আরও কথা!

আমেরিকা দেশটাই প্রযুক্তিময়; এখানে সবকিছুতেই প্রযুক্তির ছোয়া লেগে রয়েছে। প্রযুক্তির বাইরে এরা কোন কিছু চিন্তাই করতে পারেন না। এখানকার বাড়ী-ঘর, দোকান-পাট, স্কুল-কলেজ, রাস্তা-ঘাটে যেখানেই যা দেখা যায় তার সবকিছুতেই প্রযুক্তির ছোয়া- সবসময়ই আমার দৃষ্টিতে আটকে যায়।
 
বাংলাদেশে মোবাইল ফোন রিচার্জ করা যায় একটা সাধারণ মানের (বেসিক ফোন) মোবাইল থেকে টেক্স মেসেজ পাঠিয়ে বা শার্ট কোডের মাধ্যমে। আমি সেই ২০০৩ সাল থেকে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে মোবাইল ফোন রিচার্জ করার প্রযুক্তিময় সেবা প্রদানের- কিন্তু কিছুতেই সফলতা পাই নাই।
 
আমার সফলতা না পাবার ৩টি বাস্তব কারণ ছিল।
 
১) বাংলাদেশে ভাল মানের সফটওয়্যার প্রোগামার নেই বললেই চলে। আর যারা বা যে সত্যিই কিছু জানে তারা দেশ থেকে চলে যায় আমেরিকায় অথবা অন্য কোন উন্নত দেশে।
 
২) বাংলাদেশের সরকার, অর্থ মন্ত্রণালয়, তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বিটিআরটি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ যাদের হাতে রয়েছে- এরা সবগুলিই গাধার বাচ্চা গাধা; ভুলক্রমে এরা মানুষ হয়ে পৃথিবীতে বেঁচে রয়েছে এবং দেশের মানুষের কষ্টের ট্যাক্সের টাকায় বেতন ভোগ এবং চুরি-ডাকাতি করার ফন্দি নিয়ে এতটাই ব্যস্ত যে- কোন মহৎ কাজে সময় দেবার মতো সময় এদের নেই।
 
৩) মোবাইল অপারেটররাও সবসময় মনোপলি ব্যবসা নিয়ে সচেতন- কাউকে ব্যবসায় ছাড় দেবার অথবা প্রকৃত অর্থে আধুনিক সেবা দেবার কোন ইচ্ছে, রুচি, আগ্রহ অথবা যোগ্যতা তাদের নেই।
 
আমার মতো আরো অনেকেই বাংলাদেশে এই একই সেবাটি দিতে চেষ্টা করেছে বা করে যাচেছ কিন্তু কারো সফলতা ‘উপরিউক্ত ৩টি কারণে’ নেই বললেই চলে।
 
বাংলাদেশ সরকার- কখনওই দেশের সাধারণ জনগণকে নিয়ে কিছুই ভাবে না অথবা ভাবার মতো যোগ্যতাও তারা রাখে না। নতুন কোন উদ্যোগ এরা ভয় পায়।
 
আমি নিজে একবার ১৯৯৯ সালের দিকে- একটি আইটি প্রজেক্ট নিয়ে- তাতে ফিনান্স করার জন্য উত্তরা ব্যাংকের হেড অফিসে- ব্যাংকের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এর সাথে বসেছিলাম। তিনি খুবই অনাগ্রহ নিয়ে সবটা শুনলেন এবং শেষটায় বললেন, ‘দুঃক্ষিত, আমি কমপিউটার এর কোন প্রজেক্টে লোন দিতে পারবো না; আমি শুনেছি কমপিউটারে ভাইরাস ঢুকে সবকিছু ধ্বংশ করে দিতে পারে।’ আমি তাকে ‘এই ভাইরাস যে সেই ভাইরাস না’ সেটা অনেকভাবে চেষ্টা করে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছিলাম।
 
