ভবিতব্য

চায়না, উত্তর কোরিয়া, কিউবা এবং ভিয়েতনাম ও লাওস।
সোভিয়েট ইউনিয়ন ভেংগে যাবার পরও বর্তমান বিশ্বের উল্লেখিত ৫টা দেশে কমিউনিজম বেশ শক্তপোক্ত ভাবেই টিকে রয়েছে।
 
এই দেশগুলির মধ্যে শুধুমাত্র চায়না সম্পর্কে আমার কিছুটা বাস্তব ধারণা রয়েছে। চাইনিজরা ‘রিলিজিয়ন’ ওয়ার্ড-টার সংগেই পরিচিত নন। ব্যক্তিগত পর্যায়ে আমার অসংখ্য চাইনিজ বন্ধ-বান্ধব রয়েছে। আমি ওদের অনেকের কাছেই জানতে চেয়েছিলাম ‘তোমার ধর্ম কি?’
 
ওরা বেশ অবাক হয়েই আমাকে উত্তর দিতো ‘রিলিজিয়ন’ কি জিনিস?
 
আমি বানান করে এবং আরও অনেকভাবেই ওদের বোঝাতে চেষ্টা করতাম; কিন্তু ওরা বুঝতো না। অবশ্য ওরা ইসলাম শব্দটার সংগে অনেকেই পরিচিত। অনেক কষ্ট হতো ওদের বোঝাতে।
 
আসলে ধর্মহীন কমিউনিষ্ট রাষ্ট্র চায়নিজরা খুবই সুক্ষভাবে তাদের ডিকশেনারী থেকে ‘রিলিজিয়ন’ শব্দটাই বিদেয় করে দিয়েছে। ধর্ম শব্দটাই যখন থাকবে না তখন ধর্ম আসার সুযোগও থাকবে না।
 
যাই হোক, ইসলামটাকে যেমন শিয়া সুন্নিসহ বিভিন্ন গোত্রে বিভিন্ন মতবাদে বিভক্ত করে ফেলা হয়েছে নিজেদের ঐক্যহীনতার জন্য ঠিক অনেকটা সেরকমই ভিন্ন ভিন্ন দর্শনের প্যাচে পরে কার্ল মার্কসের ‘ভিশন’ও ভিন্ন ভিন্ন দেশে ভিন্নতা পেয়েছে।
 
কোন কোন দেশ বা গোষ্ঠী শুধুই সমাজতন্ত্রকে গ্রহন করেছে- অর্থনীতিকে ধরে রেখে কিন্তু রাজনীতিকে দূরে ঠেলে দিয়ে। ঠিক এমনটাই কিন্তু ইসলামের ক্ষেত্রে ঘটিয়েছে অনেকেই। ইসলাম একটা কমপ্লিট জীবন-ব্যবস্থা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে যেখানে রাজনীতিকে প্রাধান্য দিয়ে অর্থনীতিসহ সবকিছুই অন্তর্ভূক্ত রয়েছে।
 
কিন্তু আজ ‘রাজনীতি-যুক্ত ইসলাম’ চর্চা করতে গেলে বলা হয়ে থাকে ‘ধর্মে রাজনীতিকে টেনে আনা হচ্ছে’! যারা এসব বলছে তারা যে কতটা মূর্খ- সেটুকু বোঝার মতো ক্ষমতাও তাদের নেই।
 
শুরুতে ৫টা দেশের নাম বলেছিলাম।
আরও দু’টি দেশের নাম বলবো এখন- চমকাবেন না; একটা হলো ইরাক এবং অপরটি সিরিয়া। ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন এবং সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ। নাম দু’টি ইসলামিক হলেও এরা কিন্তু ‘কমিউনিষ্ট’। বিশ্বাস হচ্ছে না? ‘বাথ পার্টি’ হলো কমিউনিজমে বিশ্বাসী একটা রাজনৈতিক দল; শুধুমাত্র কমিউনিজমটুকুকে উহ্য রেখে তারা সমাজতন্ত্র কায়েমের নামে রাজনীতি করেছে বা করে যাচ্ছে।
 
