কৃষ্ণকলি

আমি যে অসম্ভব ভালো একটা ছেলে এটা কিন্তু সবাই জানে।
কিন্তু আমি কতটা ভয়াবহ রকমের একটা বদমাইশ এটা শুধু আমিই জানি।
 
আমি কতটা ভালো- সেটা আগে বলি।
সবে এসএসসি পরীক্ষা দিলাম।
নামাজ কালাম নিয়ে পরে থাকি।
ভুলেও কোনদিন কোন মেয়ের দিকে তাকাই না।
 
তবে, আমি সবসময়ই স্বাধীন ও মুক্ত জীবন-যাপন করতে ভালবাসি।
আর, আমার স্বাধীনতা মানে আমি মুক্ত পাখি।
 
আমরা আকাশে ঘুড়ি উড়তে দেখি বা উড়াই।
আমি নিজেও ভালোই ঘুড়ি উড়াতাম।
আকাশে পাখিও কিন্তু উড়ে বেড়ায়।
 
তো, এই ঘুড়ি এবং পাখির মধ্যে বেসিক পার্থক্য টা কি জানেন?
 
খুবই সোজা।
ঘুড়ির একজন নিয়ন্ত্রক থাকে।
কিন্তু পাখির নিয়ন্ত্রক পাখি নিজেই।
 
আমার কোনদিন ঘুড়ি হতে ইচ্ছে করে না।
আমি পাখির মতো স্বাধীনভাবে উড়তে ভালোবাসি।
 
স্বাধীন। খোলা আকাশে উড়ে বেড়াই।
 
যাই হোক। পরীক্ষার পর অখন্ড অবসর।
আমার একটা ভয়ংকর বদমাইশ ফ্রেন্ড ছিল। ও শ্যামল।
 
অবসরে, তখন তো অখন্ড অবসর।
শ্যামলের সংগে বেশ আড্ডা দিতাম, ঘুরে বেড়াতাম।
 
শ্যামল আমাকে আপনি করে বলে।
আর আমি সরাসরি তুই। ও আমার বয়সে ছোট। পড়াশোনাও ছোট।
 
কোন এক বিকেলে হঠাৎই শ্যামল আমাকে বলল, ‘আপনার সম্পর্কে একটা কথা শুনলাম। ঘটনা কি সত্য?’ বলেই সে মিটি মিটি হাঁসছে। ওর হাসির মধ্যে ‘বাজে ইংগিত’ ছিল।
 
আমি বিভ্রান্ত হলাম।
প্রশ্ন করলাম, ‘এভাবে হাঁসার মানে কি? কি ঘটনা? বল, শুনি। সত্যি হলে তো স্বীকার করবোই।’
‘আপনার সংগে নাকি মুনের প্রেম চলছে?’
 
আমার মাথা গরম হয়ে গেল। কানও। মেজাজ ঠিক রাখলাম অনেক কষ্ট করে। মুন মেয়েটাকে আমি চিনি। এবং এই চেনা পর্যন্তই। বাট, আমার কদাচিৎ মনে হয়েছে মেয়েটার সংগে দেখা হলে সে আমার সংগে কথা বলতে চায় বা আমার দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকায়।
 
শ্রেফ এপর্যন্তই।
মুন সম্ভবত তখন ক্লাস নাইনে।
 
আর তারচেও বেশী বাস্তব সত্য হলো- ওসময় পর্যন্ত আমার ভেতরে মেয়েলী কোন চিন্তাই আসতো না। মেয়েদের সংগে যথেষ্ঠ দূরত্ব রেখে চলতেই আমি বেশী আনন্দ পেতাম, স্বাচ্ছন্দ বোধ করতাম; এবং মেয়েদের ভয়ংকর কোন প্রাণী ভাবতাম।
 
শ্যামলকে শক্ত করে ধরলাম। ওর এ কথার ব্যাখ্যা দিতেই হবে।
কেন সে আমাকে এতবড় একটা ‘অপবাদ’ দিল!
কৈফিয়াত আমার চাই-ই চাই।
 
অনেক ঠেলা খেয়ে শ্যামল বলল আমাদের মহল্লারই একটা মেয়ে, নাম শম্পা, আমি চিনিও মেয়েটাকে, বেশ কালো কিন্তু রূপবতী। শম্পাও ক্লাস নাইনে পড়ে এবং সে ঐ মুনের ক্লাসমেট কাম বান্ধবী।
 
তো, সেই মুন না কি শম্পাকে ‘শফিক ভাই’কে ভাল লাগার অনুভুতির কথা প্রকাশ করেছে। এবং সেই শম্পাই কথা প্রসংগে শ্যামলকে বলেছে আমার কথা, ‘শফিক ভাই তো ডুবে ডুবে পানি খায়। আসলে তার সংগে মুনের সম্পর্ক রয়েছে।’
 
মেজাজ গরম কেন হবে না।
মুনের সংগে আমার কোনদিনও কথাই হয়নি।
অথচ আমি না কি ডুবে ডুবে পানি খাই!
 
