‘আনরেষ্ট মুসলিম বিশ্ব’

‘জিজু’ নামে একটা দ্বীপ আছে।
আপনি চাইলে সেখানে কোন ভিসা ছাড়াই চলে যেতে পারেন যে কোন সময়, ৩০ দিন থাকতে পারবেন ভিসা ছাড়াই। জিজু দ্বীপটি দক্ষিন কোরিয়ায়।
 
দক্ষিন কোরিয়া নিঃসন্দেহে একটি লোভনীয় দেশ অন্তত বাংলাদেশীদের জন্য।
 
আজ আরেকটি দ্বীপের কথা বলবো, এটার নাম ‘কিস আইল্যান্ড’।
আপনি যেতে চান সেখানে? কোন ভিসার দরকার নেই। চলে যান টিকেট কেটে। ১৪ দিন থাকতে পারবেন অনায়াসে। সেখানে গিয়ে ব্যাংক একাউন্ট করতে পারবেন, কোম্পানীও খুলতে পারবেন।
 
কিস আইল্যান্ড ইরানের একটা দ্বীপ।
 
যাই হোক, আরও একটা দেশের কথা বলছি।
প্যাসিফিক ওসেনের ঠিক মধ্যখানে অবস্থিত মাত্র ১০ বর্গমাইলের একটা অতি ক্ষুদ্র দ্বীপ দেশ টোভালু। জনসংখ্যা মাত্র ১০ হাজার ৬৪০ জন। দেশটি গরীব, বার্ষিক মাথাপিছু আয় মাত্র সাড়ে তিন হাজার ডলার, কারেন্সী অষ্ট্রেলিয়ান ডলার।
 
হঠাৎ করে এই দেশটির কথা কেন বলছি?
হ্যা। মজার একটা বিষয় রয়েছে।
 
এই গরীব দেশটা হঠাৎ করেই অনেক পয়সা ইনকাম করা শুরু করে দিয়েছে- সামান্য একটা বিষয় দেশটার ভাগ্য খুলে দিয়েছে। ঈশ্বর দেননি, দিয়েছে আমেরিকা।
 
কিভাবে?
উত্তরটা বেশ মজার।
 
এই দেশটির ইন্টারনেট ডোমেইন কান্ট্রি কোড হলো ডট-টিভি।
এই দুনিয়া জুড়ে যত টেলিভিশন চ্যানেল রয়েছে তাদের প্রায় সকলেই ওয়েব সাইট ডোমেইন হিসাবে ডট-টিভি ব্যবহার করা শুরু করে। এবং সেই ডট-টিভি ডোমেইনের মালিক এই টোভালু দ্বীপ দেশটি।
 
ব্যাস ইনকাম শুরু হয়ে গেল।
১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরুর বছরই তারা শুধু ‘ডট-টিভি’ ডোমেইন বিক্রি করে আয় করে ৫০ মিলিয়ন ডলার। বুঝুন অবস্থা!
 
সে যাকগে!
অপ্রয়োজনীয় প্যাচাল পারলাম এতক্ষন।
প্রসংগ পরিবর্তন করি। আসল আলোচনায় চলে আসি।
 
আমি আমেরিকায় বসবাস করি।
এদেশে ‘ব্যক্তি স্বাধীনতা, মানবতাবাদ এবং অধিকার ও অপুর্চনেটি’ উপভোগ করি। স্বাধীনভাবে কথা বলি, কাউকে ভয় করতে হয় না। ভয় করিও না। এদেশে যেহেতু ৫৭ ধারা নেই এবং যেহেতু আমেরিকান সরকারের রাজনৈতিক আশ্রয়ে রয়েছি সেহেতু নিজের নিরাপত্তা নিয়েও কোন শংকা নেই।
 
আমেরিকায় না আসলে ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি যে কতটা শক্তিশালী এবং ব্যাপক- সেটা আমি কোন কালেও বুঝতে পারতাম না। বোঝা সম্ভব না। বাংলাদেশে যারা ‘গণতন্ত্র’ শব্দটি আওড়ায়- তারা কেউ-ই ‘গণতন্ত্র’ মানেই জানে না।
 
