ট্রেসপাস

ট্রেসপাস (trespass) শব্দটির বাঙলা আমি ঠিকভাবে জানিনা।
তবে যত্তটুকু বুঝা যায় তার অর্থ হলো অনুমতি না নিয়ে অন্যের সীমানায় ঢুকে পরা।
ট্রেসপাস আমেরিকায় একটি কঠিন আইন। স্বয়ং পুলিশও কখনো কোন নাগরিকের সীমানায় ট্রেসপাস করার সাহস রাখে না।
বাংলাদেশে কোন ভালো আইন বা তার কোন বাস্তবায়ন নেই। ক্ষমতাসীনের কথাই সেদেশে আইন। সেদেশে ৪৬ বছর আগে কে কাকে ধর্ষন করেছে সেটা প্রমাণ করে ৭০ বছরের বৃদ্ধকে ফাসিতে ঝোলানো হয়। কিন্তু গত সপ্তাহের একটি মেয়েকে ধর্ষন করে হত্যা করার পরও, ধর্ষনকারীকে চিহ্নত করা সম্ভব হয় না।
আর ওই দেশের অতি দেশপ্রেমিক এবং অতি ভদ্র পাবলিক সেই বা অন্য কোন ধর্ষিতার নগ্ন ছবি ফেসবুকে শেয়ার করে কৃত্রিম দুঃক্ষ প্রকাশের আনন্দে নিজেকে নিয়োগ করে। সেই দেশের একজন সংসদ সদস্য ছোট্ট এক শিশুকে নিজ পিস্তল দিয়ে গুলি করে হাতের নিশানা পরীক্ষা করে। মানুষ ২দিন চিল্লায়, তারপর সব ভুলে যায়। বাংলাদশের গড়ে প্রতিদিন এরকম ১৪টি খুন প্রায় সমপরিমান রেপ হয়ে চলছে। যার কথা মানুষ ভুলে যায়। রাজন দের জায়গায় শুধু তনুদের নাম পরিবর্তিত হয়।
এনিওয়ে। আনন্দ করে করুক বা দুঃক্ষ করে করুক, আমার কিছু যায় আসে না। আমি ওসব আনন্দ বা কষ্ট শেয়ার করতে ভালওবাসি না। আমি বিক্ষিপ্ত কোন কাজে নিজেকে নিয়োগ করি না, কখনও।
এবার মূল প্রসংগে ফিরি।
আমার ফেসবুকের টাইমলাইনে কেউ কোন কিছু ট্যাগ করলে আমি প্রথম ট্যাগকারীকে আনফ্রেন্ড করি, তারপর নোটিফিকেশন অফ করি এবং শেষে ট্যাগটি হাইড করে দিই। এটা আমার পুরোনো অভ্যাস। কারো অনুমতি ছাড়া কোনকিছু ট্যাগ করাটাও ট্রেসপাসের মধ্যেই পরে বলে আমার মনে হয়।
আজ জনৈক কুদ্দুস (আমার ফ্রেন্ডলিষ্টে কুদ্দুস ভাইদের কাছে ক্ষমা চাচ্ছি) আমার টাইমলাইনে কিসব যেন ট্যাগ করেছে।
ও মনে পরেছে- সে ধর্ষিত মেয়ের একটা ছবি দিয়ে ধর্ষনের বিচার চেয়েছে।
– আমি কি মনে করে যেন তাকে আনফ্রেন্ড করার আগে ইনবক্সে সতর্ক করে বললাম প্লিজ নেক্টটে আর কোন কিছু আমার টাইমলাইনে ট্যাগ করবেন না। করলে আমি আপনাকে অানফ্রেন্ড করতে বাধ্য হবো।
ভদ্রলোক আমাকে এক বিশাল লেকচার দিলেন। তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন বিচারের জন্য এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছে এই ধর্ষন ও হত্যার।
আমি তো অবাক! ভাইরে আপনি আপনার ওয়ালে যা খুশী করুন, প্রতিবাদ করুন, বিচার করুন বা চাইলে নিজেও একটা খুন করে আসুন; আমার এখানে কেন?
– আচ্ছা আমি কি বিচারক যে বিচার করবো?
– আমি কি ধর্ষক যে ধর্ষন করা বন্ধ করে দেব?
– আমার ফেসবুক ফ্রেন্ডলিষ্টের তালিকার কাউকেও আমার ধর্ষক মনে হয়নি যে তাদের সতর্ক করা উচিৎ- ‘ভাই ধর্ষন কইরেন না, বা ধর্ষন করেন কইরেন খুনটা কইরেন না’!
যতসব বিরক্তিকর উৎভট অসুস্থ্য লোকজন। আনফ্রেন্ড করে দিলাম।
মেজাজ ঠান্ডা করার জন্য একটা কৌতুক বলি, কি বলেন?
দেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই বোমাবাজী, চাঁদাবাজী, ধর্ষন, খুন হয়েই চলছে। কিন্তু পুলিশ নিজেরাই চাঁদাবাজী আর মাস্তানী নিয়ে ব্যস্ত। কাউকে ধরতেও পারছে না।
অবস্থা যখন খুবই খারাপ, প্রধানমন্ত্রী আইজি কে ডেকে নিয়ে কড়া নির্দেশ দিলেন- আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে যদি আপনি এসব অপরাধীদের ধরতে না পারেন তাহলে আপনাকে সরে যেতে হবে।
আইজির তো মাথা খারাপ হবার অবস্থা। এতো মজার চাকুরী চলে যাবে!
তিনি তার পুরো পুলিশ বাহিনীকে নির্দেশ দিলেন যে কোন ভাবেই হোক না কেন- চাদাবাজী বা বোমাবাজী অথবা ধর্ষককে আটক করতেই হবে।
অবশেষে একজনকে বোমাবাজির অভিযোগে আটক করা হলো।
ভদ্রলোক পুলিশকে প্রশ্ন করলো, ভাই আমার কি অপরাধ যে আমাকে এ্যারেষ্ট করলেন?
পুলিশ বলল, তোমার বাসায় সেভেনআপ এর বোতল, কিছু তার এবং দিয়াশলাই পাওয়া গেছে। এজন্য তোমাকে আটক রা হয়েছে।
ভদ্রলোক তো অবাক। এসব তো পাওয়া যেতেই পারে। সবার বাসাতেই পাওয়া যাবে।
পুলিশও নাছোরবান্দা। ‘কিন্তু তোমার বিরুদ্ধে অভিযোগ- তুমি এসব দিয়ে বোমা বানাতে পারবে এবং এজন্য তোমাকে বোমাবাজীর সন্দেহে আটক করা হয়েছে এবং আদালতের মাধ্যমে তোমার বিচার করা হবে’।
ভদ্রলোক ভেবে চিন্তে বললেন, সেক্ষেত্রে তো আপনি আমাকে ধর্ষনের অপরাধেও আটক করতে পারতেন?
পুলিশের পাল্টা প্রশ্ন? কিভাবে?
– যেই অস্ত্রটি দিয়ে ধর্ষন করা যায় সেটাও তো আমার কাছেই রয়েছে। তাই না?
   Send article as PDF