শম্পাকে কঠিন শিক্ষা দিতে হবে।
সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। ভাবছি কি শিক্ষা দিবো। কি এমন শিক্ষা দিলে ও আমার কথা সারা জীবন ভয় ও শ্রদ্ধার সংগে স্মরণে রাখবে!
 
দ্রুত চিন্তা করলাম এবং সিদ্ধান্তও নিয়ে নিলাম।
কালো মেয়ে শম্পার জন্য একটা নাম ঠিক করলাম। কৃষ্ণকলি।
 
হুমায়ূন আহমেদ এর ময়ূরাক্ষী উপন্যাসটা ছিল আমার কাছে।
ওটার ভেতরে সাদা পৃষ্ঠায় গুটি গুটি করে লিখলাম,
 
কৃষ্ণকলি
তুমি আমার আর আমি তোমার
এভাবে চিরটা কাল তোমার-আমার
তোমাকে আমি আমার হৃদয়ে তালাবদ্ধ করে রেখেছি
আর, চাবিগুচ্ছ সমুদ্রে ছুড়ে মেরেছি।
 
নীচে স্বাক্ষর দিলাম হাবিজাবি করে- যাতে তৃতীয় কেউ বুঝতে না পারে স্বাক্ষরকারীর পরিচয়। একটা জবাফুলের পাপড়ী ছিলে বই ভেতরে ঢুকিয়ে দিলাম।
 
আমি নিশ্চিত- কৃষ্ণকলি আমার প্রেমে এবার হাবুডুবু খাবে।
এটাই ওর জন্য সঠিক শাস্তি।
 
যা সিদ্ধান্ত তাই বাস্তবায়ন।
শ্যামলকে ডেকে আনলাম। ওর হাতে চমকার প্যাকেটে বইটা দিলাম। এবং বললাম তুই এটা শম্পাকে দিবি। শুধু আমার কথা বলবি যে এটা আমি দিয়েছি। এর বেশী কিছুই বলবি না।
 
ঘটনার পরের দিন।
দুপুরে শ্যামল আমাকে খুঁজছে। এবং আমাকে পেল সে গিয়ে খেলার মাঠে- মসজিদ থেকে নামাজ শেষ করে বের হয়ে মাঠে যাচ্ছিলাম।
 
হাফাতে হাফাতে খুব খুশী খুশী মনে দৌড়ে আমার কাছে এসে হাতে একটা চিঠি গুঁজে দিল। বলল, এটা শম্পা আপনাকে দিসে।
 
আমি চিঠি খুললাম।
যা ভেবেছি ঠিক তাই।
প্রেমের চিঠি। ভালবাসার চিঠি। পুরো একপাতা ভরে ভালবাসার আহবান। নীচে সুন্দর করে লাল লিপিষ্টিকের চুম্বন আঁকা। পুরো চিঠি পড়ে শুধু একটাই কথা- তার জীবনের সবচে আনন্দময় দিন কেটেছে গতকাল। এবং ইত্যাদি ইত্যাদি। সেই সংগে সে আমাকে পরবর্তী দিন সকালে তার স্কুলে যাবার পথে রাস্তায় আমার সংগে দেখা করতে ও কথা বলতে চায়।
 
ওর জন্য আগামীকাল রাস্তায় দাঁড়াবো কি না সেটা আমি যেন মুখে শ্যামলকে জানিয়ে দিই।
 
আমি শ্যামলকে জানিয়ে দিলাম।
‘অবশ্যই। ঠিক নয়টায় আমি শম্পার জন্য অপেক্ষা করবো।’
 
এবং পরদিন আমি ইচ্ছে করে ১০ পর্যন্ত ঘুমালাম।
এবং তারপরে ঐ কৃষ্ণকলির সংগে যেন আমার আর কোনদিনও দেখা-সাক্ষাৎ না হয় সেজন্য অত্যন্ত সচেস্ট থাকতাম।
 
