ন্যাশনাল আইডি কার্ড

সেই ২০০৭ সালে যখন তত্ববধায়ক সরকার ক্ষমতা দখলে নিল এবং দেশে একটি ন্যাশনাল আইডি কার্ড বা সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়ন করা নিয়ে আলোচনা চলছিল- তখন আমি একটি আর্টিকেল লিখি প্রথম আলোতে।
 
প্রথম আলো আমার অার্টিকেলটি অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে প্রকাশ করে।
 
তখন বয়স, অভিজ্ঞতা সবই কম ছিল। এখন লিখলে অবশ্যই আরো বেশী যুক্তি ও গ্রহনযোগ্যতা দিয়ে লিখতে পারতাম। আরও অনেক বেশী যৌক্তিকতা দিয়ে এবং নিজের আরও সমৃদ্ধ অভিজ্ঞতাসহকারে উপস্থাপন করতে পারতাম।
 
সত্যি বলতে কি, আমি বিশ্বাস করি ‘শুধুমাত্র চাইলেই’ একটা দেশকে অনায়াসেই পরিবর্তন করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু আমাদের দেশে মেধাযুক্ত সেরকম ভাবে চিন্তা করার বা চাওয়ার কোন লোক খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। খুবই দুঃখজনক।
 
লেখাটা হঠাৎই সামনে চলে আসলো।
আমার বিদগ্ধ পাঠকদের জন্য দশ বছর আগের লেখাটি শেয়ার করলাম নীচে:
 
———————–
 
ন্যাশনাল আইডি কার্ড (এনআইডি)
একটি ‘ইউনিক নাম্বার’।
ব্যস! যেখানেই থাকুন না কেন আপনি- আপনার সব তথ্য উপস্থিত।
 
মুহুর্তেই পরিবর্তন হয়ে যাবে বাংলাদেশ।
এ যেন এক নতুন বাংলাদেশ। স্মার্ট বাংলাদেশ।
 
প্রয়োজন শুধুমাত্র একটি ন্যাশনাল ডাটাবেইজে আপনার যাবতীয় তথ্যাবলি সংরক্ষন ও বছরে একবার আপডেটিং।
 
আমেরিকার সোসাল সিকিউরিটি নাম্বারের মতোই অথবা তার চেয়েও উন্নতভাবে করা সম্ভব বর্তমান প্রযুক্তিতেই।
 
প্রয়োজনীয় বাধ্যতামূলক ডাটাবেজ:
নিম্বলিখিত তথ্যাবলীতে সমৃদ্ধ একটি ন্যাশনাল ডাটাবেজ তৈরী করতে হবে; যেটা খুবই অল্পসময়েই করা সম্ভব। এজন্য প্রয়োজন শুধু প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ এবং দক্ষ শিক্ষিত একদল মেধাবী তরুন কমপিউটার অপারেটর যার কোন অভাব নেই অভাগা এই দেশেই।
 
ন্যাশনাল আইডেন্টিটি কার্ড এর জন্য ডাটাবেজে অর্ন্তভূক্ত তথ্যাবলি নিম্বলিখিত ভাগে ভাগ করা যায় বা যেতে পারে-
১) অপরিবর্তনীয় স্থায়ী তথ্যাবলী:
নাগরিকের নাম
পিতার নাম
মাতার নাম
জন্ম তারিখ
সেক্স
জন্ম স্থান
স্থায়ী ঠিকানা
 
২) পরিবর্তনযোগ্য ব্যক্তিগত তথ্যাবলী
(পরিবর্তন হওয়ার সাথে সাথে নিকটবর্তী এনআইডি সেন্টারে যেয়ে তা আপগ্রেড করতে হবে)
অভিভাবকের নাম (২১ বছরের কম বয়সী বা প্রতিবন্ধী হলে)
স্পাউসের নাম (যদি থাকে)
বিবাহের তারিখ
ডিভোর্সের তারিখ (প্রযোজ্য ক্ষেত্রে)
গায়ের রং
চোখের রং
বর্তমান ঠিকানা
 
