শেখ মুজিব হিমালয় হয়ে উঠতে পারেননি

উইকিপিডিয়া থেকে নেয়া তথ্যানুসারে ১৭ই মার্চের ১৯২০ সালে বৃটিশ ইন্ডিয়ার বেঙ্গল প্রভিন্সের টুংগিপাড়ায় জন্ম গ্রহণ করেন শেখ মুজিবুর রহমান।
 
নিঃসন্দেহে অত্যন্ত বৈচিত্রময় একটা জীবনের অধিকারী ছিলেন এই ভদ্রলোক।
 
শুধুমাত্র অসাধারণ বাগ্মিতা, দুর্দান্ত নেতৃত্বগুণ, ব্যক্তিগত উচ্চাভিলাষ এবং ভরাট গলার ভাষনের গুনে তিনি অত্যন্ত সাধারণ এক পরিবার থেকে উঠে এসে একটা দেশের কান্ডারীতে পরিণত হতে পেরেছিলেন; কিন্তু সেই একই সংগে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতার লোভ, দাম্ভিকতা, স্বৈরাচারীতা, ব্যাপক দুর্নীতি, শঠতা এবং মানবাধিকার ও গণতন্ত্র হত্যাকারী হিসাবে ইতিহাসের পাতায় চরমভাবে ঘৃণিত এক ব্যক্তি শেখ মুজিবর রহমান।
 
একটা অতি চমৎকার প্রবাদ বাক্য রয়েছে- ‘যে বনে বাঘ নেই সেই বনে শেয়ালই রাজা’।
 
ভারত লাগোয়া দক্ষিন এশিয়ার মাত্র দেড় লক্ষ বর্গকিলোমিটারের একটি অতি ক্ষুদ্র ভুখন্ড বাংলাদেশ- যেখানে গাদাগাগি করে বর্তমানে বসবাস করছে প্রায় ১৮ কোটি মানুষ। ১৯৭১ সালে এই ভুখন্ডে মানুষের পরিমাণ ছিল ৭ কোটি।
 
এই দেশটির মানুষ যে কতটা বোকা এবং অলস সেটা বোঝা যায় এই মাত্র ৫০ বৎসরেই জনসংখ্যা ৭ কোটি থেকে বেড়ে ১৮ কোটি হওয়াতে।
 
আর এটা তো সর্বজন বিদিত যে বোকাদের মাথায় কাঠাল ভেঁগে খাওয়াটাই হলো এই বিশ্বের সবচে সহজতম কাজ। এবং যে কাজটির প্রচলন করেছিলেন শেখ মুজিবর রহমান এবং বর্তমান সময় পর্যন্ত সেই একই নীতি বহাল রয়েছে বা আরও বেশী সম্প্রসারণ হয়েছে।
 
বলতে গেলে প্রায় প্রতিটি ক্ষমতাসীন শাসকগোষ্ঠীই কোনভাবেই চায়নি যে- এই ভুখন্ডের বসবাসকারীরা প্রকৃত শিক্ষায় শিক্ষিত হোক, নিজেদের সক্ষমতা ও অক্ষমতা জানুক, বিশ্বটা কতদূর এগিয়েছে তা বুঝুক এবং সেই সংগে একটা প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসাবে বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা পাক পৃথিবীর বুকে।
 
এবং হয়েছেও তাই।
 
আজ আমার মতো কেউ যখন দেশের প্রকৃত অবস্থা মানুষের সামনে চোখে আংগুল দিয়ে তুলে ধরে- তখন সেটাকে তারা দেশদ্রোহিতাও ভেবে বসে। অথচ একটিবারও ভাবে না যে- নিজের দোষই যদি আপনি না ধরতে জানলেন তাহলে কিভাবে নিজেকে দোষমুক্ত করতে পারবেন।
 
ঠিক যে সময়টাতে ভারতসহ পৃথিবীর নানা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি ব্যস্ত কিভাবে মঙ্গলে যাবে, কিভাবে যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত ও আধুনিক করবে, নতুন নতুন তত্ব তৈরী করে সামনে এগিয়ে যাবে- ঠিক তখনই বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা একযোগে পথ খোঁজে কিভাবে কোন পথে গেলে কার গাড়ীটাকে সহজে ভেংগে দেয়া যাবে বা আগুনে পুড়িয়ে দেয়া সম্ভবপর করে নিজের নেতৃত্বগুণের বাহাদুরী দেখাবে।
 
