এগিয়ে যেতে হবে

তিনটি বিষয় আমার সংগে কখনও-ই যায় না।
 
আমি কখনও বড়শি দিয়ে মাছ ধরতে পারি না। অনেক চেষ্টা করেছি ছোট বেলায়। নদীতে বড়শি পেতে বসে থাকতাম কিন্তু কোন কাজ হতো না। কদাচিৎ হয়তো এক-আধটা মাছ আমার ছিপে আটকাতো।
 
আমার একটা ভাতিজা ছিল। ও বড়শি ফেললেই মিনিটে মিনিটে মাছ উঠতো।
আমি অবাক হয়ে দেখতাম আর ওকে হিংসা করতাম।
 
এমনও হয়েছে আমি ওর সংগে জায়গা বদল করেছি, বড়শিও বদল করেছি অথচ ও যেখানেই বড়শি ফেলুক, যেই বড়শি-ই ফেলুক মাছের পর মাছ উঠতো ওর বড়শিতে।
 
আমার ঐ ভাতিজটা সৌদি আরবে এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় অকাল মৃত্যুবরণ করে।
 
দ্বিতীয়তঃ আমি কখনও লটারী জিততে পারি না।
কোনদিনও না।
 
ছোট বেলায় অনেক বার ট্রাই করেছি। কিন্তু কোন লটারীই আমার ভাগ্যে আসে না।
 
মোদ্দকথা ভাগ্য আমাকে টানে না।
কোন বিষয় নিয়ে ভাগ্যের উপর ভরশা করলে- ওটা অার হবে না আমার।
 
সুতরাং আমি সেই ছোটবেলা থেকেই ভাগ্য’র উপর ভরশা করা ছেড়ে দিই।
সেই ছোটবেলা থেকেই আমি কোনদিনও কোন লটারী ধরি না।
 
যেটা হবে না, সেটার পেছন দৌড়িয়ে লাভ কি?
 
একটা সময় কপালের পরিবর্তে হাত-ই আমার প্রধানমত শক্তি হয়ে দাঁড়ায়।
 
আর, এখন তো আমি শুধুই আমার হাত-কেই ভরশা করি।
 
এবং আরও একটি মজার বিষয় হলো, আমার দ্বারা কোন ঘটকালী সফল হয় না।
 
কোন বিয়ের কথাবর্তায় আমি মধ্যস্থতা করতে গেলে- সেই বিয়ে হবেই না। এটা শতভাগ নিশ্চিত।
 
সুতরাং আমি কোন বিয়ের মধ্যস্থতায় নেই। কোন কালেই থাকি না।
 
২০১৪’র দিকে এক নিকটাত্মীয়ার জন্য জনৈক ঘটক একটা ছেলের খোঁজ নিয়ে আসলো।
ছেলেটা একাউন্টিং এ অনার্সসহ মাষ্টার্স করেছে, একটা কি যেন প্রজেক্টে বেশ মোটা বেতনে চাকুরীরত।
 
 
 
 
আমার মেমরী খুবই অদ্ভুৎ প্রকৃতির।
আমি কোনকিছুই মুখস্থ করতে পারি না। এক্কেবারেই না।
 
ইংরেজী প্রথম পত্রের রচনামূলক প্রশ্নের উত্তরগুলি আমার পক্ষে মুখস্থ করা সম্ভব হতো না। ৪-৫ লাইনের একটা উত্তর মুখস্থ করতে দৈনিক ২ ঘন্টা টানা একমাস চেষ্টা করলে মুখস্থ হতো- এছাড়া পাড়তাম না।
 
জীবনে কোনদিন কোন ‘অ্যাসে’ মুখস্থ করিনি। সেকেন্ড পার্ট দিয়ে ফাষ্ট পার্টের নাম্বার সমন্বয় করতে হতো আমাকে।
 
তবে একবার যদি কোনকিছু আমি মুখস্থ করে ফেলি- তাহলে বাকী জীবনেও তা আর ভুলি না।
 
তবে আমাকে মুখস্থ করতে হয় না, মজার বিষয়গুলি আমি একবার পড়লেই ব্রেনে ক্যাচ করে ফেলে- বাকী জীবনেও ভুলি না।
 
অপরদিকে বাংলা আমি পড়তামই না।
নিজের মাতৃভাষা পড়তে হবে কেন?
 
