বোকা আমেরিকা!!!

বোকা আমেরিকা!!!
 
একটু আগেই একটা স্ট্যাটটসে বলেছিলাম, ১২০০ কোটি চোখ ওয়াশিংটন ডিসিতে। যদিও ইতিমধ্যে তার বেশীরভাগ চোখই এখন ম্যানহ্যাটনের ট্রাম্প টাওয়ারে ঘুড়ে গেছে।
 
যাই হোক। ডোনাল্ড ট্রাম্প-ই এখন প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট।
এডভান্স কনগ্রাচুলেসন্স মি. প্রেসিডেন্ট।
 
আজ সন্ধ্যা থেকেই ফেসবুক বলতে গেলে একমাত্র বিষয়-এ পরিণত হয়েছে ডোনাল্ড ট্রাম্প ও হিলারী ক্লিনটন।
 
কিন্তু এর মধ্যে অনেকেরই অনেকগুলি অভিমত আমার দৃষ্টিতে আটকে গেছে।
 
তারমধ্যে প্রধানতম দু’টি হলো:
১) আমেরিকানরা একজন মহিলাকে নির্বাচিত না করে বড় অন্যায় করে ফেলেছে। বোকা আমেরিকা।
২) ডোনাল্ড ট্রাম্প খুবই বর্ণবাদী, ইসলাম-বিরোধী, উগ্র ইত্যাদি ইত্যাদি। তাকে নির্বাচিত করে আমেরিকার মানুষ তাদের বোকামীর পরিচয় দিয়েছে- ইতিহাস হতে পারেনি। বোকা আমেরিকা।
 
বাংলাদেশের মানুষ গত ১৯৯০ সাল থেকে মহিলাদের নেতৃত্বে এগুচ্ছে।
এই ২৬ বছরে বাংলাদেশের বিশাল উন্নতি হয়েছে; দেশের পুরুষগুলি এখনও নপুংসকতায় ভুগছে। মহিলা কথিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচে অসভ্যতম একজন মহিলায় রূপান্তরিত হয়েছে।
 
বাংলাদেশে প্রতিটি উপজেলায় একজন করে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পাচ্ছে।
প্রতিটি ইউনিয়নে মহিলা মেম্বার পাচ্ছে।
প্রাথমিক শিক্ষকদের ৬৫% মহিলা এবং তারা আবার এসএসসি পাশ।
সব জায়গায় মহিলাদেরই জয়জয়কার।
 
যে-কোন মহিলা মন চাইলেই যে-কোন পুরুষকে গলায় দড়ি লাগিয়ে হাজতবাস করার ক্ষমতাও অর্জন করেছে ঐ মহান বাংলাদেশে।
 
এবং বিনিময়ে বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বের সবচে বড় এবং দুর্গন্ধময় ডাষ্টবিন হিসাবেই বেশী পরিচিতি লাভ করেছে।
 
এবং বর্তমান সময়ে তো বাংলাদেশে গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ব্যক্তি স্বাধীনতা, চাকুরী, ব্যবসা ইত্যাদি সর্ব বিষয়েই বিশাল উন্নতি হয়েছে। দেশে কোন ক্রস ফায়ার নেই, গুম নেই।
 
সভ্যতা আর শান্তি বয়ে যাচেছ বাংলাদেশে।
 
আর আমেরিকানরা বোকা। তাদের কোন বুদ্ধি-ই নেই।
তাই তো তারা এত বড় বিশাল সুযোগ পেয়েও হিলারী কে মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করতে পারলো না।
 
সত্যি বলতে কি- যারা ‘এরকম’ পোষ্ট দিচ্ছে- তাদের প্রতি আমার ঘৃণা হচ্ছে।
করুণা হচ্ছে।
 
আরে ভাই, আপনি ঘাস খান বলে কি সবাই ঘাস খায়!
গরুর কদর ইন্ডিয়াতে- ওদশে চলে যান- আদর আপ্যায়ন পাবেন। আমেরিকাতে না।
 