এভাবেই বাংলাদেশের প্রতিভাবান গরুগুলি কর্পোরেট হাউজগুলির নেতৃত্বে বসে রয়েছে।
 
২০০৭-৮ সালের দিকে আরোও একটি উদ্যোগ নিয়েছিলাম একটি অনলাইন পোর্টাল করার জন্য যেটা হবে একটা ইন্টারন্যাশনাল পেমেন্ট গেটওয়ে, অনলাইন ব্যাংক এবং যেটা থেকে মোবাইল রিচার্জ, ট্রেন-বাস-লঞ্চ এর টিকেট অনলাইনে ক্রয় করা যাবে, ষ্টেডিয়াম এর খেলা, কনসার্ট বা সিনেমা হলের টিকেট কেনা যাবে, ডাক্তারের সংগে অনলাইনে ই-টোকেনের মাধ্যমে এপয়েন্টমেন্ট করা যাবে; রোগীর সম্পূর্ণ তথ্যাদি অনলাইনে সংরক্ষিত থাকবে- যেখান থেকে অতি সহজে অন্য ডাক্তারও চাইলে প্রয়োজনীয় তথ্য পেয়ে যাবে। সারা দেশে একটি অনলাইন ব্লাড ব্যাংকও তৈরী করেছিলাম।
 
যথারীতি বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করলাম অনুমোদনের জন্য- এবং আমি নিশ্চিৎ ড. আতিয়ার সেটা খুলে দেখার সময়ও পাইনি- সে ব্যস্ত ছিল কিভাবে বিশাল অংক ব্যাংক থেকে হাতিয়ে নেয়া যায়।
এসব ফালতু কাজে সময় দেবার মতো সময় তার কোথায়?
 
বেশ কয়েকজন নামকরা ডাক্তার এর সংগেও আমি নিজে দেখা করে বিষয়টা বুঝিয়েছিলামও; কিন্তু এতে তাদের বিশাল ট্যাক্স ফাকির সুযোগ নষ্ট হবে- কাজেই তারা ওটা করবেন কেন?
 
বাংলাদেশে প্রযুক্তির কোন দরকার নেই।
শুধু রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর পুত্রের জন্য- যাতে সে মাসে তার বেতন ২ লাখ ডলার থেকে বাড়িয়ে ৪ লাখ ডলার করে নিতে পারে।
 
বাংলাদেশের স্যাটেলাইট মোবাইল ফোন এর সার্ভিস চালুর জন্য আমি চেষ্টা করেছিলাম ২০০২ সালের দিকে।
 
আবুধাবি ভিত্তিক ‘সুরাইয়া’ (http://www.thuraya.com/) এর সংগে আমার যোগাযোগ হয়। *ছোট ভাইয়াও খুব আগ্রহ ছিল বিষয়টি নিয়ে। যাই হোক, সেসময় টেলিকমিউনিকেশন বিষয়টি নিয়ে কিছু স্ট্যাডি করার সুযোগ হয়েছিল। স্যাটেলাইট মোবাইল, এএমপিএস, জিএসএম, সিডিএমএ, ইউএমটিএস ইত্যাদি বিষয়গুলি তখনই আমি জানতে পারি বা বুঝতে শিখি। টু-জি, থ্রি-জি, ফোর-জি, এলটিই সম্পর্ক বুঝি।
 
তবে, আমাকে তখন সবচে বেশী বিস্মৃত করেছিল ঐ সময়ের বিশেষজ্ঞদের একটা বিষয়; তাদের বক্তব্য ছিল একটা সময় জিএসএম ও সিডিএমএ একই হার্ডওয়ারে চলে আসবে এবং তখন জিএসএম সীম বা সিডিএমএ রিম একই সেটে ব্যবহার করা যাবে।
 
তথ্যটিতে এতটাই উত্তেজিত বোধ করেছিলাম যে- এখনও সেই কথাগুলি আমার মাথায় রয়ে গিয়েছিল।
 
