নেটলার স্ক্রিল পে-পল

মিয়া হাসিনা দেশের ১৭ কোটি মানুষকে ৩ বেলা খাবার খাওয়ায়।
 
মিয়া হাসিনা পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় বলে বেড়ায় বাংলাদেশে কোন বেকার নেই।
 
এদিকে কোন অর্থমন্ত্রী মন্ত্রী লোটাস কামাল নাকি বলে বেড়াচ্ছে ৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশের জাতিয় বাজেট কানাডা’র বাজেটকে ছাড়িয়ে যাবে!
 
এই যখন দেশের অবস্থা, তখন এদেশের মানুষের আজ কাজ-কর্ম করার প্রয়োজনটা কোথায়; সেটাই তো আমি ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।
 
মিয়া হাসিনাতো ৩ বেলা খাওয়াচ্ছেই!
বসে বসে খেলেই তো হয়।
 
আমি যেহেতু প্রায় ৫ বছর দেশে থাকছি না সেহেতু এই পাঁচ বছরের খবর জানি না- মিয়া হাসিনা ১৭ কোটিকে ৩ বেলা খাওয়ালে খাওয়াতেও পারে তবে আমি কোনদিন মিয়া হাসিনার টা খাইনি। বরঞ্চ প্রতি বছর আমি যা ট্যাক্স প্রদান করতাম- তাতে মিয়া হাসিনার পরিবারই আমার’টা খেয়ে অন্তত ১ মাস বেঁচে থাকতো।
 
অর্থাৎ মিয়া হাসিনা আমারটা খেতো- আমি মিয়া হাসিনারটা খেতাম না।
 
বিগত ৫ বছর আগেকার বাংলাদেশ যেহেতু আমি নিজের চোখে দেখেছি- সেহেতু আমি নির্দিধায় বলতে পারছি যে, সেখানে দেশের কম করে হলেও ৬০% লোক কোন কাজ পায় না। এবং আরও বলতে পারি বাংলাদেশের ৭০% লোক নিজ নিজ পরিবার নিয়ে ‘মানবেতর’ জীবন যাপন করে যাচ্ছে বছরের পর বছর।
 
এই ‘মানবেতর’ বলতে আমি পরিস্কার বোঝাতে চাচ্ছি যে, তারা যা আয় করে তা দিয়ে পরিবার নিয়ে তিন বেলা ‘সঠিক খাবার’ ক্রয় করতে পারে না বিধায় ‘নিম্নমানের খাবার’ খেতে বাধ্য হয় কিংম্বা ৩ বেলার জায়গায় হয়তো ১ বা দুই বেলা খাবার খায় কিন্তু চোক্ষুলজ্জায় সেটা বাইরে প্রকাশও করতে পারে না। ভালো পোষাক পায় না গায়ে জরানোর। শীতে কষ্ট করে, অতি গরমে আগুনে পুরে কিন্তু সবই মুখ বুঝে সহ্য করতে করতে অভ্যস্ত হয়ে পরেছে।
 
বিশেষ করে আমরা যারা উন্নত বিশ্বে বসবাস করছি তারা বিষয়টা আরও সঠিক ও ভালোভাবে উপলদ্ধি করতে পারি। খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান এবং চিকিৎসা এর কোনটাই দেশের ম্যাক্সিমাম মানুষ পায় না।
 
এমন একটা দেশের মানুষকে ৩ বেলা ‘একজন’ খাওয়াচ্ছে বলাটাই আসলে দেশের মানুষকে ‘পেট এনিমেল’ হিসাবে ট্রিট করারই নামান্তর। মিয়া হাসিনা ও তার শিষ্যরা ঠিক তেমনটাই করছে, করে চলছে বছরের পর বছর।
 
দেশে নতুন চাকুরীর সুযোগ নেই।
ব্যবসা করার পরিবেশ বা সুবিধে নেই।
মানুষ করবে টা কি? আমি না খেয়ে থাকলে কেউ তো আমাকে বাজার করে দিয়ে যাবে না!
 
দেশে কয়েক কোটি শিক্ষিত বেকার তরুন-তরুনীরা তাদের সীমিত সুবিধাকেই কাজে লাগিয়ে কিছু একটা করতে চায়। এরা ইন্টারনেট জানা, কর্মঠ মানুষ। কিন্তু তাদের কোন সুযোগ দেয়া হয় না।
 
‘সুযোগ’ শব্দটির একটু ব্যাখ্যা দেয়া যেতে পারে।
আমেরিকাকে বলা হয় ‘ল্যান্ড অব অপুর্চুনিটিজ’; কেন বলা হয় সেটা আমি প্রতি মুহূর্তে টের পাই এদেশে পা দেবার পর থেকে।
 
