প্রিয় সশস্ত্রবাহিনী

প্রিয় সশস্ত্রবাহিনী।
 
শুরুতেই আপনাদেরকে ‘প্রিয়’ বলে সম্মোধন করার মতো কোন কারণ খুঁজে পাচ্ছি না কিন্তু ম্যানার বলে ইংরেজীতে যে শব্দটি রয়েছে সেই বাধ্যবাধকতায় ‘প্রিয়’ না বলে পারলাম না।
 
আমি বাংলাদেশের নাগরিক।
এটাই আমার পরিচয়।
 
সেই নাগরিক অধিকারে আপনাদের কিছু কথা বলা এখনই দরকার- ইতিমধ্যেই যথেষ্ঠ দেরী হয়ে গিয়েছে; আরেকটু দেরী হলে হয়তো বা দেখা যাবে বলাই হয়ে উঠবে না আর। সুযোগই থাকবে না।
 
আমি যেহেতু নিয়মিত ইনকাম ট্যাক্স প্রদান করি, এখন ফরেন রেমিটেন্সও পাঠাচ্ছি এবং আপনারা যেহেতু আমার মতো ১৬ কোটি মানুষের এই কষ্টের ট্যাক্স ও রেমিটেন্স এর টাকায় বেতন তুলেন, নিজেদের সংসার চালান এবং যেহেতু আপনার নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমাদের এই দেশটি রক্ষার শপথ গ্রহন করেছেন- সেহেতু আপনাদের কিছু কথা বলার দায়িত্ব আমার রয়েছে।
 
২০১৪ সালে দেশের মানুষের ঘাড়ের উপর ভারতীয় আধিপাত্যবাদী শেখ হাসিনা বিনা ভোটের এক তথাকথিত নির্বাচনের নামে চেপে বসেছে।
 
আপনারা সেই ঘটনার স্বাক্ষী কিন্তু তাকে সেদিন এই জঘন্য কাজটিতে কোনরূপ সহায়তা করেননি- সেটাও আমার পরিস্কার মনে রয়েছে।
 
ভারতীয় নীল নকশা এবং ভারতের উপর ভর করে আর সেই সংগে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নামে একটা সংগঠিত সন্ত্রাসী বাহিনী যা বাংলাদেশ পুলিশ নামেই পরিচিত তাদের বন্দুকের গুলির ভয় দেখিয়ে- দেশের প্রতিবাদী মানুষকে ক্রস-ফায়ার, গুম, বিচার বিভাগীয় হত্যাকান্ড, নির্যাতন, জেল-জুলুম এর মাধ্যমে শেখ হাসিনা সরকার সাধারণ মানুষের রাজত্বের নামে দেশের মানুষের টাকা লুটপাট করে খাচ্ছে।
 
আমি আপনাদের এমন একটা দেশ নিয়ে কথা বলছি, যে দেশটিতে বর্তমানে প্রধান ব্যবসা হিসাবে মাথা তুলে দাড়িয়েছে- ভারত থেকে ফেনসিডিল এবং মিয়ানমার থেকে ইয়াবা সরবরাহ। এবং দুঃখজনক হলেও সত্য যে এই ফেনসিডিল ও ইয়াবার ব্যবহারকারী এদেশেরই মানুষগুলি।
 
পাশ্ববর্তী ভারত এবং মিয়ানমার শুধুমাত্র বাংলাদেশে চোরাচালান করার জন্যই এই দু’টি ভয়াবহ মাদকদ্রব্য উৎপাদন করে- তাদের নিজেদের দেশেও এদুটি মাদক হিসাবে ব্যবহৃত হয় না।
 
বাংলাদেশের যুব সমাজকে সুপরিকল্পিতভাবে ধ্বংশ করার জন্যই ভারত ও মিয়ানমার এসব উৎপাদন ও বাংলাদেশে সরবরাহ করে চলছে। আর এসব ব্যবসায়ীরা বর্তমান অবৈধ আম্লীগ সরকারের মন্ত্রী-এমপি। তাদের মধ্যে কক্সেসবাজারের বদি একজন সাজাপ্রাপ্ত জামিনে থাকা অপরাধী এবং সংসদ সদস্যও বটে।
 
বাংলাদেশ নামের এই রাষ্ট্রটির সবগুলি বিভাগ আজ ধ্বংশপ্রাপ্ত। করাপ্টেড। দুর্নীতিগ্রস্থ। ঘুষ, অস্ত্রই আজ সর্বেসর্বা। অবৈধ ক্ষমতার দাপট সর্বত্র। এটাকে কোন দেশ বলে না। দেশের মানুষের কোন কাজ নেই, ব্যবসা নেই। শিক্ষাক্ষেত্র জিপিএ পাইপ এ পরিণত হয়েছে।
 
দেখুন তো কি অবস্থা! মা’র কাছে মামা বাড়ীর গল্প শুনাচ্ছি যে!
আপনারা তো এসব খবর আমার চে ঢের ভালো জানেন সেটা আমি ভুলেই গিয়েছিলাম।
 
অবশ্য ভুলে যাবার স্বপক্ষে একটা কারণও রয়েছে আর সেটা হলো- আপনারা যে ‘বাংলাদেশ রক্ষার শপথ’ নিয়ে দেশে বসবাস করছেন সেটাই তো আমরা ভুলে গেছি।
 
আপনারা কি দেশ রক্ষা করতে পারছেন?
 