৩) টিআইএন নাম্বার
ন্যাশনাল আইডি নাম্বারটিই হবে মূলত টিআইএন নাম্বার।
 
৪) সরকারী বিশেষ নিরাপত্তা তথ্যাবলী:
শুধুমাত্র সরকারী জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থাই এখানে তথ্য সংরক্ষন করতে পারবে।
থানা ও আদালতের জন্য ব্যবহৃত তথ্যাবলী প্রশাসন এখানে সংরক্ষন করবে।
 
৫) নির্বাচন কমিশনের জন্য প্রয়োজনীয় তথ্যাবলী:
উপস্থিত তথ্যের আলোকে এই নাগরিক দেশের কোন এলাকার ভোটার এবং সংশ্লিষ্ট সকল তথ্যাবলী অনলাইনে সবসময় হালনাগাদ করতে হবে।
 
৬) মৃত তারিখ
 
এনআইডি কার্ডটি-ই হবে মুলত ড্রাইভার অথবা নন-ড্রাইভার লাইসেন্স। যে ড্রাইভিং করতে পারে তার কার্ডে লেখা থাকে ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’ আর যে ড্রাইভিং জানে না তার কার্ডে লেখা থাকবে ‘নন ড্রাইভিং লাইসেন্স’।
 
দেশের প্রতিটি সরকারী বা যে কোন অফিসে রক্ষিত তাদের অফিসের কমপিউটার-ইন্টারনেট দিয়েই শুধুমাত্র এনআইডি নাম্বার বা নাম বা জন্ম তারিখ দিয়ে যে-কোন নাগরিকের প্রাথমিক তথ্যাগুলো দেখতে পারবে। এতে করে এনআইডি এর নকল অসম্ভব হয়ে যাবে।
 
এনআইডি নিয়মিত ব্যবহার করবে সচিবালয়, পাসপোর্ট অফিস, নির্বাচন কমিশন, থানা, উপজেলা, পৌর কর্পোরেশন, ইউটিলিটি কর্তৃপক্ষ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান- স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বিমানবন্দর বা স্থল বন্দর এর ইমিগ্রেশন অফিসসমূহ, রেল ষ্টেশনসমূহ তথা সংশ্লিষ্ট যে-কোন কর্তৃপক্ষ।
 
নাম, জন্ম তারিখ এবং এনআইডি নাম্বার দিয়ে যে-কাউকে আইডেন্টিফাই করা যাবে। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে একজন অন্যজনের আইডি জানতে পারবে না।
 
এনআইডি ডাটাবেজ থেকে মুহুর্তেই জানা যাবে-
তিনি দেশের ভোটার কিনা?
তার বয়স কত?
তিনি ভোট প্রদান করেছেন কিনা?
নাগরিকটি দেশে অবস্থান করছেন কিনা?
কোন অপরাধের সাথে জড়িত কিনা?
সাজাপ্রাপ্ত আসামী কিনা?
কোন মামলা রয়েছে কিনা?
কবে বিদেশ ভ্রমন করেছেন?
অন্য কোন দেশের নাগরিকত্ব/ গ্রীনকার্ড রয়েছে কিনা?
ট্যাক্স প্রদান করেন কিনা?
কোন কোন ব্যাংকে একাউন্ট রয়েছে?
মানি ল্যান্ডারিং আইন মেনে চলছেন কিনা?
ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন কিনা?
কোন দুরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত কিনা?
ইত্যাদি
ইত্যাদি
ইত্যাদি- যা চান।
 
এনআইডি কার্ড:
শুরুতে প্রয়োজনে সাধারণ প্লাস্টিক আইডি কার্ড এবং যথাশীগ্র সম্ভব একটি মাইক্রোচিপস সমৃদ্ধ (ডিজিটাল ডাটা সংরক্ষনার্থে) ছবি ও স্বাক্ষরযুক্ত কার্ড প্রতিটি নাগরিককে সরবরাহ করা হবে। ১০০/- টাকা প্রদান সাপেক্ষে একটি কার্ড প্রদান করা যাবে।
 
শুধুমাত্র প্রদর্শনের প্রয়োজন হলে এটি দেখালেই চলবে তবে ডিজিটাল ডাটা সরক্ষনার্থে এটি পাঞ্চ করা যাবে।
 
