আম কুড়োনো

খুব মনে পড়ছে- ছোট বেলার কথা।

তখন বর্ষার সিজনে যখন প্রচুর বৃষ্টি হতো টানা কয়েকদিন পর্যন্ত- ঘর হতে বের হতে পারতাম না। বৃষ্টির সাথে প্রচন্ড ঝড়ো হাওয়া- গাছগুলো বাতাসের তীব্রতায় মনে হতো এই বুঝি আমাদের টিনের চালওয়ালা ঘরের উপর ভেঙ্গে পড়বে। বাইরে অনেক সময়- এর মধ্যেই আম কুড়াতে যেতাম। টিনের ঘরে বৃষ্টির শব্দ শুনতাম, অনেক সময় শীতের মতো কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে থাকতাম আর ঘরের জানালা খুলে বৃষ্টি আর বাতাস দেখতাম। মাঝে মাঝে বৃষ্টি একটু কমলে গ্রামের রাস্তায় হাটাহাটি করে দলবেধে দেখতাম কি কি ক্ষতি হলো এলাকায়। ইত্যাদি।


অনেক বছর সত্যিই টিনের ঘরে শুয়ে বসে বৃষ্টি বা ঝড় দেখা হয় না। আম কুড়োনোর সুযোগ হয় না। 
হয়তো ভুলেই গিয়েছিলাম এসব ব্যস্ততার বেড়াজালে থেকে থেকে।


অনেক বছর পর, বাংলাদেশ থেকে অনেক অনেক দুরে এই মার্কিন মুল্লুকের নিউ ইয়র্ক শহরে (যেটা এই বিশাল পৃথিবীর সবচে উন্নত শহর, সবচে আধুনিক জীবন যাত্রার শহর, সবচে সমৃদ্ধ শহর) আমার বাসার বেড রুমে বসে জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিয়ে বসে আছি বাইরে তাকিয়ে।


এখানকার আবওহাওয়া পূর্বাভাস অত্যন্ত নির্ভূল। গতকাল সন্ধ্যায় নিউ ইয়র্কের মেয়র স্বয়ং নিজে নিউ ইয়র্কারদের উদ্দেশ্যে বলেছেন ভয়াবহ দুর্যগ আসতেছে নিউ ইয়র্ক বাসীর উপর। সাবধান, পর্যাপ্ত খাবার পানি ও বিকল্প আলোর ব্যবস্থ করে রাখার জন্য- তিন ফুট পর্যন্ত স্নো পড়বে। প্রচন্ড তুষার ঝড়ের মোকাবেলা করতে হবে নিউ ইয়র্কারদের। 
অতএব, আমরা প্রস্তুত। নিউ ইয়র্ক এমন একটা শহর যেটা কখনও বন্ধ থাকে না। ২৪ ঘন্টাই সমভাবে জাগ্রত একটা শহর। আজ ভোর সকাল সাড়ে পাঁচটায় যখন বাসায় ফিরছি- তখন ছিল রাস্তায় পিক আওয়ার। প্রচন্ড ব্যস্ত মানুষ বাসে, গাড়ীতে বা সাবওয়েতে যে যার মতো কাজে যাচ্ছে বা ফিরছে। জানলাম ৩/৪ ফুট বরফ হলেও মাটির নিচের সাবওয়ে বন্ধ থাকে না। 


আজ জানি না কি হবে!
তবে, জানালা খুলে বাইরে দেখছি এখন আর লিখছি।


স্নো পরছে। শিমুল গাছ থেকে তুলো পড়ার মতো। পরেই যাচ্ছে। সব কিছুই এখন সাদা ধবধবে। সত্যিই দেকার মতো দৃশ্য। সাথে প্রচুর বাতাস। তুষার ঝড় এখনও শুরু হয়নি। হবে, অপেক্ষায় আছি।


কিন্তু অনুভব করতে পারছি না- বাইরের বাতাস, ঝড় বা স্নো। প্রচন্ড শীত বাইরে। 


পাতলা একটা গেঞ্জি গায়ে দিয়ে বসে বসে দেখছি- বাট, অনুভব করতে পারছি না বাইরের -১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস এর নীচের তাপমাত্রা। টিনের চালের বৃষ্টি’র আওয়াজও নেই। ঝড়ের বেগ দেখছি বা অনুভবহীন। 


বাংলাদেমের টিনের চালের বৃষ্টির আওয়াজ মিস করছি। বৃষ্টির মতো স্নো পড়ছে সাথে বাতাস- দারুন লাগছে দেখতে।

   Send article as PDF