বঙ্গবীর কাদের

প্রায়ই ভাবি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে কিছু কথা বলবো। বলা আর হয়ে উঠে না। আজ ট্রাই করে দেখি- কিছু হয় কি না!
 
১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে জেনারেল এরশাদের মৃত্যুর দিন কয়েক পরই ভারতবর্ষে স্বেচ্ছা নির্বাসন কাটিয়ে বাংলাদেশে ফিরে আসেন ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী’ নামের জনৈক বাঘা সিদ্দিকী। ইত্তেফাক পত্রিকায় কাদের সিদ্দীকির দেশে ফিরা নিয়ে বেশ উচ্ছাস লক্ষ্য করি এবং আমি ভাবতে থাকি কে এই ভদ্রলোক! এতোদিন কোথায়ই বা ছিলেন? কেনই বা ছিলেন?
 
তখন তো সবে মাত্র আমি মেট্রিক পাশ করে ইন্টারমিডিয়েট ষ্টুডেন্ট।
হাসিনা-খালেদা’র প্রতি আমার কোন আস্থা ছিল না ওবয়সেও, তাদের আমি যোগ্য মনে করতাম না- অন্তত এরশাদের চেয়ে! ছাত্র রাজনীতিতেও এই একই কারণেও কোন আগ্রহই পেতাম না।
 
তারপরও, শুধুই ব্যক্তিগত কৌতুহল থেকেই বাংলাদেশের রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের সম্পর্কে জানার চেষ্টা ছিল অনেক বেশী। আমার কৌতুহলের কারণটাও বলি।
যেমন বিএনপি।
 
আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করতাম, বাংলাদেশের কমবেশী ৪০% বিএনপি কর্মীই বিএনপি’র প্রকৃত মানেটাই জানে না। তাদের জিজ্ঞেস করলে বলে ‘বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টি’- আর আমি হাসি। জেনারেল জিয়া ঠিক কি কারণে ইংলিশে দলের নামটা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন- আমি আজও বুঝি না।
থাক না জানুক।
 
সেদিন ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম, শেখ মুজিবুর রহমানের ‘আদর্শ’ সম্পর্কে জানতে চেয়ে। কেউ কিছুই বলতে পারেনি। কেউ যখন জানেই না শেখ মুজিবের চরিত্রের ঠিক কোন কোন গুনাবলির জন্য তারা মুজিবকে এতোটা ভালবাসে- তাহলে তারা কেন আওয়ামী লীগ করে- সেটাও জানি না।
শুধুমাত্র একজন ভদ্রলোক (Abm Moniruzzaman এর বন্ধু Mahbub Alam) আমাকে জানিয়েছেন- ‘শেখ মুজিব কথায় কথায় ইনশাল্লাহ বলতেন; সুতরাং তিনি ইমানদার’। তিনি আমার পাল্টা প্রশ্নের উত্তর আর দিতে পারেননি।
 
সেই ভদ্রলোককে বলছি।
আচ্ছা ধরুণ, আমি বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনেই নিলাম শেখ মুজিব ঈমানদার।
 
এবার আমাকে বলুন তো- ‘তিনি’ ঠিক কার উপর ঈমান এনেছিলেন? আল্লাহর উপর; তাই তো।
আচ্ছা, এটাও মানলাম। কিন্তু শেখ মুজিব যেহেতু নিজেকে পয়গম্বর ঘোষনা দেন নাই- সেহুতে এটা পরিষ্কার যে- তিনি ‘অন্য কারো’ উপর নির্ভর করে মহান আল্লাহর উপর ঈমান এনেছিলেন।
এবং আমি ধরে নিলাম, একজন ‘কথিত মুসলিম’ হিসাবে হলেও শেখ মুজিব আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ (সা.) এর উপর নির্ভর করে মহান আল্লাহর উপর ঈমান এনে ছিলেন।
আমি তো কোন ভুল করলাম না; তাই তো?
যদি ভুল না-ই করে থাকে, তাহলে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন।
 
শেখ মুজিব নবী মুহাম্মদ (সা.) এর উপর নির্ভর করেছিলেন।
তাহলে, আমাদের ঈমান আনার জন্য সরাসরি মুহাম্মদ (সা.) এর উপর নির্ভর না করে- শেখ মুজিবের উপর নির্ভর করার আদৌ কোন প্রয়োজন রয়েছে কি?
না, নাই।
 
আমি নিজেই সরাসরি এই পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ট আদর্শ মুহাম্মদ (সা.) এর উপর আস্থা রাখতে পারি; মাঝখানে কোন মিডিয়া ম্যানের প্রয়োজন ছাড়াই।
তাহলে এবার বলুন, শেখ মুজিবকে আমার কেন দরকার? শেখ মুজিব ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ এ দেশ থেকে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারই প্রথমে লুন্ঠন করে ফেললেন- যে মানবাধিকার ও গণতন্তের জন্য বাংলাদেশের দামাল ছেলেরা পাকিস্তানের সংগে যুদ্ধ করেছে। এই লোকের প্রতি আমার তো কোন ভালবাসা আসেই না! জোর করেও আনতে পারি না!
 
