সময় আসবেই

সরকার সংশ্লিষ্ট না থাকলে বাংলাদেশের আদালাতের যে-কোন রায়’ই টাকা দিয়ে তৈরী করা সম্ভব। দেশের অধিকাংশ ম্যাজিষ্ট্রেট, জাজ, বিচারপতি এমনকি স্বয়ং প্রধান বিচারপতি-কেও নগদ টাকা দিয়ে কিনে ফেলা যায়।
 
আমি আমার নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি মাত্র লাখ খানেক টাকা বিচারপতিকে ঘুষ খাইয়ে যে-কোন মামলা বা রায়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘ষ্ট্রে’ করে দেয়া সম্ভব।
 
এসবই মধ্যম আয়ের ডিজিটাল বাংলাদেশ এর বাস্তব চরিত্র।
দেশ এভাবেই চলছে- এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে দ্রুত গতিতে।
 
তো, সেই দেশে এলো এক তত্বাবধায়ক সরকার।
সেই তত্বাবধায়ক সরকার দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে (যারা উভয়েই দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিল এবং বিভিন্ন দুর্নীতিতে জড়িয়েও ছিল বলে সাধারণ মানুষও বিশ্বাস করে) অনেকগুলো মামলা দায়ের করে, তাদের গ্রেফতারও করে। কিছু বিচারিক কাজ শুরু করার চেষ্টাও করেছিল।
 
কিন্তু এর মধ্যেই একটা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো এবং সেই দুই নেত্রীর একজন বিজয়ী হয়ে দেশের প্রধানমন্ত্রী হলো।
 
এবার হলো আসল মজা।
এই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার নিজের এবং তার দলের অন্যান্য নেতাদের বিরুদ্ধে করা ঐ তত্ববধায়ক সরকারের সবগুলি মামলাকেই বাতিল করিয়ে দিলো বিশেষ কমিটি গঠন করে।
 
এবং অপর নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা সবগুলি মামলাকে স্বাভাবিক গতিতে চলতে দিলো।
 
ব্যক্তি জীবনে শেখ হাসিনা কতটা অসৎ, নীচু প্রকৃতির এবং নোংরামীতে আসক্ত এই একটি ঘটনাতেই তার বাস্তব প্রমাণ পাওয়া সম্ভব।
 
অপর দিকে দেশের বিচারবিভাগও এই বিষয়টি নিয়ে কোন কথা না বলে- তারা যে কতটা অসুস্থ বিচার চর্চা চালাচ্ছে তারই জ্বলন্ত নজীর উপস্থাপন করেছে।
 
দেশের হাইকোর্টে একজন শপথ নেয়া বিচারপতিও নেই যে কিনা নিজ উদ্যোগে এর বিরোধীতা করতে পারেন- একটা সমগ্র জাতি এভাবেই মনে হয়ে একসংগে ধ্বংশ হয়ে যায়! সত্যের পক্ষে কথা বলার একজন মানুষও তখন আর দেশে অবশিষ্ট থাকে না!
 
শুনেছি বৃটিশ এবং পাকিস্তান আমলে নাকি এই বাংলাদেশ ভূখন্ড থেকে বড় অফিসার পদে কাউকে সেভাবে সুযোগ দেয়া হতো না; আর এখন দেখতে পাচ্ছি যে আসলে ‘বড় অফিসার’ হবার যোগ্য ব্যক্তিই এই দেশে কোন কালে ছিল না। আর তাইতো এখন যারা বড় বড় অফিসার তারা শুধুই নিজের ক্ষমতা, তুচ্ছ ব্যক্তিস্বার্থ আর নিজের পরিবারের অর্থনৈতিক লাভের জন্য নিজের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে- যা খুশী তাই করতে পারে। যেটা পাকিস্তানী বা বৃটিশ আমলের অফিসাররা কখনও চর্চা করতো না।
 
চর্চা যে করতো না সেটা কিন্তু আজও দেখা যায়- পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি তার দেশের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রীকে বরখাস্ত করে দিতে পারেন নির্দিধায়।
 
যা-ই হোক, বেগম জিয়ার একটা মামলা তড়িঘড়ি করে আগামী ৮ই ফেব্রুয়ারী রায় দেয়া হচ্ছে। বিভিন্ন সরকারী ক্ষমতাধারীদের মুখের কথা এবং আমিও বিভিন্ন সূত্র থেকে যতটুকু জানতে পেরেছি তাতে এটা পরিস্কার যে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বেশ কয়েক বছরের কারাদন্ড এবং একই সংগে অর্থদন্ডের রায় দেয়া হবে। তাকে গ্রেফতার করে জেলেও ঢুকানো হবে এবং মাস কয়েকের মধ্যে হাইকোর্ট থেকে জামিনে তিনি ছাড়াও পাবেন।
 
এরপর সরকার হয়তো আরেকটু ট্রাই করবে- বেগম জিয়াকে হাইকোর্ট দিয়েও সাজা একটু কমিয়ে আবারও জেলে ঢুকাবে এবং নির্বাচন করার অযোগ্য ঘোষনা করবে।
 
এটাই বাংলাদেশের বর্তমান ক্ষমতার চর্চা।
এভাবেই দেশ চলছে। এভাবেই আওয়ামী লীগ বিএনপিদের নেতৃত্বে দেশ চলতে থাকবে।
 
বেগম জিয়ার জেল হলে কি হবে বিএনপি’র- সেটা নিয়ে আমার কোন চিন্তা থাকার কথা না কারণ আমি বিএনপি করি না বা সমর্থনও করি না। কিন্তু আমার চিন্তায় যেটা আসছে সেটা হলো শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে বিরোধীদল শূণ্য করার এক মিশনে নেতৃত্ব দিচ্ছে! তাছাড়া বিএনপি সমর্থন করি না বলে বেগম জিয়ার উপর অন্যায় অত্যাচার হবে সেটাকে তো মেনে নিতে পারি না!
 