যাই হোক- আমেরিকায় ওয়েব পোর্টাল ছাড়া কোন মোবাইল ফোন রিচার্জ করা যায় না। এখানে মোবাইল নাম্বার- কোন মোবাইল অপারেটার ইস্যু করতে পারে না। ফেডারেল গভার্ণমেন্ট থেকে মূলত মোবাইল নাম্বার- জিপ কোড (এরিয়া) এর আওতায় ইস্যূ করা হয়। প্রতিটি নাম্বারের একটি একাউন্ট ও পিন কোড থাকে- যেটা দিয়ে যে-কোন সময় অন্য অপারেটরে চলে যাওয়া যায়।
 
আমেরিকায় অসংখ্য মোবাইল অপারেটর কাজ করে যাচ্ছে – যা সিডিএমএ এবং জিএসএম ভিত্তিক। এখানে টেলিকম মাদার কোম্পানীগুলির মধ্যে রয়েছে এটিএন্ডটি, ভ্যারাইজন, টি-মোবাইল, স্পিরিন্ট ইত্যাদি। তবে, এরা আবার এমভিএনও সার্ভিসও বিক্রি করে। আমি, বা আপনি চাইলে- যে-কোন সময় নিজেরাই এমভিএনও সিষ্টেম ভাড়া নিয়ে অত্যন্ত অল্প খরচে একটা মোবাইল অপারেটর হয়ে যেতে পারি; সার্ভিস চালু করে ফেলতে পারি।
 
লাইকা, গো-ফোন, সিম্পল, ক্রিকেট, আলট্রা ইত্যাদি শ’খানেক অপারেটর কাজ করে যাচ্ছে। লাইকা বিশাল একটা অপারেটর। আমেরিকার বাইরেও অষ্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, ইওরোপের বেশ কয়েকটি দেশে এদের সেবা রয়েছে এবং এই কোম্পানীর মালিক একজন শ্রীলংকান অরিজিন আমেরিকান মুসলিম।
 
মোবাইল সম্পর্কিত আরও কিছু তথ্য শেয়ার না করে পারছি না।
 
বাংলাদেশের কান্ট্রি কোড হলো +৮৮০, ভারতের +৯১, চায়নার +৮৬ এভাবে সব দেশেরই নিজস্ব কান্ট্রি কোড রয়েছে। স্যাটেলাইট মোবাইল অপারেটর সুরাইয়া যদিও কোন দেশ না- তথাপিও তার জন্যও একটি কান্ট্রিকোড বরাদ্দ আছে এবং ব্যবহৃত হচ্ছে যেটা হলো- +৮৮২।
 
আমি বাংলাদেশে থাকতে যে সীমকার্ডটি ব্যবহার করতাম, সেটার নাম্বার ছিল ০১৭২-৪৫৬৭৮৯০। নাম্বারটি অসাধারণ। গ্রামীন ফোনের ভাষায় এটা একটি ‘প্লাটিনাম নাম্বার’। সুন্দরের প্রতি আমার দূর্বলতা সহজাত; আর সেজন্যই এই নাম্বারটি অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে সংগ্রহ করেছিলাম।
 
একটু লক্ষ্য করবেন, নাম্বারটি শুরু হয়েছে ০১৭ দিয়ে- এটাকে বলা হয় এরিয়া কোড; সিটিসেল এর এরিয়া কোড ০১১, টেলিটকের ০১৫ ইত্যাদি। আমরা বাংলাদেশে এভাবেই বুঝে থাকি।
 
আচ্ছা ঢাকার টেলিফোনের এরিয়া কোড কত? সবাই জানেন- ওটা ০২, সিটাগাং ০৩১। ভোলার এরিয়া কোড ০৪৯১, আমার গ্রামের বাড়ী দোহারের এরিয়া কোড ০৬২২৪।
 
এবার একটু লক্ষ্য করুন আমাদের দেশের মহাজ্ঞানী, মহা বুদ্ধিমান আমলা, এমপি, মন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী তথা তার পুত্রধনের কত বুদ্ধি। সামান্য একটি ‘সুন্দর ও সিষ্টেমেটিক’ এরিয়া কোড তৈরীর মতো সৌন্দর্য্য সচেতনতাও তাদের কোনদিন স্পর্শ করেনি।
 