আমি মোট ৭টি দেশের নাম বললাম।
এই দেশগুলিতে কোন কালেও গণতন্ত্র ছিল না, এখনও নেই। কিছু প্রভাবশালী পরিবার বা গোষ্ঠী (যখন যে সুযোগ পেয়ে যায়) ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে বেড়ায় ওসব দেশে। এবং এরা প্রত্যেকেই মুলত ‘আজীবন’ ক্ষমতায় থাকার স্বপ্ন দেখে। এরা দেশের মানুষকে তাদের প্রজা হিসাবে দেখে। নিজেদের রাজা’র চেয়েও বড় ভাবে। প্রয়োজন হলে এরা ধর্মকে ডিকশেনারী থেকে তুলে দেয়, আবার প্রয়োজন হলে ধর্মকে সামনে নিয়ে মানুষকে থামিয়ে দেয়।
 
আপাদমস্তক একজন বিকৃত মানসিকতার প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন (যিনি কিনা ক্ষমতার জন্য তার নিজ দুই মেয়ের হাজবেন্টদেরও প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে)- নিজেকে ইরাকের আজীবন প্রেসিডেন্ট ঘোষনা করে সংসদে পাশ করিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু ভাগ্যের কি নিমর্ম পরিহাস- করুণ পরিণতি হয়েছিল তার জীবনে!
 
প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ আরও একজন সমাজতন্ত্রীর মুখোসে কমিউনিষ্ট। ইসলামকে ব্যবহার করে চলছে দীর্ঘদিন। নিজ দেশের জনগণের সংগে তার সামান্যতম সম্পর্কও নেই কিন্তু সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে নিজ মতের বিরোধী জনগণকে হত্যার মাধ্যমে নিজের ক্ষমতা টিকিয়ে রেখেছে। সিরিয়াকে আজ ধ্বংশ করে ফেলা হয়েছে এবং এরজন্য শতভাগ দায়ী এই নষ্ট মানুষটি।
 
উত্তর কোরীয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জং আন- নিজ পিতা ও দাদার চরিত্রের নোংড়া দিকগুলি সুইজারল্যান্ডের মতো সভ্য দেশে পড়াশোনা করেও নিজের চরিত্র থেকে বাদ দিতে পারেনি। মন চাইলেই নিজের দেশের মানুষকে হত্যা করা তার নেশা- বাদ যায় নি তার গুলির নিশানা থেকে আপন ভাইও!
 
চলুন আরেকজন সমাজতন্ত্রীর সংগে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিই। তিনি বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট, প্রধানমন্ত্রী এবং আবারও প্রেসিডেন্ট শেখ মুজিবর রহমান। পাকিস্তান থেকে দেশে ফিরেই তিনি বাংলাদেশকে সমাজতান্ত্রিক দেশ হিসাবে ঘোষনা দিয়ে বসলেন। ‘বাঙালী জাতীয়তাবাদ, ধর্ম-নিরপেক্ষতা, গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্র’ শব্দ চারটির মূল দর্শন ছিল সেই সমাজতন্ত্রের নামে উত্তর কোরীয়ার আদলে একটা একক পরিবার-কেন্দ্রিক দেশ প্রতিষ্ঠা।
 
আওয়ামী লীগের নামে রাজনীতি করা শেখ মুজিবর রহমান আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করে নিজের ক্ষমতাকে আরও পাকাপোক্ত এবং চিরস্থায়ী করতে গঠন করলেন ‘বাকশাল’।
 