এই দেশে অবারিত ‘সুযোগ’ বা ‘অপুর্চুনিটিজ’ সৃষ্টি করে রাখা হয়েছে দেশবাসীর জন্য।
আপনি ব্যবসা করবেন, চাকুরী করবেন- কোন সমস্যা নেই। করুন সুযোগ রয়েছে।
 
কতটা রয়েছে বলি।
বাংলাদেশে যদি আপনি একটা অফিস নিয়ে ‘মোবাইল এর ফ্লাক্সিলোড’ এর এজেন্সী নিতে চান তাহলে আপনাকে কম করে হলেও ৫ থেকে ৭ কোটি টাকা নিয়ে প্রতিযোগীতায় নামতে হবে কোন একটা মোবাইল অপারেটর এর এজেন্সী নিতে! অতপর ধরে নিলাম আপনি ‘এজেন্সী’ পেলেন। আপনি সেলস কমিশন পাবেন ৩.৫% ম্যাক্সিমাম।
 
এবার মনে করুন, আমেরিকায় আপনি ঠিক এই একই ব্যবসাটা করতে চাচ্ছেন।
অনলাইনে গিয়ে পছন্দসই অপারেটরকে একটা ইমেইল করুন। তারপর দেখবেন ওরাই আপনার সংগে যোগাযোগ করছে। আপনার অফিসে গিয়ে আপনাকে এজেন্সী দিয়ে আসছে- আপফ্রন্ট ১টা পেনীও আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে না বরঞ্চ ওরা আপনাকে মার্কেটিং ম্যাটেরিয়ালস ফ্রিতে দিয়ে যাচ্ছে, সুবিধা-অসুবিধা দেখার জন্য পালা করে ওদের লোক-জন আসছে দু’এক সপ্তাহ পরপরই এবং আপনি সেলস কমিশন পাচ্ছে মিনিমাম ১০%; একটা ৩০ ডলারের সীমকার্ড বিক্রি করে কমিশনই পাচ্ছে ৪৫ ডলার পর্যন্ত!
 
ঠিক একইভাবে ট্রাভেল এজেন্সী করতে চান?
কোন কিছু দরকার নেই- শুরু করে দিন একটা অফিস নিয়ে। কোম্পানীগুলিই আপনাকে ডেকে নিয়ে ‘ক্রেডিট’ দিয়ে দিবে টিকেট বিক্রি করার জন্য।
 
মানি ট্রান্সফার এর ব্যবসা করতে চানা?
শুরু করে দিন। কোম্পানীগুলি বসেই রয়েছে আপনাকে ‘ক্রেডিট’ দিতে।
 
এসবই হলো ‘সুযোগ’।
আপনি কি পাচ্ছেন কোন সুযোগ আপনার দেশে?
 
না। পাচ্ছেন না।
চাকুরী করবেন? অথবা অন্য কোনভাবে ফ্রি-ল্যান্সার হিসাবে আয় করতে চান?
 
আপলে ‘সুযোগ’ কি জিনিস আপনি তো সেটাই জানেন না- পাবেন বা দাবী করবেন কিভাবে?
 
একটা টিএলসি করা গাড়ী ভাড়া নিয়ে উবার ড্রাইভ এর ব্যবসায় নেমে পরুন; মাসে আয় করতে পারবেন অনায়াসেই মিনিমাম ১০ হাজার থেকে ১৫ হাজার ডলার।
 
আপনার ‘সোনার বাংলা’ কি আপনাকে দিচ্ছে এইসব অত্যাবশ্যক সুযোগ-সুবিধা?
 
যদি না দিয়েই থাকে- তাহলে ওটা কিসের ‘সোনার বাংলা’?
সোনার বাংলা না বলে ওটাকে ‘ডাষ্টবিন’ বলুন তাতে অন্তত ‘সত্য’ বলা শিখবেন। আর কতকাল মিথ্যা নিয়ে থাকবেন!
 
যাই হোক, চাইলেই যেহেতু উন্নত বিশ্বের ভিসা পাওয়া যায় না; সেহেতু যারা একটু মেধাবী, পরিশ্রমী তারা তো আর বসে থাকতে পারে না। এরাই নিজেদের সুযোগ নিজেরাই তৈরী করে নেয়, নিতে পারে।
 
একটা সময় ছিল যখন দেখেছি দেশের লাখ লাখ তরুন ভিওআইপি ব্যবসায় জড়িয়ে পরেছে খুবই অল্প বিনিয়োগ করে এবং প্রচুর টাকা আয় করা শুরু করেছে। দেশের মানুষ আয় করছে, ভালো থাকছে, ভালো খাচ্ছে- এটা দেশের সরকার সহ্য করবে কেন?
 