আরও দু’টি দেশের গণতন্ত্র নিয়ে কথা বলা যায়। এক চায়না এবং দুই ইরান।
 
‘গণপ্রজাতন্ত্রী চায়না’ গণতান্ত্রিক দেশ।
কিন্তু, সেদেশে রয়েছে একদলীয় গণতন্ত্র। আমি যখন নিয়মিত চায়না ভিজিট করতাম- সত্যিই চায়নার ‘একদলীয় গণতন্ত্র’ দেখেও আমি যথেষ্ঠ বিস্মিত ও হতবাক হতাম। কারণ তখন পর্যন্ততো আমি আমেরিকার গণতন্ত্র দেখিনি, তাই।
 
কমুনিষ্ট পার্টি অব চায়না (সিপিসি)- অসাধারণ একটা রাজনৈতিক দল।
সেখানে বহুদলীয় রাজনীতি কঠোরভাবে নিষিদ্ধ। মানুষের ব্যক্তি স্বাধীনতা নেই, উচ্চস্বরে কথা বলাও একটা ক্রাইম হিসাবে গণ্য হয় চায়নাতে। মানুষগুলি কাজ ছাড়া অন্য কিছুই বুঝে না। ধর্ম নেই। অধর্মও নেই।
 
নাস্তিক্যবাদী চায়নায় মুসলিম অধূষ্যিত ‘উরুমচি’র মুসলিমদের সংগে চাইনিজ সরকারের অাচরণ- কাশ্মিরী মুসলিমদের সংগে ভারত সরকারের আচরণের সংগেই তুলনীয় কিন্তু ‘কঠিন কঠোরতা’র জন্য সেই খবর বাইরের বিশ্ব খুব একটা জানতেও পারে না।
 
তারপরও চায়নাতে যে-কোন মানুষের পক্ষেই সেদেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া সম্ভব যদি তার ব্যক্তিযোগ্যতা থাকে- এটা অবশ্যই গণতন্ত্রও বটে।
 
কিন্তু শুধু ‘গণতন্ত্র’ দিয়ে তো মানুষ চলতে পারে না- যদি সেখানে ‘নিয়ন্ত্রিত’ জীবন-যাপন করা হয়! ও গণতন্ত্রকে আমি ততটা সম্মান করতে পারিনি।
 
আমেরিকায় বসে ফেসবুকিং-এ আমি যখন দেশের ‘যাবতীয় অসুন্দর’কে তুলাধুনো করি- অনেক বাহাবার পাশাপাশি কিছু কঠিন কথাও শুনি।
 
শুনতে হয়।
‘সাহস থাকলে দেশে এসে কথা বলেন’, ‘দূরে বসে ওরকম কথা সকলেই বলতে পারে’ ইত্যাদি।
আমি জবাব দিই খুবই কম।
 
জবাব এই জন্যই দিই না যে, যারা গণতন্ত্র, মানবতা, স্বাধীনতা শব্দগুলি শুধুই ছাপার হরফে দেখেছে- তাদেরকে বাস্তবতার ‘গণতন্ত্র, মানবতা, স্বাধীনতা’ ব্যাখ্যা দেয়া খুবই কষ্টকর। তাছাড়া অনেকেই বিষয়টাকে ‘বিশ্বাস’ও করতে চায় না!
 
আবার দ্বিতীয় একটা কারণও রয়েছে- আমাদের দেশের অধিকাংশ মানুষই ‘জানার চেয়ে বলতেই বেশী পছন্দ করে’।
 
বাংলাদেশের মানুষগুলি জানেই না যে, ‘দূরে বসেও যোগ্যতা থাকলে একটা সরকারকে ফেলে দেয়া যায়’।
 
অবাক হচ্ছেন?
আয়তুল্লাহ খোমেনী’র নাম শুনেছেন?
 
শাহ রেজা পাহলবী ছিলেন ইরানের রাজা। দুর্দান্ত প্রতাপশালী রাজা। শেখ হাসিনার মতোই বদমাশ, হিংস্র ও স্বৈরাচারী রাজা ছিলেন শাহ রেজা। কিন্তু তার ছিল আমেরিকার আনুকুল্য। ইরানকে করে তুলেছিলেন মধ্যপ্রাচ্য (ইরান আরাবিয়ান দেশ নয়, মধ্যপ্রাচ্যভুক্তও নয়) অঞ্চলের সবচে ‘অশ্লিল রাষ্ট্র’। ইসলামের মূল্য নীতির বিরোধীতা ছিল প্রতিটি কাজে। মোদ্দকথা যেমনটা চাওয়া ছিল আমেরিকার। মদ, মেয়ে মানুষ, নগ্নতা আর উচ্ছৃঙ্খলতা- এসবই ছিল ইরানের বাস্তবতা। মানবাধিকার ছিল না। ব্যক্তি স্বাধীনতা ছিল না। রাজার কথাই আইন। খুন গুম অতি স্বাভাবিক ঘটনা। কোরানের চেয়ে মুর্তিই ছিল বেশী ব্যবহৃত!
 