আরেকটু বুঝিয়ে বলি, আমেরিকার সর্বমোট ষ্টেট হলো ৫০টি। এর বাইরেও তার রয়েছে প্রায় আরও ১০টি টেরিটরি বা অধিনস্ত অঞ্চল- যার সবগুলির একই কান্টি কোড +১।
 
আমেরিকার সাথে আরও একটি বিশাল দেশ কানাডা; তারও কান্ট্রি কোড +১। এছাড়াও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলের অনেকগুলি দেশেও কান্ট্রি কোড হিসাবে ব্যবহার হয় +১।
 
আমি কান্ট্রি কোড নিয়ে বলতে চাচ্ছি না; শুধু সংখ্যা বুঝালাম। বলতে চাচ্ছি এরিয়া কোড নিয়ে।
 
আমি আমেরিকায় যে মোবাইল ফোনটি ইউজ করি- তার এরিয়া কোড ৯১৭। নিউ ইয়র্কের বাসিন্দারা যেসব এরিয়া কোড পায় তার মধ্যে রয়েছে ৭১৮ বা ৬৪৬ বা ৩৪৭, ৯১৭ বা ২১২ ইত্যাদি। টেক্সাসের এরিয়া কোডের মধ্যে অন্যতম হলো- ২৮১, ২১০, ৩৪৬, বা ৯১৫ ইত্যাদি। কানাডার কয়েকটি এরিয়া কোড হলো ৫৬৩, ৫১৫, ৩১৯ ইত্যাদি। এভাবে পুরো আমেরিকা বা কানাডার এরিয়া কোড ব্যবহৃত হয় মাত্র ৩টি ডিজিট নিয়ে। এরপর থাকে আরও ৩টি ডিজিট এবং শেষে ৪টি ডিজিট। যেমন একটি ফোন নাম্বার হলো: ৭১৮-৭৪৪-৯৫৯০।
 
আমেরিকা বা কানাডার সব নাম্বারই এই একই ফরমেট ধরে তৈরী হয়।
 
বিষয়টি সুন্দর, পরিচ্ছন্ন এবং সভ্যতা নিদর্শন করে।
 
বাংলাদেশে এরিয়া কোডে তাহলে কয়টা ডিজেট?
১টি? না ২টি না পাঁচটি?
বাংলাদেশ কোন দিক দিয়ে আদৌ সভ্য একটি দেশ- আমার সত্যি খুব জানতে ইচ্ছে করে।
 
সম্প্রতি তারানা হালিম- মোবাইল ফোনের বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশন চালু করেছেন। অর্থাৎ সকল মোবাইল নাম্বার ব্যবহারকারীকে তার হাতের আঙ্গুলের ডিজিটাল প্রিন্ট দিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করতে হবে।
 
আমি মোবাইল টেলিকমিউনিকেশনস সম্পর্কে যতটুকু জানি- তাতে আদৌ এর কোন প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না। বিষয়টি খুবই হাস্যকর এবং অসভ্য চিন্তা চেতনা থেকে এসেছে।
 
শুধু সীম কার্ড দিয়ে তো কথা বলা সম্ভব নয়, সীম কার্ডটি একটি মোবাইলে ঢুকিয়ে পাওয়ার অন করে তারপর চালাতে হয়। লক্ষ্য করবেন- প্রতিটি সীম কার্ডের একটি নাম্বার রয়েছে অপর দিকে সবচে বেশী কার্যকর প্রযুক্তি হলো মোবাইল ফোনের ‘আইএমইআই’ নাম্বার। প্রতিটি মোবাইল ফোনের বা সেটের একটি সিরিয়াল নাম্বার থাকে যেটাকে বলা হয় আইএমইআই কোড বা নাম্বার।
 
