বাড়ী কেনা

আমার একজন ক্লাইন্ট মালয়েশিয়ার কুয়ালা লামপুর শহরে একটা বাড়ী ক্রয় করবেন বলে মনস্থির করেন এবং আমাকে রিকোয়েষ্ট করেন ওনাকে যেন আমি একটা লাকজারিয়াস বাড়ী ক্রয় করে দিই। ঐ সময়টাতে আমি বলতে গেলে প্রতি মাসেই ২ থেকে ৩ বার কুয়ালা লামপুর যাতায়াত করতাম আমার নিজস্ব একটা ব্যবসায়িক প্রয়োজনে।

ভদ্রলোককে সাহায্য করবো বলে সিদ্ধান্ত নিলাম। এতে আমি নিজেও কিছু ধারণা পাবো এবং সবচে বড় কথা নিজস্ব অভিজ্ঞতার ভান্ডার আরেকটু সমৃদ্ধ হবে- এই আশায়।

বেশ কয়েকটা বাড়ীই পেলাম। সব দিক বিবেচনা করে এবং ভদ্রলোকের বাজেটানুযায়ী একটা অসাধারণ পরিবেশে আরও বেশী অসাধারণ বাড়ী পেয়েও গেলাম। বাড়ীটি পাহাড়ী এলাকায় মূল কুয়ালা লামপুর সিটি থেকে ২০ মিনিটের ড্রাইভ। পাহাড়ের গাঁ ঘেসে ৩ তলা অত্যাধুনিক বাড়ী। নিজস্ব ভাসমান সুইমিং পুল, টেনিস কোর্ট, ফুল ফার্নিসড, ওডেন ফ্লোর, এয়ারকন্ডিশন্ড। মোট কথা চমৎকার একটি বাড়ী। ওই বাড়ী যে বসবাস করবে- নিঃসন্দেহে সে নিজেকে ‘রাজা’ ভাবতেই পারে।

অবশ্য ঐ ভদ্রলোক শেষ মেশ আর সেই বাড়ীটি ক্রয় করতে পারেন নি। আমার নিজের অত টাকা থাকলে- আমি কিনে ফেলতাম।

১১ কাঠার উপর নির্মির্ত বাড়ীটির মূল্য বাংলাদেশী টাকায় মাত্র ৩২ কোটি টাকা।

আচ্ছা! বর্তমানে ঢাকার ধানমন্ডি অথবা গুলশান কিংম্বা বারধিারায় এইরকম একটা প্রাইভেট হাউজের মূল্য কত হবে? আমি যদ্দুর জানি ১০ কাঠা জায়গার মূল্যই হবে ৮০ থেকে ৯০ কোটি টাকা বা তারও বেশী। এসব এলাকায় একটি ২০০০ স্কোয়ার ফিটের এপার্টমেন্টের মূল্যই এখন দুই থেকে তিন কোটি টাকা।

স্যাংহাই কে বলা হয় দ্বিতীয় নিউ ইয়র্ক। পুডং এয়ারপোর্টের পাশে পুডং এলাকাটি অত্যন্ত অভিজাত এলাকা। সেখানে ১৫০০ স্কোয়ার ফিটের একটি এপার্টমেন্টের মূল্য বাংলাদেশী টাকা ম্যাক্সিমাম এক থেকে দেড় কোটি টাকা।

এবার নিউ ইয়র্কের কথা বলি।
আমেরিকার সবচে দামী এলাকাগুলির মধ্যে রয়েছে সান ফ্রান্সসিসকো, নিউ ইয়র্ক সিটি, লস এঞ্জেলেস এবং ওয়াশিংটন ডিসি। যা ই হোক, আমার জানা মতে ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রান্সসিসকো শহরের বাড়ী ঘরের মূল্য সম্ভবত পৃথিবীর মধ্যে সবচে বেশী। সেখানে বাসা ভাড়াও অনেক। নিউ ইয়র্ক নিজেও অত্যন্ত এক্সপেনসিভ শহর। ঢাকার ১৫০০ স্কোয়ার ফিটের যে বাসাটির ভাড়া ৪০,০০০ টাকা। ঠিক সেই একই সাইজের একটি বাসা’র নিউ ইয়র্কে সিটিতে ভাড়া হবে মিনিমাম ৩০০০ ডলার।

