ধর্ষন!

প্রশ্নেই যদি উত্তর থাকে- তাহলেই তো মজাই মজা।
চট করে উত্তর বের করে ফেলা যায়। যেমন: ‘ধর্ষনের জন্য নারীর পোষাক দায়ী’। উত্তরটি ঠিক কি না?

বিশেষ করে চেতনাজীবিরা যখন ‘ধর্ষণের জন্য নারীর পোষাক দায়ী নয়’ বলে হম্বিতম্বি চালিয়ে যাচ্ছে তখন বুঝতে হবে- এখানে কিছু ‘বিশেষ প্যাচ’ তো রয়েছেই। এক শ্রেণীর লোক যখন ‘ধর্ষনের জন্য নারীর পোষাক দায়ী’ বলে চেচাচ্ছে- তখনও বোঝা যাচ্ছে বিষয়টি আসলেই গুরুত্বর।

আসলেই কি তাই?
হানিফ সংকেতের ইত্যাদিতে প্রায় বছর ৩০ আগে একটি কৌতুক দেখেছিলাম।

সেখানে ট্রেনে ২-জন যাত্রীর মধ্যে ঝগড়া লেগে যায়। একজন জানালার গ্লাসটি টেনে নীচে নামিয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে- তার নাকী জানালা খোলা থাকলে ঠান্ডা লাগে। আর অপরজন জানালার গ্লাসটি উপরে ঠেলে খুলে দিচ্ছে- তার প্রচুর গরম লাগছে।

এটা নিয়ে প্রায় হাতাহাতি অবস্থা।
অবশেষে সেই কামড়ায় প্রবেশ করলেন হানিফ সংকেত সাহেব। এবং গ্লাস টেনে বন্ধ করার পর সেখান দিয়ে হাত ডুকিয়ে দিয়ে তিনি দেখালেন যে- কথিত গ্লাসটিতে আসলে কোন গ্লাস-ই নেই; ওটা আগে ভেংগে যাওয়ায়- ফেলে দেয়া হয়েছে।

আমাদের দেশটা আদতে এমনই।
আমরা ঝগড়া করে খুব আনন্দ পাই। তুমুল আনন্দ।
অথচ, মুল বিষয়টাকে কখনওই সামনে আনতে চাই না। কারণ মুল সমস্যা খুঁজে বের করা এবং তার সমাধান বের করতে আমরা মোটেও আগ্রহী নই। আমরা শুধুমাত্র অলসই নই, আমরা ফাঁকিবাজীতে অভ্যস্ত একটি জাতি। অহংকার করার মতো কোন গুন বাঙালীর নেই।

বাংলাদেশে ধর্ষন মাত্রাতিরিক্তভাবে বেড়ে গেছে।
প্রতিদিনই অসংখ্য ধর্ষনের ঘটনা পত্রিকায় আসছে। চারদিকে যেন ধর্ষনের আর ধর্ষকদের জয়জয়কার। পুলিশ নিজে ধর্ষন করছে অসহায় নারীকে থানায় আইনের নামে আটক রেখে। ছাত্রলীগ ধর্ষন করছে পেশীশক্তি ও ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে- তাকে কেউ স্পর্শও করতে পারবে না কারণ দেশের নির্বাহী প্রধান শেখ হাসিনার আশীর্বাদপুষ্ট সে।

আর সেই রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী প্রকাশ্যে বুক উচিয়ে ঘোষনা দিচ্ছেন, ঘর্ষনের ঘটনা যেন বেশী প্রকাশ করা না হয়- এতে নাকি ধর্ষন করতে উৎসাহীদের সংখ্যা বেড়ে যাবে। সেই রাষ্ট্রে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন- সারা পৃথিবীতেই তো ধর্ষন হয়, এটা আর এমন কি সমস্যা?

আর এজন্যই এটার নাম বাংলাদেশ।
বর্তমান পৃথিবীর সবচে পিছিয়ে পরা, সবচে নোংরা ও বিরক্তিকর একটি দেশ।

আমি যদি ‘রেপ স্ট্যাটিসটিক’ ধরে এগুই, তাহলে দেখতে পাবো যে, এই দেশটিতে ধর্ষনের রেট ৯.৮২ এবং চলতি বছরে নথিবদ্ধ ধর্ষনের সংখ্যা ১১,৬৮২টি।

