ঝিল্লী’র সেই গল্পটার বাকী অংশ

তিনি কহিয়াছেন যে, ‘এটা স্মরণ রাখতে হবে বঙ্গবন্ধুর অবদানের কারণেই আজ তোমার মতো ছিঁচকে উকিল এ দেশে চিফ জাষ্টিজের মর্যাদা পেয়ছ’।
 
কি নাম যেন, ও হ্যা আমির হোসেন আমু অবৈধ সরকারের শিল্পমন্ত্রী, লবন চোরা নামেই সে নাকি সর্বাধিক পরিচিত।
 
তা ভালো, বেশ বেশ!
 
এতে বোঝা গেল যে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বাবুজি একজন ছিচকে উকিল। বিচারপতি হবার কোন যোগ্যতাই তার নেই।
 
অর্থাৎ শেখ মুজিব ব্যক্তি জীবনে এতটাই অথর্ব ছিলেন যে, তার চারপাশে সব লবন চোরা, ছিঁচকে উকিল নিয়ে চলা ফেরা করতেন।
 
অবশ্য আমি ব্যক্তিগতভাবে শেখ মুজিবকে একটা বিষয়ে যথেষ্ঠ সম্মান করি যে, তিনি কারো সন্তান বা স্বামী পরিচয়ে ‘শেখ মুজিব’ হয়ে উঠেননি। যতটুকু-ই উনি হয়েছেন সম্পূর্ণভাবে নিজস্ব যোগ্যতাবলে। শেখ মুজিব আর যা-ই হোন তিনি নপুংসক ছিলেন না।
 
এবার চলুন আমরা ঝিল্লীকে নিয়ে আলোচনা শুরু করি।
গতকালের অসমাপ্ত গল্প। কথা দিয়েছিলাম যে আজ গল্পটা শেষ করবো।
 
ঝিল্লী নিউ ইয়র্ক পুলিশ ডিপার্টমেন্টের ‘ট্রাফিক এনফোর্সমেন্ট এজেন্ট’ হিসাবে জবটা পেয়ে যাবে, বার্ষিক বেতন হবে প্রায় ৩৭ হাজার ডলার। ঝিল্লীর জীবনটা সুন্দর হোক, সুখী হোক ঝিল্লী।
 
আমার কোন একজন পাঠক কমেন্ট বক্সে ঝিল্লীকে বিয়ে করার প্রস্তাব দিয়েছিল, ঝিল্লীর সংগে কথা বলেছি কিন্তু সে আগামী ৫ বছরের মধ্যে তার বিয়ের বিষয়ে কোন চিন্তা ভাবনা করতেও রাজী না।
 
সে ট্রাফিকে জয়েন করার পর আন্ডারগ্রাজুয়েট ক্লাসে ভর্তি হবে নিউ ইয়র্কের একটা স্কুলে এবং নিউ ইয়র্ক সিটি ঘোষনা করেছে এই সিটিতে পড়াশোনা করতে তারা কোন টাকা পয়সা নিবে না- একটা মাত্র শর্তে; শর্তটা হলো পড়াশোনা শেষে তাকে নিউ ইয়র্কেই ক্যারিয়ার গড়তে হবে- অন্য কোন ষ্টেটে সে চলে যেতে পারবে না।
 
যদি যেতে চায়- তাহলে পড়াশোনার যাবতীয় খরচা পাই টু পাই পরিশোধ করে দিয়ে তবেই যেতে পারবে।
 
ঝিল্লীর চিন্তা, সে নিউ ইয়র্ক ছেড়ে কোথাও যাবে না।
 
গল্পটা এখানেই শেষ।
ঝিল্লী নামটা কাল্পনিক, তবে অতি সামান্য রংচং ছাড়া ঘটনা কিন্তু সত্য।
 
একজন পাঠক মত প্রকাশ করেছেন যে, ‘ঝিল্লী’ নামটা না কি খুবই বিশ্রী। এটা গরুর চামড়ার ভেতরের নাকি কোন তরল পদার্থ! আমার নিজেরও খুব খারাপ লেগেছে কথাটা শুনে, আগে খেয়াল থাকলে অন্য কোন নাম ব্যবহার করতাম।
 
আর ঝিল্লী নিজে একটু আগে তার গল্পটা পড়ে বিরক্ত হয়েছে, ইনবক্সে আমাকে জানালো যে, এই গরু রচনাটা খুবই বাজে হয়েছে, সে বিরক্ত।
 
আমি মেসেজটি পড়েছি কিন্তু এখনও সিন করিনি। ভাবছি আর সিন করবোও না- ঝিল্লীকে বোঝাবো তোমার লেখা আমি পড়িনি।
 
