সোনার বাঙলার সংবিধান!

ভাবছি একজন লোক নিয়োগ করবো।
আমি তো দেশে থাকি না- তাই দেশে একজন লোক দরকার।
 
আগে সুযোগ সুবিধা কি কি দেব- সেটা বলি।
 
– ৯০০০ স্কোয়ার ফিটের বিশাল একটা ট্রিপলেক্স বাড়ীতে তার স্বপরিবারে থাকা, খাওয়ার ব্যবস্থা দেব।
– জার্মানীর বিএমডব্লিও’র তৈরী দুইটা ফোর হুইল ড্রাইভ ৫০০০সিসি এসইউভি কার দিবো। ৩জন ড্রাইভার থাকবে ফুলটাইম। আনলিমিটেড অকটেন দেয়া হবে। মাসে একটা সর্ভিসিং খরচ আমিই দিবো।
– তার দেখা-শোনা’র জন্য গোটা দশেক কাজের লোক, ২১ জন প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত রিটায়ার্ড আর্মি অফিসার থাকবে সিকিউরিটি দেখার জন্য; ৩ শিফট-এ তারা ডিউটি করবে।
– তার জন্য সিংগাপুরে ত্রৈমাসিক মেডিকেল ট্রিটমেন্ট এর ব্যবস্থা করে দেব।
– তার, তার স্ত্রী, পুত্র-কন্যা, পত্রবধু, কন্যার ঘরজামাই ও তাদের পুত্র-কন্যাদেরও অনুরুপ সুযোগ সুবিধা দিব।
– ঐ ট্রিপলেক্স এ এত মানুষদের জায়গার সংকুলান না হলে- প্রয়োজনে পাশেই আরও দু’টি ডুপ্লেক্সও দেয়া হবে।
– তার বাসার তিনবেলা ফাইভ স্টার মানের খাবার সরবরাহ করা হবে ঢাকার হোটেল সোনারগাও অথবা পূবার্নী থেকে। তার সকল স্ট্যাফদের জন্যও খাবারের ব্যবস্থা থাকবে আমার নিজস্ব খরচেই।
– বছরে ২টি বিদেশ ভ্রমণ এর জন্য বিমান টিকেট, হোটেল, ফুড দেয়া হবে এবং সেই সঙগে একটা আনলিমিটেড ক্রেডিট কার্ড দেব শপিং করার জন্য।
– বাসায় কেন্দ্রিয় শিতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র বসিয়ে দেব, সংগে শীতের সময় হিটারেরও কাজ দেবে। ২টি টেলিফোন, রুমে রুমে ইন্টারকম এবং পরিবারের সকলকে আইফোন সেভন-এস দেয়া হবে- পছন্দসই যে-কোন কালারের।
– বাড়ীতে ১ টেরাবাইট আনলিমিটেড ইন্টারনেট সেবার ব্যবস্থাও থাকবে।
– বাড়ীর যাবতীয় ইলেকট্রিসিটি, ফোন, ইন্টারনেটসহ সকল ইউটিলিটি আমি পরিশোধ করবো।
 
অর্থাৎ, তাকে- তার ও তার চৌদ্দগুষ্ঠির জীবন-জীবিকা নিয়ে আর ভাবতে হবে না।
 
তাকে আপাততঃ পাঁচ বছরের জন্য চাকুরীতে নিয়োগ দেয়া হবে।
তার কাজে আমি সন্তুষ্টু হতে পারলে পরে তার চাকুরী নবায়ন করে দেব।
 
প্রার্থীর যোগ্যতা
তেমন কোন যোগ্যতার পরীক্ষা দিতে হবে না। কোন ইন্টারভিও-ও নিব না। হাইলী একাডেমিক ব্যাকগ্রাউন্ডও দরকার নেই তবে ভালো, ভদ্র এবং দেখতে শিক্ষিত হলেই চলবে।
 
কাজের দায়িত্ব
কোন কাজ করতে হবে না। দিনভর হাই প্রোফাইল ড্রেসআপ মেনটেন করতে হবে। আমার কাছে কেউ আসলে তাকে একটু সাক্ষাৎ দিতে হবে। আমি যা যা বলে দিব- তাকে তাই তাই করতে হবে।
 
এছাড়া আর কোন দায়-দায়িত্ব নেই।
অন্য কোন কাজও নেই। বলতে গেলে মাসে টোটাল ৪০ ঘন্টা কমপ্লিট স্যুট পরে বাসায় বসে ফেসবুকিং করলেও কোন সমস্যা নেই আমার।
 
তবে, মাত্র একটা শর্ত আছে।
শর্তে রাজী হলেই আপনার চাকুরী কনফার্ম।
 
শর্ত: আপনাকে ‘অফিসিয়ালি নপুংসক’ করে দেয়া হবে ঠিক যেভাবে পাঠা-কে ছাগল বানানো হয়।
 
কি হলো?
এটুকু শুনেই হাপিয়ে গেলেন না কি?
না কি ভাবছেন- আমি পাগল গয়ে গেছি?
আমেরিকায় এসে প্রচুর ‘মাল’ কামিয়েছি তাই খরচ করার রাস্তা পাচ্ছি না!
 