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা যতটনা ব্যস্ত গবেষণার কাজে- তারচেও অনেক বেশী পারদর্শী প্রশ্নপত্র ফাঁস, ক্যাম্পাসে গাজার চাষ, চেতনাবাজী, হরতাল আর টেন্ডারবাজীতে।
 
দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার আজ কি ‘হাল’ সেটা আমাকে এখানে না বলে দিলেও চলবে।
 
আর এই সবকিছুরই পথ প্রদর্শক ছিলেন শেখ মুজিবর রহমান সাহেব।
তার আমলে যে পরীক্ষা দিত সে-ই পাশ করতো- পড়াশোনার কোন সিষ্টেমই না কি ছিল না! শেখ হাসিনাও ঐ আমলের গ্রাজুয়েট।
 
১৯৪৭ সালে তৎকালিন বাস্তবতায় এবং বর্তমান বাংলাদেশ ভূখন্ডের নেতাদের অদূরদর্শিতার জন্য পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তান নামের একটি কিম্ভুমাকৃতির দেশের জন্ম লাভ হয়।
 
‘Survival for the Fittest’ তত্বের ভিত্তিতে (যোগ্যতমরাই টিকে যায়) পশ্চিম পাকিস্তানীরা উভয় পাকিস্তানের শাসককর্তা হিসাবে গেড়ে বসে- পাকিস্তান নামের দেশটিতে।
 
উভয় পাকিস্তানের বিচারে তখন পশ্চিমীরা যোগ্য হলেও প্রকৃত যোগ্যতার প্রমাণ তারাও কখনওই দেখাতে পারেনি, শুধুমাত্র ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে নিজেদের শক্তিমত্তা প্রদর্শন ব্যতীত।
 
আর এই ইন্ডিয়া-পাকিস্তান বৈরীতার বলির পাঠা হতে হয়েছে বাংলাদেশ নামেই এই ভুখন্ডটিকে।
 
ভারতবর্ষের অফিশিয়াল ভাষা ইংলিশ ও হিন্দি। প্রতিটি প্রদেশে নিজস্ব ভাষা রয়েছে। ভারতীয়রা গড়ে ৩টি ভাষা জানে- নিজস্ব আঞ্চলিক ভাষা এবং অফিশিয়াল ভাষা হিন্দি ও ইংলিশ।
 
‘ভারতবর্ষ হিন্দিকে প্রাধান্য দিয়ে থাকে’ শুধুমাত্র এই বিষয়টাকে বিবেচনায় নিয়ে পাকিস্তানী শাসকরা তখন মাত্র ‘সাত (৭) শতাংশ লোকের মাতৃভাষা উর্দূ’কে সম্পূর্ণ পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানের জাতীয় ভাষায় পরিণত করে, সংগে অবশ্য ইংলিশকেও।
 
আরও মজার বিষয় হলো- এই তৎকালিন পূর্ব পাকিস্তান থেকে এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া হয়। পাকিস্তানী শাসকরা যদিও পূর্ব পাকিস্তান প্রদেশের মূল ভাষা বাংলা’য় কোন হাত দেয়নি- তথাপিও মানুষ পাকিস্তান সরকারকে বাধ্য করে উর্দূ ও ইংলিশের সংগে বাংলাকেও অফিসিয়াল ভাষায় যোগ করতে।
 
বলতে গেলে ঠিক তখন থেকেই পূর্ব এবং পশ্চিম পাকিস্তানীদের মধ্যে বিরোধ দৃশ্যমান হয়।
 
শেখ মুজিবের আদর্শিক রাজনৈতিক গুরু ছিলেন হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী (কলিকাতা পৌরসভার ডেপুটি মেয়র; বৃটিশ বেঙ্গল প্রভিন্সের প্রধানমন্ত্রী এবং পাকিস্তানের পঞ্চম প্রধানমন্ত্রী) যার পৈত্রিক বাড়ী পশ্চিম বংগের মেদেনীপুর এবং পরবর্তীতে তিনি পাকিস্তানে থিতু হয়েছিলেন আর মারা যান লেবাননের বৈরুতে।
 
কোলকাতায় ছাত্র রাজনীতি করা শেখ মুজিবর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের রাজনীতিতে খুব শীগ্রই নিজের অস্তিত্বের প্রমাণ রাখতে সামর্থ হন।
 