শেখ মুজিবকে আমার কোন দরকার নেই। আমি যুক্তির বাইরে একচুলও নড়ি না।
এবং, সুতরাং, আপনার সংগে এবিষয়টি নিয়ে কথা বলা মনে আমার মূল্যবান সময় নষ্ট করা। আপনি বিদেয় হোন।
 
আরও কিছু প্রশ্ন আমার মাথায় প্রায়ই ঘুরঘুর করে। একটু শেয়ার করি।
২০০ বছর ভারতবর্ষকে শাসন করে বৃটিশরা ‘হিন্দু-মুসলিম’ ভিত্তিতে ভারতবর্ষকে দুই টুকরা করে দিয়ে চলে গেল; যার একটি ভারত এবং অপরটি পাকিস্তান।
পাকিস্তান রাষ্ট্রটির পশ্চিম অংশের নেতারা পূর্ব অংশকে শাসন করেছে, কোন অধিকার দেয়নি, আরও অনেক অনেক অন্যায় করেছে। এজন্য আমরা ১৯৭১ সালে পূর্ব পাকিস্তানকে স্বাধীন করে বাংলাদেশ বানিয়েছি। এই পর্যন্ত ঠিক আছে।
 
পাকিস্তান প্রথম যে ভুলটা করে- সেটা হলো উর্দূকে পূর্ব পাকিস্তানের উপর চাপিয়ে দেয়া।
এখানে একটা তথ্য দিই। আমার বেশ কিছু পাকিস্তানী ফ্রেন্ড রয়েছেন। তাদের কাছ থেকে আমি অনেক কিছু জানতে পারি যা পরবর্তীতে আবার গুগলের সহায়তায় যাচাই করার সুযোগ থাকে।
 
উর্দূ একটি চমৎকার আবেগী ও হাস্যকর ভাষা।
আপনি কি জানেন খোদ পশ্চিম পাকিস্তানের কত শতাংশ মানুষের মাতৃভাষা উর্দূ?
উত্তরটা শুনলে হাসবেন।
 
মাত্র ৬% লোকের মাতৃভাষা হলো উর্দূ; ইয়েস জাষ্ট ওয়ানলী সিক্স পার্সেন্ট। আর ঐ দেশের গাধারা এই ৬% লোকের মাতৃভাষাকে সমগ্র পাকিস্তানে ছড়িয়ে দিতে কতটাই না পরিশ্রম করেছে, কত মানুষই না মেরেছে। আসল ঘটনাটা হলো- পশ্চিম পাকিস্তানীরা ভারতকে তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবে। ভারতের প্রধান ভাষা যেহেতু হিন্দি; সুতরাং তারাও ভাবলো হিন্দিকে প্রতিদ্বন্দ্বীতায় হারাতে হলে একটা একক ভাষা লাগবে এবং সেটা উর্দূ। আর কোন কারণই নেই। ১৯৫২তে পূর্ব বাংলার বাঙালীরা সেটা আটকে দিল। ওটা ছিল মোটা চামড়ার পাকিস্তানীদের মাতলামী। তাদের মাতলামীর জোড়ে ৬% মানুষের ভাষা উর্দূ এখনও ১০০% পাকিস্তানীর রাষ্ট্র ভাষা! তবে, পাকিস্তানীরা কিন্তু তাদের যার যার মাতৃভাষায়ই কথা বলে- শুধুমাত্র অন্য প্রদেশে গেলে বা অন্য প্রদেশের লোকের (ভিন্ন ভাষা-ভাষী) সংগেই ইংলিশ বা উর্দূতে কথা বলে। তারা সকলেই নিজের মাতৃভাষার পাশাপাশি বাধ্যতামূলকভাবে উর্দূ ও ইংলিশ শিখে।
 
আরোও কিছু আলোচনা করবো, তবে তার আগে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করতে চাই।
১) মুহাম্মদ আলী বগুড়া (3rd Prime Minister of Pakistan; 17 April 1953 – 12 August 1955) কোন প্রদেশের নাগরিক ছিলেন? পূর্ব পাকিস্তান না পশ্চিম পাকিস্তান? তিনি কিভাবে অখন্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন?
২) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (5th Prime Minister of Pakistan; 12 September 1956 – 17 October 1957) কোন প্রদেশের নাগরিক ছিলেন? পূর্ব পাকিস্তান না পশ্চিম পাকিস্তান? তিনি কিভাবে অখন্ড পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন?
৩) হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (Prime Minister of Bengal; 3 July 1946 – 14 August 1947) যিনি পশ্চিম বংগের মেদেনীপুর জেলার অধিবাসী এবং অখন্ড বাংলা’র প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। কিভাবে?
৪) আবুল কাশেম ফজলুল হক (কোলকাতা পৌরসভার মেয়র 1935-1936) বা একে ফজলুল হক সাহেব কিভাবে কোলকাতা সিটির মেয়র হলেন? কিসের যোগ্যতায়?
বৃটিশ সরকার বা পাকিস্তান সরকার কি ওনাদের কোলে করে তুলে নিয়ে এসব পদে বসিয়েছিলেন না কি ওনারা নিজেদের যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখে ঐ পদগুলিতে পদার্পণ করেছিলেন?
 
