গ্লোবালাইজেশন

ইংরেজী গ্লোবালাইজেশন কথাটা আরও অন্য দশটা ইংরেজী শব্দের মতোই ব্যাপকার্থে ব্যবহৃত হয় যা বাংলা’র বিশ্বায়ন দিয়ে হয়তো বোঝানো হয় ঠিকই কিন্তু প্রকৃত অর্থ ধারণ করতে ব্যর্থ হয়।
 
গ্লোবালাইজেশন কথাটার অর্থ আরও ব্যাপক আরও বেশী সমৃদ্ধ।
 
আমাদের দেশের বাড়ী ঢাকা জেলার দোহার থানায়। থানাটি রাজধানী থেকে যদিও মাত্র ৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত কিন্তু বাস্তবে তা তখন তার দূরত্ব ছিল প্রায় ৬ ঘন্টার। আমি তখন স্কুলে পড়ি। মাঝে মধ্যেই আমাদের গ্রামে লুংগি ও শার্ট পরা একজন ‘ভিন্ন মানুষ’কে আবির্ভাব হতে দেখতাম। সবাই তাকে বলতো ‘নোয়াখাইল্যা’। জানতাম ওনি দোহার বা নবাবগঞ্জেই থাকতেন।
 
ওটাই ছিল আমার দেখা প্রথম ‘গ্লোবালাইজেশন’। ওনার মুখের ভাষা ছিল একটু আলাদা। আমাদের বুঝতে কষ্ট হতো।
 
নবাবগঞ্জে আমার ব্যবসায় শুরুর পরপরই নবাবগঞ্জ এতিমখানায় কর্মরত আরেকজন ব্যক্তির সাথে পরিচিত হলাম। তিনি বিহারী ভাষায় কথা বলতেন। আস্তে আস্তে জানলাম তার প্রকৃত বাড়ী পাটনা, মানে বিহার প্রদেশের রাজধানী পাটনা।
 
যা-ই হোক, এর মধ্যেই আমার সাথে একটি ছেলের পরিচয় হলো, সে মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। আমার সাথে প্রায়ই বেশ কিছু সমুদ্র বন্দরের গল্প করতো, আমি আরও বেশী বেশী জানতে চাইতাম। কেমন সেসব বন্দর, সেখান কার মানুষগুলি কেমন? ওসব দেশের ভেতরে ঢুকতে ভিসা লাগে কি না? ইত্যাদি, ইত্যাদি।
 
সত্যি বলতে কি ওই সময় থেকেই বিশ্বের নানা প্রান্তের সমদ্রবন্দরগুলি আমার কাছে এক একটা ক্রেজে পরিণত হয়েছিল। এই বিশ্বের সব বড় বড় সমুদ্র-বন্দরগুলি আমাকে জাদুর মতোই টানতো। কলম্বো, মাদ্রাজ, মুম্বাই, করাচী, দুবাই, মস্কাট, কেপটাউন, লিসবন, ডাবলিন, নিউ জার্সী, লস এঞ্জেলস, সিয়াটল, সিডনী, সিংগাপুর, হংকং, স্যাংহাই, টোকিও- এসবই তখন আমার কাছে এক একটা স্বপ্নময় জগৎ তখন। এসব শহরগুলি না দেখলে তো আমার মানব জন্মের কোন মানেই হয় না!
 
এরই মধ্যে নবাবগঞ্জেই আমার অফিসের কিছু ইন্টারিয়র করার সময় একজন রং-মিস্ত্রি’র সাথে পরিচয় হলো। ওনার বয়স কমবেশী তখন ৬৫ বছর হবে। ছোট-খাটো সিম-সাম একজন মানুষ। হঠাৎ একদিন তার সাথে কথার ফাকে উনি কি একটা বিষয়ে যেন বলে ফেললেন ‘আমি তো কেপ টাউন-এ এটা দেখেছি’।
 
আমি মুহুর্তে থ’ খেয়ে গেলাম! বলে কি! কেপ টাউন?
 