যদি পারতেন তাহলে ভারত কিভাবে আমাদের সীমান্তে এসে আমাদের বুকে গুলি করে হত্যা করে যাচ্ছে?
যদি পারতেন তাহলে মিয়ানমারের হেলিকপ্টার বা যুদ্ধ বিমানগুলি কিভাবে দিনের পর দিন বাংলাদেশের আকাশসীমা অতিক্রম করতে পারছে? ওরা সীমান্তে অবৈধভাবে মাইন পুতছে?
 
কোথায় আপনাদের দেশ রক্ষার শপথ?
শপথ ভংগ করা মানে দেশের সংগে বেঈমানী করা।
 
আর দেশের সংগে বেঈমানী করে দেশবাসীর টাকায় নিজের স্ত্রী-পুত্র-কন্যার খাবার কিনতে কি একটু লজ্জা হয় না আপনাদের? অনুতপ্ত হন না এক মুহূর্তের জন্যও!
 
আচ্ছা আপনারা কি এটাও শুনেন নি যে- বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরাও আজ আপনাদের ‘ঘাসটাকা সেনাবাহিনী’ বলে নাক সিটকায়!
 
দেশের মানুষ-কে স্রেফ ‘মুলা’ দেখিয়ে আজ বলা হচ্ছে ডিজিটাল বাংলাদেশ! হাজার হাজার কোটি টাকা লুটে পুটে খেয়ে ফেলেছে হাসিনা পরিবার। হাসিনা পুত্র ‘ডিজিটাল’ শব্দের মানেটাও ঠিকঠাক বুঝে না।
 
দেশের ব্যাংকগুলিকে শূন্য করে দেয়া হয়েছে, এশিয়ার অন্যতম সেরা ব্যাংক ইসলামী ব্যাংকটিকে পর্যন্ত শেষ করে দেয় হল সকলের চোখের সামনে।
 
দেশের শেষ ভরসা বাংলাদেশ ব্যাংক থেকেও টাকা হ্যাকিং এর নামে লুটে পুটে খাওয়া শেষ। কেন্দ্রিয় ব্যাংকের নিরাপত্তা পর্যন্ত তুলে দেয়া হয়েছে বাংলাদেশের ‘সবচে বড় শত্রু রাষ্ট্র’ ভারতের হাতে।
 
বিনা পয়সা ভারতকে দেয়া হয়েছে ট্রানজিট, ট্রান্সশিপমেন্ট আর আমাদের কষ্টের টাকায় তৈরী রাস্তায় চলাচল করছে ভারতীয় ভারী ভারী ট্রাক!
 
দেশের মালিক দেশের নাগরিকদের আজ দেশের মাটিতে বাক স্বাধীনতা নেই।
 
দেশের মসজিদে বসে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করা নিষিদ্ধ।
ধর্মীয় বই-পুস্তক পড়া বা রাখা পর্যন্ত একপ্রকার নিষিদ্ধ।
 
দেশের নষ্ট মানুষগুলি, কথিত সেকুলারা আজ রাষ্ট্র ক্ষমতায়।
 
আর আপনারা শপথ নিয়ে বসে বসে আয়েসী জীবন যাপন করছেন- সবকিছু দেখেও চোখ বন্ধ করে বসে রয়েছেন।
 
দেশে গণতন্ত্র নেই, ন্যূনতম মানবাধিকার নেই, মানুষের কোন স্বাধীনতা পর্যন্ত নেই।
 
আমাদের টাকায় কেনা বন্দুক, গুলি আজ দেদারছে ব্যবহৃত হচ্ছে আমার বুকে!
এটাকে কি দেশ রক্ষা বলে?
 
আর দেশ রক্ষার শপথ নিয়েছেন আপনারা!
রক্ষা করতেছেন আমাদের?
 
আপনারা বলবেন দেশের আইন রয়েছে সামরিক বাহিনী ক্ষমতা নিলে তাদের মৃত্যুদন্ড হবে। হ্যা, সামরিক বাহিনী রাষ্ট ক্ষমতা দখল করুক সেটা কোন ভালো সমাধান নয়- আমি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে তা পছন্দ করি না।
 
কিন্তু!
আমি আপনাদের রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করতে বলছি না- একটা ধ্বংশপ্রাপ্ত দেশকে রক্ষা করার ফরজ দায়িত্ব আজ আপনাদের- আপনারা শপথ নিয়েছেন।
 