এটা মানুষদের দেশ।
এটা সভ্যদের দেশ।
এটা সাহসী এবং বুদ্ধিমান মানুষের দেশ।
 
আর তাই তো সারা পৃথিবীর ৬০০ কোটি মানুষ এই দেশের প্রতিটি বিষয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।
 
আমেরিকানরা আবেগে চলে না।
আমেরিকানরা যুক্তিতে চলে। মাথা খাটিয়ে চলে।
বসে বসে খায় না এরা। পরিশ্রম করে খায়।
 
এদেশে এক বেলা পরিশ্রম না করলে অন্য বেলা না খেয়ে থাকতে হয়।
আমেরিকানদের জ্ঞান দেবার সাহস দেখাচ্ছেন- না কি নিজেকে নারীবাদী দেখাচ্ছেন।
 
শুনুন, নারীবাদী বলে কিছু নেই। সব হলো সুযোগবাদী। সুযোগসন্ধানী।
অপরচুনিটিষ্ট।
 
এটা আমেরিকা।
এরা কারো দিকে তাকিয়ে থাকে না। সবাই এদের দিকে তাকিয়ে থাকে।
এরা কারো মুখাপেক্ষী নয়। অন্যরা আমেরিকার মুখাপেক্ষী। আপনিও। আমিও।
 
আর এরা এমনি এমনি ‘আমেরিকা’ হয়ে উঠেনি।
মেয়েদের বুক ছাড়া এই পৃথিবীতে এমনি এমনি কিছুই হয় না।
 
নিজের যোগ্যতা দিয়ে, ক্ষমতা দিয়ে, পরিশ্রম দিয়ে, বুদ্ধি দিয়ে, দূরদর্শিতা দিয়ে, অধ্যবসায়, দৃঢ়তা দিয়ে অর্জন করে নিতে হয়ে।
 
আর আমেরিকানরা সেটাই করে।
বাংলাদেশেীদের মতো বড়লোক হবার শর্টকার্ট রাস্তা খুঁজে বেড়ায় না।
 
আমেরিকানরা সৃষ্টি করে।
বাংলাদেশীদের মতো ভাংগে না।
 
আমেরিকানরা জানে কাকে ভোট দিলে তাদের দেশ যোগ্য নেতা পাবে।
কার নেতৃত্বে আমেরিকার মতো দেশ পুরো বিশ্বকে নেতৃত্ব দিবে।
 
আপনার নারীবাদী জ্ঞান বাংলাদেশে জিইয়ে রাখুন।
আরও বেশী বেশী ডাষ্টবিন তৈরী করুন।
নারী প্রধানমন্ত্রী। নারী স্পীকার। নারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী। নারী স্বরাষ্টমন্ত্রী।
কি বাহাদুর জাতি!
 
১০০০ ডলার বার্ষিক আয়ের দেশ থেকে এসেছেন ৬০,০০০ ডলার আয়ের দেশের মানুষকে নারীবাদীতা শিখাতে!
 
এতো শিক্ষা আপনাদের। এসএসসি পাশ করে জিপিএ ফাইভ পেয়ে জিপিএ অর্থই শিখতে পারেন না- আবার অন্যকে শিক্ষা দেন!
 
যোগ্যতা অর্জন করুন।
যোগ্যকে ক্ষমতায় বসান।
যোগ্যরাই টিকে থাকে।
অযোগ্যের হাতে দেশের দায়িত্ব পড়লে সেটা ‘বাংলাদেশ’ হয়- ‘আমেরিকা’ নয়।
 
যাক। এবার দ্বিতীয় বিষয়টা বলি।
আমি যখন জীবনে প্রথমবার ইন্ডিয়াতে যাই- তখন আমার মনে হয়েছিল, ইন্ডিয়ানরা সবাই টাউট।
 
সত্যি বলছি, আমার বিষয়টা খুব খারাপ লেগেছিল। মনে মনে বলেছিলাম বাকী জীবনে আর কোনদিন ইন্ডিয়াতেই যাবো না।
 