এনআইডি সার্টিফিকেট:
এটি একাধারে নাগরিকত্ব সার্টিফিকেট তথা বার্থ সার্টিফিকেট হিসাবে ব্যাবহার করা যাবে। যেসব অফিসে ডিজিটাল ডাটা পাঞ্চ মেশিন নেই সেখানে এই হার্ড কপিটি প্রদর্শন সাপেক্ষে ফটোকপি প্রদান করা যাবে। একটি লেমিনেটেড ছবি/ স্বাক্ষরসহ এনআইডি কার্ড পেতে ১০০/- টাকা প্রদান করতে হবে।
 
এনআইডি নাম্বার:
যে-কোন নাগরিক যে-কোন এনআইডি ষ্টেশনে যেয়ে কোন খরচ ব্যাতীত-ই তার এনআইডি নাম্বার জানতে পারবে এবং তথ্যাবলী (সাদাকালো ছবি ও স্বাক্ষরযুক্ত) মাত্র ১০/- টাকায় একটি সাদা কাগজে প্রিন্ট নিতে পারবে যেখানে ষ্টেশন ম্যানেজারের স্বাক্ষরযুক্ত সিল প্রদান করা থাকবে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে এটিও ব্যাবহার করা যাবে।
 
এনআইডি এর ব্যবহারিক প্রয়োগ:
১. শিক্ষা বছর শেষে নতুন শ্রেণীতে/ কলেজে/ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সাথে সাথে ডাটা আপডেট করতে হবে; শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এনআইডিসিবি ব্যাতীত কোন ছাত্র/ ছাত্রী ভর্তি করবে না।
২. পেশাগত বা চাকুরীতে অথবা ব্যবসায় সর্বত্র প্রয়োজনীয় অন্যান্য কাগজপত্রের সাথে এনআইডি সাবমিশন বাধ্যতামূলক করা হবে।
৩. পাসপোর্ট নাম্বার হবে এনআইডি নাম্বার অনুযায়ী। এনআইডি ব্যাতীত পাসপোর্ট হবে না; পাসপোর্টের জন্য আলাদা করে কোন পুলিশ ভেরীফিকেশন রিপোর্ট প্রয়োজন হবে না।
৪. ব্যাংক একাউন্ট করার ক্ষেত্রে এনআইডি প্রদর্শন বা সংরক্ষন বাধ্যতামূলক।
৫. জাতীয় বা আঞ্চলিক ভোট প্রদান করার সময় এনআইডি প্রদর্শনতথা এন্ট্রি বাধ্যতামূলক বাধ্যতামূলক।
৬. সচিবালন/ উপজেলা/ থানায় যে-কোন প্রয়োজনে এনআইডি প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।
৭. বিমান/ ট্রেন বা দুরপাল্লার বাস/ লঞ্চ ভ্রমণে এনআইডি প্রদর্শন বাধ্যতামূলক।
৮. হসপিটালে চিকিৎসা/ ভর্তির ক্ষেত্রে এনআইডি দাখিল বাধ্যতামূলক।
৯. ইন্টারভিউ এর সময় এনআইডি বাধ্যতামূলক।
১০. বিয়ের সময় পাত্র-পাত্রী উভয়ের জন্যই কাবিননামার সাথে এনআইডি দাখিল বাধ্যতামূলক।
১১. গাড়ী, ফ্লাট, জায়গা-জমি ভাড়া, হোটেলে অবস্থানের সময়, ক্রয় বা বিক্রয়ের সময় এনআইডি প্রদর্শন বা দাখিল বাধ্যতামূলক।
ইত্যাদি।
 
বিদেশ ভ্রমণে যাবার আগে এবং ভ্রমণ শেষে দেশে ফিরে, বিয়ের পর, পদোন্নতি, কোর্সসম্পন্নকরণ শেষে, ট্যাক্স প্রদান শেষে ইত্যাদি যাবতীয় কার্যক্রমের সমাপ্তিতে এনআইডি ডাটা আপগ্রেট বাধ্যতামূলক।
 
