একজন পিনাকী ভট্রাচার্য

আমি মুলত একজন ভালো পাঠক।
সব ধরণের লেখাই আমার পছন্দ যদি সেটা মানসম্পন্ন এবং সেখানে যদি শেখার কিছু থাকে।
 
আমি অনলাইনে বা সোসাল মিডিয়াতে নিয়মিত লেখালেখি করছি বছর খানেকও হয়নি।
 
সাধারণত কোন একটা লেখা সুপাঠ্য কিনা সেটা লেখার শুরুতেই বুঝে ফেলা সম্ভব। গবেষকদের কথায় মানুষ কোন একটা লেখা পড়বে কি না সেটা সিদ্ধান্ত নিতে মাত্র ৪ সেকেন্ড সময় নেয়। অর্থাৎ মাত্র ৪ সেকেন্ডেই একজন মানুষ ধরে ফেলতে পারে এই লেখাটা তার ভালো লাগছে কি না?
 
আমার সবচে বেশী আগ্রহ বিজ্ঞানে।
এরপর ধর্মীয় এবং নিরেট সাহিত্য আমার প্রিয়।
ভ্রমনপ্রিয় মানুষ যদিও আমি- কিন্তু ভ্রমনের উপর লেখাগুলি আমায় টানে না। আমার ভালোলাগা জুড়ে থাকে পৃথিবীর ভৌগলিক ভিন্নতা, বৈচিত্র এবং ভিনগ্রহগুলো নিয়ে আলোচনা।
 
যে-কোন একটা লাইন পড়ার সংগে সংগেই আমার ভেতরে একটা অটোক্যালকুলেটর কাজ করে। আমি মুহুর্তে চলে যাই সেই স্থান ও কালে। নিজে হয়ে উঠি সেই চরিত্রগুলোরই একজন। এবং আমার খোলা মন নিয়ে বুঝে নিই কথাটা কতটুকু সত্য, বাস্তবতা এবং ইতিহাস ও যুক্তি নির্ভর! যোগ বিয়োগ আমি বেশ ভালোই বুঝি। ডিপ্লোমেটিক চালগুলিও আমার কাছে সহজবোধ্য এবং চক্ষু বন্ধ করে দেখার পারদর্শীতাও আমার খারাপ না।
 
এজ এ রেজাল্ট যেটা দাঁড়ায়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমি বক্তব্যের সত্যমিথ্যা ধরে ফেলতে পারি।
 
বাংলাদেশের মিডিয়া, লেখালেখির জগৎ এবং সাংস্কৃতিক অংগনটি মুলত কিছু নষ্ট লোকদের নিয়ন্ত্রনে। একটা দেশের যাবতীয় ভালো-মন্দের উপর যার নিয়ন্ত্রণ বহুলাংশে নির্ভরশীল।
 
বাম ও সেকুলার ঘরোনার লোকগুলিই এসবের নিয়ন্ত্রক।
 
বাংলাদেশের ৮০% লোক বামপন্থাকে অপছন্দ করে।
কিন্তু এই বামপন্থাই ঐ ৮০% নিরীহ লোকের উপর তাদের রাজত্ব চালায়। এটা একটা অত্যন্ত কষ্টকর বাস্তবতা।
 
এরশাদ বা বেগম জিয়া প্রায় ২০ বছর ক্ষমতায় থেকেও সভ্য এবং রুচিশীল কোন মিডিয়া-সংবাদপত্র বা লেখকগোষ্ঠী তৈরী করে যেতে পারেননি। বরং তারাও বামদের উপরই নির্ভরতায় মজেছেন; এবং ঠিক এই কারণেই আজ তার বিদ্রুপক রেজাল্টও ভোগ করে যাচ্ছেন।
 
দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকাটি বাংলাদেশের সবচে বেশী সময় ধরে জনপ্রিয় পত্রিকা হিসাবে টিকে ছিল। পত্রিকাটি সবসময় সত্য সংবাদ প্রকাশ করতো। বরাবরই সরকার ঘেষা থাকলেও সংবাদের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখার চেষ্টা ছিল।
 