নিজের বাগ্মিতা, চৌকশ নেতৃত্ব এবং বলিষ্ঠ ভাষানের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানের প্রধান আঞ্চলিক নেতায় পরিণত হতে খুব বেশী একটা সময় নেননি শেখ মুজিবর রহমান।
 
শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবন গভীর ভাবে পর্যালোচনা করলে একটা বিষয় অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেই পরিলক্ষিত হয় যে- তিনি অত্যন্ত সুচতুর ও মেধাবী নেতা ছিলেন। ‘নিজেকে নিরাপদে রেখে’ অত্যন্ত চতুরতার সংগে ও কৌশল ব্যবহারে তিনি ছিলে পারঙ্গম।
 
মজার বিষয় হলো- পাকিস্তানী সময়ের মন্ত্রী শেখ মুজিবর রহমানকে দুর্নীতির অপরার্ধে বরখাস্ত হতে হয়েছিল ষাটের দশকে- সে কথাতো সকলেরই জানা।
 
শেখ মুজিবর রহমানের ভেতরে জাতীয় নেতৃত্বের অভাব তীব্রভাবে লক্ষ্য করা যায়। একটা জাতিকে নেতৃত্ব দিতে যে তিনি অক্ষম সেটার দারুন প্রমাণ পাওয়া যায় ৭০ এর নির্বাচনে। ৭০ এর সেই জাতিয় নির্বাচনে শেখ মুজিবর রহমানের আওয়ামী লীগ পূর্ব পাকিস্তানে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ১টি আসনেও জয়লাভ করতে ব্যর্থ হন। অথচ একটা দেশকে নেতৃত্ব দিতে হলে- তাকে তো সারাদেশেই মানুষের উপর আস্থা অর্জন করাটাই বেশী জরুরী।
 
পিপিপি’র জুলফিকার আলী ভুট্টোও একই সমস্যাধীন ছিলেন- তার দলও পূর্ব পাকিস্তান থেকে কোন আসনে জিততে ব্যর্থ হয়েছিল।
 
৭ই মার্চের সেই উত্তাল জনসভায় শেখ মুজিবর রহমান স্বাধীনতা ঘোষনা দেননি। বক্তৃার শেষে তিনি পাকিস্তানের দীর্ঘজীবন কামনা করেছিলেন। তার কাছে ২৫শে মার্চের আগে স্বাধীনতা ঘোষনা বানীতে স্বাক্ষর নিতে গেলেও তিনি তাতে স্বাক্ষর করেননি। এবং শেখ মুজিবার রহমানকে ২৫শে মার্চে আটক করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হলেও তিনি তার ঢাকায় বসবাসরত পরিবারের জন্য মাসে ১৫০০ রুপি করে ভাতা’র ব্যবস্থা করে যান এবং ৭১এর সেই নয় মাস মহান মুক্তিযুদ্ধকালীণ সময় শেখ মুজিবের পরিবার ঢাকার ধানমন্ডীর ৩২ নাম্বারের বাড়ীতে পাকিস্তানী সেনাদের নিরাপত্তার মধ্যে পাকি সরকারী ভাতা নিয়ে বসবাস করে।
 
শেখ হাসিনা সেই যুদ্ধের সময় ঢাকায় সজীব ওয়াজেদ জয়ের জন্ম দেন। অথচ, তখন সারাদেশের মানুষ হয় পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধে নিয়োজিত অথবা জীবন বাাঁচাতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
 
কিন্তু শেখ মুজিবের পরিবার নিরাপদ- খোদ যুদ্ধের শহর ঢাকায়।
শেখ মুজিবরের পরিবার মাসে ১৫০০ রুপি করে সেই আমলে পারিতোষিক পায়।
শেখ মুজিবের পরিবারের কোন সদস্যকে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ গ্রহন করতে দেখা যায়নি।
 
যাই হোক, বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর জানুয়ারীতে শেখ মুজিব পাকিস্তানী বন্দিশালা থেকে মুক্তি লাভ করে স্বাধীন দেশের রাজধানীতে ফিরে আসেন প্রেসিডেন্ট পদবী নিয়ে।
 
এরপর তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রটিকে প্রধানমন্ত্রী শাসিত দেশে পরিণত করেন এবং নিজে প্রধানমন্ত্রী হন।
 