প্রয়োজনীয় বিনিয়োগ:
প্রচলিত আছে বাংলাদেশে কোন কাজই হয় না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও যথাযথ স্থানে মোটা কমিশন দেয়া না হলে। ফলে যা হবার তা-ই হয়; দেখা যায় ৩৫/৪০ হাজার টাকার কমপিউটার সরকার ক্রয় করছে ৫৫/৬০ হাজার টাকায়। কমিশনের টাকার ভাগ এভাবেই জনগনের ঘাড়ে গিয়ে চাপে শেষ পর্যন্ত।
তবে বর্তমান তত্ত্বাবধায়ক সরকার যেহেতু আন্তরিক সেহেতু এ একটি ভাল কাজ অন্তত কমিশন ছাড়াই সরকার করতে পারবে বলে দেশবাসী বিশ্বাস করে। এক্ষেত্রে সরকারের দক্ষতার প্রমাণ হবে নিশ্চয়ই।
 
সারাদেশে প্রতিটি উপজেলা বা থানা সদরে একটি করে ‘এনআইসি ষ্টেশন’ স্থাপন যেখানে থাকবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত ন্যূনতম সাতজন কমপিউটার অপারেটর, পাঁচটি নেটওয়ার্কসমৃদ্ধ কমপিউটার, লেজার প্রিন্টার, ডিজিটাল ক্যামেরা এবং একটি হেভী-ডিউটি আইপিএস। মোবাইল ফোনের জিপিআরএস প্রযুক্তিতে বর্তমানে বেশ কম খরচেই ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া যাচ্ছে- যেটা উক্ত প্রতিটি ষ্টেশনে ব্যবহারযোগ্য। হয়ে গেল একটি ষ্টেশন। এভাবেই সারাদেশে প্রাথমিকভাবে কমবেশী ৬০০টি সেট-আপ করতে খরচ হবে। আমি মোটামোটি একটি সাধারণ হিসাব দিতে পারি এক্ষেত্রে।
 
সারাদেশে ৬০০টি ষ্টেশন স্থাপনা ব্যয়
বিবরণ সংখ্যা মূল্য মোট টাকা
পি-ফোর কমপিউটার ৫ ৪০,০০০/- ২,০০,০০০.০০
লেজার প্রিন্টার ২ ১৫,০০০/- ৩০,০০০.০০
স্কানার মেশিন ২ ৫,০০০/- ১০,০০০.০০
ডিজিটাল ক্যামেরা ২ ১৫,০০০/- ৩০,০০০.০০
হেভী-ডিউটি আইপিএস ১ ৮০,০০০/- ৮০,০০০.০০
জিপিআরএস মডেম ২ ১৫,০০০/- ৩০,০০০.০০
অন্যান্য খরচ (অফিস/ ফার্নিচার) ১ ১,২ ০,০০০/- ১,২০ ,০০০.০০
সর্বমোট এককালীন খরচ: পাঁচ লক্ষ টাকা মাত্র ৫,০০,০০০.০০
সারাদেশে সর্বমোট এনআইডিসিবি ষ্টেশন সংখ্যা ৬০০ টি
সর্বমোট স্থাপনা ব্যয় ৩০,০০,০০,০০০.০০
 
৬০০টি ষ্টেশন পরিচালনায় এক বছরের সর্বমোট ব্যয়
বিবরণ সংখ্যা মূল্য মোট টাকা
অফিস ইন-চার্য ১ ১০,০০০.০০ ১০,০০০.০০
কমপিউটার অপারেটর ৭ ৭,০০০.০০ ৪৯,০০০.০০
নিরাপত্তা প্রহরী ২ ৪,৫০০.০০ ৯,০০০.০০
অফিস বয় ১ ৩,৫০০.০০ ৩,৫০০.০০
অফিস ভাড়া ১ ৩,০০০.০০ ৩,০০০.০০
ইলেকট্রিসিটি বিল ও ইন্টারনেট ১ ৩,০০০.০০ ৩,০০০.০০
মাসিক খরচ ১ ৭৭,৫০০.০০
বাৎসরিক খরচ ১২ ৯,৩০,০০০.০০
এক বছরের সর্বমোট বিনিয়োগ
গর্বমোট স্থাপনা ব্যয় ৩০,০০,০০,০০০.০০
আনুমানিক সফটওয়ার ডেভেলপমেন্ট তথা সার্ভার তৈরী ১৪,২০,০০,০০০.০০
সারাদেশের মোট ৬০০টি ষ্টেশনের বাৎসরিক খরচ ৫৫,৮০,০০,০০০.০০
আইডি প্রিন্টিং, রক্ষণাবেক্ষন, প্রশিক্ষণ, অন্যান্য সার্বিক ব্যয় ৫০,০০,০০,০০০.০০
সর্বমোট ১-বছরের বিনিয়োগ ১৫০,০০,০০,০০০.০০
 