আয়তুল্লাহ খোমেনী ইসলামী বিপ্লবের ডাক দিলেন- নিজ দেশে টিকতে পারলেন না তিনি- খুন হয়ে যাবেন এই ভয়ে। পাড়ি জমালেন প্যারিসে। ফ্রান্সে।
 
তখন ইন্টারনেটের যুগ ছিল না। সত্তর দশকের কথা বলছি।
 
এবং সেই প্যারিস থেকেই, হ্যাঁ সেই ফ্রান্সে বসেই তিনি শাহ রেজা পাহলভীর সিংহাসনকে উপড়ে ফেলতে সক্ষম হন আয়তুল্লাহ খোমেনী।
 
১৯৭৯ সালে সফল গণবিপ্লবে পতন হয় শাহ রেজা পাহলভীর। প্যারিস থেকে দেশে ফিরে ইসলামী প্রজাতন্ত্র ঘোষনা করেন আয়তুল্লাহ খোমেনী। তিনি হন দেশের সর্বচ্চ নেতা, তবে সরকার প্রধান নন।
 
দেশে প্রতিষ্ঠা করেন পূর্ণ গণতন্ত্র।
সেই গণতন্ত্র আজও বিদ্যমান, এক সেকেন্ডের জন্যও ইরান গণতন্ত্র বিচ্যুত হয়নি আজ অবধি।
 
এই পৃথিবীতে ইরান-ই একমাত্র ‘মুসলিম দেশ’ যেখানে ‘পূর্ণ গণতন্ত্র’ রয়েছে।
একজন অতি সাধারণ দরিদ্র মানুষ ‘আহমেদিনিজাদ’ও ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন, শাসক করেছেন পূর্ণ মেয়াদজুড়ে।
 
কিন্তু তারচেও মজার বিষয় হলো- ইসলামী বিপ্লবের পর শাহ রেজার পতন হলে তেহরানের আমেরিকান দুতাবাসে হামলা চালায় ইরানীরা এবং সেই ক্ষোভে কুটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করে আমেরিকা- ইরানের সংগে।
 
আমেরিকা এই পৃথিবীর সুপার পাওয়ার।
আমেরিকা তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে ইরানকে ‘সাইজড’ করতে। পৃথিবীর ইতিহাসের কঠোরতম ‘অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা’ আরোপ করা ইরানের উপর।
 
তেল প্রধান অর্থনীতির ইরানের তেল বিক্রিও বন্ধ করে দেয়া হয়। বিমান চলাচল বন্ধ। সারা বিশ্বের ইরানের বিনিয়োগগুলি বন্ধ করে দেয়া হয়। অর্থাৎ সবরকমভাবেই ইরানকে একঘরে করে ফেলা হয় দীর্ঘ প্রায় চল্লিশ বছরেরও বেশী সময় জুরে।
 
শুধু কি তাই?
পার্শ্ববর্তী আরব রাষ্ট্র ইরাক’কে দাড় করানো হয় ইরানকে সামরিকভাবে ধ্বংশ করতে। মধ্যপ্রাচ্যের সবগুলি দেশ একত্রিত হয়ে এক কঠিন খেলায় নামে ইরানের বিরুদ্ধে। সব রাজারা একজোট হয়ে উঠে ইরানকে সাইজড করতে! ইরাকের সংগে দীর্ঘ প্রায় ৮ বছর যুদ্ধ করতে হয় ইরানকে; সর্বপ্রকার অস্ত্র দিয়ে সহায়তা করে আমেরিকা ইরাককে।
 
না। ইরান সর্বদা মহান আল্লাহর উপর ভরশা করতে থাকে। আর ভরশা রাখে তাদের নিজস্ব শক্তির, সততার, সভ্যতারও।
 
ইরানকে পরস্থা করা সম্ভবপর হয়নি।
এতো কিছু করেও ইরানকে দাবানো সম্ভব হয়নি। পুরো মধ্যপ্রাচ্য আমেরিকার নেতৃত্বেও ইরানকে ধ্বংশ করতে তো পারেই নি- সেই কঠোর নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে বহিঃবিশ্ব থেকে বিচিছন্ন ইরান সামনে এগিয়ে চলছে আপন যোগ্যতায়।
 
আজ তাদের মাথাপিছু আয় ১৯ হাজার ডলার।
যা ইউরোপের কয়েকটা দেশের চেয়েও বেশী! এটাই ইরান।
 
ইরান যদি তেল বিক্রি করতে পারতো, ইরান যদি বিদেশের সংগে স্বাভাবিক ব্যবসা করতে পারতো- তাহলে এই ইরান আজ কোথায় যেত- ভাবতে পারেন?
 