এরপর তিনি ইতিহাসের সবচে জঘন্যতম কাজটিতে হাত দেন।
 
যে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ধূয়ো তুলে পাকিস্তানীদের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবর রহমান দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন দেশের স্বাধীনতার দাবীতে গণমানুষকে সম্পৃক্ত করেছিলেন- সেই গণমানুষের মুখে থুথু মেরে গণতন্ত্র হত্যা করেন নিজ হাতে।
 
সেই গণমানুষের মুখে থুথু মেরে দেশে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করেন এই শেখ মুজিবর রহমান নিজেই।
 
সেই গণমানুষের গণতন্ত্রে লাথি মেরে শেখ মুজিবর রহমান উত্তর কোরীয়ার আদলে এক পরিবার কেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেন।
 
সেনাবাহিনী একটা দেশের সার্বভৌমত্বের প্রতীক। শেখ মুজিবর রহমান সেই সেনাবাহিনীকে ধ্বংশ করতে রক্ষী বাহিনী প্রতিষ্ঠা করেন।
 
টাংগাইলের কাদেরিয়া বাহিনীর প্রধান কাদের সিদ্দিকী যখন কিছু যুদ্ধবন্দীকে হাজার হাজার মানুষের সামনে, যুদ্ধবন্দী আইনের তোয়াক্কা না করে, আন্তর্জাতিক আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে- বেয়নেট দিয়ে খুচিয়ে খুচিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে- তখনও শেখ মুজিব তাতে সমর্থন দেন।
 
শেখ মুজিবের মতো একজন জাতীয় নেতা এরকম একটা কাজ কোন অবস্থাতেই করতে পারেন না।
 
পাকিস্তানীদের ফেলে যাওয়া এডমিনিষ্ট্রেশন দিয়েই কোন রকমে শেখ মুজিব জোড়াতালি দিয়ে বাংলাদেশটাকে চালিয়ে নিচ্ছিলেন। কোন শাসন ব্যবস্থা ছিল না- নিজে স্বেচ্ছাচারীভাবে যা যখন করতে মন চেত- তিনি ঠিক তাই-ই করে গেছেন তার ক্ষমতার ৩টি বছরে।
 
কারো কাছে কোন জবাবদিহিতা তিনি পছন্দ করতে না।
দেশের সব মানুষকে তিনি ‘তুই-তুকারী’ করে কথা বলতেন।
 
শেখ মুজিবর রহমান ‘ব্যক্তি’ এবং ‘প্রেসিডেন্ট’ এর পার্থক্যই জানতেন না।
 
একজন অত্যন্ত অদক্ষ শাসক হিসাবে তিনি নিজেকে প্রমাণ করে দেন মাত্র ৩ বছরেই।
 
তার সামনে সুযোগ ছিল একটা ‘অবকাঠামো’ তৈরী করে দেয়ার- যে দেশটা এভাবে চলবে, গণতন্ত্র ঠিক করে দেয়া। তিনি তা করার চিন্তাও করেননি। তিনি শুধুই ক্ষমতা উপভোগ করতে চেয়েছেন। করেছেনও।
 
আমেরিকার ওয়ান অব দ্য ফাউন্ডিং ফাদারস ও প্রথম প্রেসিডেন্ট জর্জ ওয়াশিংটন নিজেও মাত্র ৮ বছরই ক্ষমতায় ছিলেন এবং দেশকে একটা শক্তিশালী সংবিধান দিয়ে গেছেন- যা গত দুইশত বছরে একবারও লংঘিত হয়নি।
 
আয়তুল্লাহ রুহুল্লা খোমেনী ইরানের শাহ রেজা পাহলভীর মতো ধুরন্ধর বাদশাহকে ক্ষমতাচুত্য করে ‘ইসলামী ইরান’ প্রতিষ্ঠা করেছেন কিন্তু নিজে ‘প্রেসিডেন্ট’ পদে এক দিনের জন্যও বসেন নি।
 
জাতির পিতা’রা এরকমই হয়।
একটা জাতির পিতা হতে হলে তাকে জর্জ ওয়াশিংটনের মতো দৃঢ়তা দেখাতে হয়।
একটা জাতির পিতা হতে হলে তাকে আয়তুল্লাহ খোমেনীর মতো নির্লোভ থাকতে হয়।
 
মহান মুক্তিযুদ্ধে ‘নিজের এবং নিজ পরিবারের প্রশ্নবিদ্ধ অবস্থান’ থেকে জাতির পিতা হওয়া যায় না।
 