যারা আমাদের শিখেয়েছে পাকিস্তানীরা আমাদের নেতা হতে দেয়নি; তাদের কাছে জানতে চাচ্ছি এরা কিভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন এই বাংলাদেশ ভুখন্ডে জন্ম নিয়েও?
 
থাক, ওসব পুরোনো কথা। কাদের সিদ্দিকীর কথায় ফিরি।
আসলে অামার এই প্রশ্নটা কাদের সিদ্দিকীকে।
 
কাদের সিদ্দিকীর লেখা একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম সম্ভবত (আমার স্মৃতিশক্তি যদি প্রতারণা না করে থাকে) ‘আমাদের সময়’ পত্রিকায়। সেখানে ওনি পাকিস্তান ভেংগে বাংলাদেশ হওয়াতে কি কি সুবিধা হয়েছে- সেই প্রসংগে কিছু কথা তুলেছিলেন।
 
তার মধ্যে সবচে গুরুত্বপূর্ণ কথাটা ছিল, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে বলেই ‘তার’ মতো কাদের সিদ্দীকিও সংসদ সদস্য হতে পেরেছে। অখন্ড ভারতবর্ষ বা পাকিস্তানে বাংলাদেশ থাকলে সে এবং তার মতো অনেকেই নেতা হতে পারতো না। তার দৃষ্টিতে এটা নাকি একটা বিশাল অর্জন!
 
মজার বিষয়টা হলো, বাংলাদেশে এরকম কাদের সিদ্দিকীর এখন আর কোন অভাব নেই।
একটা প্রবাদ রয়েছে ‘যে বনে বাঘ নেই- সে বনে শেয়াল ই রাজা’।
মি. কাদের সিদ্দিকী, আপনি কিন্তু এখন শেয়াল হয়ে গিয়েছেন; নিজ অযোগ্যতায় বাঘের তকমা খুইয়েছেন। যুদ্ধের মাঠে দক্ষতার সংগে বন্দুক ফুটানো আর দেশকে নেতৃত্ব দেয়াটাকে গুলিয়ে ফেললে ভুল করবেন।
 
আপনি ২০১৪ এর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেন নি।
কিন্তু তারপর আবার এই একই সরকারের অধীনে উপ-নির্বাচনে অংশগ্রহন করার আপনার প্রানন্তকর চেষ্টা কিন্তু ‘প্রশ্নবোধক’ হয়ে দাড়ায়!
 
প্রণব বাবুর চাপে আছেন মনে হয়?
থাক, আপনাকে নিয়ে আমি কিছু না বললাম। আমার বন্ধু কামরুল ভাই (Qamrul Islam) আপনার সম্মানে কিছু কথা বলেছেন- তা-ই হুবুহু তুলে দিলাম:
‘খালেদা জিয়ার কাছে আপনি কেনো গেছেন, সেটা কিন্তু দেশের মানুষ জানে- আপনাকে পাঠিয়েছে প্রণব বাবু। বিপদ বুঝে প্রণব দাদার সাহায্য চায় হাসিনা, আর সেই প্রণব বাবুই পাঠায় আপনাকে গুলাশানে। এদেশে দিল্লির খাস দুইটা লোক থাকলে, একটা হলেন আপনি। আপনাকে বহুভাবেই দেখেছে মানুষ- বছর চারেক আগে হাসিনার প্যাদানি খেয়ে যখন আপনাকে কোনো মিডিয়া যায়গা দেয় না, তখন জামায়াতের চ্যানেল দিগন্তের ছায়াতলে গিয়ে আশ্রয় নিলেন, নিজেকে প্রকাশ করলেন দিগন্ত, নয়া দিগন্ত আর আমার দেশে; আমিরুল মোমেমিন মানিকের কাছে ইসলামী কথাবার্তা শিখলেন। আর এখন বলছেন, জামায়াতের সাথে বেহেশতেও যাবেন না! বুঝলেন মিস্টার সিদ্দিকী, আগে মোনাফেকি ছাড়েন, তারপরে বেহেশতের কথা কল্পনা করবেন।’
 
আমি শুধু একটা কথাই বলবো, আমরা ‘বাঘ’ চাই। আপনার মতো শেয়াল তো অনেক দেখছি; দেখতে দেখতে আজ বাংলাদেশ একটা ডাষ্টবিনে পরিণত হয়েছে।
 
শেয়াল আর দেখতে চাই না গো!
আমরা সত্যিই ক্লান্ত।
 
(দুঃক্ষিত; জেনারেল এরশাদের ‘মৃত্যুর’ ওখানে ‘পতনের’ পড়তে হবে)
   Send article as PDF