কিন্তু প্রথম আলো পত্রিকাটি অত্যন্ত বাজে ও নিন্দনীয় সাংবাদিকতার বৈশিষ্ঠ্য নিয়েও বর্তমানে দেশের অপ্রতিদ্বন্দী একটি দৈনিকে পরিণত হয়েছে।
 
প্রথম আলো মুলত কোন সংবাদ প্রকাশ করে না; প্রথম আলো যেটা করে সেটা হলো ‘ঘটিত সংবাদটি’ নিয়ে তাদের নিজস্ব মতবাদ প্রকাশ করে।
 
এটাকে সাংবাদিকতা বলে না- প্রথম আলো সাংবাদিকতার নামে সংবাদশিল্পটিকে ধর্ষন করে যাচ্ছে।
 
অথচ, তারপরও জনপ্রিয়তায় অন্য পত্রিকাগুলি প্রথম আলোর ধারে-কাছেও ভিড়তে পারছে না।
 
এর কারণ কি?
উত্তরটি কিন্তু খুবই সহজ-সরল।
 
প্রথম আলো পত্রিকাটির গেটাপ, ছাপার মান, পেপার কোয়ালিটি, সংবাদ উপস্থাপনার ধরণ এবং সর্বপরি শিল্পমান অসাধারণ সুন্দর।
 
এতটাই সুন্দর ও দৃষ্টিনন্দন যে- নীচু ও নোংড়া মানসিকতারপূর্ণ সাংবাদিকতার আপেক্ষিক গুরুত্ব তাদের চমৎকার ও উন্নত শিল্পমানের কাছে পরাজিত হয়েছে।
 
বাজারে ‘এতটা মানসম্পন্ন’ দ্বিতীয় কোন পত্রিকা অনুপস্থিত।
ইত্তেফাকে শৈল্পিক সৌন্দর্য বলতে কিছু নেই। নয়াদিগন্ত বা মাহমুদুর রহমানের আমার দেশ শুধুই বিএনপি পত্রিকা। নেই কোন রুচিজ্ঞান বা শৈল্পিক সৌন্দর্য কিংম্বা মানসম্পন্ন সংবাদ পরিবেশনা।
 
প্রথম আলোকে পরাজিত করতে হলে- তারচেও উন্নত গেটাপ, রুচিসম্পন্ন ও আধুনিক প্রিন্ট, পেপার, সংবাদ উপস্থাপনার কোয়ালিটি ইত্যাদিসহ সবকিছুতেই সত্য ও বাস্তবতানির্ভর মানসম্পন্ন নিউজ পরিবেশনা করতে হবে। সেটা করার মতো লোক কোথায়?
 
সুতরাং আপনি শুধু প্রথম আলোকে ঘৃণাই করতে পারবেন কিন্তু তাকে হারাতে পারার যোগ্যতা আপনার নেই। প্রথম আলো আপনার উপরেই থাকবে। আপনার বাসায় আপনার স্ত্রী-পুত্র-কন্যারাও প্রথম আলোই পড়তে চাবে।
 
আর প্রথম আলো মানেই বামপন্থা এবং নাস্তিকতার প্রচারণা।
 
এবং সবচে বড় কথা বাংলাদেশের ম্যাক্সিমাম মানসম্পন্ন লেখকও বাম-নাস্তিক ঘরোনার অথবা সত্যপন্থী লেখকরা প্রচারণায় আসতে পারছে না।
 
আমি নিয়মিত লেখক নই।
দেশে থাকতে বছরে হয়তো এক-আধটা আর্টিকেল লিখতাম। আমি জানি আমার লেখা দেশের বামপন্থী পত্রিকাগুলি ছাপানোর স্পর্ধা রাখে না। তারপরও প্রথম আলো, জনকষ্ঠসহ আরো কয়েকটা পত্রিকাতে কালে-ভদ্রে ছাপা হয়েছে।
 
যাই হোক, গত বছর থেকে হঠাৎই মনে হলো নিয়মিত লিখি-ই না; দেখা যাক কি দাড়ায়! তারপরই শুরুও করলাম।
 
আজ নিজের কথা বলতে আজ লিখতে বসিনি। ভূমিকা দিলাম।
বাংলাদেশের অধিকাংশ লেখকই দালাল শ্রেণীর। বিশেষ করে প্রথম আলো, জনকন্ঠ, সংবাদ বা কালের কন্ঠে যারা নিয়মিত লেখেন। আমি তাদের লেখা পড়ি কিন্তু অপছন্দ ও ঘৃণা চলে আসে তাদের প্রতি।
 
