পুলিশ কোন চ্যাটের বাল!

 
 
শুরুতেই ভাবছিলাম এই বাহিনীটিকে ‘তুই’ ছাড়া অন্য কিছু বলে সম্মোধন করার সুযোগ রয়েছে কিনা? কিন্তু নিজের পারিবারিক শিক্ষার বাধ্যবাধকতায় ‘তুই’ করে বলতে পারছি না; আপনি করে বলতে বাধ্য হচ্ছি। এদের যে ‘তুই’ করে বলতে পারছি না সেজন্য বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
 
বাংলাদেশে চলমান কিশোর-কিশোরী ছাত্র-ছাত্রীদের আন্দোলনটি প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পেত না- যদি না তারা শুরুতেই ‘পুলিশ কোন চ্যাটের বাল’ বলে শ্লোগানটি শুরু না করতো।
 
এই ‘পুলিশ কোন চ্যাটের বাল’ শীর্ষক হিউজ জনপ্রিয় শ্লোগানটি দেশকে প্রচন্ডভাবে নাড়া দিয়েছে।
 
দেশের ১৭ কোটি মানুষের ভেতরের না বলতে পারা কথাটা দেশের ১৭-আঠারো বছরের বাচ্চারা কি অবলিলায়ই না প্রকাশ্যে বলে দিয়েছে, বলে যাচ্ছে উচ্চস্বরে পুলিশের বন্দুকধারী রাক্ষসতুল্য অফিসারদের মুখের উপর।
 
অন্য কোন সময়ে হলে বা অন্য কোন বিষয়ে হলে ‘চ্যাটের বাল’ বলার জন্য এই বাচ্চাদের আমিই সর্বপ্রথম তিরস্কার করতাম, তাদের বেয়াদব, বেপরোয়া, উৎশৃঙ্খল বলে ধমক দিতাম, দেশটা উৎচ্ছন্নে গেছে বলে আর্টিক্যাল লিখতাম।
 
অথচ দেখুন দেশের ১৭ কোটি মানুষ একটা কুৎসিত গালিকে কিভাবে শ্রদ্ধার শব্দে পরিণত করে ফেলেছে!
 
এসব কচি কচি বাচ্চাদের দেশের প্রতিটি মানুষ তাদের দীক্ষাগুরু হিসাবে গ্রহন করেছে অবলীলায়, তাদের থেকে শিক্ষা গ্রহনে কেউ আপত্তি করছে না।
 
এদের একজনকে সামনে পেলে আমি নিজে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে স্যালুট জানাবো।
 
অথচ তারা দিনভর উচ্চারণ করে যাচ্ছে ‘চ্যাটের বাল’ এর মতো একটা বিশ্রীভাষার গালি!
 
এমনকি আপনি কি লক্ষ্য করেছেন যে এই ছেলে-মেয়েগুলি কিন্তু সাদাামাটা কোন দরিদ্র পরিবার থেকেও উঠে আসেনি। এরা অনর্গল ইংরেজীতে কথা বলছে, তাদের ভাষার উচ্চারণ, তাদের পোষাক, তাদের উন্নত আচরণ মানুষের মনে শ্রদ্ধা জাগায়!
 
চ্যাটের বালের মতো একটা বিষাক্ত গালিকে আজ তারা কোথায় তুলে দাঁড় করিয়েছে!
 
পুলিশ বাহিনী। প্রিয়ও বলতে পারছি না আপনাদের।
আপনি করে বলতে সত্যিই আমার খুবই মর্মপীড়া হচ্ছে।
‘তুই’ এর নীচে যদি কোন শব্দ থাকতো- সেটারও যোগ্য নন আপনারা। আপনারা কি জানেন- কেন আপনাদের প্রতি দেশের ১৭ কোটি মানুষের পাহাড় পরিমাণ ঘৃণা জমে রয়েছে?
 