অপরদিকে দেখুন ধর্ষনের দেশ বলে পরিচিত আমাদের ঠিক পাশের দেশ ভারতের ধর্ষনের রেট মাত্র ১.৮০ এবং তাদের দেশে নথিবদ্ধ ধর্ষনের সংখ্যাটি মাত্র ২২,১৭২। অথচ ভারতের মোট জনসংখ্যা প্রায় ১৫০ কোটি যেখানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা মোটে ১৭ কোটি। বিষয়টা কতটা ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে- সেটা বুঝুন।

আমার সবচে কষ্ট লাগে, আমার ফ্রেন্ড-ফলোয়ারদের মধ্য থেকে অনেক মেয়ে আমাকে ইনবক্সে সরাসরি রিকোয়েষ্ট করে, ‘ভাইয়া ধর্ষনের বিরুদ্ধে কিছু লিখুন- আমরা আর সহ্য করতে পারছি না’। একজন পুরুষ হিসাবে আমার এরচে লজ্জা আর কোথায়- বলতে পারেন?

একটা দেশ কতটা অধপতিত হয়েছে, কতটা নীচে নেমে গেছে- সেটা একটু ভাবুন।

এই দেশের মেয়েরা কতটা অসহায় হয়ে পরেছে? এই মেয়েরাই তো কেউ আমার মা, কেউ আমার বোন, কেউ আমার কন্যা। এরা কতটা অসহায় হয়ে ধর্ষনের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্য অনুরোধ করে। তারা প্রতি মুহূর্তে নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবছে, তারা জানে না যে আজ বিকেলে তারা নিজের আব্রু রক্ষা করে বাড়ীতে ফিরতে পারবে কি না?

আর এই দেশটির একজন পুরুষ নাগরিক আপনি, আমি।
আমরা আজ অসহায় এই নিজের বোনটির, নিজের মা’র, নিজের কন্যার সম্ভ্রম রক্ষার নিশ্চয়তা দিতে পারছি না। এরচেও কি কোন লজ্জা হয়? হতে পারে?

আমরা যদি কিছুই না করতে পারি- নিজের মাকে বাঁচাতে, নিজের বোনকে বাঁচাতে, নিজের কন্যাকে বাঁচাতে- তাহলে আমাদেরও তো উচিৎ তাদের সংগে বাড়ীতে শাড়ী আর চুড়ি পরে চুপচাপ বসে থাকা!

এই দেশটা আমাদের।
এই দেশটা আমাদেরই রক্ষা করতে হবে। বাইরে থেকে কেউ এসে আমাদের রক্ষা করে দিয়ে যাবে না। কখনওই না। কারো এমন কোন দায় পরেনি, পরে না।

আসলে সমস্যাটি অনেক গভীরে।
আমরা কেউ এর গভীরে যেতে চাই না। সমস্যাটি খুঁজে বের করতে চাই না।

প্রথমতঃ আমরা ধর্ষন কি এবং কেন হয়, সেটা বোঝার চেষ্টা করি না। এবং ধর্ষনের জন্য কেমন শাস্তি হওয়া উচিত সেটা নিয়েও ভাবি না। সবকিছুকে সরলীকরণ করে ফেলতে চাই। ফেলিও। আর একদল তো কোন কথা নেই বার্তা নেই- বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ডের মাধ্যমে ধর্ষন থামাতে বধ্য পরিকর। অথচ তারা দেখেও না যে যাদের দিয়ে ক্রসফায়ার করাতে চায় তারা অর্থাৎ সেই আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিজেরাই ধর্ষনের সংগে জড়িয়ে যাচ্ছে। এতটুকু বুঝ না থাকলে তো চলবে না।

দ্বিতীয়তঃ এক কথায় কখনওই ধর্ষনের মতো একটি সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এটার শেকর (রুট) অনেক গভীরে পোথিত। সেখান থেকে, সেই গভীর থেকে শেকরসহ সমুলে সমস্যাটিকে উপড়ে ফেলতে হবে। এবং সেটা খুব সহজসাধ্য বিষয় নয়। এজন্য সমাজের ব্যাপক পরিবর্তন ঘটাতে হবে; মানুষের চরিত্রের পরিবর্তন ঘটাতে হবে।

এবং তৃতীয়ত যে বিষয়টা, সেটা হলো আমাদের রাষ্ট্র-ব্যবস্থাপনা। এই দেশটিতে গণতন্ত্র নেই। ব্যক্তিস্বাধীনতা নেই। মানবাধিকারের ন্যূনতম স্ট্যান্ডার্ড নেই। এবং সর্বত্র পেশীশক্তির দাপট। এই সবই হয়েছে বা হচ্ছে একটি দায়-দায়িত্বহীন অবৈধ গণবিরোধী সরকার দেশটিকে দখল করে তাদের নৈরাজ্যকর শাসন ব্যবস্থা চালিয়ে যাচ্ছে- যাচ্ছে তাই ভাবে। যেখানে যোগ্যতার বদলে অযোগ্যরা নেতৃত্ব দিচ্ছে। অসৎরা ক্ষমতার দাপটে ধরাকে সরা জ্ঞান করে বসে রয়েছে। এই রাষ্ট্রকে মেরামতি না করে- কিভাবে আপনি ধর্ষন বন্ধ করবেন- আমার বুঝে তা আসে না।