এতে সে লজ্জা পাবে এবং ভাববে পাত্তা দেয়নি। এবয়সী মেয়েরা পাত্তা না পেলে খুব কষ্ট পায়।
 
যাই হোক এবার আমরা গল্পের ভেতরে ঢুকবো।
ঝিল্লী সাহসী মেয়ে, সে নিজের যোগ্যতার উপর ভর করে সামনে এগিয়ে যেতে চায়। আমি তার এ যোগ্যতাকে সমীহ করি, শ্রদ্ধা করি।
 
আপনারা লক্ষ্য করবেন গল্পে আমি যতটা না ঝিল্লীকে নিয়ে কথা বলেছি, তারচে ঢের বেশী তথ্য দিয়েছি নিউ ইয়র্ক সিটির চাকুরীতে নিয়োগের কর্মযজ্ঞ’র বিষয়ে। তারা প্রায় গোটা পঞ্চাশেক ফর্ম অনলাইনে এবং অফলাইনে সাবমিট করতে বলেছে। স্যাইকোলোজিক্যাল রিটেন নিয়েছে ভাইভা পরে নিবে।
 
এসব বলার পেছনের আসল বিষয়টা হলো, এনওয়াইপিডি ছাকনী দিয়ে ছেকে একজন এজেন্ট নিয়োগ দিবে। যে এজেন্ট জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশী হয়েও- কোন ঘুষ খাবে না, চারিত্রিক দৃঢ়তা থাকবে, সিটিকে যথেষ্ঠ আয় করে দিবে। এবং সর্বপরি তার দেশকে উত্তরত্তর সাফল্যের পেছনে ‘একজন’ হবে।
 
এবার চলুন বাংলাদেশে।
‘উই আর লুকিং ফর শত্রুজ’ খ্যাত স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুৎজামান বাবর পুলিশে কিছু এসআই নিয়োগ দিয়েছিলেন- যাদের মধ্যে সম্ভবত অর্ধেকই ঢুকেছে শেরপুর থেকে। যোগ্যতা ছিল শেরপুর এবং ঘুষ- কে কত বেশী দিতে পারবে। আর এখন যেটা চলছে সকল নিয়োগে প্রথমত ঘুষ এবং গোপালগঞ্জ যোগ্যতা।
 
আমরা সবাই এটা জানি। দেশের ১৭ কোটি মানুষ জানে। কিন্তু কেউ আমরা এটার কোন প্রতিবাদ করতে রাজী নই।
 
কিন্তু আমি যখন এসবের বিরুদ্ধে কথা বলি- তখন আমাকেও শুনতে হয়ে আমি নাকি আমার সব লেখায় দেশকে পচাই, ছোট করি। ভাবটা এমন যেন বাংলাদেশ কি এক বিশাল বড় দেশ- আমি এক কলমের খোঁচা দিয়েই ছোট করে ফেলছি?
 
আমি কি এমন একজন মানুষ যে আমার এক লেখাতেই একটা দেশ ছোট হয়ে যাচ্ছে!
 
পাকিস্তান আমলে পূর্ব পাকিস্তানীদের একটা বড় অভিযোগ ছিল যে, সরকারী চাকুরীতে, সেনাবাহিনীতে নিয়োগে পূর্ব পাকিস্তানীদের বঞ্চিত করা হতো।
 
বিষয়টা নিয়ে আমি একবার আলাপ করেছিলাম আমার প্রয়াত সরকারী কর্মকর্তা বাবা’র সংগে। তিনি আমাকে পরিস্কার ভাষায় বুঝিয়েছিলেন যে, ‘পাকিস্তানী সরকার যোগ্য ব্যক্তিকে খুঁজে চাকুরী দেয়, তারা প্রার্থীর শুধু ব্যক্তি যোগ্যতা নয় রক্তের খবরও নেয় চাকুরী দেবার আগে।’
 
আমি এই ১৫ হাজার কিলোমিটার দূর দেশে এসে ঝিল্লী’র নিয়োগে সেই রক্তের খবর এর অস্তিত্ব দেখতে পেলাম, আপনাদের দেখালাম এই গল্পে।
 
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাষ্টার সেই রাখাল বালক’কে যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর পদে চাকুরী দেবার আগে তার রক্তের খবর নেয়া হতো- তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ৮১ মিলিয়ন ডলার হ্যাকিং হতো না, ১২,০০০ কোটি টাকা লাপাত্তা হতে পারতো না।
 
ভাল রক্ত খারাপ কাজে বাঁধা দেয়।
 
রক্ত পরীক্ষা করে নিয়োগ দেয়া হলে আজ শহীদুল, বেনজীর, মনিরুলেরা পুলিশের হর্তাকর্তা হয়ে দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় কেনা গুলি এই দেশের মানুষের বুকে চালাতে পারতো না। রক্ত ভালো হলে, এই পুলিশ যে কিনা আমার রক্ষাকারী, সে আমার চোখ তুলে নিতে পারতো না।
 