এবং প্রায় ৩/৪ বছর আর যাইও নি।
এরপর ব্যবসা ও নানা প্রয়োজনে আবারও ইন্ডিয়া যাওয়া শুরু করলাম।
এবং একটা পর্যায়ে আবিষ্কার করলাম, আসলে ওটাকে টাউট বলে না। মনে হলো- ওরা আমাদের চেয়ে বুদ্ধিমান; ওরা আমাদের চেয়েও যোগ্য। তখন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জন্মালো।
 
এরপর যখন চায়না যাতায়াত শুরু করলাম, তখন প্রথম দিকে মনে হতো চাইনিজরা খুবই ভদ্র। শান্ত। কিন্তু আস্তে আস্তে আবিষ্কার করলাম ওরা ইন্ডিয়ানদের চেয়ে অনেক বেশী বুদ্ধিমান, হিসেবী ও পরিশ্রমী। এবং টাউটও।
 
তখন আমার মাথায় বিষয়টা ঢুকলো।
আসলে একজন মানুষকে বড় হতে হলে তাকে সব বিষয়েই বড় হতে হয়।
বুদ্ধিতে, যুক্তিতে, কাজে, ব্যক্তিত্বে, সততায়, দৃঢ়তায় এবং ‘সুচতুর’ ও ‘কুটকৌশল’ও জানা থাকতে হয়।
 
অনুমান ও অনুভব করলাম, তাহলে তো- ইওরোপ আমেরিকার মানুষ আরও বেশী বুদ্ধিমান, মেধাবী, পরিশ্রমী, সুচতুর এবং কৌশলী!
 
এবং হ্যাঁ। আমার চিন্তা মিলে গেল আমেরিকায় আসার পরই।
আজ বাংলাদেশের মানুষ যা চিন্তা করছে, ভাবছে- তা আজ থেকে আরও ৫০০ বছর আগে ইওরোপিয়ান সাদা মানুষরা করে রেখেছে।
আরও ৫০০ বছর চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের মানুষ ‘এদের’ সমান হতে পারবে না। এবং ততদিনে ওরা অারও ১০০০ বছর এগিয়ে যাবে।
 
এদেশের মানুষ শুধু সাহসীই নয়, এরা অতি কৌশলী।
এরা শুধু বুদ্ধিমানই নয়, বুদ্ধির ফাঁকিতেও অনেকদূর এগোনো।
এরা অতি সভ্য আর ভদ্রই নয়- প্রয়োজনের সময় তারা চরম অসভ্যতা করতেও পিছপা হয় না।
 
কারণ প্রয়োজন মতো ‘শক্তির ব্যবহার’ টাই সবচে বড় কৌশল।
অার যুদ্ধ ক্ষেত্রে সভ্যতা-ভদ্রতার কোন স্থান-ই নেই।
 
আর এজন্যই আজ এরা আমেরিকান। এর মহান।
 
আমার পরিষ্কার মনে রয়েছে, প্রেসিডেন্ট সিনিয়র জর্জ বুশ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে সাদ্দাম হোসেন কুয়েত দেশটা ১ রাতেই দখল করে নিয়েছিলেন। তখন প্রেসিডেন্ট বুশ মাত্র ১৭ দিনে ওখানে উড়ে গিয়ে কুয়েতকে দখল মুক্ত করেছিলেন।
 
এবং তিনিই সাদ্দামকে হঠাতে ইরাকের উপর প্রথম বোমাবর্ষন শুরু করেন।
মাত্র ৪ বছর ক্ষমতায় থাকার পর দ্বিতীয় মেয়াদে তিনি বিল ক্লিনটনের কাছে নির্বাচনে পরাজিত হয়ে হোয়াইট হাউজ ত্যাগ করেন।
 
তখন বাংলাদেশের পত্রিকাগুলি রিপোর্ট করতো এবার তাহলে সাদ্দাম হোসেন রক্ষা পাবেন। জর্জ বুশ বিদেয় নিয়েছে।
কিন্তু, প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন হোয়াইট হাউজে বসার ৪ দিনের মাথায় বাগদাদে প্রথম বিমান হামলাটি চালান। বাঙালীর সব হিসাব পাল্টে যায়।
 
এর ৮ বছর পর ক্ষমতায় আসেন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়র।
তিনি কিন্তু তার প্রথম মেয়াদেই তার ভয়ংকর যুদধাংদেহী মনোভাব প্রদর্শন করেন।
 