সময়ে সবকিছুই স্বাভাবিক হয়ে যায়।
বছর সাতেক পর।
 
তখন আমি আরেকটু পাকনা হয়েছে।
একদিন সেই শম্পার সংগে রাস্তায় দেখা। আমার দিকে তাকিয়ে সে হাঁসছে।
লক্ষ্য করলাম আমার প্রতি তার মুগ্ধতা কাটেনি। বললে, ‘কেমন আছেন? আমার সংগে কথা বললে আপনার কিন্তু এমন কিছু ক্ষতি হবে না।’
আমি হেসে দিলাম। ‘ঠিক আছে- তোমার সংগে কথা বলবো। তোমাদের বাসায় যাবো।’
 
ওহ অাচ্ছা। আপনাদের তো বলিইনি যে, শম্পার বড় ও একমাত্র ভাই মাছুম আমার বন্ধু। তো, তার দিন কয়েক পরই একদিন মাছুমের সংগে দেখা, কোথায় যেন যাচ্ছে। মনে হলো ফিরতে বেশ সময় লাগবে। আমার সংগে কিছু কথা হলো।
 
আমি মাছুমের সংগে কথা শেষ করেই সোজা মাছুমদের বাড়ীতে গেলাম।
বাড়ীর সামনে গিয়ে একটু জোরে জোরে মাছুম কে ডাকতে লাগলাম। আমি তো জানিই যে মাছুম নেই, শম্পাই আসবে। এবং শম্পা এলো।
 
‘শোন। মাছুম যে বাড়ীতে নেই সেটা আমি জানি। এবং জেনেই মাছুমকে ডাকছি। তোমার সংগে কথা বলতে এসেছি।’
শম্পা হেসে দিল। ও কোন উত্তর দেবার আগেই আমি আরও যোগ করলাম, ‘আমি যে কতটা বদমাইশ সেটা কিন্তু তুমি জানো না’।
এবার শম্পা মিষ্টি করে জবাব দিল, ‘আমি জানি না?’ ওর সেই হাসির মধ্যে কিছু অভিমানও প্রকাশিত ছিল।
 
আমাকে ভেতরে নিয়ে বসালো। কেমন আছো, কেমন চলছে দিনকাল, পড়াশোনা ইত্যাদির নানা রকমের প্যাচাল দিয়ে ঘন্টা খানেক কাটালাম। মেয়েটার সংগে আমার বেশ ভালোই লাগলো।
 
এভাবে প্রায়-ই, না ঠিক প্রায়ই না, তিন থেকে চার দিন শম্পাদের বাড়ীতে গিয়েছি। ওর সংগে কথা বলেছি। শম্পা খুব চাইতো আমি যেন যাই।
 
একদিন ও ঘরের কাজ করছিল। ফ্লোর মুছতেছিল। মেয়েরা সাধারণত কিছু বিষয়ে অসতর্ক থাকে। এবং ঐ অসতর্ক মুহুর্তে পুরুষদৃষ্টিগুলি অনিচ্ছা (!) সত্বেও ‘একটু বেশী’ কিছু দেখে ফেলে বা ফেলতে পারে।
 
আমিও একটু হকচকিয়ে গেলাম।
বাট, খুব পুলকিত হলাম।
এবং একটু লজ্জাও পেলাম।
 
তারপর কি যে হলো- আর যেতাম না ওদের বাড়ীতে।
 
শম্পার তখন ডিগ্রী ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। আমি জানতামও না।
হঠাৎ একদিন আমি বসে ছিলাম অফিসে, কাজ একটু কম ছিল। আমার পিয়ন এসে বলল, ‘স্যার, শম্পা নামের একজন ম্যাডাম আপনার সংগে দেখা করতে চাচ্ছে- পাঠিয়ে দেব? ওনি বললেন আপনার নাকি পরিচিত।’
 
আমি বুঝে ফেললাম। এবং ভেতের পাঠাতে বললাম।
শম্পা একটা নীল শাড়ী পরেছে। মেয়েটা কালো। লাল টিপে বেশ মানিয়েছে।
 
আমি ওরদিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে। ‘ও হেসে দিল। বসতে বলবেন না?’
‘হ্যাঁ। বসো। বসো। কেমন আছো কৃষ্ণকলি?’
শম্পা একটু উচ্চস্বরে হেসে দিল। ‘প্লিজ কৃষ্ণকলি নামে আমাকে আর ডাকবেন না। আমি কস্ট পাই। সেই দিনগুলি কথা মনে পরে।’
‘তাতে কি? আজকের আমি তো সেই সেদিনেরই আমি- তাই না?’
‘কিন্তু আপনি তো আমাকে ভালবাসেন না। কিন্তু আমি সেদিন থেকে আজ অবধি আপনাকেই ভালোবাসি। এবং বাকী জীবনও বাসবো। নাহ্, এজন্য আমি কোন বিনিময় চাইবো না আপনার কাছে। আমি জানি আমি আপনার যোগ্য নই।’ শম্পা এ নিঃশ্বাসে কথাগুলি বলল। টিস্যু বের করে চোখ মুছলো শম্পা।
 