অর্থ আর অবৈধ ক্ষমতার দম্ভে আপনারা সবকিছুই ভুলে গেছেন!
আপনারা চাকুরী করেন দেশের ১৭ কোটি মানুষের জন্য, ১৭ কোটি মানুষের নিরাপত্তা রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের। আর এজন্যই আপনাদের দেশের ১৭ কোটি মানুষ তাদের কষ্টের আয়ের টাকা থেকে আপনাদের বেতন দেয়। এটা কি জানেন আপনারা? নাহ, জানেন না।
 
এতটুকু জানার মতো পারিবারিক বা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা আপনারা পাননি, আপনাদের রক্ত কোন শিক্ষিত পরিবারের নমুনা বহন করে না।
 
অবশ্য আপনারা যে-হারে দেশের নিরীহ মানুষকে ঠকিয়ে, ঠেকিয়ে, অবৈধ ক্ষমতা আর বন্দুকের বাহাদুরীতে চাঁদাবাজি, ঘুষ আর বিপদে ফেলে টাকা আদায় করেন- সেই টাকার কাছে ঐ পাবলিকের দেয়া ‘সামান্য বেতন’ হাজার ভাগের এক ভাগও না! কাজেই আপনারা করদাতাদের পাত্তা দিবেনই বা কেন?
 
আপনাদের একটাই কাজ, আর সেটা হলো অবৈধ-ক্ষমতাধারী শেখ হাসিনাকে খুশী রেখে নিজেরা সদলবলে ডাকাতি-কর্ম চালিয়ে যাওয়া। অবৈধ টাকার পাহাড় বানানো।
 
এবং, এবং সেই অবৈধ, সেই হারাম টাকা দিয়ে বাজার করে, বাড়ী ঘর তৈরী করে, দামী দামী জামা-কাপড় ক্রয় করে নিজ স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকে নকল বেহেস্তী স্বাদ প্রদান করছেন!
 
কিন্তু আপনাদের ঘরেই যে ঐষী নামের কীট তৈরী হয়, আপনাদের অবৈধ টাকার হারাম খাবার ফলে যে বিকলাংগ সন্তান উৎপন্ন হচ্ছে- সেটাও টের পান না আপনারা!
 
আপনাদের ঐ এক জোড়া হাত দিয়ে যখন একজন নিরীহ মানুষের পকেটে ইয়াবা বা বন্দুক চালান করে দিয়ে আবার নিজেই ঐ নিরীহ ব্যক্তিটিকে ফাঁসিয়ে তার ও তার পরিবারটিকে ধ্বংশ করে দেন- নিজের সামান্য কয়েকটা পয়সার জন্য; তখন কি একটুও কষ্ট হয় না আপনাদের?
 
আচ্ছা, আপনারা কি জানেন যে- কুকুর কিন্তু কখনওই অন্য একটা কুকুরকে কামড়ে দেয় না! কিন্তু আপনারা মানুষ্যরূপি হয়েও অপর একটি ক্ষমতাহীন নিরীহ মানুষকে অবলীলায় কামড়ে দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত!
 
আপনারা যে কুকুরের চেয়েও অধম এবং এজন্যই যে আপনাদের ঘরে জন্ম নেয় ঐষীরা- বুঝেন?
 
আপনার হারাম টাকার উপার্যন খেয়ে, আপনি যখন ব্যস্ত থাকেন- তখন আপনার সুন্দরী স্ত্রীটি যে অন্য পুরুষের সংগে পরকীয়ায় ব্যস্ত থাকে- এই খবরটাও কি জানেন?
 
অন্যকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর বিনিময়ে আপনার সন্তানটি যে মাদকাসক্ত হয়ে উঠেছে- সেটা টের পাচ্ছেন তার হসপিটালে ভর্তি হবার ঠিক আগ মুর্হূতে! বুঝেন এসব?
 
এই যে আপনারা সরকারের বিরোধী মতের (আপনার বিরোধী নয় কিন্তু!) একজন মানুষকে, একটা পরিবারকে তার বাড়ী থেকে জোর করে তুলে নিয়ে (আইন অমান্য করে) গুম করে দিচ্ছেন, চোখ-মুখ বেঁধে ঠান্ডা মাথায় তাকে গুলি হত্যা করে প্রেসকে বলছেন ‘বন্দুক যুদ্ধ’এ মারা গেছে- একটু বিবেকে বাঁধে না তখন? একটুও না?
 