ইরাককে ধ্বংশ করেন।
আফগানিস্থানকেও ধ্বংশ করে দেন।
 
তখন বাংলাদেশের অনেকের লেখাই পড়তাম, দ্বিতীয় মেয়াদে আর জর্জ বুশ ক্ষমতায় আসতে পারবেন না। জর্জ বুশ অতি ভয়ংকর ব্যক্তি। ইত্যাদি ইত্যাদি।
 
এবং জর্জ বুশ-কেই আমেরিকা দ্বিতীয়বার আবারও ক্ষমতায় বসান।
 
এটাই আমেরিকা।
আমেরিকা শক্তিশালী দেশ।
আমেরিকার শক্তিশালী মানুষকেই দেশের দায়িত্ব দেয়।
 
এটা সেই আমেরিকা- যারা একদিন যুদ্ধ করে বৃটিশদের এই ভুখন্ড থেকে পরাজিত করেছিল।
বাংলাদেশও একদিন তাদের দেশ থেকে যুদ্ধ করে পাকিস্তানীদের পরাজিত করেছিল।
 
কিন্তু একটা ছোট্ট পার্থক্য আছে।
 
পরাজিত বৃটিশরা আজ আমেরিকার সবচে বড় মোসাহেব। আমেরিকার কথায় বৃটিশরা উঠে-বসে। আমেরিকানদের সবকিছুতেই বৃটিশরা সবার আগে সমর্থন যোগায়। প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ যখন ইরাক আক্রমনের ছক করছিলেন- বৃটিশ প্রাইম মিনিষ্টার টনি ব্লেয়ার সংগে সংগে তাতে সমর্থন দিয়ে তার নিজের বৃটিশ বাহিনীকে সম্পৃক্তি করে ‘যৌথবাহিনী’তে অন্তভূক্তির আনন্দ লুটছিলেন।
 
আমেরিকা কিন্তু তাদের যোগ্যতা দিয়ে বৃটিশদের পদানত করে রেখেছে।
 
আর, পরাজিত পাকিস্তানীরা বাংলাদেশীদের সেদেশে যেতে ভিসা-ই দেয় না!
এই হলো বাংলাদেশের বিজয়! আর আমরা হলেম সেই বাংলাদেশী। যারা কাজের চেয়ে কথা বেশী বলি। নিজে জ্ঞান অর্জনের চেয়ে অন্যকে উপদেশ দিতে বেশী পছন্দ করি।
 
এই আমেরিকার নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতে ‘পারমানবিক বোমা’ হামলা চালিয়ে লক্ষ মানুষকে হত্যা করে নিজ দেশের আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিলেন।
 
প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে বেশী খারাপ লোক ছিল। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হতে হলে বিশ্বের শ্রেষ্ট বুদ্ধিমান এবং বদমাইশ- দু’টোই হতে হয়।
 
আমেরিকানরা প্রয়োজনে সভ্য।
আমেরিকানরা প্রয়োজনে ভয়ংকর কঠোর।
 
একজন শক্তিশালী ও মেধাবী মানুষকে একই সংগে সভ্য ও ভয়ংকর হতে হয়।
 
এবং এটা আমেরিকানরা জানেন।
তাদের নারীবাদী হবার জ্ঞান নামক উপদেশ বিতরণও যেমন নিজের অযোগ্যতাকে উপস্থাপন করে- ঠিক তেমনি তাদের মতামতকে অবমুল্যায়ন করে নিজের অন্তসারশূণ্যতা প্রমাণের আদৌ কোন প্রয়োজন খুঁজে পাওয়া যায় না।
 
যা-ই হোক।
আমেরিকা ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তার যোগ্যতার বিচারে নির্বাচিত করেছে।
 
যোগ্যরা যোগ্যদেরই মুল্যায়ন করে।
আর অযোগ্যরা মুল্যায়ন করে অযোগ্যদের।
 
যেমন আমরা মূল্যায়ন করি হাসিনা-খালেদা-তারেক-জয় দের!
   Send article as PDF