ডালাস

আশির দশকের শেষে আর নব্বই এর দশকের প্রথম দিকে বিটিভিতে রাত দশটার খবরের পর প্রতি শুক্রবার ‘ডালাস’ নামে একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল প্রচারিত হত- আমি ঐ বয়সে কিছুই বুঝতাম না তবে নিয়মিত দেখতাম। ‘ডালাস’ নামটা তখন থেকেই আমার মাথায় ছিল।
 
ডালাস- আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম একটি ষ্টেট টেক্সাসের একটি শহর। এই শহরের আশেপাশে আরও কয়েকটি শহর রয়েছে- ফোর্ট ওর্থ, আর্লিংটন, হার্ল্টন সিটি ইত্যাদি।
 
নিউ ইয়র্ক আমার ভাল লাগেনি। ডালাস চলে আসলাম।
ডালাসে আমার সবচে কাছের বন্ধূ পাকিস্তানী আমেরিকান সাঈদ ভাই। কোন কারণ ছাড়াই এই ভদ্রলোক কেন যে আমার এতো উপকার করে যাচ্ছেন আমি বুঝি না; হিসাব মিলাতে পারি না।
 
ডালাস এমন একটি শহর যেখানে নিজের প্রাইভেট ট্রান্সপোর্ট ছাড়া বসবাস করা অসম্ভব। বাংলাদেশে এক দশকের বেশী সময় ধরে গাড়ীতে অভ্যস্ত আমি- আমেরিকা আসার পর এখনও গাড়ী কেনা হয়নি। ডালাসে এই সাঈদ ভাই সার্বক্ষনিক তার গাড়ী নিয়ে আমার সংগে রয়েছেন। আমার যে-কোন ব্যক্তিগত প্রয়োজনে তিনি সবসময় আমার পাশে উপস্থিত তার গাড়ী নিয়ে।
 
আমি আরও দুইজন পাকিস্তানীর সাথে জীবনে পরিচিত হয়েছিলাম। তার একজন চায়নার জেনান শহরের সাংডং মেডিকেল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্ট, অপরজনের সাথে পরিচিত হয়েছিলাম চায়নাতেই- ওয়েনঝু শহরের একটি হোটেলে। এই তিন পাকিস্তানীর কাছ থেকেই আমি যে কতটা সহযোগীতা ও আন্তরিকতা পেয়েছি- জীবনে ভুলতে পারবো না। তবে, এদের মধ্যে সাঈদ ভাই অনন্য।
 
সাঈদ ভাই গতকাল আমাকে জুম্মার নামাজের জন্য বাসা থেকে একটি মসজিদে নিয়ে গেলেন।
কয়েকদিন যাবৎ-ই তিনি বলতেছিলেন- ‘রফিক ভাই এর সাথে আপনার পরিচিত হওয়া দারকার। সে বাংলাদেশী। অনেক বছর যাবৎ ডালাসে বসবাস করছেন; তার দুইটি চিকেন ফ্রাইড এর দোকান রয়েছে (এখানে রেষ্টুরেন্টকে দোকান বলে); তিনি খুবই ভাল মানুষ, তাছাড়া আপনার কমিউনিটির লোক’।
 
মসজিদে ঢুকেই তিনি সাঈদ ভাইকে দেখে ফেলেছেন। আমাকে বললেন, জুম্মার পর পরিচয় করিয়ে দেবেন।
সদা হাস্যময় ও অত্যন্ত আন্তরিক রফিক ভাই পরিচয়ের প্রথমেই বললেন, ‘কাল আমার বাসায় ইফতার করবেন’। আমিও রাজী হয়ে গেলাম। তিনি সাঈদ ভাইকেও দাওয়াত করলেন। কিন্তু ব্যস্ত থাকায় তিনি সময় দিতে পারবেন না; তাই রফিক ভাই নিজেই আমাকে বাসা থেকে পিক করবেন বলে জানালেন।
 
এখানে সন্ধ্যা হয় ৮.৪০মিনিটে। সোয়া সাতটার দিকে রফিক ভাই আমার বাসার গেটে এসে আমাকে কল করলেন। গাড়ীতে উঠার পরই ওনি বললেন এখনও যেহেতু একটু সময় আছে ইফতারের- চলেন আপনাকে শহরটি একটু ঘুড়িয়ে দেখাই।
 
ওহ বলা হয় নি, ওনার বাসা আর্লিংটনে, একটি দোকান ডালাসে ও অপরটি ফোর্থ ওর্থে।
আমাকে একটি পার্কে নিয়ে গেলেন। আজ ছিল আমেরিকার স্বাধীনতা দিবস। সারা আমেরিকা জুড়ে সবাই খুব আনন্দ করছে। নির্জন পার্কে অনেকেই পিকনিক এ ব্যস্ত।
 
পার্কটি আমি গুগল আর্থে আগেই দেখেছি। আলিংটনে কয়েকটা সুন্দর সুন্দর লেক আছে- তাও জানি। রফিক ভাই বললেন তিনি ঐ লেকগুলিতে নিয়মিত মাছ শিকার করেন। এবং তিনি কখনও মাছ বাজার থেকে কেনেন না। এমনকি তার বন্ধুদেরও তিনি নিয়মিত তাজা মাছ পাঠান। শুধু মাংস কিনেন বাজার থকে। রুই মাছ, তেলাপিয়া মাছ সহ আমেরিকান কিছু সুস্বাধূ মাছের কথা তিনি বললেন।
 
আমি জানতে চাইলাম, ‘ছোট মাছ পাওয়া যায় কিনা? কাচকি বা অন্য কোন ছোট মাছ।’
ছোট মাছ আমার খুবই প্রিয় একটি খাবার। ছোট বেলায় গ্রামে থাকতে মা’র হাতের রান্না করা ছোট মাছ! ওহ্। এখনও জীভে জল এসে যায়। ঢাকা শহরে তাজা ছোট মাছ কদাচিত পাওয়া যায়।
 
নিউ ইয়র্কে বা ডালাসেও বাংলাদেশী গ্রোসারীগুলিতে ছোট মাছ পাওয়া যায়- তবে তা ৫/৬ মাসের পুরোনো- কোন টেষ্ট নেই।
 
আমেরিকায় এসে আমি শুধুমাত্র বাংলাদেশের তাজা ছোট মাছ টা-কে ই বেশী মিস করছি।
রফিক ভাই হেসে বললেন- বাসায় চলেন আপনাকে আজ ছোট মাছ খাওয়াবো। আলিংটনের লেকের তাজা ছোট মাছ।
 
আমি আজ তাজা ছোট মাছের তরকারি দিয়ে ভাত খেলাম।
ওহ্। সেকি স্বাদ। ঢাকা শহরেও কোনদিন এতটা সুস্বাদু ছোট মাছ খাইনি। ধন্যবাদ রফিক ভাই; ধন্যবাদ সাঈদ ভাই।
 
আমার অতি প্রিয় তাজা ছোট মাছের সমস্যার সমাধান দেবার জন্য।
রফিক ভাই কথা দিয়েছেন, এরপর যেদিন তিনি মাছ শিকার করতে যাবেন- আমাকে সাথে নিয়ে যাবেন। আমি অপেক্ষায় থাকলাম তাজা মাছ শিকারের।
   Send article as PDF