থাইল্যান্ড অার তুরষ্ক

থাইল্যান্ড অার তুরষ্ক চমৎকার দু’টি দেশ।
 
দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ায়- থাইল্যান্ড হলো এমন একটি দেশ- যে দেশটি কোনদিন পরাধীন ছিল না। কোন উপনৈবেশিক শাসনাধীন হতে হয়নি থাইল্যান্ডকে। দেশটির রাজা জনগণের কাছে ঈশ্বরতূল্য। গণতান্ত্রিক এই দেশটিতে সেনাবাহিনী একটা বড় সমস্যা। নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী একটু এদিক ওদিক করলেই সেনাবাহিনী অভ্যুত্থান ঘটায়। দেশের সবচে জনপ্রিয় প্রধানমন্ত্রী থাকসিন সেনাওয়াত্রা’কে সেনা বিদ্রোহে দেশছাড়া হতে হয়েছে অনেক বছর আগেই। তার আকাশ সমান জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে তারই বোন ইলাংক সিনাওয়াত্রা নির্বাচিত হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন এবং ওনাকেও সেনাবাহিনী কয়েক বছর আগেই উত্থাৎ করে।
 
তবে, মজার বিষয়টা হলো- সেনাবাহিনী দেশের শাসনভার নিজেদের হাতে রাখে না। অন্য কোন একজনকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়ে দেশ পরিচালনা করে! সেক্স টুরিজমের দেশ থাইল্যান্ড- ‘সেক্স ইন্ডাষ্ট্রিজ’ এখানকার আয়ের প্রধান উৎস। জনগণ অত্যন্ত বন্ধুবৎসাল। দেশটিও চমৎকার। তাছাড়া থাইল্যান্ডের চিকিৎসাও অত্যন্ত আধুনিক এবং তুলানামূলকভাবে সস্তা।
 
বৌদ্ধ- থাইল্যান্ডের প্রধান ধর্ম। ঢাকা থেকে মোটামুটি সোয়া ঘন্টার ফ্লাইটেই ব্যাংকক পৌছে যাওয়া যায়। সময় ও ভিসা সংগ্রহ করতে পারলে ঘুরে আসতে পারেন- ভাল লাগবে। তবে, হানিমুনের জন্য আমি কাউকে থাইল্যান্ড যেতে নিষেধই করবো! 🙂
 
অপরদিকে তুরষ্ক পশ্চিম এশিয়ার একটি দেশ। দেশটির ছোট্ট একটি শহর ‘ইস্তানবুল’। শুধুমাত্র এই একটি ক্ষুদ্র শহরটির ভৌগলিক অবস্থান ইওরোপে। বিশাল একটি সেতু তৈরী করে তুরষ্কের মেইনল্যান্ড এর সংগে ইন্তানবুল তথা ইওরোপকে জোড়া দেয়া হয়েছে। আর এইটুকু ইওরোপের জোরেই তুরষ্ক নিজেদের ইওপিয়ান বলে পরিচয় দিতে সদাব্যস্ত। তারা ন্যাটোর সদস্যপদও বাগিয়ে নিয়েছে। সবক্ষেত্রেই তারা ইওরোপকে ফলো করে মজা লুটায়।
ইওরোপিয়ান ইউনিয়ন এর পূর্ণ সদস্যপদ পেতে দেশটি মরিয়া হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে- ইতিমধ্যে মৃত্যুদন্ডও তুলে নিয়েছে ইওরোপকে দেখাতে যে তারা মানবাধিকার সমুন্নত করেছে। দেশটাতে মোটামুটি আইনের শাসন রয়েছে; চিকিৎসা ব্যবস্থাও বিশ্বমানের। মধ্য এশিয়ার দেশগুলির জনসাধারণ চিকিৎসার জন্য তুরষ্ককেই বেছে নেয় সবসময়।
 
এই দেশটিতেও সেনাবাহিনী খুবই উচ্চাভিলাসী। এরাও দু’দিন পরপরই রাষ্ট্রক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করে একধরণের তৃপ্তি পায়।
 