সরকারের বাৎসরিক রেভিন্যিও:
এনআইডি ষ্টেশনগুলো থেকে নিয়মিত ন্যূনতম পাঁচ কোটি নাগরিক তাদের এনডিআই কার্ড এবং সার্টিফিকেট সংগ্রহ করবেন। এতে তারা সরকারকে বাৎসরিক রেভিনিও প্রদান করবেন ১০০@৫,০০,০০,০০০ = ৫০০,০০,০০,০০০.০০ (পাঁচশত কোটি) টাকা।
 
বাস্তবায়নের সময়সীমা:
এক বছরও নয় কিম্বা ছয় মাসও নয় তিন মাসেই সম্ভব এনডিআই থেকে নির্ভূল ভোটার তালিকাটি উপস্থাপন করা। কিভাবে? ৫০,০০,০০,০০০ টাকার একটি বাজেট রাখা হয়েছে আইডি প্রিন্টিং, রক্ষণাবেক্ষন, প্রশিক্ষণ ও অন্যান্য সার্বিক ব্যয় খাতে।
 
এখানে ৬০০টি ষ্টেশনের আন্ডারে প্রতিটিতে ৩০ জন (এক্ষেত্রে স্থানীয় অধিবাসীদের স্বল্পকালীন নিয়োগ দিয়ে) করে তথ্য-সংগ্রাহক নেয়া হবে। এদের প্রত্যেকের মাসিক ৫,০০০/- (পাঁচ হাজার) টাকা করে তিন মাসের জন্য মোট খরচ হবে ৪,৫০,০০০/- টাকা করে। অর্থাৎ ৬০০ ষ্টেশনের জন্য ২৭,০০,০০,০০০/- (সাতাশ কোটি) টাকা খরচ হবে তথ্য সংগ্রহে। আর তথ্য-ফরমটি প্রিন্টি করতে খরচ হবে কমবেশী ২,০০,০০,০০০/- (দুই কোটি) টাকা অন্যান্য খাতে বা মালামাল পৌছাতে আরো অতিরিক্ত এক কোটি টাকা খরচ হবে।
 
এবং ভোটার তালিকা শেষে পর্যায়ক্রমে প্রতিটি নাগরিক নিজ প্রয়োজনেই নিজ নিজ দায়িত্বে ষ্ট্রেশনে এসে নিজ তথ্যাবলী সংরক্ষন করে যাবেন বা নিয়মিত আপগ্রেট করবেন।
 
এখানে আরেকটি হিসাব উল্লেখ না করলেই নয় যে, বাংলাদেশে আনুমানিক কমবেশী ৭ থেকে ৮ কোটি বৈধ ভোটার দেশে উপস্থিত আছেন। একটি হিসাব করি-
৮,০০,০০,০০০ ভোটারের জন্য ষ্টেশন ৬০০টি
প্রতিটি ষ্টেশনের জন্য ভোটার ১,৩৩,৩৩৩ জন
৯০ দিনে ডাটা সংগ্রহ এবং এন্ট্রি করা হবে ১,৩৩,৩৩৩টি ভোটারের তথ্য
১ দিনে ডাটা এন্ট্রি করা হবে ১৪৮১ টি ভোটারের তথ্য
৫ জন অপার্টের এন্ট্রি করবে ১৪৮১টি ভোটারের তথ্য
১ জন অপারেটর এন্ট্রি করবে ২৯৬টি ভোটারের তথ্য
১২ ঘন্টায় এন্ট্রি হবে ২৯৬টি ভোটারের সংক্ষিপ্ত তথ্যবলী
১ ঘন্টায় এন্ট্রি হবে ২৪.৬৯ টি ভোটারের তথ্যাবলী
অর্থাৎ ২.৪৩ মিনিটে একটি ভোটেরর তথ্য এন্ট্রির জন্য সময় দেয়া হচ্ছে
অর্থাৎ এমুহুর্তে ভোটার তালিকার জন্য গড়ে একজন ভোটারের মাত্র ৫০টি শব্দের তথ্য এন্ট্রি করা হবে।
 
একজন কমপিউটার অপারেটরের ৫০টি শব্দ লিখতে সময় লাগে সর্বোচ্চ ১ মিনিট তাকে দেয়া হচ্ছে ২.৪৩ মিনিট।
 
তাহলে কোন কাজটি অসম্ভব- শুনি?
 