একজন অবৈধ ক্ষমতাধারী নষ্টা মহিলা, দেশের গণমানুষের অধিকার সামান্য ভোটের তোয়াক্কা না করে, জোর করে, অন্যায়ভাবে এবং শুধুই আপনাদের মতো কিছু পশুর পাহাড়ায় দেশ থেকে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ধ্বংশ করে দিয়ে ক্ষমতা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে; যার বিনিময়ে সবরকম অন্যায় করার অধিকার দিয়েছে আপনাদের; এবং সেই অন্যায় করে যাচ্ছেন দিনের পর দিন- একটুও কষ্ট হয় না আপনাদের?
 
কি করবেন অন্যায়ভাবে অর্জিত এতোএতো টাকা-পয়সা ব্যাংক ব্যালেন্স দিয়ে?
 
কবর হয়ে জাহান্নামে নিয়ে যাবেন সংগে করে সব টাকা?
আপনাদের একটা সন্তানও কি মানুষের মতো মানুষ হয়েছে এই অবৈধ হারামের টাকা খেয়ে- দেখাতে পারবেন?
 
নাহ!
পারবেন না আপনারা।
 
আর এজন্যই তো ঐ সেদিনের ছোট ছোট বাচ্চারা আজ রাস্তায় প্রকাশে লিখে দিচ্ছে ‘পুলিশ খানকির পোলা’- অর্থাৎ আপনাদের জন্মও ঠিক পথে হয়নি।
 
ওয়াক থু! একদলা থুথু আপনাকে, আপনার স্ত্রীকে, আপনার সন্তানদের মুখে। ওয়াক থু!
 
দেশের মানুষের টাকা-পয়সা চুরি করে বিদেশে পাচার করে স্ত্রী-পুত্র-কন্যাকেও বিদেশে পাচার করে দিচ্ছেন উন্নত জীবনের লোভে; অথচ এই টাকাটা দিয়ে দেশটাকেই বিদেশের চেয়ে আরও উন্নত করে ফেলা যেত অনায়াসে- তখন কিন্তু আপনি, আপনার সন্তানরাও বাকী দেশবাসীর সংগে সম্মিলিতভাবে একটা চমৎকার সুন্দর দেশে বসবাস করতে পারতো! একটি বারও কি ভেবে দেখেছেন?
 
আপনাদের মতো পুশুদের জন্য দেশটা আজ জাহন্নামে পরিণত হয়েছে। ছোট ছোট বাচ্চারা ট্রাফিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে এনেছে মাত্র দু’দিনে- আর আপনারা পারেননি, পারেন না। কি দায়িত্ব পালন করেন আপনারা?
 
শেষটায় একটাই কথা বলবো- ভালো হয়ে যান।
নইলে আপনাদের সেই দিনটি দেখতে হবে যখন দেশের কেউই আর আপনাদের ‘তুই’ ছাড়া কথা বলবে না।
 
আপনাদের ‘তুই’ করে বলার সময় অনেক আগেই হয়েছে।
 
যেই মানুষের অর্থে আজ পোষাক পরেন, পরিবারকে নিয়ে খাবার খান- তাদের সংগে বেঈমানী করার ফল কোনদিনও ভালো হবে না, হয়ও নি।
 
যদি রক্তে সামান্য পরিমাণও মনুষের রক্ত থেকে থাকে- দেশের গণমানুষের কাতারে এসে এই জালিম অবৈধ হাসিনা সরকার এবং তার পোষ্য পালিত কুকুর তুল্য পুলিশ বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করুন।
 
সেদিন মানুষ আপনাদের বুকে তুলে নিবে।
মানুষের ভালবাসা অনেক মুল্যবান।
 
আপনাদের ‘চ্যাটে বাল’ বলতে, আপনাদের ‘খানকির পোলা’ বলতে এসব পবিত্র বাচ্চা বাচ্চা ছেলে-মেয়েদের অনেক কষ্ট হয়।
 
সময় ও সুযোগ সবসময় পাবেন না, শুদ্ধ হয়ে ফিরে আসুন সৎ পথে। নইলে সত্যিই করুণ পরিণতি হবে আপনাদের- বন্দুকের গুলিও ফুরিয়ে যাবে সেদিন।
   Send article as PDF