তারপরও পড়ি। ওদের চিন্তার আপডেট রাখতেই পড়ি।
 
সোসাল মিডিয়াতে লেখালেখি বা ব্লগপোষ্টগুলি বেশ জনপ্রিয়তা পেয়ে যায়। আমি অনেকের লেখাই পড়ার চেষ্টা করি। নির্মলেন্দু গুণ, তসলিমা নাসরিন, আবু হাসান শাহরিয়ার এই তিনজনের লেখা কবিতার ভক্ত আমি। এদের মধ্যে তসলিমা নাসরিন গদ্যও লেখেন- যদিও তার গদ্য বা আর্টিকেল লেখার মান খুবই খারাপ এবং অরুচিকর, আমি পড়তে পারি না বিরক্ত হই।
 
সোসাল মিডিয়ায় এদের ছোট ছোট স্ট্যাটাসগুলিতে তাদের চরিত্রের দৈনতাও ফুটে উঠে অতি সহজেই- তাদের ব্যক্তিজীবনের প্রতিও শ্রদ্ধা হারাই। সেই সংগে দেখতে পাই বিশ্বব্যাপী পরাজিত ও বাতিল বামপন্থা কিভাবে নাস্তিকতার নামে তথাকথিত মুক্তচিন্তার ফেরী করে বেড়াচ্ছে। আর তাদেরই প্রকৃত মার্কেটপ্লেস ঐ প্রথমআলো।
 
আবার বেশ কয়েকজন অপরিচিত অথচ বেশ ভালো মানের লেখকও খুঁজে পেয়েছি আমি। বামপন্থারও বেশ কয়েজন খুবই ভালো মানের লেখকও আমি খুঁজে পেয়েছি এই বছরখানেকের মধ্যেই। তাদেরও নিয়মিত পড়ছি। আমি অবশ্য কমেন্ট খুবই কম করি।
 
যাই হোক এরকম অসংখ্য লেখকদের মধ্যে ‘একজন’ ব্যক্তি হঠাৎই আমার দৃষ্টি অাকর্ষনে সক্ষম হন। আমি তার প্রফাইল থেকে প্রচারিত লেখা বা স্ট্যাটাসগুলি যুক্তি ও বাস্তবতা দিয়ে ঠিক মেলাতে পারছিলাম না। নিজের কাছেই নিজের অভিজ্ঞতায় বিব্রত হতাম।
 
তিনি পিনাকী ভট্রাচার্য।
নামে বোঝা যায় তিনি একজন উচ্চগোত্রের হিন্দু ভদ্রলোক।
অগাধ পড়াশোনা তার, নিয়মিত প্রচুর পড়াশোনা করেন। পেশায় চিকিৎসক।
 
অথচ ওনার স্ট্যাটাসগুলি, ওনার আর্টিকেলগুলি আমাকে ভাবিয়ে তুলে। অবাক হয়ে ওনার লেখা আমি পড়ি এবং ওনাকে বোঝার চেষ্টা করি।
 
অনেক বিষয়েই ওনার সংগে আমার মতের মিল হয়না কিন্তু তার লেখার গভীরতাকে অশ্রদ্ধা জানাবো সেই সক্ষমতাই আমার নেই।
 
বাংলাদেশের ১০০ হাজার মুসলমান মিলে যতটুকু না তাদের মনের কথা বলতে পারেন- এক পিনাকী ভট্রাচার্য একাই তারচেও হাজারগুন বেশী- তাদেরই মনের কথা যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব, সংখ্যা, উপাত্ত ও ডাটাবেজ ধরে ধরে হিসাবে মিলিয়ে প্রকাশ করে চলছেন।
 
পিনাকী ভট্রাচার্য একজন একশতভাগ খাঁটি বাংলাদেশী জাতিয়তাবাদী ভদ্রলোক। তিনি যুক্তি বুঝেন, সত্য বুঝেন এবং সত্যের ফেরী করেন।
 
