চিম পাকিস্তানীদের বোকামী ও উগ্রতায়, কিছুটা শেখ মুজিব – জুলফিকার আলী ভু্ট্টো, ইয়াহিয়া খানদের ত্রিমুখী লাগাতার ক্ষমতার লড়াই এবং বাকীটুকু এই দেশের বিদ্রোহী সেনা ও মুক্তিযোদ্ধাদের সশস্ত্র যুদ্ধে বিজয়ের মাধ্যমে।

আদতে বাংলাদেশের জন্মটা ১৯৪৭ সালেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিলো; ১৯৭১ সালটা ছিলো শুধুই বাদবাকী আনুষ্ঠানিকতা। পাকিস্তানী নেতারা আরেকটু ‍বুদ্ধিসম্পন্ন হলে, আরেকটু সুসভ্য হলে ৯ মাসের একটি রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ এবং ৬০ থেকে ৭০ হাজার শহীদের জীবন দানের বিপরীতে সুন্দরভাবে বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারতো।

শেষ কথা হচ্ছে, ১৯৪৭ সালে যদি ‘পূর্ব পাকিস্তান’ সৃস্টি না হতো তাহলে কোন কালেই বাংলাদেশ গঠিত হতে পারতো না; ভারতীয় নেতারা তৃতীয় কোন স্বাধীন দেশ সৃস্টির সবরকমের চেস্টাই ১৯৪৭ সালে ব্যর্থ করে দিয়েছিলো। আমাদের সৌভাগ্য যে, আমরা ১৯৪৭ সালে পাকিস্তানে সংযুক্তির পক্ষে ছিলাম। না হলে, আজ আমাদেরও কাশ্মীর বা হায়দ্রাবাদের মতো অবস্থায় পরতে হতো অথবা আসাম-বিহার-ইউপি বা উত্তর ভারতের মুসলিমদের মতোই সংখ্যালঘু মুসলিম হয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করে যেতে হতো। শেখ মুজিব আরও কয়েক হাজার বার জন্ম নিলেও বাংলাদেশ সৃস্টি হতে পারতো না। ভারত তা হতে দিতো না।

এনিওয়ে, বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের উচিৎ বাংলাদেশের জন্য দু’টি স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করা। একটি ১৪ই আগষ্ট এবং অপরটি ২৬শে মার্চ।

১৪ই আগস্ট না হলে ২৬শে মার্চও আসতে পারতো না; ১৯৪৭ এর মধ্যেই ১৯৭১ লুকিয়ে ছিলো।

ইতিহাসকে সম্মান জানাতে শিখতে হয়।

পরিচ্ছন্ন ও সুন্দর ইতিহাস না থাকলে ভবিষ্যত কখনও উজ্জ্বল হয় না; হতে পারে না।

   Send article as PDF