বিদেশী বিশেষজ্ঞ ও পরামর্শ:
বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির উন্নতময় এই বিশ্বে বসে নতুন করে পরামর্শ নেয়ার তো কোন প্রয়োজন আছে বলে মনে হয় না। সব কিছুই এখন হাতের নাগালে। প্রয়োজনীয় প্রোডাক্ট খুঁজতে এখন আর আমেরিকা চায়নায় দৌড়াতে হয় না। ইয়াহু, গুগুল আর আলীবাবাই যথেষ্ঠ। আর মালামাল আনতে লাগে পৃথিবীর যে-কোন প্রান্ত থেকে ৭২ ঘন্টা মাত্র। বুঝতে পারি না সামান্য বিষয়গুলো এতো বিশৃংখভাবে দেখার কি দরকার রয়েছে?
 
অতএব!
সকল কার্যক্রমে যখন এনআইডি প্রদর্শন বা সাবমিশন বাধ্যতামূলক হবে (বর্তমানে যেমন কমিশনার সার্টিফিকেট বা টিন বাধ্যতামূলক; এক একটি কমিশনার সার্টিফিকেট নিতে গড়ে ১০০/- টাকা ঘুষ প্রদান করতে হয় অপর দিকে টিন নিতে লাগে গড়ে ১,০০০/- টাকা; আমরা রাষ্ট্রের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এবং আইন মেনে তা নিই সবসময়।) তখন সকলেই ফিক্সড ১০০/- প্রদানে অনাগ্রহন করবে না মোটেও। সেই সাথে ১০/- টাকায় যদি আইডি প্রিন্টও নেন আরও দুই কোটি নাগরিক সেখান থেকে আরও আয় আসবে নগদ প্রায় ২০ কোটি টাকা।
 
সরকার চাইলে সারাদেশের এই বিশাল অনলাইন নেটওয়ার্কটি অন্যান্য আরও অনেক কাজেই ব্যবহার করতে পারবে- এব্যাপারে বিশদ আলোচনা করা যাবে। তবে, এই ষ্টেশনগুলো কোন অবস্থাতেই অসৎ ব্যবহার করা যাবে না এবং কঠোর দৃষ্টি রাখতে হবে কর্মকর্তা/ কর্মচারী দ্বারা আইডি কার্ডের নামে যেন কোন নাগরিক সমস্যার বা প্রতারণার স্বাীকার হন। এক্ষেত্রে অপারেটিং দায়িত্ব প্রাইভেট সেক্টরে রাখাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
 
এবং ফ্রি ভোটার তালিকা
অর্থাৎ মাত্র দেড়শত কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সরকার একদিকে যেমন দেখটাকে সু-শৃঙ্খল অবস্থায় নিয়ে আসতে পারবে অপরদিকে পাঁচশত কোটি টাকার ব্যবসায়সহ ভূয়া ভোটার স্থায়ীভাবে নির্মূল করে দেশকে একটি চমৎকার সুন্দর ভোটার তালিকা প্রদান করতে পারবে।
অর্থাৎ ভোটার তালিকাটি বোনাস হিসাবেই থেকে গেলো স্থায়ীভাবে; এক্ষেত্রে অবশ্য সিজোনাল একটি চমৎবার বড় আয় থেকে বঞ্চিত হবেন কেউ কেউ।
 
সেই সাথে পারবে পাসপোর্ট অফিসকেও শৃঙ্খলার মধ্যে আনতে; পারবে অপরাধীদেরও নাগালের মধ্যে আনতে।
 
এমন একটি স্বপ্ন কি আমাদের পূরণ হবে। এখনই সময়।
সরকার করবে কিনা- এটাই দেখার বিষয়।
 
   Send article as PDF