শেখ হাসিনার অবৈধ সরকার আজ বর্হিঃরাষ্ট্র হিসাবেই বাংলাদেশকে শাসন-শোসন করে চলছে। এটাকে দেশীয় শাসক বলে না- ভারতীয় সরকারের করদ রাজ্য হয়ে বসে রয়েছে আজ এই গোপালী শাসকরা।
 
আপনাদের কাছে আজ একটাই দাবী জানাচ্ছি।
যদি দেশের প্রতি আপনাদের বিন্দুমাত্র দায়িত্ব থেকে থাকে- দেশটাকে রক্ষা করুন ধ্বংশের হাত থেকে।
 
শেখ হাসিনার বাবা শেখ মুজিব ১৯৭২ সালে আপনাদের মুল্যায়ন করেননি। ধ্বংশ করে দিয়েছিল ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনী’কে।
 
গঠন করেছিলেন ‘রক্ষীবাহিনী’ যার অবস্থান ছিল আপনাদেরও উপরে।
হত্যা করেছিল গণতন্ত্র, মানবাধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতা।
 
আপনারা কি ভুলে গেছেন সেই দিনগুলির কথা?
আজ আপনাদের অবস্থান কোথায় শেখ হাসিনার কাছে?
 
আপনারা কি বুঝতে পারছেন না যে সামান্য টাকা’র বিনিময়ে আজ আপনাদেরকে স্রেফ ‘খাসী’ বানিয়ে রাখা হয়েছে।
 
আজ সামান্য পৌরষ্যও আপনাদের নেই!
লজ্জা করছে!
আজ আপনারাই নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনীকে!
 
সামান্য মিয়ানমার আজ আমাদের আকাশ সীমা লংঘন করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।
আর শাড়ী-চুড়ি পরে বসে রয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী।
 
কিনছেন জনগণের টাকায় ট্যাংক, সাবমেরিন, মিগ!
কি করবেন এসব দিয়ে?
 
হাডুডু খেলবেন?
 
ছি।
ঘৃণা হচ্ছে আপনাদের অবস্থা দেখে।
 
টাকার কাছে মাথা বিক্রি করে, নপুংসক হয়ে দেশবাসীর কাছে কি অবস্থান হয়েছে আপনাদের- একবার ভেবে দেখেছেন?
 
একটু লজ্জাও হয় না!
শুধুমাত্র টাকাই সবকিছু?
 
বিডিআর দিয়ে দিনে দুপুরে হত্যা করা হয়েছে অাপনাদের মতোই অফিসারদের।
শেখ হাসিনা উদ্ধার পেয়ে যাবার পর আপনাদের ‘নপুংসকতা’ ফেরত দিবে- সেটা ভাবারও কিন্তু কোন অবকাশ নেই!
 
আপনার দেশের দায়িত্ব নিন- দেশটাকে বাঁচান।
দেশের ১৬ কোটি মানুষ আজ আপনাদের পক্ষে তৈরী রয়েছে।
 
আপনারা দায়িত্ব পালন করুন।
তবে, সাবধান করে দিচ্ছি লোভী হবেন না, আপনারা ৫ বছর ক্ষমতায় থাকবেন। বর্তমান সংবিধান পরিবর্তন করবেন। একটা সুন্দর, গণতান্ত্রিক, ন্যায় ভিত্তিক সংবিধান তৈরী করবেন।
 
আপনারা কাউকে প্লাস-মাইনাস করতে যাবেন না।
কে প্লাস হবে আর কে মাইনাস হবে সেটা নির্ধারণ করতে দিন দেশের মালিক- জনগনকে।
 
দেশের টাকা যারা লুটে খেয়েছে- তাদের ধরুন একটা একটা করে। টাকা আদায় করুন। দেশের টাকা দেশের মানুষকে বুঝিয়ে দিন।
 
এরচে বেশী কিছু করতে যাবেন না।
লক্ষ্য রাখবেন কেউ যেন আপনাদের উপর ভর করে আবার ক্ষমতা পাকাপোক্ত করার চেষ্টা না করে।
 
দেশ রক্ষা মানে দেশের গণমানুষকে রক্ষা করা।
সেই দায়িত্ব আপনাদের। আপনারা শপথ নিয়েছেন।
 
আপনারা গর্জে উঠুন।
ফেলে দিন দু’চারটে মিয়ানমারের বিমান বাংলাদেশের আকাশ সীমায় যদি ঢুকে আর একবারও।
ফেলে দিন কিছু বিএসএফ জওয়ানকে যদি আর একটি গুলিও ছোড়ার সাহস করে বাংলাদেশের দিকে।
 
১৬ কোটি মানুষ তাকিয়ে রয়েছে আপনাদের দিকে।
১৬ কোটি মানুষ।
 
দেশ রক্ষার শপথ নিয়েছেন আপনারা।
প্রয়োজনে নিজের জীবন দিয়ে হলেও। একটি মুহূর্তের জন্যও ভুলে যাবেন না যে এই ১৬ কোটি মানুষ আপনাদের বেতন দেয়।
 
প্লিজ এই অভাগা দেশটাকে রক্ষা করুন।
 
   Send article as PDF