কিন্তু মজার বিষয়টি হলো, এই নিউ ইয়র্ক সিটির ‘টু-ফ্যামেলি’ মানে মোটামুটি ৭/৮ কাঠার উপর বেজমেন্টসহ দ্বিতল একটি কাঠের বাড়ীর মূল্য ৫০০ হাজার থেকে ৮০০ হাজার ডলারের মধ্যেই। বাংলাদেশী টাকায় যেটা মাত্র ৪ কোটি টাকা থেকে ৬ কোটি টাকার মতো। অবিশ্বাস্য! তাই না? এই হাফ মিলিয়ন ডলারের টু-ফ্যামেলি বাসাটি ভাড়া দিলে মোটামুটি মাসে ৪০০০ ডলার পাওয়া যায় অনায়াসেই।
আমি জানি, বাংলাদেশী মাথায় এসব হিসাব মিলবে না।

অন্য একটি হিসাব দিই।
নিউ ইয়র্ক থেকে ১ ঘন্টার ড্রাইভ দূরে (মোটামুটি ৫০ মাইল দূরত্বের মধ্যেই) নিউ জার্সীর কিছু শহরে ২০ থেকে ৩০ কাঠার উপর নির্মিত অত্যাধুনিক বাড়ী পাওয়া যায় মাত্র ৩০ হাজার ডলার এর মধ্যেই। কানাডা বর্ডারে নিউ ইয়র্কের ছোট শহর বাফেলো; কিছুদিন আগেও সেখানে ৫০০০ ডলারে পুরো বাড়ী পাওয়া যেত- যেটার মূল্য নাকি এখন বেড়ে গেছে- তবে সেটাও ১৫ হাজার ডলার থেকে ২০ হাজার ডলারের মধ্যেই।

কিনবেন নাকি একটা বাড়ী?

টেক্সাসের ডালাসে থাকাকালীন আমার মেইল বক্সে একদিন একটা মেইল পেলাম। বাড়ী বিক্রির অফার। মাত্র ৮০০ ডলার ডাওনপেমেন্ট দিলে রেডী বাড়ীর চাবি আজই বুঝিয়ে দেবে এবং যেটা এখনই বসবাসযোগ্য। ৫ বছরের কন্ট্রাক্টে মাসিক ৮০০ ডলার পেমেন্ট করতে হবে।

আরেকটি জায়গা বিক্রি হবে, সেটার বিজ্ঞাপনে বলা ছিল ২৫ একর জায়গা। ভেতরে নিজস্ব লেক এবং হরিণ বসবাস করে। সবই আপনার। আপনাকে এখন দিতে হবে ৪০০ ডলার। তারপর সেখানে যা খুশী করুন। বাড়ী ঘড় চাষাবাদ যা ইচ্ছে। ডালাস থেকে মাত্র ২০ মিনিটের ড্রাইভ। ৫ বছরের কন্ট্রাক্ট, মাসে দিতে হবে ২০০ ডলার করে।

আমেরিকা অনেক বড় একটা দেশ।
বাংলাদেশে ১৮ কোটি মানুষ বসবাস করে। কিলোমিটার প্রতি জনঘনত্ব প্রায় ১৪০০ জন। হংকং বাংলাদেশের চেয়ে ঘনজনবসতি পূর্ণ একটা দেশ। সেখানে প্রতি কিলোমিটারে বসবাস করে ১৫০০ জন মানুষ।

সারা পৃথিবীতে বর্তমানে মোট জনসংখ্যা হলো প্রায় ৭০০ কোটি।

আপনি কি জানেন- বর্তমান এই পৃথিবীর সব মানুষকে মানে এই ৭০০ কোটি মানুষকে যদি শুধুমাত্র আমেরিকায় নিয়ে আসা হয়- তাহলে আমেরিকার জনঘনত্ব হবে কিলোমিটার প্রতি ১৪০০ জন।

অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের মতো!

   Send article as PDF