যতটুকু বুঝি একসময় বাম রাজনীতির সংগে উনি যুক্ত ছিলেন। বামতন্ত্র নিয়ে ওনার পড়াশোনাও ব্যাপক। মার্কস-লেনিন ওনার মুখস্থ। সেই সংগে সোভিয়েট ইউনিয়ন, কিউবা, উত্তর কোরিয়া বা চায়নার সমাজতন্ত্র বা কমিউনিজম এবং বাস্তবতা সম্পর্কে ওনার হিসাব পরিস্কার এবং ট্রান্সপারেন্ট।
 
ভদ্রলোক সততায় বিশ্বাসী এবং উদার মানসিকতাসম্পন্ন।
একজন মুসলিমের মনের অনেক কথাই তিনি তার কলম দিয়ে প্রকাশ করে দিতে অদ্বিতীয়।
 
কারণ তিনি বাম সূত্রগুলিও জানেন আবার সততা ও বাস্তবতায় কালকুলেশনও করতে পারেন। যে কারণে তার কলম দিয়ে যা বের হয় সেটা যুক্তিকে প্রকাশ করে পরিস্কার পানির মতো।
 
আর ‘একজন পিনাকী ভট্রাচার্য’ অতি অবশ্যই হয়ে উঠেছেন বাংলাদেশের সো-কলড বামদের জন্য ত্রাস। ক্ষিপ্রগতিতে তিনি আক্রমণ সানান মিথ্যার উপর ভর করে চলা ঐসকল বামদের, সেকুলারদের।
 
আর এতেই তাদের শরীরে কম্পন ধরে, নাস্তিকতা পালাবার পথ খোঁজে। বামদের তো লজ্জা থাকতে নেই তাই তারা প্রকাশ্যে জামা-কাপড় ভিজিয়েও মুখ লুকায় না।
 
আরও মজার বিষয়টা হলো একজন পিনাকী আজ হাজারটা সেকুলারের বিপক্ষে একাই একজন ত্রাস। পিনাকী প্রতি মুহুর্তে যেন একটা একটা করে সেকুলারকে ধোলাই দিয়ে যাচ্ছেন।
 
ঠিক এই অবস্থায় পিনাকী ভট্রাচার্যের লেখা মুক্তিযুদ্ধের শক্তিশালী দালিলিক গ্রন্থ ‘মার্কিন ডকুমেন্টে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ’ প্রকাশিত হয়।
 
আর এতেই বাংলাদেশী ওসব নষ্ট বাম-কাম-সেকুলারগুলোর বুকে আগুন ধরে উঠে। দিকবিদিক জ্ঞানশূন্যের মতো আচরণ, হামলা আসতে থাকে সোসাল মিডিয়াতে পিনাকী ভট্রাচার্যের উপর। ইতিমধ্যে বইটি তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
 
এবং এরই ধারাবাহিকতায় মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরের লাইব্রেরী থেকে বইটি ফেরত পাঠিয়েছে- তারা সেটা বিক্রি করতে দেবে না।
 
পিনাকী’র ভাষা-তেই বলি, ‘মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর বাংলাদেশের আপামর জনগনের দানে নির্মিত হয়েছে; তার উপরে হক বাংলাদেশের সব জনগনের, তাই তারা এমন কোন তুঘলকি সিদ্ধান্ত নিতে পারেনা যা পলিটিক্যালি বায়াসড।’
 
‘মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর’ও এখন বাংলাদেশের সবচে বড় নাস্তিক ও মুসলিমদের শত্রু শেখ হাসিনারই নিয়ন্ত্রনাধীন। সব দালাল আর মোসাহেবরা সেখানেও বসে হাসিনার তোষামদীতেই ব্যস্ত। আমার বিশ্বাস ওসব তোষামদরা পিনাকী’দার বইটি পড়েও দেখেননি। কিন্তু ‘পিনাকী’ নামটাই আজ তাদের কলিজায় কাঁপন ধরায়।
 
এই কাঁপন আর থামবে না।
আমি বিশ্বাস করি এই কাঁপনেই উপড়ে পড়বে সব অসত্য আর নস্টামী। বিলুপ্ত হবে বাংলাদেশ থেকে বাম আর নাস্কিকতা।
 
সত্যের জয় হবে, মিথ্যা পরাজিত হবে। এইটা পবিত্র সত্য।
 
 
   Send article as PDF