একজন সাদ্দাম হোসেন, একজন বাশার আল আসাদ, একজন কিম জং আন এরচে বেশী কিছু ছিলেন না শেখ মুজিবর রহমান। অসম্ভব ক্ষমতালোভী, তোষামদ-প্রিয় এবং রাষ্ট্রের সবকিছুকে নিজের মনে করা অদক্ষ শাসক শেখ মুজিবর রহমান তার বিশাল হৃদয়ের কাছে নিজেই পরাজিত হয়েছেন বারবার; গণতন্ত্রকে হত্যা করেছেন, মানবাধিকারকে লাথি মেরে ঠেলে দিয়েছেন বহুদূরে এবং যে স্বাধীনতার নাম করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান থেকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে তোলার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন সেই বাংলাদেশের মানুষের ব্যক্তি-স্বাধীনতাকেই তিনি হত্যা করেছিলেন সর্বপ্রথম।
 
আমরা দেখেছি সাদ্দাম হোসেনের করুণ মৃত্যু, আমরা দেখেছি শেখ মুজিবের করুন মৃত্যু, আমরা দেখার অপেক্ষায় রয়েছি বাশার আল আসাদ এর করুণ মৃত্যুও।
 
কিন্তু এরই মধ্যে শেখ মুজিব, সাদ্দাম হোসেন, বাশার আল আসাদ, কিম জং আন-কে ছাড়িয়ে আরও একজন ‘ধর্ম-নিরপেক্ষতা’র মুখোসে মুখ ঢেকে ধর্মহীনতাকে পুজি করে সমাজতন্ত্রী এবং কমুনিষ্টদের সংগী করে- গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতাকে ও সেই সংগে দেশের সমস্ত বিরোধী মতকে হত্যা করে ‘একনায়কতন্ত্র’ প্রতিষ্ঠা করে চির জীবন ক্ষমতায় থাকার সমস্ত আয়োজন সম্পন্ন করেছে খুনী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
 
শেখ হাসিনা একের পর এক বিরোধী মতবাদীকে প্রকাশ্যে রাব-পুলিশ দিয়ে হত্যা করে, নির্যাতন করে পুংগ করে এবং জেলে ঢুকিয়ে নিজের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করে চলছে! এবং এরই ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সংযোজন ঘটিয়েছে দেশের সবচে জনসমর্থিত রাজনৈতিক দল বিএনপি প্রধান বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে জেলে ঢুকিয়ে, বিএনপিকে ধ্বংশ করার ফাঁদ পেতে।
 
অনেকেই, প্রায়শই আমার কাছে জানতে চান বেগম জিয়া ও বিএনপি ভবিষ্যত নিয়ে কিছু ধারণা দিতে। ক্ষমা চেয়ে নিই- আমি অতটা বড় গবেষক বা রাজনৈতিক বিশ্লেষক নই যে বেগম জিয়া বা তার পরিবার ও দল বিএনপি নিয়ে ভবিষ্যতবানী লিখবো।
 
তবে দেশের একজন অতি সাধারণ মানুষ হিসাবে আমার নিজস্ব কিছু বিশ্লেষন রয়েছে, সেটা আজ বলতে চাচ্ছি বলেই এতটা লম্বা ভূমিকা টানলাম।
 
শেখ হাসিনা তথাকথিত আগামী সাধারণ নির্বাচনের বৈতরণী পার হবার পূর্বে বেগম জিয়াকে কোন অবস্থাতেই জেল থেকে মুক্তি পেতে দিবেন না। বিচার বিভাগকে তিনি আরও অনেক আগেই ধ্বংশ করে তার তর্জনীর নির্দেশনার মুখাপেক্ষী বানিয়ে রেখেছেন। সুতরাং বিচার বিভাগ কোন স্বাধীন রায় দেবার ক্ষমতা রাখে না।
 
বেগম জিয়া নিজে মাঠে নামলে যথেষ্ঠ জনসমাগম হয় বিধায় হাচিনার পুলিশ বাহিনীর গুলিতে প্রচুর মানুষের মৃত্যু তাকে আন্তর্জাতিক অংগনে সিরিয়ার বাশার আল আসাদের মতোই কোনঠাসা করে ফেলতে পারে- সেটা সে বেশ ভালোই জানে। বর্তমানে তার বাড়াবাড়ির রাজনীতি আরও মারাত্মক হয়ে জাতিসংগ বা বিশ্বশক্তি যেন কোন একশন না নেয় সেই ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতেই শেখ হাসিনা কখনও-ই বেগম জিয়াকে মুক্ত হতে দিবে না।
 