ইরান সন্ত্রাসী রাষ্ট্র নয়। সেটারও প্রমাণ হয়েছে। আমেরিকাসহ পুরো পৃথিবী বাধ্য হয়েছে ইরানের উপর থেকে অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে গেল বছর।
 
তাহলে ইরানের দোষ কোথায়?
হ্যাঁ। ইরানের একটাই দেশ। ইরান মুসলিম কান্ট্রি। তারচেও বড় দোষ, ইরান প্যালেষ্টাইনের সবচে বড় সমর্থক। ইরান-ই মুসলিম বিশ্বের একমাত্র দেশ যে সরাসরি, প্রকাশ্যে ইসরেলকে ধ্বংশ করার হুমকী দেয়। ইরান ইসরেলকে মানচিত্র থেকে মুছে ফেলতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
 
এটাই ইরানের একমাত্র দোষ।
মুসলিম বিশ্বের বাকী দেশগুলি শুধুই বিড়ালে পরিণত হয়ে রয়েছে, ইরান একাই বাঘ।
 
ইরান ইসরেলকে স্বীকার করে না।
ইরান গণতন্ত্রকে শ্রদ্ধা করে।
ইরান ইসলামী প্রজাতন্ত্র।
 
এই পৃথিবীর প্রথম গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হয়েছিল আরবে।
এবং এই আরবের প্রথম প্রেসিডেন্ট ছিলেন স্বয়ং মুহাম্মদ (সা)। অথচ আজ মুহাম্মদ (সা) কে শুধুই একজন আধ্যাতিক নেতায় পরিণত করা হয়েছে, তার প্রকৃত পরিচয় ছাপিয়ে তিনি আজ শুধুই একজন নবী-রাসুল। ধর্মগুরু। প্রচার করা হচ্ছে- ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করা যাবে না।
 
রাজনীতির মাধ্যমে যে ধর্মের আবির্ভাব- সেই ধর্মকেই বলা হচ্ছে রাজনীতিমুক্ত রাখতে!
 
যাই হোক, মুহাম্মদ (সা) এর নিজ জন্মভূমি আরবের কোথাও আজ গণতন্ত্র, মানবাধিকারের লেশমাত্র নেই। পুরো অারবভূমি শাসন করছে রাজা’রা।
 
একদল অসভ্য রাজাদের দখলে আরবভূমিসমূহ।
 
প্রায় ৬ হাজার কিলোমিটার বিস্মৃত আরবভূমি রাজাদের দখলে।
এসব রাজারা একেকজন অগণিত রাণী নিয়ে, রাষ্ট্রিয় সম্পদ ছয়-নয় করতে এবং ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে পরিণত হয়েছে আমেরিকার গোলামে।
 
সৌদি আরাবিয়া, কুয়েত, কাতার, আরব আমিরাত, বাহরাইন, জর্ডান কেউ-ই এর বাইরে নয়।
 
গণতান্ত্রিক ও ইসলামী রাষ্ট্র ইরানকে নিঃচিহ্ন করতে এই আরব রাষ্ট্রগুলি কি না করেছে আমেরিকার নেতৃত্বে! ইরাককে ধ্বংশ করতেও পরবর্তীতে তারাই হয়েছিল একাট্টা!
 
অথচ বৃটিশরা যখন প্যালেসটাইনীদের নিজ ভূমি থেকে উচ্ছেদ করে ইহুদীদের নিয়ে অবৈধভাবে ইসরেল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করে- তখন এই আরবের কেউ তার বিরোধীতা করেনি।
 
একমাত্র ইরানই ছিল ইসরেলের যম! এখনও।
 
আর আজ যখন আরেক ‘রাজাশাসিত কাতার’ হঠাৎ করেই অন্য রাজাদের বিরোধীতা করতে বসেছে (হয়তো বা বিবেকের তাড়নায়!) তখনই কাতারকে কুটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়েছে।
 
