অংসান সূচি ও পোষ্ট বাহাত্তর মুজিব

অংসান সুচী মিয়ানমারের একজন গণতন্ত্রকামী নেত্রী।
 
নিজ দেশে গণতন্ত্রের জন্য কঠোর সংগ্রাম, অহিংস নীতি এবং সংগ্রাম ও আত্মত্যাগের জন্যই মুলতঃ তিনি নোবেল শান্তি পুরুস্কার অর্জন করেন।
 
এই তো, দু’বছর আগেও বাংলাদেশের মানুষ পর্যন্ত তাকে ফেরেস্তাতুল্য ভাবতো।
 
আজ সেই সুচী’র আসল চেহারা প্রকাশ পেয়েছে।
 
সুচী আজ ক্ষমতায় যাবার পর শুধুই একজন পরীক্ষিত খলনায়িকা।
 
রক্তখেকো।
হাজার হাজার রোহিঙ্গার নির্যাতনের হোতা সে।
 
আজ আপনাদের আমি আরেকজন মানুষের গল্প বলবো।
 
তিনি শেখ মুজিবর রহমান।
তার জীবনও গণতন্ত্রময়, আত্মত্যাগী এবং একটা ছোট ভুখন্ডের সাড়ে সাত কোটি মানুষের প্রানপ্রিয় নেতা ছিলেন তিনি।
 
কিন্তু এই সে শেখ মুজিব যে কিনা ঠিক একইভাবে ক্ষমতা হাতে পাবার পরই পরিবর্তিত খলনায়কে পরিণত হন।
 
ক্ষমতা কিছু কিছু মানুষকে অমানুষে পরিণত করে।
যেমন: শেখ মুজিব।
যেমন: সুচী।
যেমন: শেখ হাসিনা।
যেমন: হিটলার।
এরা প্রত্যেকেই কিন্তু একটা সময় প্রচন্ড জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন এবং বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন।
 
শেখ মুজিবের সমর্থকরা শুধু তাই ১৯৭১ এর মার্চ পুর্ববর্তী জীবনী নিয়েই গবেষনা করে বা শেখ মুজিব মানেই ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ পর্যন্তই তাকে মহাপুরুষ বানিয়ে দেয়।
 
কিন্তু তারপর?
 
৭১ পরবর্তী শেখ মুজিব নিয়ে তারা কোন কথাই বলে না। তারা কৌশলে চেপে যায় ‘বাকশালীয় কর্মকান্ড’ যেটাই শেখ মুজিবের আসল ও একমাত্র পরিচয়।
 
১৯৭২ সালে দেশের দায়িত্ব নিয়ে শুধুই ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার জন্য একবার নিজেকে প্রেসিডেন্ট, একবার প্রধানমন্ত্রী আবার প্রসিডেন্ট (৩ বছরে ৩ বার পরিবর্তন), অত্যন্ত দুর্বল ও আত্মীয়-কেন্দ্রিক প্রশাসন, রক্ষীবাহিনী দিয়ে লাখ লাখ মানুষ হত্যা, সেনাবাহিনীকে ধ্বংশ করা এবং ফাইনালী যেই গণতন্ত্রের জন্য ৩০ লাখ মানুষ নিজেদের জীবন দিয়ে স্বাধীন দেশ গঠন করলো সেই মানুষের বুকে লাথি মেরে দেশ থেকে ‘গণতন্ত্র’ই খেয়ে ফেলছিলেন শেখ মুজিব।
 
গঠন করলেন একদলীয় ‘বাকশাল’। হত্যা করা হলো গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকার।
 
শেখ মুজিবের কার্যক্রম এতটাই জঘন্য ও নীচু প্রকৃতির ছিল যে স্বয়ং তার কন্যা শেখ হাসিনাও সেই বাকশালকে বিলুপ্ত করে আওয়ামী লীগ পুনঃগঠন করেছেন।
 
শেখ মুজিব ও অং সান সুচী’রা এমন নষ্ট বীজের নষ্ট প্রাণী।
 
মানুষকে চিনতে হয়- তার ক্ষমতার প্রয়োগ দেখে।
 
ক্ষমতায় যাবার জন্য সবাই ভালো মানুষ।
 
দুই।
 
১৯৭৩ সালে দৈনিক ইত্তেফাকসহ সমসাময়িক দৈনিকের কিছু খবরের শিরোনাম ছিল:
 