ওনার সাথে আমি ঘনিষ্ঠ হলাম।
 
ওনার মুখেই শুনলাম অনেক অনেক অনেক গল্প; ওনার মুখে সিয়াটল, ব্রিজবেন, টোকিও, স্যাংহাই, রিও ডি জেনিরো এসব নামগুলি আমার কাছে অদ্ভুৎ শোনাতো।
 
লোকটা লেখাপড়া জানে না।
ছোট বেলায় তার নিজ বাড়ী থেকে একটা ছাগল চুরি করে পালিয়েছিল। সেটা বিক্রি করে চলে যায় চিটাগং। সেখান থেকেই জাহাজে চাকুরী নিয়ে জীবন ভর জাহাজে জাহাজে করে ঘুরে বেড়িয়েছে। বাড়ীর সাথে কোন যোগাযোগ-ই ছিল না দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর।
 
আমার কাছে খুব এডভেঞ্চার শোনাতো। মনে হতো এরকম একটা জীবন পেলেও মন্দ হতো না।
 
প্রথম বার কোলকাতা ভ্রমনে যেয়ে দেখলাম সেখানে প্রচুর সংখ্যক চায়নিজ বসবাস করেন। সময়ের বিবর্তনে তারা এখন চাইনিজ-ইন্ডিয়ান। মানে ইন্ডিয়ান সিটিজেন। তাদের মূল ব্যবসা জুতা তৈরী করা। বেশ মজা পেয়েছিলাম তখন ওদের দেখে।
 
পরবর্তীতে ‘রাজার হাট’ এলাকায় বেশ কিছু চাইনিজ সাইবোর্ডওয়ালা বাড়ীঘরও দেখেছি, মজা পেয়েছি।
 
পরে জানলাম এক সময় বাংলাদেশের চিটাগাং শহরেও না কি প্রচুর সংখ্যক চায়নিজ বসবাস করতো কিন্তু এখন আর কেউ নেই।
 
আমি যখন প্রথম বার হংকং যাই- ততদিনে বৃটিশ সরকার হংকং’কে চায়নার কাছে ফেরত দিয়ে দিয়েছে চুক্তিমতে ৯৯ বছর শাসন করার পর। চায়নার বেইজিং এ আমার অতি প্রিয় একটি বাংলাদেশী রেষ্টুরেন্ট রয়েছে যার নাম ‘চেংগুরি’; মালিক একজন বাংলাদেশী অরিজিন আমেরিকান। আমেরিকান পাসপোর্টধারী ঐ ভদ্রলোক বেইজিং এ-ই বসবাস করেন। একদিন পরিচয় হলো অামার সাথে। অনেক অভিজ্ঞতা জানালেন।
 
হংকং-চায়না’র বর্ডারে ‘বৃটিশ হংকং’ এর অনুকরণে চায়নিজ গভর্ণমেন্ট সেনজেন শহরটি গড়ে তুলে। সেই শহরে আমার জানা মতেই প্রায় কয়েকশ বাংলাদেশী ছেলে চাইনিজ মেয়েদের বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে এবং সকলেই ভাল ব্যবসায়ী হিসাবে ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত। হংকং এ-ও অনেক বাংলাদেশীকে স্থায়ী ভাবে বসবাস করতে দেখেছি।
 
মালয়েশিয়া সম্পর্কে জানলাম দেশটিতে ৩ ধরণের মানুষ বসবাস করে। স্থানীয় মালয়’রা সংখ্যাগরিষ্ঠ যাদের বলা হয়ে থাকে ‘ভূমিপুত্র’। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে ইমিগ্রান্ট চাইনিজ রা এবং শেষটায় ইমিগ্রান্ট তামিল-ইন্ডিয়ানরা।
 
মালয়েশিয়াতে আমার অসংখ্য (উক্ত তিন জাতিরই) বন্ধু-বান্ধব রয়েছে। মালয়রা মূলত প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে আর চায়নিজদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে ব্যবসায়-বাণিজ্য। আর সন্ত্রাসের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে তামিল ইন্ডিয়ানরা। মালয়েশিয়া একটি অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্থ দেশ।
 