এরশাদ-কেও সে ক্ষমতার অংশীদার, কিছু রাজনৈতিক গেমিং ও নগদ পয়সার বিনিময়ে ক্রয় করে রেখেছে।
 
জামায়াতকে রেখেছে পুংগ করে; কোন নিয়মনীতি বা সভ্যতার তোয়াক্কা না করে জামাত-শিবিরকে দেখামাত্র গুলি করে হত্যা, জখম বা আটক করে জেলে নিয়ে চির জীবনের মতো পুংগ করে দিতে শেখ হাসিনার একটু হাত কাঁপে না।
 
দেশের পুলিশ অফিসারা আজ ইচ্ছা হলেই ‘মানুষ হত্যা’ করে- এরপর আবার গর্ভ ভরে তার আস্ফালনও করে ‘এই তো মাত্র ক্রস ফায়ারে দিয়ে ফিরলাম’!
 
যার হাতে মানুষের নিরাপত্তার দায়িত্ব দেয়া সে-ই নির্দিধায় মানুষ হত্যা করে যাচ্ছে।
 
উপজেলার টিএনও, থানার ওসি এসআই, জেলা জাজরা যার যেভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে চলছে দেশে। সাংবাদিকরাও তাদের অবৈধ সহযোগী হিসাবে নিজেদের আজ ক্ষমতার অপব্যবহারকারীতে পরিণত করেছে।
 
এমন একটা অবস্থায় জামায়াতের পর এবার বিএনপিকেও ধ্বংশ করার এক মিশনে নেমেছে শেখ হাসিনা।
 
শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিব সারা জীবন ক্ষমতা আঁকড়ে রাখতে ‘বাকশাল’ কায়েম করেছিলেন। নিষিদ্ধ ঘোষনা করেছিলেন দেশের সবগুলি রাজনৈতিক দলকে, মাত্র ৪টি বাদে দেশের সব সংবাদপত্রকেও বন্ধ ঘোষনা করে দিয়েছিলেন আর শেখ হাসিনা ঐ বাকশাল পন্থায় না গিয়ে সরাসরি বিরোধীমতকে কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যবহার করছে পুলিশি ক্ষমতায় হত্যা, গুম বা সারা জীবনের মতো পুংগ করে দিতে।
 
যত রকম ভাবে একজন মানুষকে নির্যাতন করা যায়- তার সবগুলি উপায়ই আজ পুলিশ ব্যবহার করছে রিমান্ডে নিয়ে বিরোধী মতের মুখ চিরতরে বন্ধ করে দিতে।
 
দেশে সৎ বা সুস্থ ধারার কোন সাংবাদিক জীবিত থাকলে আজ প্রকাশ পেত শেখ হাসিনার লেলিয়ে দেয়া পুলিশ বাহিনী কিভাবে কারাভ্যন্তরে নির্যাতন চালাচ্ছে বিরোধীদের- ম্লান হয়ে যেত হিটলার, মাওসেতুংদের নির্যাতনের নমুনা; মানুষ ভুলে যেত সেই সেদিন জর্জ বুশ ইরাক বা আফগানিস্থান থেকে ধরে নিয়ে কিউবার গুয়েনতানামো বে’র কারাগারে যে বন্দি নির্যাতন চালিয়েছে তার কথা, তার উদাহরণ।
 
ভয়ে আজ কেউ মুখ খুলে না।
ফরহাদ মজহার না, সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর গুম থেকে ফেরা ছেলে হুম্মাম চৌধুরীও নিশ্চুপ আজ। মাহমুদুর রহমানও কথা বলতে হিসাব করে সেসব নির্যাতনের কথা মনে করে। জামাত শিবিরের নেতাদের ধরে নিয়ে কিভাবে তাদের শেষ করে দেয়া হয়েছে- এসবই একদিন মানুষ জানবে!
 
এভাবে ভয় দেখিয়ে, এভাবে মুখ বন্ধ করে রেখে এবং এরই এক ধারাবাহিকতায় আজ বেগম খালেদা জিয়াকে জেলে ঢুকিয়ে শেখ হাসিনার কি আদৌ শেষ রক্ষা হবে?
 
শেখ মুজিবের শেষ রক্ষা হয়নি, শেখ হাচিনারও হবে না- ইতিহাস স্বাক্ষী।
 
কিন্তু দেশটার কি হবে?
বেগম খালেদা জিয়াকে তুচ্ছ কারণে আজ সাজা দেয়া হচ্ছে, জেলে নেয়ার পায়তারা করা হচ্ছে! বৃদ্ধ বয়সে এই তাকে আজ মিথ্যা অভিযোগ আদালতে হাজিরা দিতে হচ্ছে! মানুষ ভয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে পারছে না! বিএনপি নেতাদের একের পর এক গ্রেফতার করে, নির্যাতন করে চুপ করিয়ে দেয়া হয়েছে- মাঠে নামতে দেয়া হচ্ছে না কাউকে!
 
এসবের পরিণাম কি ভাল হবে শেষ পর্যন্ত!
আমি বিশ্বাস করি না যে ভালে হবে।
 
দেশের মানুষের মুখ বন্ধ করিয়ে রেখে, স্বাধীনতাহীনতায় আবদ্ধ করে রেখে কোন ভাল পরিণাম কোনদিনও হয়নি, হবেও না।
 
শেখ মুজিবের শেষ রক্ষা হয়নি, শেখ হাচিনারও হবে না- ইতিহাস স্বাক্ষী।
 
সময় আসবেই।
   Send article as PDF