– “ঝিনাইদহে এক সপ্তাহে আটটি গুপ্তহত্যা”(ইত্তেফাক ০১/ ০৭/ ৭৩);
– “ঢাকা-আরিচা সড়ক : সূর্য ডুবিলেই ডাকাতের ভয়” (ইত্তেফাক০২/০৭/ ৭৩)
– একদিকে মানুষঅনাহারে দিন যাপন করিতেছেঃ অপরদিকেসরকারি গুদামের গম কালোবাজারে বিক্রয় হইতেছে”-(ইত্তেফাক এপ্রিল ৭,১৯৭৩);
– “এখানে ওখানে ডোবায় পুকুরে লাশ।”(সোনার বাংলা এপ্রিল ১৫,১৯৭৩);
– “চালের অভাবঃ পেটের জ্বালায় ছেলেমেয়ে বিক্রি; হবিগঞ্জেহাহাকার অনাহারে এ পর্যন্ত ৯ জনের মৃত্যু”-(গণকন্ঠ মে ৩,১৯৭৩);
– “কোন এলাকায় মানুষ আটা গুলিয়া ও শাক-পাতাসিদ্ধ করিয়া জঠর জ্বালা নিবারণ করিতেছে”-(ইত্তেফাক মে ৩,১৯৭৩);
– “অনাহারে দশজনের মৃত্যু : বিভিন্নস্থানে আর্ত মানবতার হাহাকার;শুধু একটি ধ্বনিঃ ভাত দাও”-(গণকন্ঠ মে ১০,১৯৭৩);
– “লতাপতা,গাছের শিকড়, বাঁশ ও বেতের কচি ডগা, শামুক, ব্যাঙ এর ছাতা, কচু-ঘেচু পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসীদের প্রধান খাদ্যে পরিণতঃ গ্রামাঞ্চলে লেংটা মানুষের সংখ্যা বৃদ্ধি”- (ইত্তফাক মে ১০, ১৯৭৩);
– “পটুয়াখালীর চিঠিঃ অনাহারে একজনের মৃত্যু;সংসার চালাতে না পেরে আত্মহত্যা”- (গণকন্ঠ মে ১০, ১৯৭৩);
– “ওরা খাদ্যভাবে জর্জরিত : বস্ত্রাভাবে বাহির হইতে পারে না”- (ইত্তেফাক মে ৩০, ১৯৭৩)
– “আত্মহত্যা ও ইজ্জত বিক্রির করুণ কাহিনী”- (গণকন্ঠ জুন ১, ১৯৭৩)
– “স্বাধীন বাংলার আরেক রূপ : জামাই বেড়াতে এলে অর্ধ-উলঙ্গ শ্বাশুরী দরজা বন্ধ করে দেয়”-(সোনার বাংলা জুলাই ১৫, ১৯৭৩)
– “বরিশালে থানা অস্ত্রশালা লুট : ৪ ব্যক্তি নিহত” (ইত্তেফাক ৪/০৭/ ৭৩);
– “পুলিশ ফাঁড়ি আক্রান্তঃ সমুদয় অস্ত্রশস্ত্র লুট” (ইত্তেফাক ১২/০৭/ ৭৩);
– “লৌহজং থানা ও ব্যাঙ্ক লুট” (ইত্তেফাক ২৮/০৭/ ৭৩);
– “দুর্বৃত্তের ফ্রি স্টাইল” (ইত্তেফাক ০১/০৮/৭৩);
– “পুলিশ ফাঁড়ি ও বাজার লুট : লঞ্চ ও ট্রেনে ডাকাতি” (ইত্তেফাক ৩/০৮/ ৭৩);
-“এবার পাইকারীহারে ছিনতাই : সন্ধা হইলেই শ্মশান” (ইত্তেফাক ১১/০৮/ ৭৩);
– “চট্টগ্রামে ব্যাংক ডাকাতি, লালদীঘিতে গ্রেনেড চার্জে ১৮ জন আহত, পাথরঘাটায় রেঞ্জার অফিসের অস্ত্র লুট” (ইত্তেফাক ১৫/০৮/ ৭৩);
– “খুন ডাকাতি রাহাজানি : নোয়াখালীর নিত্যকার ঘটনা,জনমনে ভীতি” (ইত্তেফাক ১৬/০৮/৭৩);
– “২০ মাসে জামালপুরে ১৬১৮টি ডাকাতি ও হত্যাকান্ড” (ইত্তেফাক ১৭/১১/ ৭৩);
– “আরও একটি পুলিশক্যাম্প লুট : সুবেদরসহ ৩ জন পুলিশ অপহৃত” (ইত্তেফাক ১৩/০৭/ ৭৩);
– “যশোরে বাজার লুট : দুর্বৃত্তেরগুলী তে ২০ জন আহত” (ইত্তেফাক ১৮/০৪/ ৭৪);
– “রাজশাহীতে ব্যাংক লুট” (ইত্তেফাক ২১/৪/ ৭৪)।
 
 
 
 
   Send article as PDF