প্রশাসন মারত্মকভাবে করাপ্টেড (বাংলাদেশের চেয়ে অবশ্যই খারাপ নয়)। মালয়েশিয়া একসময় ছিল বিশাল জঙ্গল। এখন যে চোখ ধাধানো আলো-ঝলমল কুয়ালা লামপুর শহর সেখানে নাকি বছর ত্রিশেক আগেও বাঘ রা নিশ্চিন্তে ঘুরে বেড়াতো। এতটাই জঙ্গলাপূর্ণ এলাকা ছিল এটি।
আমি ইতিহাস এর ছাত্র নই। তবে লর্ড কর্ণেওয়ালিস এর নাম শুনেছি- তিনি মনে হয় বৃটিশ ভারত-বর্ষের কোন প্রশাসনিক পদাধিকারী ছিলেন। পেনাং প্রদেশের জর্জ টাওন আইল্যান্ডে তার একটা ফোর্টও দেখলাম (ছবিটি এড করে দিলাম।) যেটা স্বাক্ষ্য বহন করে বৃটিশদের গ্লোবালাইজেশন এর। তবে, বৃটিশরা ছিল শাসক। তারা সারাবিশ্বকে শাসন করেই বেশী আনন্দ পেত।
 
চায়নিজরা মালয়েশিয়ায় আসা শুরু করে প্রায় ১০০ বছর আগে থেকে। আমার বেশ কয়েকজন চাইনিজ-মালয়েশিয়া বন্ধু রয়েছে কুয়ালা লামপুরে। অনেক গল্প শুনেছি তাদের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাসের।
 
চায়নিজরা চায়না ছেড়েছে মূলত তিনটি কারণে। ১) নতুন ভূমি দখলের উত্তেজনায়, ২) নতুন বিশ্ব দেখার আগ্রহ এবং ৩) নতুন স্থানে পুরোনো ব্যবসা নতুন করে শুরুর আশায়।
 
চায়নিজরা ছড়িয়ে পরেছে সারা পৃথিবীতে। তারা চায়না ছেড়েছে সম্পূর্ণ নিজ ইচছায়। এবং তারা তাদের ঐতিহ্য নষ্ট হতে দেয়নি। চায়নিজরা বিশ্বের প্রায় সব দেশেই নিজস্ব টাওনা করে নিয়েছে যার সবগুলিরই নাম ‘চায়না টাওন’। চায়নিজরা বিদেশেও পরিবারের মধ্যে চাইনিজ ভাষাতেই কথা বলে। সেটা কুয়ালা লামপুর, সিংগাপুর, জাপান, অষ্ট্রেলিয়া, মৌরিশাস, আমেরিকা, ইংল্যান্ড অথবা পৃথিবীর অন্য যে-কোন দেশে। এমনকি ভারতেও।
 
নিউ ইয়র্কের কুইন্সের ফ্লাশিং এর রয়েছে চায়নিজদের বৃহৎ কমিউনিটির বসবাস। এছাড়াও ম্যানহ্যাটনের চায়না টাওন ব্যবসায়ীদের কাছে অত্যন্ত আকর্ষণীয় স্থান। লস এঞ্জেলেস, ওয়াশিংটন ডিসি, সিয়াটল, টেক্সাস সব স্থানেই রয়েছে চায়নিজদের বসবাস।
 
ইওরোপিয়ান ক্রিষ্টোফার কলম্বাস পৃথিবীকে গোল ভেবে পশ্চিম দিকে ভারত আবিস্কার করতে যেয়ে আবিষ্কার করে ফেলেন দু’দুটি বিশাল মহাদেশ। এরপর ইওরোপের সাদা মানুষগুলি সেই ‘নতুন পৃথিবী’তে বসবাস শুরু করেন। সাদাদের মধ্যে নানা গ্রুপ, দখল, ক্ষমতার ভাগাভাগি ইত্যাদির পর জন্ম হয় ইউনাইটেড ষ্ট্রেটস এর- যেটা সহজ কথায় ‘আমেরিকা’ নামেই পরিচিত। সাদারা তাদের নতুন দেশকে ‘তৈরী’ করানোর জন্য আফ্রিকা থেকে ধরে নিয়ে আসতে থাকে ‘ব্লাক’ বা কালো-মানুষদের দাস হিসাবে।
 