আপনি যখনই আপনার সীম কার্ডটি কোন মোবাইল সেটে ঢুকাবেন সংগে সংগে আপনার অপারেটর সেই মোবাইল সেটটিকে আপনার সীমের নাম্বারের সাথে অটো-রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে ফেলবে। অর্থাৎ অপারেটর জেনে যাবে আপনি কোন মোবাইল সেট ব্যবহার করছেন। এমনকি এই মোবাইল সেটটি পূর্বে অন্য কেউ অন্য কোন নাম্বার দিয়ে ব্যবহার করেছে কি না তাও তারা অটোমেটিক জেনে যাবে। আপনার মোবাইলে রয়েছে জিপিএস সুবিধা। সুতরং আপনার অপারেটর মুহুর্তেই আপনি ঠিক পৃথিবীর কোন প্রান্তে মোবাইলটি নিয়ে- কোন লোকেশনে দাড়িয়ে রয়েছেন- সেটাও মুহুর্তেই আপনার মোবাইল অপারেটর বলে দিতে পারবে।
 
আপনি আপনার ব্যবহৃত সীম কার্ডটি ফেলে দিয়ে অন্য কোন নতুন সীমকার্ড আপনার পুরাতন মোবাইলে ঢুকােলেও আপনি যে আগে অন্য একটি সীমকার্ড ব্যবহার করেছেন- সেই তথ্যটিও অপারেটরের কাছে রয়েছে।
তাহলে- তারানা হালিম মোবাইল এর রেজিষ্ট্রেশন করিয়ে ঠিক কি করবেন- আমার মাথায় আসছে না। আর এখানে বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশন এরই বা কি প্রয়োজন রয়েছে সেটাও বুঝি না।
 
এবং এই বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশনটিই বা কিসের বেসিসে করা হচ্ছে- সেটা তো আমার মাথায়ই আসছে না।
 
বাংলাদেশের ৫/৬টি মোবাইল অপারেটর রয়েছে- তারা কোন ডাটাবেসের আওতায় বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশন করছে? তাদের নিজস্ব ডাটাবেস? কিভাবে সম্ভব? একটি প্রাইভেট এবং বিদেশী কোম্পানী’র কাছে আমার ডাটাবেজ কেন থাকবে? নির্বাচন কমিশন যে ডাটাবেজ তৈরী করেছিল- সেটারও কোন বাস্তব কার্যকারিতা নেই।
 
তাছাড়া যাদের ন্যাশনাল আইডিতে রেজিষ্ট্রেশন নেই- তারা কিসের আওয়ায় বায়োমেট্রিক রেজিষ্ট্রেশন করবে?
দীর্ঘ সময় দেশ বিদেশ ভ্রমণ করেছি আমি। আমাদের পাশ্ববর্তী ভারত, চায়না, মালয়েশিয়ার একাধিক মোবাইল নাম্বার আমি ব্যবহার করেছি। করেছি ওয়ার্ল্ড সীমের নাম্বারও। ভারত আর নেপাল ছাড়া কোন দেশে আমাকে পেপার রেজিষ্ট্রেশনও করতে হয়নি। চায়নাতে ফুটপাতে সীমকার্ড বিক্রি হয় সিগারেট-চা-বিস্কিটের মতোই।
 
১৩০ কোটি মানুষের দেশ চায়নাতে কি ক্রাইম দিয়ে ভরে গেছে?
১২৫ কোটি মানুষের দেশ ভারতে কি মোবাইল ক্রাইম হচ্ছে- ভারত সরকার ধরতে পারছে না?!
 
আমেরিকায় ৩২ কোটি মানুষ। আমি চাইলে একদিনে ৫০,০০০ সীমকার্ডও রেজিষ্ট্রেশন করে নতুন নাম্বার নিতে পারি- কোন নাম-ধামও দিতে হয় না; চা-কফি-সিগারেটের মতোই।
 
আমেরিকায় এফবিআই কি বসে বসে ঘাস খাচ্ছে- না কি তারানা হালিমের মতো মহাপ্রতিভাবান কাউকে তার দেশে গ্রীনকার্ড দিয়ে নিয়ে এসে টেলিযোগাযোগ সেক্রেটারী বানাবে?
 
বাংলা সিনেমার নায়িকাকে প্রযুক্তির দায়িত্ব দিলে এরচে বেশী আর কি-ই-বা হতে পারে?
 