পরীক্ষার আগের রাতে প্রতিটি গল্প একবার করে মন দিয়ে পড়তাম। পরীক্ষার হলে গিয়ে নিজের মতো করে এনস্যার লিখে আসতাম।
 
এসএসসি’র বাংলা ফাষ্ট পার্টে পেলাম ৭৬ মার্কস। সেকেন্ড পার্টে ৬৭।
 
অথচ রসকসহীন ক্যালকুলাসের মতো অতি জটিল সাবজেক্ট কষে আমি সে কিনা আনন্দই পেতাম- ভেবে পাই না।
 
আমি অসংখ্য তথ্য, তত্ত্ব, উপাত্ব ব্যবহার করি আমার প্রায় প্রতিটি লেখাতেই। এবং অধিকাংশ তথ্য বা তত্ত্বই আমার অনেক অনেক বছর আগে মেমরীতে নেয়া যা হুবহু বলে দিতে পারি।
 
আমার অনেক লেখা-ই অনেকে মেনে নিতে পারে না; রেফারেন্স দাবী করে। আমি অনেক সময় দিইও। তবে যেহেতু আমার হাতে এখন আর সেসব বইগুলি নেই- তাই আমি অতি সহজেই অনলাইন থেকে খুঁজে ‘ইংলিশ রেফারেন্স’গুলি দিই। এবং আশ্চর্য্যজনকভাবেই দেখি- আমার মেমরী ঠিকই কাজ করছে।
 
আভিভুত হই।
আত্মবিশ্বাস আরও বেড়ে যায় তখন।
 
ব্যবসায়ের জগতে ঢুকার পর মানুষকে প্রচুর ফোন কল করতে হতো।
আমি তো কোন কিছুই মুখস্থ করতে পারি না। কোন নাম্বারই মুখস্থ হয় না। বারবার কন্টাক্টস এ গিয়ে নাম্বার খুঁজে বের করতেও ভালো লাগে না।
 
নাম্বার মুখস্থ করার একটা কায়দা খুঁজে বের করলাম।
না। মুখস্থ করে ব্রেনে রাখার মতো কোন কায়দা না।
 
আমার ব্রেন মুখস্থ করতে পারে না- কিন্তু আমার তো আরও কিছু অর্গান রয়েছে যেগুলি আমি অনায়াসেই ব্যবহার করতে পারি।
 
হাতের আংগুল, চোখ, ডিজিট স্ট্যাইল, কী-বোর্ড এবং লজিক।
এসব বিষয়গুলি ব্যবহার করে আমি মোবাইল নাম্বার মুখস্থ করে ফেলতাম।
 
চোখ বা আংগুল এবং কী-বোর্ডের অবস্থান ও লজিক এপ্লাই করে মুখস্থ করার কয়েকটা টেকনিক দেখাই:
 
ধরুন একটা নাম্বার ০১৭১১৫৪০৭৮৬
আপনি এবার নাম্বারটি এভাবে চিন্তা করুন যে, এটা গ্রামীণ ফোনের প্রথম দিকের নাম্বার যেটার এরিয়া কোড ০১৭১১ এবং যেহেতু এটা প্রথম দিকে নাম্বার সেহেতু শুধুমাত্র কী-বোর্ডে চোখ দিয়ে তাকিয়ে ৫৪০ টা একটু ব্রেনে ঢুকিয়ে দিন। সংগে ৭৮৬ যেটা বিছমিল্লাহির রহমানের রাহীম এর সংক্ষিপ্ত রূপ।
 
ব্যস নাম্বারটা এবার মুখস্থ হয়ে গেল- বাকী জীবনেও ভুলবেন না।
 
আমি বেশীরভাগ নাম্বার এভাবেই লজিক ইউজ করে মুখস্থ রেখেছিলাম সংগে চোখ ও আংগুল ব্যবহার করতাম বেশী।
 
এবং এভাবেই আমার প্রায় ২০০০ এরও বেশী মোবাইল নাম্বার মুখস্থ ছিল। এখনও রয়েছে।
 
আপনি এবার আপনার মতো করে, আপনার সুবিধানুযায়ী টেকনিক এপ্লাই করেন- দেখেন ভাল না লেগে যাবে না। শুধুমাত্র মুখস্থ ছাড়াও যে মেমরীতে রাখা যায়- সেটা ভেবে মজা পাবেন।
 
আসলে জীবনটাই একটা টেকনিক।
আপনি যদি আমার মতো ‘সৌভাগ্য’ নিয়ে এই পৃথিবীতে জন্মে না থাকেন- তাহলে তো টেকনিকই আপনার একমাত্র ভরশা; ঠিক না?
 
আর যারা সোনার চামুচ মুখে দিয়ে জন্মেছে, যারা সৌভাগ্য নিয়ে জন্মেছে তাদের সংখ্যা অতি হাতে গোনা; তাদের দিকে তাকিয়ে আফসোস করে সময় নষ্ট করার কি মানে রয়েছে, বলুন।
 
এভাবেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
চলুন, আমরা না হয় এভাবেই এগুতে থাকি।
   Send article as PDF