শেখ মুজিবকে অদ্দুরও যেতে হতো না- স্রেফ ভারতবর্ষ দেখলেই চলতো; যদি তার সেরকম ও সৎ চোখ থাকতো। মোহনদাশ করমচাঁদ গান্ধিও কিন্তু ভারতবর্ষের জাতির পিতা যিনিও কোনদিন ক্ষমতার চেয়ারে বসেননি।
 
শেখ মুজিবরের মতো একজন লোভী, অযোগ্য, দেশপ্রেমহীন চতুর ব্যক্তির পক্ষে জাতির পিতার মতো ভার বহন করা সম্ভবপর হতে পারে না বা হয়নি।
 
শেখ মুজিবের প্রশাসনিক অদক্ষতা এতটাই করুন ছিল যে প্রচুর পরিমান ত্রানসহায়তা পাওয়ার পর ৭৪সালে এই জাতিকে ইতিহাসের ভয়াবহতম দুঃভিক্ষের মুখে পরতে হয়েছে। এবং সেই দুঃভিক্ষে পাওয়া ৭ কোটি কম্বলও সে চুরি করে টাকা লোপাট করেছেন।
 
কম্বলের হিসাবে দিতে ব্যর্থ হয়ে নিজেই বলেছেন ‘অামার কম্বল কোথায়?’ কতটা বেকুব এবং অর্থব শাসক হলে একজন প্রধানমন্ত্রী একথা বলতে পারেন? তাহলে আর দেশে প্রধানমন্ত্রীত্বের দরকার কি? গোপালগঞ্জে গিয়ে মুদি দোকান চালালেই হয়ে!
 
এই সেই শেখ মুজিব যখন সারা দেশের মানুষ দুঃভিক্ষে অনাহারে অর্ধহারে ধুকে ধুকে মরছে- তখন সে তার ছেলের বিয়েতে কোটি টাকা খরচ করে আনন্দ ফূর্তি করেছেন।
 
শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর তার বাড়ীতে পাওয়া সিজার লিষ্টের বিবরণ (দৈনিক ইত্তেফাক, অক্টোবর ৩০, ১৯৭৫):
– হীরা, মুক্তা, প্লাটিনাম ও স্বর্নালঙ্কার ৭ লাখ ৮৩ হাজার টাকার।
– বাংলাদেশী মুদ্রায় নগদ ৯৪ হাজার ৪ শত ৬১ টাকা
– তিনটি ব্যাক্তিগত মোটর গাড়ী
– বিদেশী মুদ্রা ১৭ হাজার ৫ শত টাকা
– বিদেশী রাষ্ট্র প্রদত্ত প্রায় এক লক্ষ টাকার উপহার
– বাতিল কৃত শতকী নোট ৬ শত ২১ টি
– একটি ভারী মেশিনগান, ২ টি হাল্কা মেশিনগান, ৩ টি এস এম জি, ৮ টি ষ্টেন গান, ১০ টি আধা সয়ংক্রিয় রাইফেল, ৬০ টি গ্রেনেড সহ গোলাবারুদ
– এছাড়া উনার স্ত্রী, বৌ, ছেলে, মেয়েদের নামে ২২ টি ব্যাংক একাউন্ট জব্দ করা হয় যেখানে তৎকালে সর্বমোট নগদ দুই লক্ষ আটানব্বই হাজার টাকা।
 
৭৪ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের পরপর-ই এই বিশাল অর্থ এবং সম্পত্তি তাদের দখলে ছিল। এবং সম্পূর্ণ অর্থই যে অবৈধভাবে উপার্জিত- তা আর বলে দেবার প্রয়োজন পরে না।
 
১৯৭৫ সালে একজন মানুষ বেতন পেত ম্যাক্সিমাম ৫০০ থেকে হাজার টাকা। তখনকার ১০০ টাকা এখনকার সময়ের কমবেশী ১০,০০০ টাকার সমান মুল্যমান। সেই হিসাবে শেখ মুজিবের দখলাকৃত সম্পদের সংগে বর্তমান সময়কালকে হিসাবে করে দেখুন- শেখ মুজিব কতটা দুর্নীতিবাজ, নষ্ট চরিত্রের এবং ডাকাত চরিত্রের ব্যক্তি ছিল।
 