মজার বিষয় হলো এসব কালোরা নিজ ইচ্ছায় আমেরিকায় আসেনি। তাদের জোর করে নিয়ে আসা হয়েছে। ওরা ছিল মূর্খ। অকর্মা। অলস। সাদারা ওদের দিয়ে তৈরী করিয়েছে আজকের আমেরিকা। তবে, ওদেরও মানুষ বানিয়ে দেয়া হয়েছে। কালোদের জন্য এটাই বা কম কিসে?
 
কালোরা কিন্তু তাদের পূর্ব পুরুষদের ভাষা বলতে গেলে ভুলেই গেছে। কারণ কালোদের ধরে আনা হয়েছে আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে- যাদের আবার ছিল ভিন্ন ভিন্ন ভাষা-গোষ্ঠির লোক। যেহেতু তারা দাস হিসাবে জীবন যাপন করেছে এবং স্বাধীনতাও ছিল না; সেহেতু এরা বাধ্য হয়েছে আমেরিকান সংস্কৃতিকে ধারণ করতে। সুতরাং আমেরিকার কালো মানুষগুলি এখন আর তাদের পূর্ব পুরুষ সম্পর্কে তেমন একটা ধারণা রাখে না; তাদের ভাষাও জানে না।
 
তারা এখন পুরোপুরি আমেরিকান।
এদের মধ্যে থেকেই বের হয়ে এসেছে মাইকেল জ্যাকসন।
 
বারাক ওবামার বাবা কিন্তু ক্রিতদাস হিসাবে আমেরিকায় আসেননি। তিনি এসেছিলেন কেনিয়া থেকে আমেরিকায় স্টুডেন্ট হিসাবে পড়াশোনার জন্য। প্রেম করেন এক হোয়াইট মেয়ের সাথে, সেখান থেকে বিয়ে এবং জন্ম হয় সাদা-কালো বারাক ওবামার (যদিও কালোর পরিমানটাই গায়ের রংএ প্রধান)। বারাক ওবামা বড় হয়েছে সাদা মায়ের কাছে। বারাক ওবামা ওসব কালো আফ্রিকানদের ঠিক সেই ভাবে প্রতিনিধিত্ব করেন না।
 
কিন্তু এসব কিছু ছাড়িয়ে আমাকে যে বিষয়টা আলোড়িত করে, তা হলো ইন্ডিয়ানদের গ্লোবালাইজশেন। ভারত বর্ষের মানুষও কিন্তু সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে পড়েছে। ফিজিতে এক সময় প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মাহেন্দ্র চৌধুরী। ফিজিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভারতীয়র বসবাস। তবে সবচে বেশী যে দেশটাতে ভারতীয়রা বসবাস করছে সেই দেশটার নাম হলো ‘গুয়ানা’।
 
গুয়ানা দেশটি দক্ষিন আমেরিকার উত্তরের একটা দেশ। সাথে বর্ডার রয়েছে ভেনেজুয়েলা, সুরিনাম ও ব্রাজিল। অন্য পাশে গুয়ানার আরেকটি অংশ রয়েছে কিন্তু সেটির নাম ফ্রেঞ্চ গুয়ানা। ফ্রেঞ্চ গুয়ানা নিয়ন্ত্রণ করে ফ্রান্স। রাষ্ট্রটি ফ্রান্সের আন্ডারে সেনজেন কান্ট্রি। কারেন্সিও ইওরো। কিন্তু গুয়ানা দেশটির ৪৫% লোক ভারতীয় বংশোদ্ভুত। পাশের দেশ সুরিনামের প্রায় ২৮% ভারতীয়।
 