দেশে ধর্ষন বেড়ে যাবার মুল কারণগুলি যদি আমরা এক নজরে দেখি তাহলে যা দেখবো তা হচ্ছে-
১) দেশের শিক্ষার মান (স্ট্যান্ডার্ড) পরে যাওয়া।
২) সমাজে মেধার পরিবর্তে পেশীশক্তির ব্যবহার বেড়ে যাওয়া।
৩) দলীয় স্বার্থে সন্ত্রাসীদের ব্যবহার ও ক্ষমতার অপব্যবহার।
৪) নৈতিক অবক্ষয়- যেনতেনভাবে টাকা উপর্যনটাই একমাত্র বিষয় হয়ে দাড়ানো।
৫) ধর্মীয় মুল্যবোধের অভাব, দেশ থেকে ধর্মীয় চর্চা ও চেতনা
আশংক্ষাজনকহারে কমে যাওয়া।
৬) অসুস্থ্য ও চেতনাজীবিদের ক্ষমতার দাপট এবং তাদের নগ্নতার পক্ষে প্রচারণা বেড়ে যাওয়া।
৭) রাষ্ট্র কর্তৃক ক্ষমতাসীনদের দলীয়স্বার্থে অপরাধীদের রক্ষা করার জন্য বিচারিক ক্ষমতার অপব্যবহার এবং সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তি দেয়ায় অসুস্থ্য চর্চা।

এই এতোগুলো বিষয় আপনি কিভাবে এক কথায় সমাধান করে ফেলবেন? কারোর পক্ষে এসব একা একা করা সম্ভব নয়। এজন্য দেশের ১৭ কোটি মানুষের ন্যূনতম ৫০% মানুষকে একতাবদ্ধ হতে হবে। কিন্তু সেটা হওয়া কি এই দেশটাতে সম্ভব- যে দেশের মানুষ ১০০ টাকা নগদ হাতে পেলে সব করে ফেলতে পারে!

যে দেশের সৎ মানুষেরা নিজের ইজ্জত রক্ষার্থে কোন প্রতিবাদ জানাতে ভয় পায়; যেদেশে সৎ ও দূরদর্শি নেতৃত্বে নেই বললেই চলে। সকলেই ব্যস্ত নিজনিজ স্বার্থ হাসিলের ধান্ধায়।

এই দেশে শুধুমাত্র ‘নারীর পোষকই ধর্ষনের জন্য দায়ী’ বলে বিতর্ক উসকে দিয়ে ভিন্নপথে ঘটনাকে পরিচালিত করা হচ্ছে না; ঠিক একইভাবে ‘ধর্ষন’কেও হালকা অপরাধ হিসাবে প্রতিষ্ঠা করার অপচেষ্টা করতে ‘বিবাহের প্রলোভনে ধর্ষন’ শব্দযুগলও সৃষ্টি করা হচ্ছে যা দিয়ে প্রকান্তরে মানুষের দৃষ্টি অন্যদিকে সড়িয়ে নেবার সুযোগ সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং বিচার ব্যবস্থাকেও অবিচার করার সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়া হচ্ছে।

অথচ ইসলামের বিধানকে প্রধান্য দিয়েও যদি ধর্ষনের শাস্তির ব্যবস্থা করা যেত তাহলেও ধর্ষনের সংখ্যা তলানীতে চলে আসার কথা। ‘ধর্ষন’ ও ‘ব্যভিচার’ যে এক বিষয় নয়- সেটাকে আমরা ভুল সঙ্ঘায়িত করে বিতর্ক সৃষ্টি করে চলছি শুধুশুধু। শধুমাত্র ধর্ষনের জন্য শাস্তির পাশাপাশি ব্যভিচারের জন্যও যদি শাস্তির ব্যবস্থা করা যায়- তাহলে সমাজ থেকে একই সঙগে ধর্ষন ও ব্যভিচার উভয়ই উল্লেখযোগ্যহারে কমে যেতে বাধ্য।

আমেরিকার ২/১টি বিষয় আলোচনা করি। তাহলে হয়তো আমাদের বুঝতে আরও একটু সুবিধে হতে পারে।