আজ দেশের আরেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ- যাকে কিনা শেখ মুজিব দায়িত্ব দিয়েছিলেন রক্ষীবাহিনীর প্রধান হিসাবে। ভোলার আরেক রাখাল তোফায়েলদের রক্ষীবাহিনী বা লোকল গুন্ডা বাহিনীতেই বেশী মানায় একটা দেশের মন্ত্রী হিসাবে নয়।
 
প্রধান বিচারপতি’র রায়ের পর তোফায়েল, নাসিমদের বক্তব্য শুনলে বোঝা যায় এদের রক্তের খবর। অপু উকিল, আসাদুজ্জামান নুর আর তারানা হালিমরা সংসদে, মন্ত্রী পরিষদে কোন যোগ্যতায় ঢুকে?
 
যে সরকার প্রধান বিচারপতি খায়রুল ইসলামের রায়ে তত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করে দিতে পারে- সেই একই সরকার এখন তাদেরই নিয়োগকৃত প্রধান বিচারপতি সিনহা বাবুর রায়ের পর তাকে, তার যোগ্যতা নিয়ে কটাক্ষ করে যাচ্ছে।
 
এখানে পুরো আওয়ামী লীগের রক্ত-পরিচয়ই প্রকাশ পায় ট্রান্সপারেন্টলী।
 
৭১ এ যদি মুক্তিযুদ্ধই না হতো, তাহলে টাংগাইলের লোকল সন্ত্রাসী গুন্ডা কাদের সিদ্দীকিকে কে চিনতো? মুক্তিযুদ্ধ গুন্ডা সিদ্দীকিকে ‘বঙ্গবীর কাদের সিদ্দীকি’তে পরিণত করেছে। এই সিদ্দীকি সাহেবের একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। সেখানে তিনি বলেছিলেন, বাংলাদেশ সৃষ্টি না হলে আমরা নেতা হতে পারতাম না- এখানেই বাংলাদেশ হবার প্রয়োজনীয়তা।
 
মানুষ তার নিজের অযোগ্যতা কিভাবে এতটা নির্লজ্জভাবেও তুলে ধরতে পারে- আমার মাথায় আসে না।
 
গোলাম মাওলা রনি বেশ ভালো আর্টিকেল লিখেন, আগে বেশ পড়তাম ওনার লেখা। বিগত ৫ই জানুয়ারীর ফালতু নির্বাচনের আগ দিয়ে তার একটা লেখা পড়লাম। সেখানে মিষ্টার রনি এরশাদ সাহেবের বুদ্ধির প্রচন্ড প্রশংসা করেছেন এবং রনি সাহেব যে এরশাদীয় পলিসীকে খুবই লাইক করেন- সেটাও তুলে ধরতে পিছপা হননি।
 
এরপর থেকে আমি রনির লেখা পড়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলি।
 
যেনতেন উপায় ক্ষমতার কাছাকাছি থাকাটাই নাকি বুদ্ধি!
 
বাংলাদেশটা আজ শুধু অযোগ্যদেরই হাতে নয়, এসব অসুস্থ আর নষ্ট লোকদের কবলে পড়ে ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে।
 
আর আমরা এই নষ্টদের প্রতিযোগীতাতেই নিজেদের সম্পৃক্ত করে চলেছি।
 
অথচ নিউ ইয়র্কের এই ঝিল্লী কিন্তু বাংলাদেশেরই মেয়ে।
ঝিল্লীদের কাছ থেকে আমরা কিছু শিখবো না, কিছু নেবোও না।
 
আমাদের যোগ্যতার কোনই প্রয়োজন নেই।
জুলফিকার ভুট্টোর পর ইলেন ভু্ট্টো, মিষ্টার ব্লাক ক্যাটের পর মিসেস ব্লাক ক্যাট, জিয়াউর রহমানের পর বেগম জিয়া, শেখ মুজিবের পর শেখ হাসিনা। ওয়েটিং এ রয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয়, তারেক রহমান, মাহি বি চৌধুরীরা।
 
এভাবেই বাংলাদেশ যোগ্যতা অর্জন করে যাবে!
আর দেশবাসী ব্যস্ত থাকবে ইয়াবা, ফেনসিডিল, ডাইল, হিরোইন ব্যবসা ও খাওয়া নিয়ে।
 
কে কিভাবে কত তাড়াতাড়ি কত বেশী টাকার মালিক হবে- এটাই ওখানে যোগ্যতা।
   Send article as PDF