‘কি খাবে?’
‘কিছু না। আজ পরীক্ষা শেষ হলো। আপনার সংগে খুব কথা বলতে ইচ্ছে করছিল; তাই কোন কার্টিসি না করে সরাসরি চলে এসেছি। আপনার অফিস আমি অনেক আগে থেকেই চিনতাম। অনেকদিন ভেবেছি আসবো। কিন্তু অভিমান থেকে কোনদিন আসিনি। আজ আর না এসে পারলাম না। আর তো কলেজে আসা হবে না। তাই আপনার সংগে আজ কিছুক্ষন সময় কাটাবো।’
 
‘আমার সংগে লাঞ্চ করবে তো?’
‘আপনি যা বলবেন- সবই করবো’।
 
আমি জোরে জোরে হেসে উঠলাম।
শম্পা লজ্জা পেল। ‘আপনি রাগ করবেন না প্লিজ একটা পচা কথা বলবো।’
‘বলো। রাগ করবো না।’
‘আপনি একটা শয়তান। আপনি আমার সংগে এমন করেছেন কেন?’
‘আমি তোমাকে একটা শিক্ষা দেবার জন্য এমনটা করেছিলাম। তাছাড়া তখন তো আমি অনেক ছোট ছিলাম। তোমার উপর রাগ হয়েছিল- তাই; রাগের ক্ষোভ মিটিয়েছি।’
‘কিন্তু তাই বলে একটা মেয়েকে এভাবে কস্ট দিতে হবে? আপনি সত্যি অনেক বড় একটা শয়তান। কিন্তু কেউ তা বুঝতে পারে না।’
‘শুধু তোমার কাছে। তুমি শয়তান বলাতে আমার কোন রাগ হচ্ছে না। তবে আমি যে সত্যি সত্যি কতটা শয়তান- সেটা তুমি জানো না।’
‘আরও বেশী শয়তান?’
‘জ্বি হ্যাঁ। তোমার চিন্তার চাইতেও বেশী; অনেক গুন বেশী।’
‘কতটা? আমি শেষটা দেখতে চাই।’
‘ঠিক আছে খাবার আনতে বলি। এক সংগে খাই তারপর আস্তে আস্তে বলি না হয়? কি খাবে বলো?’
‘আপনার যা ইচ্ছে। তবে, ধন্যবাদ এখানে বসেই খাওয়াবেন বলে। রেষ্টুরেন্টে গিয়ে খেতে পারতাম না।’
 
শম্পার সংগে বসে একসংগে দুপুরের খাবার খাচ্ছি।
আমার প্লেটে এটা ওটা তুলে দিচ্ছে। বেশ ভাল লাগছিল শম্পার সান্নিধ্য।
 
আরও টুকিটাকি অনেক কথাই চলছে অসংলগ্নভাবে।
‘ওহ, কতটা শয়তান সেটা তো কিছুই দেখতে পেলাম না!’ শম্পা মিটিমিটি হাসছে।
‘আমি লজ্জা পাচ্ছি।’
‘ছেলেরা আবার লজ্জাও পায় না কি?’
‘কয়জন ছেলে সান্নিধ্য নিয়েছো- ছেলেদের সম্পর্কে এতকিছু জানো?’
শম্পা এবার বিব্রত হলো। ‘আমি জানি আপনার সংগে কথায় পারবো না, সরি।’ হেসে দিল ও।
 
‘আচ্ছা শোন। তোমাকে যাষ্ট একটা স্যাম্পল দেখাই যে আমি কতটা বদমাইশ।’
‘দেখান। আমি দেখতে চাই।’
‘শেষ বার তোমাদের বাড়ী কবে গেলাম যেন? মনে আছে?’
‘হ্যাঁ। ১২ অক্টোবর শনিবার ছিল। গতবছর।’
 
আমি সত্যিই এবার হোঁচট খেলাম। মেয়েদের কিছু বিষয়কে আমি সত্যিই শ্রদ্ধা করি।
যাই হোক। একটু চুপ থেকে আবার বলতে শুরু করলাম, ‘আচ্ছা তুমি কি পদ্মা নদীর মাঝি সিনেমাটা দেখেছো? ঐ যে কুবের মাঝি …’
‘হ্যাঁ। দেখেছি তো। কেন?’
‘কুবের মাঝি চরিত্রে ছিল আসাদ। তাই তো?
‘হ্যাঁ। তাই তো মনে পরে।’
‘আর অাসাদের মানে ঐ কুবের মাঝির শালীর চরিত্রটি করেছিল রুপা গাঙ্গুলী- মনে আছে?’
‘হ্যাঁ। মনে আছে।’
‘আচ্ছা, ঐ যে কুবের মাঝি আর রুপা গাঙ্গুলী যখন পুকুরে নেমে গোসল করছিল তখন কি তুমি ব্লাউজ ছাড়া রুপা গাঙ্গুলীকে খেয়াল করেছিলে? দারুণ লাগছিল না ওখানে রুপা গাঙ্গুলীকে? সত্যি করে বলোতো?’
 