কাতার বর্তমান বিশ্বের সবচে উচ্চ আয়ের দেশ। কিন্তু কাতারে বসবাসকারী আরবের সংখ্যা মাত্র ১০%। কাতারের অর্থনীতি আহামরী কোন বড় মাপের অর্থনীতি নয়। নিজস্ব কোন কৃষিসামগ্রীও নেই কাতারের। নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যদ্রব্যের জন্য লান্ডলাইনে সৌদী আরব ও আরব আমিরাতের উপর সম্পূর্ণভাবেই নির্ভরশীল একটা অতি ক্ষুদ্র দেশ যার ১০% এলাকায় মানুষ বসবাস করে। বাকীটুকু শুধুই মরুভূমি। তবে গ্যাসের প্রচুর মজুদ রয়েছে দেশটিতে।
 
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট হবার পর বিশ্ব রাজনীতির গতিপথ বিক্ষিপ্ত হয়ে গিয়েছে। শত বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি করেছে আমেরিকা এই সেদিন সৌদী আরবের কাছে। ওদিকে রাশান ‘দুর্দান্ত পলেটিশিয়ান প্রেসিডেন্ট’ ভ্লাদিমির পুতিন খেলে চলছেন সারা বিশ্বকে নিয়ে।
 
বিশ্ব রাজনীতি’র পানি ঠিক কোনদিকে গড়াচ্ছে এই মুহুর্তেই বুঝা মুশকিল।
 
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ন্যাটোর রশির গিট হালকা করে দিয়েছেন।
এদিকে আবার টার্কিশ প্রেসিডেন্ট এরদোগান স্বৈরাচারী প্রেসিডেন্ট হিসাবে আর্বিভূত হতে চলছেন।
 
ইসরেল মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইরান’কেই কিছুটা সমীহ করে চলে। ইসরেল বেশ ভালো করেই জানে ‘ইরান’ ছাড়া মিডিলইষ্টের অন্য যে-কোন দেশকেই আমেরিকাকে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
 
এমতাবস্থায় কাতারের হঠাৎই বেঁকে বসা চিন্তার উদ্দেক ঘটায় সন্দেহ নেই কোন।
 
এর-ই মধ্যে আবার শিয়া-সুন্নীর ধোঁয়া তুলে শতধাভিক্ত মুসলিমদের ভেতরে আরও বিভেদ সৃষ্টিকারীরা তো রয়েছেই।
 
আন্দাজ করা খুবই মুশকিল বিশ্ব কোন দিকে এগুচ্ছে!
মধ্য প্রাচ্যের সেই আরব-বসন্তও থেমে গেছে। মিসরে আরেক স্বৈরশাসক জেকে বসেছে। সমৃদ্ধ লিবিয়া আজ ধ্বংশপ্রাপ্ত। আইএস থাবা শেষ করে দিচ্ছে সিরিয়া, ইরাক।
 
স্বাধীন ভুখন্ডের দাবীদার প্যালেষ্টাইন নিজেই দ্বিধাবিভক্ত। একদিকে নিয়ন্ত্রন করছে হামাস অন্যদিকে ফাত্তাহ। আমরা ঠিক কোন দিকের প্যালেষ্টাইনকে সমর্থন করি- তাও জানি না নিজেরাই!
 
মধ্যপ্রাচ্য, মুসলিম, সন্ত্রাস-ভিত্তিক আমাদের আলোচনা- শুধুই চায়ের টেবিলে আর ফেসবুকে ঝড়ই তুলতে পারবে; এর বাইরে কিছুই হবার জো নেই।
 
আমাদের ভেতরে কোন একতা নেই।
ইরান থেকে আমরা শিক্ষাও গ্রহন করি না। উল্টো শিয়া, কাফের বলে বিভক্তি সৃস্টি করি।
 
অথচ মুসলিম বিশ্বের যদি আরও ‘গোটা দশেক ইরান’ থাকতো- এই পৃথিবীর নেতৃত্ব দিতো মুসলিমরাই, নিশ্চিতভাবে।
 
এই বিশাল পৃথিবীতে একমাত্র ইরানে-ই আমি ‘প্রকৃত ইসলাম’ খুঁজে পাই।
 
রাজনীতি একটা দাবা’র খেলা।
সেই খেলার নেতৃত্ব কখন কার হাতে যাবে- জানি না।
 
তাছাড়া, অতটা বোঝার যোগ্যতা আমার কোথায়?
 
   Send article as PDF