জেল-বন্দী বেগম জিয়ার বাইরে বিএনপিতে আন্দোলন করার মতো কোন নেতা নেই।
 
তারেক রহমান সাহেব লন্ডনে পরে রয়েছেন, তিনি ইতিমধ্যেই বৃটিশ নাগরিকত্বও গ্রহন করেছেন। শেখ মুজিবর রহমান যেভাবে পাকিস্তানী পাসপোর্ট নিয়ে লন্ডন হয়ে দেশে ফিরে ‘প্রধানমন্ত্রী’ হয়েছিলেন- তারেক সাহেবও হয়তোবা অপেক্ষায় রয়েছেন বাংলাদেশের জনগন ‘এমনি এমনি’ আন্দোলন করে শেখ হাসিনাকে সড়িয়ে দিয়ে তাকে আমন্ত্রণ জানাবেন এবং তিনি তাৎক্ষনাত তার বৃটিশ পাসপোর্ট নিয়ে লন্ডন থেকে ঢাকায় নেমে প্রধানমন্ত্রীত্ব গ্রহণ করবেন।
 
প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের ছেলে হিসাবে যে সুযোগটুকু ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে তারেক রহমান নষ্ট করেছেন; সেই সুযোগ তিনি দ্বিতীয়বার পাবেন- এমনটা ভাবা অনুচিত।
 
সবচে বড় কথা যদিও হাচিনা-কে ক্ষমতা থেকে নামানোটা অত্যন্ত জরুরী; দেশটাকে, দেশের মানুষকে রক্ষা করতে চাইলে- কিন্তু হাচিনার জায়গায় বেগম জিয়াকে প্রতিস্থাপন আদৌ কি কোন সুফল বয়ে আনবে! দেশের মানুষ এখন আর সেটা বিশ্বাস করে না।
 
নরেন্দ্র মোদীর কৃপায় এবং পুলিশ রাবের স্পেশাল পাহাড়ায় শেখ হাসিনা আমৃত্যু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। তার মৃত্যুর ফয়সালা হবে- তার ক্যান্সার রোগে অথবা ঠিক তার পিতার মতোই কোন এক মধ্যরাতের বন্দুক যুদ্ধে ক্রসফায়ারে পরে এবং ক্ষমতা নিবে ভারতীয় আর্শীবাদপুস্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনী- এমনটাই বাংলাদেশের ভবিতব্য।
 
এর অন্যথা হবার কোন কারণ আমি আপাতত দেখছি না।
তবে, একটা সুযোগ ছিল- পুরাতন বস্তা-পঁচা নেতাদের মধ্যে থেকে নয়- সম্পূর্ণ ফ্রেশব্লাড কোন তরুণ নেতৃত্ব সৃস্টি হতে পারতো- কিন্তু সেটাও হবে না; কারণ বাংলাদেশের মানুষ ভালো নেতা পাবার যোগ্যতা রাখে না।
 
ভালো, দূরদর্শি, গণতান্ত্রিক মানসিকতার নেতা কিভাবে আসবে- যে দেশের শতকরা ৯৫জন লোক সর্টকাটে ও কোন কাজ না করে ‘বড়’ হতে চায়!
 
এমনকি দেশ যখন ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে তখনও তারা ব্যস্ত আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের পতাকা বানাতে- যে আর্জেন্টিনা বা ব্রাজিলের লোকজন ‘বাংলাদেশ’ নামের যে- কোন একটা দেশ রয়েছে সেটাই জানে না!
 
‘ভালো নেতা পেতে হলে- আগে তো ভালো মানুষ হতে হবে’; ভুল বললাম কিছু?
 
   Send article as PDF