আর তাই তো, সরকার এই লাখো যুবককে এই চমৎকার ব্যবসাটা করতে না দিয়ে এটার আগে ‘অবৈধ’ তকমা লাগিয়ে দিয়ে সেই ব্যবসাটা হাজার কোটি টাকার কয়েকটা কোম্পানীর হাতে ‘মনোপলী ব্যবসা’ তৈরী করে দিলো। এখন দেশের ১০/১৫টা কোম্পানী ‘বৈধ ভিওআইপি’ ব্যবসা করে বিলিয়ন ডলারের মালিক হচ্ছে আর দেশের যুবকরা কাজ হারাচ্ছে।
 
সিংগাপুরে মালয়েশিয়াতে স্বর্ণের মূল্য কম। ভারতে স্বর্ণমূল্য বেশী।
বাংলাদেশের হাজার হাজার যুবকরা মালয়েশিয়াতে গিয়ে সেই স্বর্ণ কিনে এনে ভারতে নিয়ে বিক্রি করার একটা রাস্তা তৈরী করলো- যেখান থেকে তারা দু’টো পয়সা আয় করার সযোগ পেল।
 
কিন্তু বাংলাদেশ সরকার কেন দেশের মানুষকে আয় করতে দিবে?
মানুষের হাতে টাকা হলে তারা আরও সভ্য, আরও মেধাবী হয়ে উঠবে না! তাই তো, সেই স্বর্ণের বিক্সিটের উপর কমবেশী ৫০ হাজার টাকা করে ট্যাক্স লাগিয়ে দিয়ে ব্যবসাটা চিরতরে বন্ধ করে দিলো এই মিয়া হাসিনা সরকার। না খেয়ে মরুক না তাতে হাসিনার কি?
 
এই দেশের এই অভাগা তরুনরা এরপর আরও একটা ব্যবসা পেল যেটার নাম ‘ফরেক্স’ বা অনলাইনে বসে আন্তর্জাতিক মুদ্রার কেনা-বেচার ব্যবসা। এতেও দু’টো পয়সা আসতে লাগলো। কিন্তু সরকার সেটা করতে দিবে কেন?
 
ফরেক্সের আগেও অবৈধ তকমা ঝুটে গেল। ব্যস ব্যবসা বন্ধ। না খেয়ে সব মর! মিয়া হাসিনা পুত্র মাসে মাসে ২ লাখ ডলার তো এমনিতেই পাচ্ছে- অন্যরা মরলে তাদের কি?
 
যাই হোক, আমেরিকাতে শ্রমমূল্য অনেক বেশী। এদেশে কাজের কোন অভাব নেই- কাজের লোকই পাওয়া যায় না। তখন এরা বুদ্ধি করে তাদের অনলাইন ভিত্তিক কাজগুলি সারা বিশ্বের রিমোটে ছড়িয়ে দিলো। আর এই সুযোগটি ভারত, ফিলিপিন্সের মতো দেশগুলি গ্রহন করে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার আয় করা শুরু করে দিলো।
 
বাংলাদেশের মেধাবী কর্মঠ ছেলে-মেয়েরা বসে থাকবে কেন?
এরাও কাজ পাবার সহজ বুদ্ধিতে নিজেদের সমর্পন করলো। লাখ লাখ তরুন এখন বাংলাদেশে বসেই আউটসোর্সিং এর কাজ করে দু’টো পয়সা আয়ের মুখ দেখছিল।
 
কিন্তু সেটাই বা মিয়া হাসিনার সহ্য হবে কেন?
মিয়া হাসিনা তো নিজেই ১৭ কোটি মানুষকে খাওয়াচ্ছে। দেশে কোন বেকার নেই। সুতরাং এই আউটসোর্সিংও বন্ধ করে দিতে হবে। আর তাইতো তার প্রথম ধাক্কা হিসাবেই বন্ধ করে দেয়া হলো নেটলার বা স্ক্রিল এর মতো অনলাইন লেনদেন সাইটগুলো।
 
টাকা আদান-প্রদান বন্ধ করে দিলে ওরা কাজ করবে কিভাবে? মিয়া হাসিনা এটা ভালই জানে। আর তাই তো ‘পে-পল’ বাংলাদেশে ঢুকতেই দেয়নি কোনদিন। এখন বন্ধ করে দিলো নেটলার, স্ক্রিল।
 
১৭ কোটি মানুষ যেহেতু মিয়া হাসিনার’টা বসে বসেই খাচ্ছে- তাহলে আর কষ্ট করে ওসব বিদেশী দেশ থেকে আয় করতে হবে কেন?
 
দু’দিন পর আমেরিকানরাই বাংলাদেশে চাকুরীর জন্য চলে আসবে।
অপেক্ষায় থাকুন।
 
আর আপনারা মিয়া হাসিনার দেয়া অন্ন খেয়েই বেঁচে থাকুন।
বেশী লোভ করাটা কিন্তু পাপ।
   Send article as PDF