ভারত থেকে প্রায় পনের হাজার কিলোমিটার দূরের এই দেশদুটি সত্যিই আমাকে বিভ্রান্ত করে। গুয়ানার রাষ্ট্র ভাষা ইংলিশ; ওরা হিন্দি বুঝেও না বলতেও পারে না কিন্তু চেহারায় ভারতীয়ই। সুরিনামের রাষ্ট্র ভাসা ডাচ। আমেরিকায় প্রচুর পরিমানে গুয়ানার অভিভাসী দেখতে পাওয়া যায়। এরা শিক্ষিত এবং ভাল অবস্থানে রয়েছে। অনেকেই এদের ভুল করে ইন্ডিয়ান মনে করে। এরা সুন্দর করে হেসে উত্তর দেয় ‘না আমার দেশ গুয়ানা। আমার ঠাকুরদা একসময় ইন্ডিয়া থেকে এসেছে এবং এদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো এখনও টুকটাক হিন্দি বলতেও পারে কিন্তু আমারা ওসব বুঝি না। ইংলিশ আমাদের ভাষা। ইন্ডিয়ার প্রতি এদের ভেতরে কোন মায়াও প্রকাশ পায় না। ওদের সাথে মিশতে আমার ভালো লাগে।
 
এছাড়াও ইন্ডিয়ানদের মিডিল-ইস্ট এর প্রচন্ডভাবে চোখে পড়ে; তারা খুব ভাল অবস্থানে রয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোন দেশ খুঁজে কমই পাওয়া যাবে যেখানে চায়নিজ এবং ইন্ডিয়ানদের দেখতে পাওয়া যাবে না। এবং এরা সে সব দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সম্পূর্ণ নিজ নিজ চেষ্টায়। কারো দয়া বা আনুকুল্যে নয়।
 
কানাডায়ও সাদারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু সেখানে কালোদের খুব একটা দেখা যায় না। প্রচুর পরিমানে এশিয়ান (নাক বোচা, চোখ ছোট) এবং ইন্ডিয়ানদের বসবাস সেখানে। আমার একজন কানাডিয়ান ফ্রেন্ড রয়েছে। তার আবার রয়েছে আমেরিকারও গ্রীনকার্ড। প্রায়ই আমার অফিসে আসে, আড্ডা দেয় অার আমাকে রিকোয়েস্ট করে ‘তুমি কানাডা চলে আসো; খুব ভালো দেশ, কালো নেই, ইন্ডিয়ান সবকিছুই পাওয়া যায়, সরকার থেকে অনেক সুযোগ সুবিধা পাওয়া যায়, গান ফ্রি কান্ট্রি; এমনকি পুলিশের কাছেও কোন গান থাকে না। কোন সন্ত্রাস সেই।’
 
আমি হাসি। তাকে উত্তরে বলি, ‘আমেরিকা আমার ভাল লাগে। কানাডায় ইনকাম কম। প্রচুর শীত। তাছাড়া আমি কাজ করে আনন্দ পাই, বসে খেতে ভাল লাগে না; আর তাছাড়া আমেরিকা হলো সেই দেশ- যারা প্রথমে কোন কিছু একটা আবিষ্কার করে এবং তারপর সারা পৃথিবী তাদের অনুসরণ করে- এটা আমার ভাল লাগে। এবং এই পৃথিবীর কোন সমস্যা হলে সবাই ওয়াশিংটন ডিসি’র দিকেই তাকিয়ে থাকে, অন্য কারো দিকে না। দায়িত্বের আনন্দ অনেক বিশাল; এর কোন তুলনা হয় না। কাজেই আমেরিকাই ভালো।’
 
সেই সংগে আরেকটি বিষয় আমার চোখ এড়ায় না। সেটা হলো আমাদের বাংলাদেশীরা। ভেনেজুয়েলায় প্রচুর সংখ্যক বাংলাদেশীর বসবাস। ব্রাজিলে তো প্রায় লক্ষাধিক বাংলাদেশী বসবাস করছে। সেখানেও বেশীরভাগই ব্যবসায়-বাণিজ্য করছে এবং সবাই আয় কম-বেশী ষাট-সত্তর হাজার টাকা। খারাপ কি?
 