না রে ভাই, পাগল তো আমি হইনি।
পাগল হয়েছেন আপনি।
 
আপনারা।
 
আপনারা মানে- বাংলাদেশের ১৭ কোটি ‘কথিত মানুষ’রা।
 
প্রমাণ করে দেবো?
বঙ্গভবনের দিকে তাকান!
 
দেখেন- ওখানে একজন জোকার বসে রয়েছে। আব্দুল হামিদ এডভোকেট। তিনিও নপুংসক করিয়েছেন।
 
তার পদবী ‘মহামান্য প্রেসিডেন্ট, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’।
 
এবং আপনারা, মানে ঐ ১৭ কোটি মানুষ তাকে আলোচ্য সুযোগ-সুবিধা’র চেয়েও বেশী সুযোগ-সুবিধা প্রদান করে যাচ্ছেন নিয়মিত।
 
এর আগে ঐ একই পদে একই সুযোগ সুবিধা পেয়ে গেছেন- নপুংসক আব্দুর রহমান বিশ্বাস, নপুংসক শাহাবুদ্দিন আহমেদ, নপুংসক বদরুদ্দৌজা চৌধুরী, নপুংসক ইয়াজউদ্দিন আহমেদ এবং শেষটায় নপুংসক জিল্লুর রহমান।
 
এদের কোন কাজ নেই।
এদের কোন দায়িত্বও নেই।
এরা খায়-দায়-ঘুমায়-বেড়ায় আর বিদেশে যায় নিজের ও তার স্ত্রীদের চিকিৎসা করাতে।
 
কার টাকায় জানেন?
আপনার টাকায়।
 
আপনি মোবাইলে কথা বলেন- ওখান থেকে টাকা নেয়া হয়।
আপনি একটা জামা কিনেন- ওখান থেকে টাকা নেয়া হয়।
আপনি আপনার অনেক কষ্টের টাকায় বাজার করেন- সেখান থেকেও টাকা কেটে রাখা হয়।
আপনি যে সারামাস চাকুরী করে বেতন তুলেন- সেখান থেকেও টাকা কেটে নেয়া হয়।
আপনি ব্যবসায় লাভ করবেন না লস করবেন- সেটা বিবেচ্য নয়; আগেই আপনার কাছ থেকে ‘এডভান্স ট্যাক্স’ নিয়ে নিয়ে হয়।
এবং ফাইনালী আপনার অতি কষ্টের টাকা যা ব্যাংকে জমিয়ে রাখেন- সেখান থেকেও প্রতি বছর টাকা কেটে নেয়া হয়।
 
আর ঐ টাকা দিয়েই একজন ‘নপুংসক’ কে ঐরকম সুযোগ-সুবিধা দিয়ে বসিয়ে বসিয়ে পালা হয়। ঠিক যেভাবে আপনি বাড়ীতে গরু-ছাগল-হাস-মুরগী পালেন অথবা পুকুরে মাছ চাষ করেন।
 
গরু-ছাগল আপনাকে দুধ দেয়, নতুন বাছুর দেয়।
হাস-মুরগী ডিম দেয়।
মাছ বিক্রি করে আরও মাছ কেনার পয়সা হয়ে।
ওসব দিয়ে আপনার স্ত্রী-পুত্র-সন্তানদের মুখে খাবার তুলে দেন, স্কুলে পাঠান।
 
আর আপনি সারাদিন গাধার মতো পরিশ্রম করেন।
 
কিন্তু ঐ ‘নপুংসক প্রেসিডেন্ট’ আপনাকে কিছুই দেয় না।
তার কোন কিছু দেবার কোন দায় নেই।
 
কিন্তু আপনাকে দায়িত্ব নিয়ে ‘তাকে’ পুষতেই হবে।
 
আপনি যদি খাবার নাও পান, আপনি যদি একটা শার্ট কিনতে নাও পারেন, আপনি যদি টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় মারাও যান- তাতে কারোই কিছু আসে যাবে না।
 
কিন্তু আপনি মরে গিয়ে হলেও আপনাকে ‘ট্যাক্স’ দিয়ে ঐ ‘নপুংসক’কে বাঁচিয়ে রাখতেই হবে।
 
এটাই আপনার দেশের সংবিধান।
‘আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি’।
 
আপনি ভালোবাসতে থাকুন।
 
আমি ঐ সংবিধানকে পুছি না। ওটাকে আমি লাথ্থি মারবোই।
এই পচা আর ফালতু সংবিধান ও তার দুর্বলাতার জন্যই গুটি কয়েক পশুর হাতে আজ বাংলাদেশটা ডাষ্টবিনে বন্ধি হয়ে রয়েছে।
   Send article as PDF