শম্পার চোখ মুখ লাল হয়ে গেল। মাথা নীচু করে ফেলল।
‘আহ্হা, লজ্জার পাচ্ছ কেন? তুমি তো বলেছোই দেখতে চাও আমি কতটা বদমাইশ; এটুকুতেই এতো লজ্জা?’
‘হ্যাঁ। খেয়াল করেছিলাম। আপনার মাথা। ভালো লাগছিল।’
‘গুড গার্ল।’
শম্পা মাথা নীচু করে ছিল, আস্তে করে আমার দিকে তাকালো। চোখে চোখ পড়তেই লজ্জাবত মুখে মিষ্টি করে হেসে দিল। কৃষ্ণকলিকে সত্যিই অসাধারণ লাগছিল।
 
কিছুক্ষন চুপচাপ।
শম্পাই নিরবতা ভাংলো। ‘তো, এর সংগে আপনি যে শয়তান- তার কি সম্পর্ক?’
‘ওহ সরি। সম্পর্কটা বলা হয়নি।’
‘জ্বি। বলা হয়নি। অনুগ্রহ করে বলুন। শুনি।’
‘সেদিন তোমাদের বাসায় গেলাম না- সেই ১২ই অক্টোবর শনিবার।’
‘হ্যাঁ। গেছেন।’
‘ঐ দিনটা ছিল দুষ্ট একটা দিন।’
‘দিন আবার দুষ্ট হয় কিভাবে?’
 
আমি হাসছি। দুষ্টমীর হাসি ছিল ওটা।
শম্পা কিছু বুঝে উঠতে পারছে না। কিভাবেই বা পারবে?
 
আমি আবারও মুখ খুললাম। ‘তোমাকে কুবের মাঝির শালী রুপা গাঙ্গুলীর গল্পটা করলাম না। ব্লাউজ ছাড়া ভেজা নিপলটাকে বেশ লাগছিল। কিন্তু তুমি কি জানো, সেই দিন মানে সেই ১২ই অক্টোবর শনিবার- আমি ঠিক ওভাবেই তোমাকে দেখেছিলাম। যখন তুমি অসতর্ক অবস্থায় নীচু হয়ে ফ্লোর মুছছিলে। তুমি রুপা গাঙ্গুলীরচেও সুন্দর।’ কথাগুলি শেষ করে আমি মাথা নীচু করে আছি।
 
অনেকক্ষন কোন কথা নেই কারো।
সম্ভবত মিনিট পাঁচেক হবে কিন্তু মনে হচ্ছিল কয়েকটা দিন পার হলো।
 
আমি চোখ তুললাম। শম্পার দিকে তাকালাম। ও হাসছে।
‘আপনি যে এতটা বদমাইশ- সত্যিই আমি ভাবিনি। আপনি জানেন আমার কতটা রাগ হওয়ার কথা। আপনি যে কি ভয়ংকর একটা কথা বলেছেন- আপনি বুঝতে পারছেন? ওহ মাই গড! অন্য কেউ হলে আমি তাকে খুন করতাম। কিন্তু আপনি, আপনি এমনভাবে কথাগুলি বলেছেন … আপনার কথার উপস্থাপনায় আমি সত্যিই এতটা মুগ্ধ যে রাগ হবার পরিবর্তে আমি, আমি ঠিক কি করবো ভেবে উঠতে পারিনি।’
 
পরিবেশ ঠিক হলো।
আমি খুব আস্তে অাস্তে বললাম, ‘শম্পা। আমি এই পৃথিবীর সবচে নোংড়া কথাটাও সবচে সুন্দরভাবে বলতে পারি। সত্যি কি না বলো তো?’
 
আমরা হেসে দিলাম।
 
(আমি ছোট গল্প লিখতে চাই না। কারণ, পাঠকরা আমার অন্য লেখার স্টাইলের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে- গল্পের নায়কের চরিত্রের দায়িত্বে আমাকে ফেলে দেবার চেষ্টা করে- যেটা সত্যিই আমার জন্য খুবই বিব্রতকর।)
   Send article as PDF