এই দেশে নারী ও ধর্ষন নিয়ে কিছু বিষয় প্রচলিত রয়েছে। যেমন: নিউ ইয়র্কসহ আমেরিকার বেশীরভাগে ষ্টেটস-এই ‘পতিতাবৃত্তি অবৈধ’ অর্থাৎ বাংলাদেশের মতো পতিতালয় এখানে খুঁজে পাবেন না। পুলিশ নিয়মিত হোটেলেও রেইড দেয়, ট্যাক্সি বা উবারে ‘পতিতা’ বা ‘কলগার্ল’ পরিবহন করা নিষেধ- ধরা পরলে ট্যাক্সি/ উবার ড্রাইভারকে বড় অংকের জরিমানা ও লাইসেন্স সাসপেন্ড পর্যন্ত করা হয়। পারবেন ৮০% মুসলিমদের দেশ বাংলাদেশে এমনটা করতে? পারবেন না। শুধুমাত্র বড় বড় কথা বলতে পারবেন।

আমেরিকায়, ‘বিবাহের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষন’ শব্দটি অনুপস্থিত। আপনারা দু’জন ‘ছেলে-মেয়ে’ যদি কোন হোটেল রুমে সময় কাটান বা অবস্থান করেন এবং সেটা যদি হোটেল রেকর্ড ও ক্যামেরা ফুটেজে ‘স্বেচ্ছায় উপস্থিতি’ প্রমাণ করে- তাহলে সেখানে ধর্ষন নথিভুক্ত করার কোন চান্সই থাকে না। কিন্তু আপনাদের বাংলাদেশে কি হচ্ছে?

আমেরিকায় আসার আগ পর্যন্ত আমি ‘ফেলনী’ শব্দটির সঙগে পরিচিত ছিলাম না। এখানে আসার পর সাবওয়ে ট্রেনে প্রথম ‘ফেলনী’ শব্দটির ব্যবহার দেখি। অনেক জায়গাতেই পোষ্টার সাটানো দেখি যে মেয়েদের যে-কোন প্রকার যৌন-হয়রানী সম্পূর্ণভাবে এখানে নিষিদ্ধ এবং এটা ফেলনী হিসাবে গণ্য করা হবে। ফেলনী হচ্ছে এমন অপরাধ যা করলে দোষীর বাদবাকী জীবনের সামাজিক বা রাষ্ট্রিয় কর্মকান্ড সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়। তাকে কারাদন্ড বা অর্থদন্ড তো দেয়া হয়ই- উপরোন্ত সে ভোটাধিকার হারায়, ব্যাংকিং লেনদেনসহ আরও অনেক সামাজিক সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হয়। কখনও কখনও অপরাধের গুরুত্ব বিবেচনায় তার শরীরে একটি ডিভাইস ঢুকিয়ে দিয়ে তার চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করে দেয়া হয় একটি সীমাবদ্ধ এলাকার মধ্যে- যে এলাকার বাইরে সে আর যাতায়ত করতে পারে না। পারবেন বাংলাদেশে ‘ফেলনী’ আইন প্রতিষ্ঠা করতে?

এবার আসুন, অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েদের সংগে যৌন-অপরাধ। বাংলাদেশে একসময় ‘ইভটিজিং’ শব্দটি নিয়ে অনেক কথাবার্তা শুনেছিলাম। এখন হয়তো এই অপরাধটি কিছুটা কমেছে বা থাকলেও কিছুটা নিয়ন্ত্রণে এসেছে। শুনেন, মজার একটা কথা বলি। আমেরিকায় আমরা জানি যে মেয়েরা নাকি বলতে গেলে জামা-কাপড়ই পরে না। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে এটা শুধুই একটা মিথ্যা অপপ্রচার। হ্যা, এরা সী-বিচে অতি সংক্ষিপ্ত সাতারের পোষাক পরে- এটাই ওদের কালচার। কিন্তু যে বিষয়টি আপনি জানেন না সেটা হলো, এদেশের ছেলেরা কখনওই, কোন অবস্থাতেই ‘হ্যাংলো’র মতো করে কোন মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে না। সেই মেয়েটি কি পরেছে না পরেছে- সেটা দেখার মতো রুচি বা সময় এখানকার ছেলেদের হয় না বা নেই। এই শিক্ষাটি আমেরিকার সমাজে প্রতিষ্ঠিত।