একনায়ক জেনালের এরশাদের পদত্যাগের পর- তার বাসায় পাওয়া সম্পদের পরিমানও তুলনামূলকভাবে অনেক কম ছিল অথচ সেই অভিযোগ এরশাদকে টানা প্রায় ৬ বছর জেল খাটতে হয়েছে এবং বর্তমানেও নপুংসক হয়ে রাজনীতি ফুটবলে পরিণত হয়ে সমানে লাথি খেয়ে যেতে হচ্ছে এখনও অসংখ্য মামলা মাথায় নিয়ে।
 
একমাত্র ১৯৭১ সালে পাকিস্তানীরা যদি শেখ মুজিবর রহমানকে ফাাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করতো- তাহলেও শেখ মুজিবর রহমান বাংলাদেশের মানুষের কাছে ‘জাতির পিতা’র সম্মান পেতেন; মানুষ তার প্রকৃত রূপ, তার ক্ষমতার লোভ ইত্যাদি সম্পর্কে কোন ধারণা পেত না।
 
কিন্তু শেখ মুজিবর রহমানকে মরতে হয়েছে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা ও জুনিয়র আর্মি অফিসারের বন্দুকের গুলিতে। শেখ মুজিবরের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করার মতো লোক বাংলাদেশে খুঁজে পাওয়া কস্টকর ছিল।
 
শেখ মুজিবর রহমান হিমালয় হয়ে উঠতে পারেননি।
সেই যোগ্যতা শেখ মুজিবরের ছিলও না।
 
চতুরতা এবং বাগ্মিতা দিয়ে সাময়িক কিছু মানুষকে মুগ্ধ করা যায়- কিন্তু ‘প্রকৃত চরিত্র’ প্রকাশ পেতে সময় লাগে না।
 
শেখ মুজিবর রহমানের প্রকৃত চরিত্র ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫ সালের মাত্র ৩ বছর সময়কালে মানুষের কাছে প্রকাশ পেয়ে গিয়েছিল।
 
শেখ মুজিব জাতির পিতা হয়ে উঠতে পারলেন না।
 
শেখ মুজিবর রহমান বরাবারই শেয়াল হবার চেষ্টাই করে গেছেন- বাঘ হবার কথা একটিবারও ভেবে দেখেননি।
 
অনেককেই দেখি, প্রায়ই বলে থাকে শেখ মুজিবরের জন্ম না হলে বাংলাদেশ স্বাধীন হতো না।
 
কিন্তু বাস্তবতা হলো- পাকিস্তানও কিন্তু তখন স্বাধীন রাষ্ট্রই ছিল, পরাধীন ছিল না। বগুড়ার মোহাম্মদ আলী পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীত্বও করেছেন।
 
আর উত্তরটা হলো- ‘বাংলাদেশ’ ভুখন্ডটি ‘সময়ের প্রয়োজনে’ অবশ্যই একদিন পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হতো। সেটা শেখ মুজিব বা অন্য যে-কোন নেতার নেতৃত্বেই।
 
সময় সবসময়ই সবচে বড়, বাস্তব ও নিষ্ঠুর উত্তরদাতা। এবং মানবিকও।
 
একমাত্র মানসিক ক্ষুদ্রতা থেকেই চিন্তা আসতে পারে যে- ‘শেখ মুজিবই শেষ কথা’; ‘বাংলাদেশে আর কোন নেতার জন্ম হবে না’!
 
এবং মুল কথা হলো- বাংলাদেশ কি এখন স্বাধীন?
আপনি স্বাধীনতার অর্থ জানেন? স্বাধীনতা কাকে বলে জানেন?
আপনি আপনার নিজের বাংলা ভাষাতেই এখন কথা বলতে পারেন?
আপনি স্বাধীন মতামত ব্যক্ত করতে পারেন?
আপনার ন্যূনতম মানবাধিকার রয়েছে?
কি স্বাধীনতা পাচ্ছেন আপনি আজ রাষ্ট্র থেকে?
 
কিছুই না।
এবং এটাকে স্বাধীনতা বলে না।
 
স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকার শব্দগুলি এতটা সস্তা না। অনেক ‘বড় এবং দামী’ শব্দ ওগলো।
 
আপনি ওসব পবিত্র শব্দগুলির অর্থও জানেন না।
 
আপনি একটা বন্দী ডাষ্টবিনে আবদ্ধ অবস্থায় নিজেকে স্বাধীন স্বাধীন বলে বুলি আওড়াচ্ছেন।
 
ওখান থেকে বেরিয়ে আসুন।
 
দেখুন এই বিশাল পৃথিবীটাকে।
 
 
   Send article as PDF