অার্জেন্টিনা, চিলি এমন দু’টি দেশ যা ইওরোপের চেয়েও উন্নত। ইওরোপের মতোই সভ্য। ইনকামও প্রচুর। অল্প সংখ্যক বাংলাদেশী সেসব দেশেও বসবাস করছে এবং সকলেই খুব ভালো রয়েছে। তাছাড়া প্যারাগুয়ে, বলিভিয়াতেও অসংখ্য বাংলাদেশী বসবাস করে চলছে।
বাংলাদেশের জন্মের পরে অদ্যাবধি কোন সরকারই বাংলাদেশের মানুষদের নিয়ে একটু ভেবে দেখার সময় পায়নি। তারা রাষ্ট্রিয় চুরি-চুট্টামী নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। দেশের মানুষকে যে কাজের সুযোগ তৈরী করে দেবার দায়িত্ব তাদের- সেটা তারা জানেও না।
 
বাংলাদেশ আজকে যতটা উন্নতি করেছে তার সবটুকুর কৃতিত্বই বাংলাদেশী ব্যবসায়ীদের এককভাবে। এবং সরকারের প্রয়োজনীয় সহায়তা ছাড়াই তারা সফলতা দেখিয়েছে। দেশের গার্মেন্টস, দেশের জনশক্তি সম্পূর্ণ নিজ নিজ দক্ষতায় দেশের রেমিটেন্সকে সমৃদ্ধ করে চলছে। আর দেশের সব কিছু চুষে চিবিয়ে খাওয়া শেষ করে এখনকার সরকার সেই কষ্টের রেমিটেন্সেও নজর দিয়েছে।
 
মালয়েশিয়া, সিংগাপুর, জাপান, অষ্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, আমেরিকা, কানাডার ইওরোপ সহ দক্ষিন আফ্রিকা এবং আফ্রিকার বেশ কিছু দেশসহ দুবাই, সৌদী আরব তথা সুদুর ল্যাটিন আমেরিকায়ও হাজার হাজার বাংলাদেশেী বসবাস করছে। এবং এদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে।
 
যে মানুষগুলি নিজ উদ্যোগে দেশ ছেড়ে, দেশের মায়া ছেড়ে বিদেশে প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম করতে পারে- সে তো সফল হবেই। এবং এদের বেশীর ভাগই প্রতিষ্ঠিত, স্বচ্ছল জীবন যাপন করছে। অধিকাংশই ভাল আছে।
 
আসলে অভিভাসীরা সাহসী ও পরিশ্রমী, আর পরিশ্রমীরা ভাল থাকবে- এটাই মূল কথা। সারা বিশ্ব মিলে এখন একটাই তো ভূখন্ড। পুরো পৃথিবীটাই তো আমার দেশ।
 
বোয়িং কোম্পানী নতুন সুপারসনিক বিমান নিয়ে গবেষনা চালিয়ে যাচ্ছে এবং আসছে ২০১৮ নাগাদ হয়তো বানিজ্যিকভাবে আকাশে উড়বে এসব বিমান। শব্দের চেয়ে দ্রুত গতির এসব বিমান নিউ ইয়র্ক থেকে দুবাই পৌছবে মাত্র ৩ ঘন্টায়।
 
পৃথিবী তখনও আরও ছোট হয়ে যাবে। পুরো পৃথিবী রাউন্ড দেয়া যাবে তখন ৬ ঘন্টায়। সেই দিন তো বেশী দূরে নয়। গ্লোবালাজেশন তখন আর্থকে ছাড়িয়ে মার্শে পৌছবে কি না কে জানে?
 
ঢাকা থেকে চট্রগামের দূরত্ব কি তখনও ৭ ঘন্টা-ই থাকবে?
   Send article as PDF