আমেরিকায় ১৮ বছরের নীচের ছেলে-মেয়েদের স্কুলে যৌনশিক্ষা দেয়া হয়। এখানকার সমাজব্যবস্থা উদার। স্কুলের বাচ্চাদের যৌনশিক্ষা দেয়াটা খুবই জরুরী- এতে তাদের পরবর্তী জীবনে অনেক ভোগান্তি কমে আসে। আপনি হয়তো জানেন না যে বাংলাদেশের মাদ্রাসাগুলোতেও সিক্স সেভেন ক্লাস থেকেই যৌনশিক্ষা দেয়া হয়, কিন্তু স্কুলগুলোতে দেয়া হয় না। স্কুলের ছেলে-মেয়েদের কাছে তা অজ্ঞাতই থেকে যায়।

যাই হোক, যা বলতে চাচ্ছিলাম, আমেরিকায় ১৮ বছরের নীচের ছেলে-মেয়েদের স্কুল কর্তৃপক্ষ ফ্রি কনডম পর্যন্ত সরবরাহ করে থাকে এবং ১৮ বছরের নীচের ছেলে-মেয়ের স্বেচ্ছায় যৌন সম্পর্ককে অপরাধ হিসাবেও গণ্য করা হয় না। কিন্তু ১৮ বছরের বেশী বয়সী কেউ যদি ভুলে বা আবেগেও ১৮ বছরের কম বয়সী কোন ছেলে-মেয়েদের সঙগে যৌনকর্মে লিপ্ত হয়- তাহলে সেটাকে শুধুমাত্র ফেলনী হিসাবেই কাউন্ট করা হয় না- এটাকে ধরা হয় সমাজের সবচে ‘বড় অপরাধ’ হিসাবে। এবং ফেলনী তো থাকছেই, সংগে তার বাদবাকী জীবনটা ‘জাহান্নাম’ বানিয়ে দেবার জন্য যা যা শাস্তি দেয়া প্রয়োজন তার সবই দেয় হয়।

আর আপনাদের বাংলাদেশে নাকি ৪ বছরের একটা নিস্পাপ মেয়েশিশুর যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে বড় করা হয়! এমন অপরাধের কয়টা শাস্তি নথিভূক্ত করা আছে বাংলাদেশে কেউ কি আমাকে তা দেখাতে পারবেন?

আর্টিকেলটি লিখতে আমি খুবই অস্বস্তিবোধ করছি।
আরও অনেক কথাই বলা যেত কিন্তু সংগত কারণে বলতে পারছি না।

শেষটায় শুধুমাত্র এতটুকু বলবো, বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি ইতিমধ্যেই ধ্বংসপ্রাপ্ত। রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে ধর্ষন বাংলাদেশে বন্ধ করতে পারবেন না কারণ রাষ্ট্র নিজেই ধর্ষন চালু রাখতে বধ্য পরিকর। নইলে তারা ক্ষমতার মসনদ থেকে ছিটকে পরবে- দেশের মানুষ সচেতন হোক সেটা বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের কাম্য নয়।

যদি সম্ভব হয়, যদি পারেন দেশের যুবকদের বলছি, নিজ নিজ মহল্লায়, গ্রামে অন্য যুবকদের নিয়ে মানুষকে সচেতন করুন। সংগঠিত হোন, যেখানে ধর্ষনের আলামত পাবেন সম্মিলিতভাবে প্রতিরোধ করুন। ধর্ষক বা ধর্ষন চেষ্টাকারীকে (প্রয়োজনীয় প্রমাণসহ ছবিতুলে) পুলিশের হাতে সোপর্দ করুন। মানুষকে সচেতন করার কোন বিকল্প নেই। ধর্ষককে সামাজিকভাবে ‘বয়কট’ করুন; ধর্ষকদের সঙগে কোন মেলামেশা থেকে বিরত থাকুন। ধর্ষকের হাতে কেউ নিজের মেয়ে বা বোনকে স্ত্রী হিসাবে তুলে দিবেন না।

আর শেষটায় খুব কষ্ট হচ্ছে বলতে, তবুও বলছি মেয়েরা সংগে ব্লেড রাখুন। এবং যথাসময়ে ব্লেডটি ব্যবহার করুন। শেষ করে দিন ধর্ষককে। এটা আপনার অধিকার; এই দেশে এটাই আপনার প্রধানতম করণীয়।

আপনি ভয় পাবেন না- দেশের কোটি কোটি পুরুষ আপনার পক্ষে। ধর্ষকদের সংখ্যা তো মাত্র হাতে গোনা কয়েকজন।

সকলে সাহসের সংগে গর্জে উঠুন। তাহলেই ধর্ষন প্রতিরোধ করা সম্ভব।

   Send article as PDF