অবশ্য বাংলা সিনেমার নায়িকাকে দোষ দিয়েই বা কি লাভ?
 
যে-দেশে হাসিনা বা খালেদা জিয়ার মতো অযোগ্য মহিলারা প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসে, সে দেশে বাংলা সিনেমার নায়িকা প্রযুক্তি মন্ত্রী হবে; লুৎফুজ্জামান বাবর (উই আর লুকিং ফর শতরুজ) হবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী!
 
সেটাই কি স্বাভাবিক নয়?
 
তারানা হালিমরা কি কোনদিন চিন্তাও করেছে যে- দেশের টেলিকম বা ইন্টারনেট খাতে কিভাবে আরেকটু সভ্য, শৈল্পিক সেবা দেয়া যায়। একই ষ্টাইলের এরিয়া কোড, নির্ধারিত নাম্বার শুধুমাত্র সরকারী ভাবে (কোন অপারেটরের ঝুড়ি থেকে নয়) প্রদান করা যায়! এসব ভাবনার মতো জ্ঞান থাকলে সম্ভবত বাংলাদেশে এমপি, মন্ত্রী বা সচিব হওয়া যায় না। শুধু চুরি করার জ্ঞান থাকলেই ওসব হতে হয়।
 
এগিয়ে যাক বাংলাদেশ!
 
‘পাবলিক’ যদি নিজেরা ‘মানুষ’ না হতে পারে! হাসিনা-খালেদাকে দেশের প্রধানমন্ত্রী বানাতে ভোট দিতে পারে, চিৎকার করে গলা ফাটাতে পারে; তাহলে তারা পাবলিকই থাক!
 
এদের মানুষ হবার দরকারটাই বা কি?
 
ওহ!
শেষটায় একটা কথা তো বলাই হলো না।
 
আমি বরাবরই আই-ফোন ব্যবহার করি; অন্য কিছুতেই আমার মন ভরে না। কিন্তু আমি বেশ কয়েকদিন আগে একটি এইচটিসি’র এনডরয়েড স্মার্ট ফোন কিনেছি। এটা একটা সিডিএমএ সেট। আমি সেটটা কিনেছি একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন করণে।
 
কারণটা বলে দিচ্ছি। আমি সেই ২০০২ সালে যখন জেনেছিলাম একটা সময় সিডিএমএ ও জিএসএম একই সফটওয়ার কিন্তু ডিফারেন্টে হার্ডওয়ারে চলবে- তখন থেকেই আমি টেলিকমের এই প্রযুক্তিটিরে দিকে তীর্থের কাকের মতোই চেয়ে রয়েছি।
 
কিছুদিন পূর্বে জানলাম, ইন্টারনেটের ফোর-জি এলটিই সাপোর্ট শুধুমাত্র জিএসএম এ-ই সম্ভব। কিন্তু যেহেতু সিডিএমএ অপারেটর ফোর-জি এলটিই সেবা অফার করেছে- সেহেতু এই সেটে অবশ্যই জিএসএম সীমকার্ড চলবে।
 
তাই সেটটি কিনে ফেললাম। আগামী সপ্তাহের মধ্যে আশা করছি জিএসএম সীমটি এই সিডিএমএ সেটে চালাতে পারবো; আমার সার্ভিস প্রোভাইডার আজ সকালে ইমেইলে তো- সেরকমই হোপ দিল। দেখা যাক?
 
এবং এই আমেরিকায় এসে আমি এখন সিডিএম মোবাইলে অনায়াসেই ব্যবহার করছি জিএসএম সীমকার্ড। সংগে ফোর-জি এলটিই হাই স্পীড ইন্টারনেট।
 
প্রযুক্তির দেশে বসে এনালগ কান্ট্রির মানুষের প্রযুক্তি নিয়ে খেলার মজাই আলাদা। না কি বলেন?
 
টিকা: ছোট ভাইয়ার ওখানে আরাফাত রহমান কোকো পড়তে হবে।
 
 
   Send article as PDF