রাশিয়ার সংগে দেশটির একটা সুন্দর মিল রয়েছে- রাশিয়া পৃথিবীর সবচে বড় দেশ। রাশিয়ার মূল ভূখন্ডের ৮০% এলাকাই পরেছে এশিয়ার মধ্যে এবং বাকী ২০% ইওরোপে। অথচ- তারা নিজেদের এশিয়ান বলে জীবনেও পরিচয় দেয় না।
 
আজ তুরষ্কে একটি ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থান হয়ে গেল।
সেনা বাহিনী সফল হতে পারেনি। প্রেসিডেন্ট এরদোগান নিঃসন্দেহে অত্যন্ত জনপ্রিয় একজন নেতা। ওনার সফলতাও যথেষ্ঠ।
 
কিন্তু বিষয়টা সেখানে নয়। ওনার দেশে সেনা অভ্যূত্থানে- আমাদের কিছু যায় আসে না। কিন্তু আজ ফেসবুকে এই ব্যর্থ সেনা অভ্যূত্থান নিয়ে অসংখ্য স্ট্যাটাস, কমেন্টস।
 
আমি বিষয়টাতে খুব মজা পেয়েছি।
মজাটা হলো- বাংলাদেশের মানুষ বর্তমানে বসবাস করছে এক পরাধিন অবস্থায়। কেউ কথা বলতে সাহস পাচ্ছে না। এমনকি পছন্দের পোষ্টিংএও লাইক বা কমেন্ট করতে সাহস পায় না সাধারণ মানুষ- দেশটার গণতন্ত্র এতটাই সমৃদ্ধ করে দিয়েছে অসভ্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতির বাবা’র স্বপ্নদোষপ্রসূত ‘বাকশাল’ একটু ভিন্ন স্টাইলে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশে।
 
আমাকে প্রতিদিনই প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন ইনবক্সে ধন্যবাদ জানায়; আমার অতি সাহসী এবং ষ্টেইটকাট মতামতের প্রশংসা করে; ভয় পায় লাইক দিতে বা কমেন্ট করতে।
আমি চিন্তাও করতে পারি না- এমন সব লোকজনও আমাকে ধন্যবাদ জানায়। অামি অনেক সময়ই অভিভূত হয়ে পরি। মানুষ কতটা কষ্টকর অবস্থায় দিনাতিপাত করছে আমি বুঝতে পারি।
 
আর এই দমবদ্ধ অবস্থা থেকে মানুষ মুক্তি চায়- কিন্তু নিজের মুক্তি চাওয়ার মতো দাবী করারও সাহস পাচেছ না মানুষ। এরশাদের সময় অন্তত মিছিল করতে পারতো। এখন সেটাও করা যাবে না।
 
অসভ্য এক মহিলার নেতৃত্বে একদলীয় ধর্ষনযজ্ঞ চলছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে- সংগে যোগ দিয়েছে ভারত সরকার!
 
যাই হোক। বাংলাদেশের মানুষ প্রচন্ডভাবে হাফিয়ে উঠেছে- আর এজন্যই তারা হাজার হাজার মাইল দূরের একটি দেশ (যারা এশিয়ান হয়েও ইওরোপিয়ান পরিচয় দিয়ে ফালতু গর্ববোধ করে) যেখানকার সেনাবাহিনী একটু ট্রাই করেছে- তাদের নিয়ে ভংয়কর প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে!
 
মানেটা- বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দৃস্টি আকর্ষণ।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী- বাংলাদেশের জন্য সবসময়ই আশির্বাদ হিসাবে নিজেদের প্রমাণ রেখেছে। তাদের যে বড় বেশী প্রয়োজন এখন- এই অভাগা বাংলাদেশে; এবং এটা বাংলাদেশের সবারই মনের কামনা- কিন্তু কেউ সেটা মুখ ফুটে বলতেও পারছে না!
 
কত কষ্ট!
   Send article as PDF